অনুভূতিরা মৃত তেইশ পর্ব .

0
193

গল্প- অনুভূতিরা মৃত
তেইশ পর্ব
.
এই মূহুর্তে তার মনে পড়ছে, লিওনার্দোর একটি কথা। পৃথিবীতে সবাইকে ভালোবাসা যায় না, আবার যাকে ভালোবাসা যায় তার দুরত্ব সহ্য করা কঠিন। বর্তমানে রুয়েলের অবস্থা ঠিক এমনই৷ বনলতাকে হারিয়ে ছেলেটা একা নিঃসঙ্গতা নীরবতায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখছে। এই ছেলেটার ভিতর এত কষ্ট আর যাতনা আজকের আগে জানা ছিল না। আবেগপ্রবণ গল্প শেষে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রুমে আসে মিহি৷ ভাবতে থাকে মিহি। ভাবনার দরজা তার দীর্ঘ হয়৷ ঘড়ির কাটা তখন চারটা ছুঁইছুঁই। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পশ্চিমা আকাশে লাল সূর্য জেগে উঠবে। বিচের উদ্দেশ বের হবে শত-শত পর্যটক। কেউ কেউ জীবনের প্রথমবার সমুদ্রের পাড় বসে দেখবে সূর্যদয়। সকালের সূর্য বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে। আজকের সূর্য বলে দিচ্ছে দিনটি হবে রৌদ্রময়। রুয়েলের মন দেখে বুঝা যাচ্ছে দিনটি তার জন্য ভয়াবহ কষ্টের৷ যে কষ্টের পরতে পরতে রয়েছে বনলতার জন্য হাহাকার।
.
একজন বন্ধু হিসেবে মিহির দায়িত্ব রুয়েলকে এই কষ্টের পাহাড় থেকে বের করা। যেভাবেই হোক তাকে বনলতার স্মৃতি ভুলানো। নয়তো মেঘে ঢাকা আকাশের মতো কালো থাকবে তার হৃদয়। যন্ত্রণাময় অনুভূতি নিয়ে পার করবে বাকি জীবন। রুয়েল সিগারেট ধরাচ্ছে, অাজ অনেকদিন পর সিগারেট হাতে নিলো। মুখে দেওয়ার সাহস হলো না। সে এখনও মনে করে এই সিগারেট খাওয়ার কারণে বনলতা দূরে। ভেঙে চুরমার করে দিলো সিগারেট দু’টি এভাবেই কষ্ট লুকালো সিগারেট ভাঙচুরে।
.
শীতের দমকা বাতাস হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে কখনো কখনো আবার শরীর ঠাণ্ডায় জমাট বাঁধছে। শীতকাল অনেক কষ্টের। বিশেষ করে রাস্তার পাশে অযত্ন আর অবহেলায় শুয়ে থাকা পথশিশু। একগুচ্ছ শুভ্র নির্মল গরম কাপড়ের অভাবে কেটে যায় পৌষ কিংবা মাঘের শীত৷ রাত দশটা অতিক্রম করছে, তারা ছুটল সিলেটের উদ্দেশ্যে। ঘুমকাতুরে ছেলে আজ সে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত রুয়েল নিজের অবচেতন মনে মিহির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে, এই সুযোগ মিস করছে না মিহি। সে বারবার মুগ্ধ হৃদয়ে তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে, কখনে আবার শক্ত করে হাত ধরছে। মূহুর্তে ঘুম ভেঙে যায়। লজ্জায় পড়ে যায় মিহি। লাজুক মেয়ে জানালার দিকে তাকাচ্ছে, মিটমিট করে হাসছে।
.
রাত যত গভীর হচ্ছে, আঁধার তত বেড়ে চলছে, পথের দুরত্ব কমছে। ভোর হতেই সিলেট এসে পৌঁছায় তারা৷ বিদায় জানিয়ে চলে যায় পরস্পর। শীতের সকালে আবার দেখা হয় ক্যাম্পাসের করিডরে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মিহি বলে উঠে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আমাদের জন্য ভালোবাসা ছড়িয়েছে, প্রথমবার সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে ছুয়েছে, সমুদ্রের বালিতে পা রাখতেই হৃদয় করেছে ম্লান। মুহূর্তে একটি ছেলে বলে উঠল।
— আমি তপু।
বোকার মতো চেয়ে আছে মিহি। কে এই ছেলে? ফিরতি রিপ্লাইয়ে মিহি বলে।
— কে আপনি?
— আমি তপু আহম্মেদ। আপনার সাথে ফেইসবুকে কথা হয়। আপনি সুকন্যা মিহি?
— হ্যাঁ
— আমি আপনার ক্যাম্পাসে নতুন। ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট।
মিহি তপুর বন্ধুত্ব ভার্চুয়াল ফেইসবুকের কল্যাণে। এই বন্ধুত্ব এখন ক্যাম্পাসের সীমানায়।
.
গভীর রাত। রাতের শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে, মিহির অাবদার ফুচকা খাবে। ফুচকা খেতে খেতে ঝালে কাঁপছে মিহির ঠোঁট। পানির সন্ধ্যানে রুয়েল। মূহুতেই মিহির চিৎকার। একদল লোক এসে তুলে নিচ্ছে তাকে। আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ। মিহিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে রুয়েল ছুটছে পিছুপিছু। চিৎকার করছে মিহি। মিহির চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। চোখেমুখে পানি দিয়ে বসে থাকে রুয়েল। দুঃস্বপ্ন যেন পিছু ছাড়ছে না। মুখে তার দুশ্চিন্তার ছাপ। এ কেমন স্বপ্ন? ভাবতে থাকে রুয়েল। ভাবনার দুয়ার তার দীর্ঘ হয়। কোন উত্তর মিলে না। বনলতার কথা মনে পড়ছে, মনে পড়ছে তার লিখে যাওয়া শেষ চিঠি যেখানে বনলতা লিখেছিল, ঠিক আমার মতো কাউকে বেছে নিয়ো। রুয়েল বিশ্বাস করে, বনলতার কোন রিপ্লেসমেন্ট নেই। তার প্রতি মিহির কেয়ার বারবার ভিন্নতা ভাবায়।
.
বনলতার চিঠির শেষ কথা মতো এমন মেয়ে বোধ হয় একজন আছে, সেটা মিহি। মিহিকে ভাবতে থাকে রুয়েল। ভাবনার পরিধি যত দীর্ঘ হয় সমাধান তত খোলাসা হয়। যে খোলাসায় দেখতে পায় মিহির জন্য তার প্রেম ভালোবাসা। পুরুষ জীবনে সঙ্গিনী প্রয়োজন। সেই সঙ্গিনী যদি বনলতার মতো মিহি হয়। আবার চিন্তা করে রুয়েল, এটা কী ঠিক হবে? এই মূহুর্তে ঠিক বেঠিকের পরিধি যাচাই করা কঠিন। মিহিকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়, আসছে সে। অপেক্ষারত মিহি। বারবার মিহিকে নিয়ে ভাবছে, কীভাবে জানাবে ভালোবাসার কথা। মিহি তো তাকে ভালোবাসে এখন শুধু তার দিক থেকে জানানোর কথা। মিহির সামনে উপস্থিত রুয়েল। এই মূহুর্তে ঘটতে পারে গল্পের মূল দৃশ্যপট। সিনেমার নায়ক নায়িকার মতো মিলন। শত ঝড় ঝাপটা শেষে পরস্পর দুজন দুজনা এক হবে। দর্শকদের মুখে হাসি ফুটবে কিংবা অধিক রোমান্টিক সিনেমা হলে নতুন প্রপোজ করতে যাওয়া মানুষগুলো বারবার দেখবে দৃশ্যপট।
.
রুয়েল এগিয়ে আসতেই, মিহি বলে উঠল আজকে তোমায় একটি সারপ্রাইজ দিব। থমকে দাঁড়ায় রুয়েল। প্রশ্ন করে, কী সারপ্রাইজ? হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে তপু। মিহি কী সারপ্রাইজ দিতে যাচ্ছে, তা এখনও অজানা। নিরব দর্শকের মতো দেখছে। মূহুর্তে মিহি বলে উঠল।
— জানো রুয়েল আজ আমি খুব খুশি। তপু আমায় ডায়মন্ডের রিং দিয়ে প্রপোজ করেছে। ভাবতে পারছো ডায়মন্ডের রিং, ছেলেটা কত সিরিয়াস। আমিও না বলতে পারিনি। লুফে নিলাম তার ভালোবাসা।
কথাগুলো শুনতেই মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে, বোবার মতো চেয়ে আছে রুয়েল। কিছু বলার ভাষা নেই। অবশেষে নীরবতা ভেঙে বলে উঠল।
— সত্যি আমি সারপ্রাইজ। এত বড় সারপ্রাইজ জীবনেও পাইনি।
.
চলবে……………..
— সাকিব হাসান রুয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here