তৃণশয্যা #নিয়াজ_মুকিত #৭ম_পর্ব

0
428

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব

আদনান আগে চারুর নার্ভ চেক করে।চারুর থেকে ১০হাত দুরে পরে আছে নিত্তিয়া।নিত্তিয়ার মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু চারুর মাথা দিয়ে নয় হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।আদনান চারুর নার্ভ চেক করে বুঝতে পারে চারুর নিশ্বাস বইছে এখনো।তারপর দৌড়ে আদনান চলে যায় নিত্তিয়ার কাছে।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নিত্তিয়ার হাতটা ধরে।হাতটা ধরেই চমকে ওঠে আদনান।সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গেছে।আদনান নার্ভ চেক করে নিত্তিয়ার।নার্ভ চেক করেই আদনান নিত্তিয়ার হাতটা নিজের বুকের মধ্যে ধরে কান্না করতে শুরু করে।এদিকে চারুর হাত দিয়ে রক্ত বইছে এখনো।

এই মুহুর্তে আদনানের কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা সে?নিত্তিয়াতো এই পৃথিবীকে,আদনানকে বিদায় জানিয়ে ওপারে চলে গেছে কিন্তু চারুতো এখনো আছে।তাকে বাঁচাতে হবে।আদনান মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়ায়।ভাবতে শুরু করে নিত্তিয়ার লাশ টাকে কোথায় রাখবে?আদনান কোলে তুলে নেয় নিত্তিয়াকে।নিত্তিয়ার রক্তে ভিজে যায় আদনানের সাদা পাঞ্জাবী।আদনান নিত্তিয়ার লাশটাকে নিয়ে গিয়ে রাখে তাদের বাসার সামনে।

তারপর দৌড়ে এসে চারুকে নিজের বাইকে তোলে।চারুকে এই অবস্তায় নিয়ে যাওয়া যাবে না তাহলে ঢলে পড়ে যাবে।আদনান চারুকে বাইকের সামনে বসায়।চারুর নিথর দেহটা পড়ে যেতে ধরে।আদনান অনেক কষ্টে চারুকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাইক চালাতে শুরু করে।কাছাকাছি মেডিকেল থাকায় বেশি কষ্ট করতে হয় না আদনানকে।সে মেডিকেলের সামনে এসে চারুকে নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর ডাক্তার ডাক্তার বলে চিল্লাতে চিল্লাতে ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।আদনানকে এই অবস্তায় দেখে এগিয়ে আসে একজন ডাক্তার।তিনি কয়েকজন নার্সকে আদেশ দেন চারুকে ভিতরে নিয়ে যেতে।তিনি আদনানকে অপেক্ষা করতে বলে নিজে ভিতরে প্রবেশ করেন।

আদনান ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।সাথে সাথে আবার উঠে দাঁড়ায় আদনান।কান্না করতে করতে বাইক নিয়ে আবার রওনা দেয় নিত্তিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষন পরই সেখানে পৌছায় আদনান।নিত্তিয়ার মৃত দেহটা এখনো পড়ে আছে দরজার সামনে।আদনান নিত্তিয়াকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।একপর্যায়ে রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে যায় আদনান।নিত্তিয়া তার কোল থেকে ঢলে পড়ে।আদনান নিত্তিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে জোরে জোরে।

১১.

কিছুক্ষন পরই জ্ঞান ফেরে চারুর।তাকিয়ে দেখে হাতে ব্যান্ডেজ করা।পাশে দাঁড়িয়ে আশে একজন সুদর্শন ডাক্তার।চারু খানিকটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ আমি কি এখন নিরাপদ?আর কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম? ‘

চারুর মুখের কথা শুনে ডাক্তারটা খানিকটা হেসে বলে,

—‘ ১ঘন্টা যাবৎ আপনি অজ্ঞান ছিলেন।আপনি এখন নিরাপদ।শুধু মাত্র এই হাতটাতে চোট পেয়েছে আপনার।আপনাকে একটা ছেলে কোলে নিয়ে এসেছিল।কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ‘

চারু বুঝতে পারছে ডাক্তার কার কথা বলছে।নিজের জন্যে যতটা না চিন্তা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে নিত্তিয়ার জন্য।নিত্তিয়া ঠিক আছে কিনা নেই।চারু আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তার তাকে নিষেধ করলেও সে শুনে না।তাকে এখন কষ্ট করে হলেও নিত্তিয়াদের বাসায় যেতে হবে।চারু বের হয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তা দিয়ে হাটতেছে আর চারদিকে তাকাচ্ছে।

প্রায় ১০মিনিট হাটার পর চারু এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে দেখতে পায়।ভালো করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যায়।সামনে এগিয়েই‌ চমকে ওঠে চারু।মাটিতে পড়ে আছে নিত্তিয়ার দেহ।তার বুকের উপর মাথা রেখে নিরবে কান্না করছে আদনান।রাতের চাদের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে আদনানের মুখটা।

চারু আদনানকে দেখলেও আদনান এখনো চারুকে দেখতে পায়নি।আদনান এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর নিত্তিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর রক্তাক্ত কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।চোখদুটোতেও ছুয়ে দেয় ভালোবাসার পরশ।তারপর চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আদনান বলতে শুরু করে,

—‘ নিতি তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে এভাবে।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনটা বারবার বলছে,নিতি যায়নি এইতো নিতি শুয়ে আছে। ‘

এইটুকু কথা বলে চোখের পানি মুছে আদনান আবার বলতে শুরু করে,

—‘ যাই হোক।আমি জানি তুমি আর ফিরে আসবে না।কিন্তু তোমার এই দেহটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে।তুমি শুধু আমার থাকবে।যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন এক সঙ্গে একই‌কবরে দুজ‌নই থাকবো।আমি থাকতে তোমাকে কারো হতে দেব না।এই মাটিও যেন তোমাকে ছুতে না পারে। ‘

এই বলে নিজের মাথাটা নিত্তিয়ার বুকের উপর রাখে আদনান।চারু সব কিছু দেখছিল ‌এতক্ষন ধরে।চারুর চোখের পানি বাধ মানছে না।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।আদনানের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে থাকে।একহাতে ব্যান্ডেজ থাকার কারনে অন্যহাতটা দিয়ে আদনানের মাথায় হাত দেয়।আদনান চমকে ওঠে।তারাতারি করে উঠে বসে।সামনে চারুকে দেখে সাথে সাথে চারুকে জড়িয়ে ধরে আদনান।চারুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে আদনান।চারুও এক হাত দিয়ে আদনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

১২.

‘ বাবা আদনান,ছেড়ে দেও ‌না ওকে।ওতো মরে গেছে।ওকে রেখে কি হবে।তুমি ওকে ছেড়ে দেও।ওর জানাজা হবেতো। ‘

কথাটা আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে আদনানের মা।তার সাথে নিত্তিয়ার মা-বাবা,চারুর বাবা-মা সবাই রয়েছে।সবাই খবর পেয়ে এসে ভিড় জমিয়েছে রাস্তাটায়।চারুই আদনানের মোবাইলটা দিয়ে চারুর বাবা-মাকে কল দিয়েছে।আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশিও আছে সেখানে।আদনান এখনো নিত্তিয়াকে ধরে আছে।

একপর্যায়ে নিত্তিয়ার বাবার কথামতো আদনানকে নিত্তিয়ার কাছ থেকে আলাদা করে নেয় কয়েকজন প্রতিবেশি।সাথে সাথে নিত্তিয়াকে সেখান থেকে নিয়ে যায় কয়েকজন মহিলা।আদনান পাগলের মতো‌ গালাগাল করছে।সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিত্তিয়ার কাছে যাওয়ার।একপর্যায়ে নিত্তিয়াকে ভিতরে ‌নিয়ে যেতে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আদনান।

১৩.

নিত্তিয়ার কবরের উপর শুয়ে আছে আদনান।তার পাশে বসে আছে চারু।দুজনের চোখ দিয়েই পানি পড়ছে।দিনের আলো ফুটেছে অনেক আগেই।গোরস্থানে মানুষ আসছে আত্মীয়দের করব যিয়ারত করার জন্য।চারু আদনানকে তোলার চেষ্টা করলে আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আদনান কবরটার উপর শুয়ে বলতে শুরু করে,

—‘ নিতি,তোমার সাথে শেষ দেখাটাও ‌হলো না।মাফ ‌করে দিও আমাকে।তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চেয়েছিলাম সারাজীবন।কিন্তু ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল না।জানো ‌এখ‌ন আমার খুব মনে পড়ছে তোমার কথাগুলো।ইচ্ছা করছে তোমার কাছে চলে যেতে।আমি তোমার কাছে যাব..’

এইবলে আদনান পাশে থাকা একটা লোহা হাতে তুলে নেয়।নিজেই নিজের মাথায় মারার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।চারু দৌর দেয় আসনানের দিকে…

চলবে..

••আরেকটা গুরুত্বপুর্ন কথা।আমি‌ বাদে আমার গল্প অন্য কেউ পোষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্তা নিতে বাধ্য হব।এমনকি কার্টেসি ছাড়াও পোষ্ট করবেন না কেউ।

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here