রোদেলা লেখক: মাহাবুবা মিতু পর্ব: ৪

0
1193

রোদেলা
লেখক: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ৪

নাতাশা যেমনি দৌড়ে এলো তেমনি হুড়মুড় করে চলে গেলো। যাওয়ার সময় চা টাও নিয়ে যায় নি। মামী চা নিয়ে রেদেলাকে দিয়ে আসতে বললো। রোদেলা না শোনার ভান করে ওর ঘরে গিয়ে প্রিসিলাকে বললো কল্লোল ভাইকে চা দিয়ে আয় তো….

প্রিসিলা পড়ার টেবিলে মুখ গুঁজে পড়া দেখছিলো। এ কথা শুনে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো তোর আক্কেল নেই আপা…. আমি হিরার আণবিক গঠন নিয়ে পড়ছি আর তুই এসছিস চায়ের খবর নিয়ে….

যা আপা তুই যা, আমি এখন উঠলে…..
এমন সময় ওদের মা বাথরুম থেকে এসে বললো কি ব্যাপার…

বড় মামী ট্রে হাতে সাথে সাথে ঢুকলো, রোদেলা যা তো, চা-টা দিয়ে আয় ওদের ঘরে….
এমন পরিস্থিতিতে না করবার কোন পথ নেই। বাধ্য হয়ে চা হাতে গলো ওদের ঘরে। ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে ঢুকতেই দেখলো কল্লোল নাতাশার হাত পিছনের দিকে বাকিয়ে ধরে হেসে কি যেন জিজ্ঞেস করছে, নাতাশাও হেসে হাত ছাড়াতে চেষ্টা করছে, কিন্তু কল্লোল ছাড়ছে না, রোদেলা যে দরজায় নক করেছে ওরা মনে হচ্ছে শুনতে পায়নি……. ওদের দেখে মুচকি হাসে রোদেলা। দু-কদম পিছনে গিয়ে ট্রে থেকে চামচ ফেলে দেয় । শব্দে ওদের সংবিৎ ফিরলে নাতাশা হাত ছাড়িয়ে কল্লোলকে ভেংচি কেটে দৌড়… যেন পালাল… আরেকটু হলে সব খাবার পরে যেত রোদেলার হাত থেকে । আর মার বকাও খেতে হতো.. এই মেয়েটা কবে বড় হবে যে…..

উপায় না দেখে রোদেলাকে খাবার সার্ভ করতে হলো। ভদ্রলোকও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রোদেলা বললো – আমার বোনটা এমনি… একটু ইম-ম্যাচিউর, তবে মনটা ভীষণ ভালো। কল্লোল মুচকি হেসে যেন উত্তর দেয় যে ও তা জানে….

আপনি নাশতা করুন, দেখি ও কোথায় গেলো…
রোদেলা ফেলে দেয়া চামচ কু্রিয়ে চলে যেতেই কল্লোল বললো….
আমাকে একটা এন্টাসিড দিতে পারবেন…
রোদেলা বললো – আচ্ছা আমি নাতাশাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি…….. আপনি বসুন প্লিজ দাড়িয়ে আছেন কেন…..

ঘর থেকে বের হয়ে নাতাশাকে খুঁজতে গেলো। নাতাশাকে সারা বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেলো নানুমনির ঘরে। ওকে টেনে এনে বললো তুই কি গাধা, ছেলেটা নতুন এ বাড়িতে কখন কি লাগে না লাগে সে খেয়াল রাখবি, উল্টো একা ফেলে এসে পরলি….

যা মেডিসিন বক্স থেকে এন্টাসিড নিয়ে ওকে দে। আর শোন তুই এখন আগের নাতাশা নেই বুঝলি, এখন তুই মিসেস নাতাশা। এসব ছেড়ে একটু খেয়ালী হ…. বলে ওকে পাঠিয়ে দিলো।
রোদেলা গেলো রান্নাঘরে।

রান্নাঘরটা যেন ওদের লিখিত জায়গা। ওর মায়ের সারাদিন কাটে এখানে। আর বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ রোদেলা সাহায্য করে ওর মাকে। প্রিসিলা রান্নাঘরের ধারে কাছেও আসে না। মামীরা এখানে আসে কালে ভদ্রে, কারো কোন তরকারি পছন্দ হলো না তখন – একটা মাছ কিংবা ডিম ভাজতে দেখা যা কদাচিৎ। তাছাড়া তারা ব্যাস্ত স্টার প্লাস আর সনি চ্যানেল নিয়ে। বুয়া আছে দুজন একজন ছুটা যে কাপড় ধোয় আর ঘর মুছে চলে যায়।বাঁধা বুয়া টুকটাক কাজ করে সারাদিন ওদের মায়ের সাথে।

সেদিন অনেক রাত হলো কাজ শেষ হতে। ক্লান্তিতে রোদেলার চোখ ভেঙে এলো ঘুম।
রাতে রোদেলা খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখলো, দেখলো ওর বিয়ে হয়েছে অনেক সুদর্শন এক ছেলের সাথে। শাড়ি আর গহনায় মোড়ানো রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে সে কি যেন জিজ্ঞেস করছে। রোদেলা খিলখিল করে হাসছে আর ওর কথার জবাব দিচ্ছে। নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে ও, কিন্তু পারছে না। শেষে রোদেলা একটা চুমু খায় ওর বরের ঠোঁটে… ঘটনার আকস্মিকতায় রোদেলাকে ছেড়ে দেয় ওর বর। আর রোদেলা দৌড়ে পালায়…..

রেদেলার ঘুম ভাঙে ফজরের আজানের শব্দে।
কি মিষ্টি একটা স্বপ্ন, ঘুম ভেঙে ভীষণ লজ্জা পায় ও। বিছানা থেকে নেমে ওযু করে নামায পড়ে আবার বিছানায় যায়… রাত এখনো অনেক বাকী। আরেকটু ঘুমানো যাবে….
কিন্তু কিছুতেই ঘুম আর এলো না। শেষে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। এক কাপ চা হাতে চলে গেলো ছাদে। শরৎকাল শেষের দিকে। হেমন্তের আগমণ আর দিন-কতেকের ব্যাপার। এবার ঠান্ডাটা জলদিই এসে পরেছে। চারদিকে কি যেন ঘিরে আছে, কুয়াশা না ঠিক। হালকা একটা বাতাস বইছে একটু পর পর। এ সময়কার বাতাসটা অনেক স্নিগ্ধ। ছাদের এপাশ থেকে বুড়িগঙ্গা নদী দেখা যায়, সাপের মতো নদীতে দু একটা নৌকা দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ঘুমন্ত নগরী, তার আড়মোড়া ভাঙা হয়নি এখনো… একটা লঞ্চ যাচ্ছে সদরঘাটের দিকে।
পানি গুলোকে দেখাচ্ছে কালচে-হলুদ । নদীর এদিকটায় দূষণ কম। আগে প্রায়ই যেতাম বিকেল হলে নদীর পরে। বড় হওয়ার সাথে সাথে নদীর আসপাশের জায়গা গুলো কেমন বদলে গেছে। গাছ কেটে দোকানপাট, বাজার হয়েছে। আমরা বড় আর ব্যাস্ত হয়ে গেলাম সাথে সাথে নদীর এই নির্জন পারটাও সময়ের ব্যাবধানে সরগরম হয়ে পরলো….

আকাশটা কেমন কমলাভ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে, সূর্য উঠবার আয়োজনে ব্যাস্ত বোঝাই যাচ্ছে। চা খেতে খেতে সকাল হওয়া দেখা মন্দ না। রোদেলা চোখ বন্ধ করে রাতের স্বপ্নটাকে মনে করার চেষ্টা করে। চুমু খাওয়ার কথাটা ভেবে মুচকি হাসে। খুব চেষ্টা করে ওর স্বপ্নে দেখা বরের চেহারা মনে করতে কিন্তু চেহারাটা অস্পষ্ট। নাহ্ কিছুতেই মনে পরছে না….

এমন সময় হলকা একটা কাশি শুনে চমকে ফিরে দেখে কল্লোল, অপ্রস্তুত রোদেলার হাত লেগে চায়ের কাপটা কার্নিশ থেকে মাটিতে পরে যায়।

কল্লোল প্রথমে বলে-
ঘুম ভেঙে গেলো, তাই ভাবলাম ছাদে হেটে আসি সকালের বাতাস শরীরে জন্য ভালো….

রোদেলা কাপ তুলতে তুলতে বললো ভালোই করেছেন। আপনি হাঁটুন আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি….

বলে রোদেলা নিচে নেমে রান্নাঘরে চা বসিয়ে মামীকে বললো কল্লোল ভাই ছাদে, নাতাশাকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দিন। মামী নাতাশাকে বকে ঘুম থেকে তুললো। ফ্রেশ হয়ে রোদেলা কোচিং-এর জন্য তৈরী হলো, আজ থেকে আবার টিউশন ও শুরু হবে, রোদেলার ব্যাস্ত দিন শুরু। সামনে স্টুডেন্ট দের পরীক্ষা। ব্যাগ গুছিয়ে ওর মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরলো। বাড়ির গেইট থেকে বের হতেই রোদেলাপু….. ডাক শুনে পেছনে তাকালো রোদেলা দেখলো দুজনে উবু হয়ে দাড়িয়ে আছ দেয়ালের গা ঘেঁষে, দুটি কাপ পাশাপাশি দুজন। দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো রোদেলা, হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো দুজন। যে পর্যন্ত রোদলাকে দেখা গলো ওরা দুজন চা খেতে খেতে তাকিয়ে থাকলো ঐ পথের দিকে……
চলবে….
previous:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1476290956165424/
Next :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1478648092596377/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here