#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব
আদনান লোহাটা নিজের মাথায় মারার আগেই চারু দৌড়ে এসে হাতটা এগিয়ে দেয়।ফলস্বরুপ মাইরটা লাগে চারুর হাতে।চারু ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।আদনান হাতে থাকা লোহাটা ফেলে দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে,
—‘ কেন আমাকে মরতে দিচ্ছিস না চারু।আটকাচ্ছিস কেন?ওপারে যে আমার নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে?আমাকে কেন তার কাছে যেতে দিচ্ছিস না তুই?কেন কেন কেন..? ‘
এই বলে আবার কান্না করতে করতে কবরটা খুড়তে থাকে আদনান।পাগলের মতো মাটি সড়াচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।সাথে মুখ দিয়ে বলছে,
—‘ আমি আসছি নিতি।তুমি শুধু আমার সাথেই থাকবে।তোমার আর আমার কবর হবে একটা। ‘
এই বলে আরো জোরে খুড়তে থাকে আদনান।আদনানের পাগলামি দেখে চারু দৌড়ে আসে আদনানের সামনে।আদনানের মুখটা নিজের দিকে করে নেয়।তারপর দুইহাত দিয়ে আদনানের মুখটা শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে,
—‘ ভাইয়া কি করছো তুমি?এটা বিশ্বাস করো যে নিত্তিয়া আপু আর আমাদের মাঝে নেই।সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আর কখনো আসবে না।এটা বিশ্বাস করো..’
আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আবার মাটি সড়াতে শুরু করে।
—‘ না নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি তার কাছে যাবোই।কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। ‘ আদনান মাটি খুড়তে খুড়তে বলতে থাকে।
এই মুহুর্তে সেখানে উপস্তিত হয় রিমি আর রিমির বাবা।ছেলের এই অবস্থা শুনে শত কাজ ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি।তিনি দৌড়ে নিজের ছেলের কাছে যান।এক ঝটকায় ছেলেকে নিজের দিকে করে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন।আদনানও নিজের বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,
—‘ বাবা!আমার সব চলে গেল।জীবনের মুল্যবান জিনিসটাকে হাড়িয়ে ফেললাম।জীবন থেকে চলে গেল সব সুখ শান্তি।বাবা আমার এখন তার কাছে যাওয়া উচিত তাইনা।সে নিশ্চয় আমার জন্য বসে আছে।বাবা আমি যাই বেশিক্ষন অপেক্ষা করানো যাবে না নিতিকে।খুব রেগে যাবে কিন্তু,শেষে আবার তার রাগ ভাঙ্গতে অনেক কষ্ট করতে হবে আমাকে।আমি যাই হ্যাঁ বাবা.. ‘
ছেলের পাগলামি দেখে কান্নার আওয়াজ আরো বেরে যায় হালিম সাহেবের।ছেলেকে বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
—‘ না বাবা!সে অনেক স্বার্থপর,তোমাকে রেখে চলে গেছে।কয়েকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে তার কাছে যাবো।তুমি আর কারো কথা না ভাবো কিন্তু তোমার এই ছেলেটার কথা ভাবো।তুমি তো বলতে আমি তোমার ছেলে তুমি আবার বাবা।আজকে কেন এই ছেলেটাকে এতিম করে চলে যেতে চাচ্ছো।কোনো বাবা কি নিজের ছেলেকে এতিম করতে পারে বলো? ‘
এই বলে তিনি আদনানকে আরো জোরে ধরিয়ে ধরেন।মুখটা চুমুতে ভড়িয়ে দেন আদনানের।বাবা-ছেলের এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না চারু আর রিমি দুজনেই।আদনান কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তাকে ধরাধরি করে গাড়িতে তোলে সবাই।আদনানের বাবা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন।ভাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে রিমি।সাথে বিসর্জন দিচ্ছে চোখের পানি।চারু মাথা নিচু করে বসে আছে।
১৪.
সন্ধ্যা নামছে পশ্চিম আকাশে।এখনো জ্ঞান ফেরেনি আদনানের।আজকে যে বিয়ের কথা ছিল সেটা বেমালুম ভুলে গেছে বাসার সবাই।সবাই আদনানকে ঘিরে বসে আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আজ তার দোষের কারনেই আদনানের এই অবস্তা।তখন যদি দেখে শুনে রাস্তাটা পার হতো তাহলে এটা হতো না।চারুর নিজেই আবার নিজের মনকে বলে,তারতো কোনো দোষ নেই।সেতো দেখতেছিল নিত্তিয়াইতো দৌড় দিল।
হঠাৎ চোখ খুলে যায় আদনানের।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে চারদিকে।বাসার সবাইকে নিজের সামনে দেখে খানিকটা অবাকই হয় সে।তারপর আস্তে করে উঠে বসে বিছানায়।সে উঠে বসতেই তার বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ এখন কেমন লাগছে বাবা? ‘
আদনান তার বাবা-মা দুজনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,’ ভালো।কিন্তু খুব ক্ষুধা লাগছে। ‘
ছেলের ক্ষুধার কথা শুনে সাথে সাথে খাবার আনতে যান মা।এদিকে আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।একপর্যায়ে সে চারুকে বলে,
—‘ কিরে,তুই মাথা নিচু করে কি ভাবছিস?নিশ্চয় বিয়ের কথ… ‘
কথাটা সম্পুর্ন করে না আদনান।তার আগেই খাবার নিয়ে এসে তার সামনে ধরে তার মা।আদনান একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর খেতে শুরু করে।সবাই বুঝতে পারছে সদ্য অজ্ঞান থেকে উঠে নিত্তিয়ার কথা ভুলে গেছে আদনান।কেউ মনে করিয়েও দিচ্ছে না তাকে।
খাওয়া শেষ করে আদনান উঠে দাঁড়ায়।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাওতো।আমি গুরুত্বপুর্ন একটা কাজ করবো। ‘
এই মুহুর্তে ছেলেকে একা ছাড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই হালিম সাহেবের।তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বে সবাইকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসেন তিনি।ধপ করে সোফায় বসে পড়েন হালিম সাহেব।চোখের কোনে জলজল করছে পানি কণা।হালিম সাহেবের এই অবস্তা দেখে চারুর বাবা আমজাদ সাহেব বলেন,
—‘ এই মুহুর্তে আমাদের এখানে থাকা ঠিক নয়।আমরা বরং আজকেই চলে যাই! ‘
আমজাদ সাহেবের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকান হালিম সাহেব।চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
—‘ নাহ।আপনাদের এখন এখানেই থাকতে হবে।আমার ছেলে যতদিন সুস্থ হয়নি ততদিন এখানেই থাকবেন আপনারা।আর আজকেতো চারু আর আদনানের বিয়ের ডেট ছিল।আজকেতো হলো না তবে কালকে বিয়ে হবে।আমি জানি এই মুহুর্তে আদনানকে একমাত্র চারুই ঠিক রাখতে পারবে।সেদিন আমি দেখেছি সব চারু কিভাবে আদনানকে বোঝাতে পারে। ‘
এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ান।আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোতে থাকেন।একেবারে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারুর হাতটা ধরে নিজের হাতের উপর রেখে বলেন,
—‘ চারু মা,তুমি আমার মেয়ের বয়সি।তোমার কাছে আজকে একটা অনুরোধ করবো।এটাই তোমার কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।তুমি আমার ছেলেটার পাশে থেকে তাকে আবার আগের মতো করো প্লিজ।আমি অনুরোধ করছি…’
চারু কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।হ্যা বলবে নাকি না বলবে বুঝতে পারছে না।সে এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়।সবাই চোখের ইশারায় হ্যা বলতে বলে।অবশেষে সে তাকায় রিমির দিকে।রিমি চোখের ইশারায় চারুকে অনুরোধ করে হ্যা বলতে।চারু তার চোখ বন্ধ করে হ্যা বলতে যাবে এই মুহুর্তে তার হাত থেকে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেন হালিম সাহেব।
চারু অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকায় সামনের দিকে।একটা ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে চারুকে।ছেলেটার পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তার মা।চারুও জড়িয়ে ধরে ছেলেটাকে।তারপর সে ছেলেটার কপালে চুমু খায়।ছেলেটা তার গালে চুমু খায়।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
চলবে..
{মাথায় এখনো ব্যাথা থাকার কারনে গল্পটা ভালো করে সাজিয়ে লিখতে পারিনি।আজকে ধামাকার কথা ছিল।অনেকে বলেছে ধামাকাটা কি?আমি এই পর্বে ধামাকা দিলাম না ধামাকা হবে পরের পর্বে।আর ধামাকাটা দেখতে পাশেই থাকুন।}
•••গুরুত্বপুর্ন কথা-কমেন্ট বক্সে অনেকে আমাকে আপু বলে ডাকে।তারা হয়তো জানেনা আমি মায়ের পেট থেকে জলজ্যান্ত ছেলে হয়ে জন্ম নিছি মেয়ে না।এই জলজ্যান্ত ছেলেটাকে মেয়ে বলে ডাকলে বুকের ভিতর মোচর মারে।কেউ আপু বলবেন না প্লিজ।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।