#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৬তম_পর্ব
২৬.
হানিমুন যাওয়ার দিন সকালে চারু সর্বপ্রথম ঘুম থেকে উঠে।সে তারাতারি করে আদনানকে ডেকে দেয়।আজ সকাল ১০টায় তাদের ফ্লাইট।আদনান উঠে ফ্রেস হয়ে আসে।চারু কফি বানিয়ে এনে আদনানকে দেয়।তারপর সে নিজে ফ্রেস হতে যায়।চারু ফ্রেস হয়ে এসে কফির কাপটা হাতে নেয়।কালকে সব ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কারনে এখন গোছাতে হচ্ছেনা তাদের।আদনান নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বাজে।সে তারাতারি চারুকে রেডি হতে বলে নিজে রেডি হতে যায়।চারুও আর সেখানে বসে না থেকে রেডি হতে যায়।
আজকে চারুর মনটা অজানা এক খুশিতে ভরে গেছে।সে তারাতারি রেডি হয়ে নেয়।চারু রেডি হয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে যাবার পথে দেখে কিছু কাটা পড়ে আছে।যেকোনো সময় কারো পায়ে লাগতে পারে ভেবে চারু কাটা গুলো তুলে নিয়ে গিয়ে জানালার ধারে রাখতে ধরে।কিন্তু জানালার ধারে রাখতে ধরলেই কাটা গুলো তার হাত থেকে পিচলে নিচে পড়ে যায়।চারু সেদিকে আর মনোযোগ না দিয়ে আদনানের কাছে যায়।আদনানও রেডি হয়ে পড়েছে।অথঃপর ব্যাগ নিয়ে দুজনে রওয়ানা দেয়।
আদনান বাহিরে বের হয়ে অনেকক্ষন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে।তাদের বাসাটা গলির ভিতরে হওয়ায় এত সকালে কিছুতেই গাড়ি পায় না তারা।এদিকে ৯টা বাজতে চলেছে।
হঠাৎ আদনানের মনে হয় এয়ারপোর্টের সাথে তো তার মামার বাসা।তাদের অনেক গাড়ি আছে।আমি গাড়িটা সেখানে রাখলে কোনো প্রবলেম হবে না।এই ভেবে আদনান গাড়িটা বের করতে যায়।গাড়ি বের করতে গিয়ে চারুর ফেলা সেই কাটাগুলোতে লেগে টায়ার পান্চার হয়ে যায়।টায়ারের অবস্থা দেখে মুচড়ে পড়ে আদনান।তাদের মনে হয় আর যাওয়া হবে না।সে দ্রুত দারোয়ানকে দিয়ে মেকারকে ডেকে আনে।মেকার নিজের কাজে লেগে পড়ে।
এই পান্চার হওয়ার কারনে চারু মনে মনে নিজেকে গালি দিতে দিতে শেষ করে ফেলছে।সে যদি তখন কাটা গুলো সেখানে রাখতে না যেত তাহলে এত বিপদ হতো না।
কাটায় কাটায় 9:30 বাজে।এমন সময় মেকার বলে ওঠে,কাজ শেষ।তারাতারি মেকারের টাকা পরিশোধ করে গাড়ি চালাতে শুরু করে আদনান।গাড়িটা খানিকটা জোড়েই চালাতে থাকে সে।কয়েকমিনিটের মধ্যে সে তার মামার বাসায় পৌছে যায়।সেখানে গাড়ি রেখে কারো সাথে কোনো কথা না বলে দৌড়ে বের হয় চারুকে নিয়ে।হাতে তাদের মাত্র ১৪মিনিট সময় রয়েছে।এয়ারপোর্টের সাথেই আদনানের মামার বাসা হওয়ায় এয়ারপোর্ট যেতে আর কোনো যানবাহনের প্রয়োজন হয় না তাদের।
দুজনে একসাথে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে এক জায়গায় রেখে সবকিছু ঠিকঠাক করতে যায়।৫মিনিটের মধ্যে সে সব কিছু ঠিকঠাক করে আসে।তারপর চারুকে নিয়ে সোজা প্লেনে উঠে পড়ে।একজন কেয়ারটেকার তাদের সিট দেখিয়ে দেয়।দুজনে আরাম করে সিটে বসে পড়ে।
২৭.
প্লেন উড়তে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।জানালা খোলা নিষেধ থাকার কারনে জানালা খুলতে পারছে না সে।তবে জানালার কাচ পরিষ্কার হওয়ায় সবকিছু ভালোভাবেই দেখা যায়।প্লেন আকাশে উঠে যায়।চারু এবার মাথা ঘুরিয়ে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান নিজের মোবাইলের মধ্যে ডুবে রয়েছে।চারু মাথা এগিয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আদনান কি করছে?চারু দেখে আদনান নিত্তিয়ার বাকি ছবিগুলোও ডিলেট করে দিচ্ছে,তখন যে গুলো ডিলেট করতে পারেনি।চারু মনে মনে খুব খুশি হয়।সে আমেরিকায় গিয়ে আদনানকে সম্পুর্ন নিজের করে নিবে ভেবে অনেকটাই খুশি হয় সে।
আদনান নিজের কাজ শেষ করে চারুর দিকে ফিরে তাকায়।চারু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়।সাথে বলে ওঠে,
—‘ Past is Past..আমি আর অতীত নিয়ে ভাববো না,ভাববো বর্তমান নিয়ে।তবে তুই যদি মনে করে থাকিস আমি অলরেডি নিতিকে ভুলে বসে আছি,সেটাও তোর ভুল।স্ত্তৃতি বড়ো বেদনার চারু।এটা সহজে মোছা কিংবা ধোয়া যায় না।তবে সেটা নিয়ে ভাববো কম।বর্তমানকে ইনজয় করবো। ‘
আদনানের কথাগুলো প্রচন্ড রকমের ভালো লাগে চারুর।তার ইচ্ছা করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে পাপ্পি দিতে।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে তা কিছুতেই পারেনা।তবে পাওনা রেখে দেয়,এটা পরবর্তি একটা সময় দিয়ে দেবে।আদনান এবার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।চারু বুঝতে পারেনা আদনান কাঁদছে কেন?সে আদনানকে ডাকে হাত দিয়ে।আদনান চোখ খুলে পানি মুছে চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে,
—‘ এখনি না এত্তবড় লেকচার দিলেন।এখন আবার কান্না করতেছেন কেন?খুব তো বললেন,অতীত নিয়ে ভাববেন না,বর্তমানকে ইনজয় করবেন।তাহলে কান্না করতেছেন কেন? ‘
কথাগুলো বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে চারু।আদনান তার দিকে তাকিয়ে স্লান একটা হাসি দিয়ে বলে,
—‘ আমি কি করবো বল?যখনি চোখ বন্ধ করি তখন নিত্তিয়া চলে আসে আমার সামনে।আমি যখনই চোখ বন্ধ করি তখনই সে এসে আমাকে বলে,কিভাবে পারলে আদনান?তাকে দেখলেই আমার কান্না পায়।আমি কি করবো বল তুই? ‘
চারু আদনানের কথা শুনে নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখে বলে,
—‘ আমি নিতি ফিতি বুঝি না।আপনি আমার বর।আপনি শুধু আমার কথাই মনে করবেন,আর আমার জন্য কাদবেন।আপনি যদি অন্যকারো জন্য কাদেন তাহলে আমি গিয়ে সেই মেয়েটাকে মেরে আসবো।থাক সে এজগতে আর থাক সে ওই জগতে।মনে রাইখেন! ‘
চারু কথা শুনে হালকা হাসি পায় আদনানের।সে চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।চারুও এবার হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে প্লেন এসে থামে লস অ্যাঞ্জেলিস বিমান বন্দরে।চারু আর আদনান বিমান থেকে নেমে রওনা দেয় হোটেলের উদ্দেশ্য।আদনান একটা হোটেল বুক করে চারুকে নিয়ে রুমের মধ্যে যায়।চারু রুমে প্রবেশ করেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে।আদনান ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।
এইসময় কলিংবেল বেজে ওঠে।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন হোটেল বয়।সে চারুকে ইংরেজিতে কথা বলে।কিন্তু চারু তার কথার মাথামুন্ডু আলাদা করতে পারে না।সে ঢ্যাপঢ্যাপ করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।একপর্যায়ে ছেলেটা বিরক্ত হয়ে ইংরেজিতে বলে,ইডিয়েট পারসন।ইডিয়েট কথাটা বুঝতে পারে চারু।ছেলেটা যে তাকে অপমাম করলো সেটাও ধরে ফেলে বুদ্ধিমতি চারু।সে একটানে ছেলেটাকে ভিতরে নিয়ে আসে।বিছানার উপর ফেলে দেয় ছেলেটাকে।তারপর ছেলেটাকে মারার জন্য তার দিকে ঝুকতে শুরু করে।এই মুহুর্তে ওয়াসরুমের দরজা খুলে যায়।আদনান অবাক হয়ে তাকায় চারু আর ছেলেটার দিকে।চারু তারাতারি উঠে দাঁড়ায়।ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে আরো একবার ইডিয়েট বলে চলে যায়।
আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়।সে চারুর সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।আদনানের এমন ব্যবহারে বেশ কষ্ট পায় চারু।তবে কি আদনান তাকে ভুল বুঝলো?
চলবে..ইনশাআল্লাহ
{গল্প শেষ পর্যায়ে}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।