#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১২তম_পর্ব
আদনানকে এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে চারু।ছেড়ে দিলেই নির্ঘাত মৃত্যু।আদনান থ মেরে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।কিন্তু এই মুহুর্তেও চারু কোনো প্রকার উত্তেজিত না হয়ে ভ্রু-কুচকে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ এতদিন থেকে কি করছেন করছেন?সেটা বড় কথা নয়,বড় কথা এখন আপনি আমার বর।আমার সামনে অন্য মেয়ের ছবি দেখবেন,কান্না করবেন এসব মানবো না।এবারের জন্য বাঁচিয়ে দিচ্ছি।পরেরবার সোজা উপরে।হুহ..’
এই বলে একটানে আদনানকে একটানে কোণা থেকে নিয়ে আসে মাঝে।আদনান নিজেকে সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়ে চারুর উপরে।দুজনে ধপাস করে পড়ে যায় ছাদের মেঝেতে।চারু নিচে তার উপরে আদনান।এতজোরে পরার কারনে আদনানের খানিকটা লাগে।সে অবাক হয়ে চারুর দিকে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আদনান তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।আদনান উঠে দাঁড়ালে চারুও উঠে দাঁড়ায়।
আদনান কোনো কথা না বলে চারুর দিকে একবার তাকিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামতে শুরু করে।আদনান নিচে নামতেই চারু নিজেই নিজের বুকে এক ফু দেয়।মনে মনে তারিফ করে নিজের।এতসাহস সে কিভাবে পেল ভাবতেই অবাক হয় সে।চারু মনে মনে বলে,এখন থেকে এইরকম অত্যাচার তোমাকে সহ্য করতে হবে মি.আদনান।আমি পারবোনা এটা দেখতে যে আমার স্বামী আমার সামনে অন্যএকটা মেয়ের ছবি দেখে কান্না করছে।
১৯.
ব্রেকফাষ্টের টেবিলে বসে আছে সবাই।ব্রেকফাষ্ট করে চারু বাবা-মা রওনা দেবে।তাদের এগিয়ে দিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে আদনান আর চারুর উপর।প্রথমে আদনান যেতে না চাইলেও পড়ে যেতে রাজি হয়।
ব্রেকফাষ্ট করে গাড়ি বের করে আদনান।এক এক করে সবাই উঠে বসে গাড়িতে।গাড়ির সামনের সিটে আদনানের সাথে বসে পড়ে চারু,পিছনে তার বাবা-মা।
একপর্যায়ে তারা এসে থামে বাসষ্টান্ডে।তারপর গাড়িতে উঠে পড়ে চারুর বাবা-মা।বিদায়ের মুহুর্তে চারু ততটা কান্না করেনি তবে চোখের পানি বাধ মানেনি।চারু মন খারাপ করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।কিছুক্ষন পর আদনান এসে বসে পড়ে গাড়িতে।সে চারুকে থ মেরে বসে থাকতে দেখে কোনো কথা না বলে গাড়িতে বসে পড়ে।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ সিটবেল্ট পড়ে নে! ‘
আদনানের আদেশ পেয়ে সিটবেল্ট পড়ার চেষ্টা করে চারু।কিন্তু আগে থেকে অভ্যাস না থাকায় প্রতিবারে ফলাফল হয় ব্যার্থ।বারবার ব্যার্থ হয়ে একপর্যায়ে খুব রেগে যায় চারু।চিৎকার করে বলে,
—‘ ধুর,পড়বোই না। ‘
এই বলে সে সিটবেল্ট না পড়ে বসে থাকে।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু একটা বিষয় লক্ষ্য করে আদনান তাদের বাসার রাস্তায় না গিয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে তারপর চুপ করে বসে থাকে।আদনান এক মনে এক ধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে।
একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে একটা কাশবনে।জায়গাটা খুব নির্জন।আদনান গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপ করে হাটতে শুরু করে।চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে টপ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।তারপর সে দৌড়ে আদনানের কাছে যায়।আদনান টের চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার হাটায় মন দেয়।
কাশবনে কাশ ফুলে ভরে গেছে।সাথে হালকা বাতাস ফুল গুলো দুলিয়ে দিচ্ছে।এর ফলে কাশবনের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েকগুন।হালকা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় আদনান চারু দুজনেরই।আদনান তার কপালে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলে দেয়।চারু তার চুল ঠিক করে ব্যান দিয়ে ভালোভাবে আটকে দেয়।
আদনান গিয়ে বসে পড়ে একটা বেঞ্চে।চারু গিয়ে চুপটি করে বসে পড়ে আদনানের পাশে।তাদের মতো অনেক জুটি বসে আছে চারদিকে।কারো দিকে কেউ তাকাচ্ছেনা।সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে।
আদনান চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।চারু কৌতুহল নিয়ে উপরে তাকায় কি আছে দেখার জন্য?কিন্তু সে উপরে আকাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।অধৈর্য্য হয়ে মাথা নিচে নামিয়ে বিরবির করতে থাকে সে?
তাকে এরকম বিরবির করতে দেখে আদনান তাকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ বিরবির না করে কি বলতেছিস জোরেই বল।আমরাতো গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি,আমাদেরও তো শোনার অধিকার আছে! ‘
চারু দীর্ঘ সময় ধরে আদনানের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দেয়,তারপর খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে,
—‘ এইযে,আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন?কি দেখতেছেন কে জানে?পাগল হইছেন নাকি এটাই ভাবছি..’
চারুর কথা শুনে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।হাসতে হাসতে বলে,
—‘ পাগল হইনাই,প্রকৃতি দেখছি।পাগল হইলে তো এতক্ষনে ওইযে আইসক্রিম ওয়ালার সব আইসক্রিম নিয়া পালিয়ে যাইতাম। ‘
আইসক্রিমের কথা শুনে মনটা আনন্দে নেচে ওঠে চারুর।সেই কতদিন ধরে আইসক্রিম খায়না সে।বাসায় থাকতে প্রতিদিন ৩টা করে আইসক্রিম খাইতো আর এখানে একটাও খাইতে পারে না।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায় অথ:পর আদনানের হাতটা ধরে টানতে শুরু করে।
আদনানকে টানতে টানতে আইসক্রিম ওয়ালার সামনে নিয়ে আসে সে।আইসক্রিম ওয়ালার সামনে আসলে আদনান চারুর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভালোভাবে দাঁড়ায়।ততক্ষনে চারু আইসক্রিম ওয়ালাকে অডার্র দিয়ে দিয়েছে।
চারুর কথামতো আইসক্রিম ওয়ালা তাকে অনেক গুলা আইসক্রিম দেয়।চারু সেগুলো নিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসে।বিল নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
আদনান বিল মিটিয়ে দিয়ে মুখটা গোমড়া করে এসে চারুর পাশে বসে।এদিকে চারু মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে।চকিতে সে একবার তাকায় আদনানের দিকে।আদনানের মুখ গোমড়া দেখে একটু হেসে ওঠে চারু।তারপর নিজের একটা আইসক্রিম এগিয়ে দেয় আদনানের দিকে।
আদনান মনে হয় এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল।সে এক মিনিটও দেরি না করে চারুর হাত থেকে আইসক্রিমটা নিজের দখলে করে নেয়।তারপর দুইজনেই মনের সুখে আইসক্রিম খেতে থাকে।
২০.
‘ ইস,ছেলেটা পুরাই লাড্ডু।একটা যদি ইয়ে করতে পারতাম, ‘
মেয়েটার এরকম উগ্র মনোভাব কানে আসে চারু ও আদনান দুইজনেরই।আদনান চারুকে রাগানোর জন্য সামনে থাকা মেয়েটার উদ্দেশ্য হাত নারে।প্রতিউত্তরে মেয়েটাও হাত নারে।চারু খুব রেগে যায়।সে সাটাম উঠে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা আইসক্রিমটা ছুড়ে মারে খুব জোড়ে।তারপর দ্রুতপায়ে এগোতে শুরু করে মেয়েটার দিকে।একেবারে এসে থামে মেয়েটার সামনে।
মেয়েটার বয়স চারুর সমানই হবে।চারু মেয়েটাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঠাস করে একটা মেরে দেয়।তারপর মেয়েটার চুল ধরে চিল্লিয়ে বলে,
—‘ কি করবি?বল,কি করবি? ‘
মেয়েটা কান্না করতে শুরু করে দেয়।মেয়েটার কান্নার আওয়াজ শুনে তার গার্ডিয়ান ছুটে আসে।মেয়েটার গার্ডিয়ানকে দেখে চারু ভিষন ভরকে যায়।সে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে ভয়ে ভয়ে পিছিয়ে যায় আদনানের কাছে।তারপর আদনানের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।চারুর চোখে এরকম ভয় আদনান খুব কমই দেখেছে।কিন্তু কেন এত ভয় পাচ্ছে সে?লোকটা কে?নাকি লোকটা চারুর…
চলবে,,ইনশাআল্লাহ
{খুব তারাতারি লিখছি।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আজকে সন্ধ্যায় দিলাম সকালের বদলে।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।