রোদেলা
লেখা: মাহাবুবা মিতু
পর্ব: ২১
পরদিন মামী-মামা দুজনে গেলো হসপিটালে। রোদেলার তখনো খুব ইচ্ছে করছিলো যেতে, কিন্তু উপায় না দেখে কলেজে চলে গেলো। সারাদিন ব্যাস্ত সময় পার করে বিকেলে বাসায় ফিরে দেখলো ওদের অর্ডার করা শাড়ি গুলো এসেছে। সেগুলিকে গুছিয়ে রেখে বড় মামীকে জিজ্ঞেস করলো শোভনের খবর। তিনি বললেন ভালোই আছে। আগামীকাল ছুটি দিয়ে দিবে, পনেরো দিন পর গিয়ে আবার দেখিয়ে আনতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে রোদেলা কথা বললো নাতাশার সাথে। রোদেলার মনে হলো শোভনের এ ব্যাপার গুলো ওকে জানানো উচিত। ভবিষ্যতে এসব নিয়ে যদি কোন কথা হয় ঐ বাড়িতে তাহলে অন্তত রোদেলার ডিফেন্স হিসেবে কিছু তো বলতে পারবে…! তা না হলে এসব জানলে বেচারী আকাশ থেকে পরবে। কষ্ট পাবে, ভুল বুঝবে ওকে। কিন্তু কথাগুলো বলবার কোন সুযোগ ও পেলো না,বর্তমান পরিস্থিতি এসব কথা বলার মতো না। কারন ও তখন বলছিলো গত রাতের অপারেশন এর ভয়াবহ বর্ণনা। রক্ত নিয়ে কি যেন ঝামেলা হয়েছিল ওর শরীরে। প্রথমে ডাক্তার কিছুই বলে নি এ ব্যাপারে। তবে এখন শোভন ভাইয়া ভালো আছেন। কথা বলেছেন বৌ-মার সাথে, এ্যামি আপুর সাথে। কথার গতিপ্রকৃতি দেখে রোদেলা তখন এসব ব্যাপার এড়িয়ে যায়। ভাবে কোন একসময় বলবে সুযোগ করে।
এরপর রোদেলা পরীক্ষা নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় দিনগুলো দ্রুত কাটতে লাগলো। ওর মা টুকটাক ঘরের জিনিসপত্র কেনা শুরু করে দিয়েছেন। এ বাড়িতে কেবলমাত্র নানীর ঘোর আপত্তি ওদের যাওয়া নিয়ে। আর কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমনকি নোভেল পর্যন্ত এসব নিয়ে চিন্তিত না।
যেন কি হচ্ছে কেউ ঠিক বুঝতে পারছে না। রোদেলার হাসি পায় এসব দেখে। তারা মনে মনে ভীষণ খুশি ওদের চলে যাওয়ায়। এত বছর একসাথে থেকেও ওদের প্রস্থান কারো মনে কষ্টের সঞ্চার করে নি। এত বছর এত গাধার খাটুনি খেটে, এত যত্নে এই সংসার আগলে রেখে, নিজের সন্তানদের থেকে অন্য কাওকে বেশী ভালোবেসে কি লাভ হলো….? ওর মাকে এ প্রশ্নগুলে করতে ইচ্ছে হয়।
যদিও যে সময়ে ওরা এসেছিলো এ বাড়িতে সেটা ওদের জন্য কঠিন সময় ছিলো, তবে ওরা একা থাকতে পারতো ঠিকই…
হয়ত কষ্ট হতো, থমকে যেতো, এখানকার মতো আলাদা ঘর সবার হয়তো থাকতো না। এমন পরিবেশে বড় হতে পারতো না, জীবণ যাপনের মানও হয়তো এর চেয়ে কম থাকতো, কিন্তু তখন বেঁচে থাকায় সম্মান থাকতো। কষ্টে অভিযোজিত হয়ে ওদের জীবণটা অন্য রকম হতো। এখনকার মতো এত আত্মগ্লানি থাকতো না। এত খেটেও সংসারে এত শ্রম ভালেবাসা দিয়েও এভাবে প্রস্থান করতে হতো না। বাকী সব খালামনি আর তাদের ছেলেমেয়েদের মতো ওরাও আদর পেতো, সম্মান পেতো। যা থেকে বরাবর বঞ্চিত ওরা।
রোদেলা মোটামুটি খুশি, এই মিথ্যে দয়া আর
নোভেল নামের রাহুর বলয় থেকে ওর মাকে ওরা ওদের করে পাবে। এবার হয়তো ওদের মা ওদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, সব হারিয়ে, ভালোবাসবে পরম মমতায়। তিনি যে ধাক্কা পেয়েছেন এদের কাছ থেকে তা কাওকে বলার মতোও না। গত দুই সপ্তাহ ধরে ওদের মা বড় মামার কাছে টাকাপয়সার হিসেব চাচ্ছেন। তিনি না দিচ্ছেন টাকা না হিসেব। মা তো জোর করে চাইতে পারেন না। কারন তিনি তাকে অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন। “অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই” এটা তিনি ভালোভাবে টের পাচ্ছেন।
দিনের পর দিন মাসের পর মাস হিসেব বিহীন রয়ে গেছে হিসেব গুলো। এতগুলো টাকা তিনি এখন চাইলেও দিতে পারবেন না। এদিকে তিনিও একেবারে শূন্য। টাকার এই ব্যাপারটা তাকে একটু শান্তি ও দিচ্ছে। তার স্বামী যে আর্থিক ক্ষতি এদের করেছে, এ হিসেব রইলো তার শোধ হিসেবে। এটাই এখন তার স্বান্তনা।
রোদেলার নানী, তিনি যখন সব হারিয়ে এ বাড়িতে এলেন আশ্রয়ের খোঁজে, তখন তাকে একটা লম্বা বল চেইন দিয়েছিলেন। তিনি কখন মরেন এই ভেবে। এ কথা বাড়ির কোন বৌ কিংবা কোন মেয়ে জানে না। নাতাশার বিয়েতে সেটা প্রথমবারের মতো পরেছিলেন তিনি। কেও হয়তো লক্ষ্যই করেনি সেটা। ভেবেছিলো ইমিটিশন হয়তো। যে বাবার বাড়িতে আশ্রিত তিনি আবার এত দামী গহনা কোথায় পাবেন….?
সেটাই তার এখনকার একমাত্র সম্বল। কিছু টাকাও তার সঞ্চয় আছে। রোদেলার টিউশনির টাকা। খরচ করে যা থাকতো তা তিনি জমিয়ে রাখতেন।
তিনি গহনাটা বিক্রি করবেন নাকি টাকাগুলো খরচ করবেন বুঝতে পারছেন না।
সেটাকে বিক্রি করলে বেশ কিছু টাকা থাকবে খরচের পর। এসব চিন্তায় তিনি গত পনেরো দিন ধরে চিন্তিত। তার বোনদের সাথে এ বিষয়ে কোন কথা তিনি বলেন নি। কারন তারা এসব শুনলে বলবেন মেয়ে দুটির বিয়ে পর্যন্ত না যাওয়ার কথা। কিন্তু তার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে সংসার তিনি এতদিন আঁকড়ে ধরে রেখেছেন নিজের ভেবে সেটা তার আসল ঠিকানা না, ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি।
তার চিন্তায় যে ভুল ছিলো সেটা হয়তো বুঝেছেন। রোদেলার মায়ের কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই। না ভাইদের প্রতি না তাদের বৌদের প্রতি। তিনি খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন সকলের সাথে। সবাইও সুন্দর মতো কো-অপারেট করছে।
এদিকে শোভন অনেকটা সুস্থ এখন। ঔষধ ফুল কোর্স কম্পিলিট। শুধু মাত্র ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হয় নিয়মিত। সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা তখন টুকটাক চলছিলো। তাছাড়া শোভনকে নিয়ে যে ভীতি ছিলো, তা এখন নেই। ওর এই হাত নিয়ে যেতে কোন সমস্যা হবে না। তাই প্রস্তুতি চলছিলো সবার।
রোদেলা ঐ বাড়িতে কখনো যাবে না মনে মনে শক্ত প্রতিজ্ঞা করেছিলো । কিন্তু সে কথা ভুলে গেলো ও। ও কিছু একটা বাহানা খুঁজছিলো শোভনকে দেখবার। শেষে শাড়ি গুলো নিয়ে বড় মামীর সাথে প্রথমবারের মতো গেলো নাতাশার শ্বশুরবাড়িতে। গিয়ে দেখে শোভন বাড়িতে নেই। ফিজিওথেরাপি নিতে গিয়েছে। ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। একমাত্র ওর জন্য এসেছে এ বাড়িতে রোদেলা। ওই নেই বাড়িতে….!
নাতাশা ঘুরে ঘুরে সব দেখাচ্ছিলো। সুন্দর একটা বাসা, যত্ন আর পরম ভালেবাসায় গড়া এর প্রতিটি কোণা। ছবির মতো সুন্দর এই বাসাটা বেশ পছন্দ হলো রোদেলার। এর বসার ঘর, বেলকনি, রান্নাঘর সব এত টিপটাপ করে গুছানো যে বলার মতো না। একবার ভাবলো “এ বাসাটা ওর হলে মন্দ হতে না… ” আবার ভাবলো “এ বাসাটা ওরও তো হতে পারতো….!” কল্লোলের সাথে প্রথমে ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার কথাটা ভেবে ও এমন আক্ষেপ করে। আবার ভাবে ও “কি ভাবছি এসব আমি…? ”
এসব ভাবা তো পরশ্রীকাতরতা, ছিঃ রোদেলা তুই এত নীচ….!
আমাদের সবার মনে চলমান কথাগুলো ভগ্যিস কেও শুনতে পায় না…… এসব ভাবতে ভাবতে নাতাশার বৌমা মানে ছোট চাচীর ঘরে গেলো রোদেলা। তিনি তখন নামাজ পরছিলেন।
রোদেলা অপেক্ষা করলো তার নামাজ শেষ হওয়ার। নামাজ শেষ করে তিনি রোদেলার কাছে এসে ওর মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন
– কেমন আছো মা….?
– ভালো আছি আন্টি, আপনি কেমন শুকিয়ে গিয়েছেন
– রোগীর সাথে কেও থাকলে সে নিজেও রোগী হয়ে যায় মা, কখন এসেছো তুমি,
– এই তো আধঘন্টা হবে, আন্টি সেন্টমার্টিনে যাওয়া উপলক্ষে আমরা কিছু শাড়ি তৈরী করেছি, সেগুলো আপনাদের দিতে এসেছি,
– ও আচ্ছা, খুব ভালো কথা। আর তো এলে না মা হসপিটালে…
– পরীক্ষা ছিলো আন্টি তাই আসি নি
– তোমার মাও তো এলেন না একবার।
– মা একটু অসুস্থ ছিলেন তাই আসতে পারেন নি
– (কথাটা মিথ্যা বললো রোদেলা, নতুন বাসা নিয়ে যে ওর মা ব্যাস্ত তা এড়িয়ে গেলো )
– ও আচ্ছা, এখন কেমন আছেন তিনি…?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন…
এরপর নাতাশা এসে ডেকে নিলো ওকে। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো ওরা। নাতাশা বিয়ের এলবাম বের করে ছবি দেখালো ওদের। ওদের পারিবারিক এলবামও দেখালো৷ শোভন, এ্যামী, কল্লোলোর ছবি দেখে দুই বোন হাসিতে লুটোপুটি অবস্থা। এমন সময় শোভন নাতাশার ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো, ওদের হাসির শব্দ শুনে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে পরলো ও, ওদের দুই বোনের এমন হাসি দেখতে লাগলো ওর।
রোদেলার মন খোলা এই হাসি দেখে ভিতরটা কেমন হাহাকারে ভরে উঠলো, এত সুন্দর হাসির এই মেয়টা কোনদিন আমার হবে না….!
এই মেয়েটা আমার হলে পৃথিবীর এমন কি ক্ষতি হতো….?
হঠাৎ নাতাশা লক্ষ করে শোভনকে, দাঁড়িয়ে গিয়ে ওকে আসতে বলে, রোদেলা খেয়াল করে শোভনকে, ও নিজেও দাঁড়িয়ে যায়, কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ওর বর্তমান হালহকিকত। কেমন নির্লিপ্ত ভাবে কথা গুলো বলছে, যেন ওদের পেছনে কোন ইতিহাসই নেই। ছোট ছোট শব্দ উত্তরের কাজ শেষ করে নিজের ঘরে আসে শোভন। ওর থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়। যত ওকে দেখে তত কষ্ট বাড়ে, কষ্ট বাড়ার কারন কল্পনায় অনেক দূর অব্দি হেঁটে ফেলেছে ও রোদেলার সাথে। সেখান থেকে বসে এমন নির্লিপ্ত আচরণ ওর সহ্য হবে না। তারচে ভালো দূরে থাকা৷ অন্তত কল্পনার জগতে এর প্রভাব পরবে না। শোভন কল্পনার রোদেলাকে নিয়ে একা থাকতে চায়।
অনেক গল্প, কথা শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো তারা। রোদেলা ফিরবার সময় শোভনের ঘরে গিয়ে ওকে বিদায় নিতে যায় । ইচ্ছে করেই ওর ঘর অব্দি যায় রোদেলা৷ এই ঘরে কবে আসবে ও এমন একটা কথা শোভন বলেছিলো ক্ষুদে বার্তায়। কথাটা হঠাৎ মনে পরে যায় ওর। ঘরে ঢুকে দেখে ঘর ফাঁকা, শোভন নেই, ওয়াশরুমে আছে ভেবে অপেক্ষা করে রোদেলা। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে ঘরটাকে। এ বাড়ির একটা বিশেষত্ব হচ্ছে এদের একেকটা ঘর বিশাল বড়। শোভনের ঘরটাও বিশাল বড়। মাঝখানে খাট রাখা, একটা ওয়ারড্রব, ডেক্সটপ টেবিল, আর একটা সোফা এই হচ্ছে আসবাবপত্রের তালিকা।
ঘরটা ছিমছাম গোছানো, ব্যাচেলর ছেলেদের ঘর যেমন নোংরা, এলোমেলো থাকে এমন না। ঘরের সাথে লাগোয়া বেলকনি।
বড় দেয়ালটাতে ছবি টাঙানো। পারিবারিক ছবি, আর ওর একার ছবি, ছবিগুলোতে উচ্ছাস যেন উপচে পরছে, এত প্রাণবন্ত ছবি। ছবিগুলো দেখছিলো রোদেলা। এমন সময় ক্ষীণ একটা শব্দে ভীত হয়ে পিছনে ফিরে রোদেলা। দেখে শোভন দাড়িয়ে ওর পেছনে। ওরা দুজন এত কাছাকাছি ছিলো যে একজনের নিশ্বাস অন্যের গায়ে ধাক্কা খাওয়ার মতো অবস্থা। চমকে যায় রোদেলা । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সোফায় থাকা ওর ব্যাগ নিতে নিতে বলে,
– আরেহ্ আপনাদের ছবিগুলো দেখছিলাম।
– ওহ্
– আচ্ছা আসি তাহলে….
– যদি যেতে না দিই
– ধূর… কি যে বলেন, সেই সৌভাগ্য কি আমার হবে…?!
– একটু দেখি না আমরা চেষ্টা করে
– আমার দিক থেকে কোন সাহায্য আপনি পাবেন না। আমাদের পথ আলাদা। আমরা খুব ভালো বন্ধু হতে পারি। এর বেশি কিছু না। তাছাড়া আপনি অসুস্থ, শরীর ভয়ানক দূর্বল। এসব ভাবা বাদ দিয়ে নিজের খেয়াল রাখুন, কি অবস্থা হয়েছে আপনার দেখেছেন। এখনো নাকি ঠিকঠাক হাত নাড়াতেই পারেন না…. আবার আসছে “যদি যেতে না দিই” কথাটা ঠোঁট উল্টে বললো রোদেলা, খুব কাছের বন্ধু যেমন খোঁচা দেয় তেমনি করে।
কথাটা শুনে শোভন ঘরের দরজাটা আটকে দেয়,
ওর কাছে এসে এক হাত দিয়ে ওর কাঁধে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরে ওকে। স্প্লিন্ট বাধা হাতটা উঁচু করে দুই হাত রোদেলার দুই পাশের দেয়ালে রেখে বলে-
– এসব শারীরিক ব্যাথা, কষ্ট কিছুই না রোদেলা, আমার যত কষ্ট তার তুমিই কারন।
আমি যদি জিদ করি তোমাকে পাবার আমি যেভাবেই হোক তোমাকে অবশ্যই পাবো, কিন্তু আমি তোমাকে এভাবে পেতে চাই না। বলে কপালের সামনে আসা চুল গুলো ওর ভাঙা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় শোভন। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে।
তারপর ও দরজা খুলে বেরিয়ে যায়…
দাঁড়িয়ে থাকে রোদেলা মূর্তির মতো, ওর পৃথিবীটা যেন থমকে ছিলো কিছুক্ষণের জন্য।
চলবে…
(যারা উপন্যাটি পড়ছেন অনুগ্রহ করে তারা একটু রেসপন্স করবেন। দীর্ঘ বিরতি থাকার কারনে পেজের রিচ নেই বললেই চলে)
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1504774853317034/
next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/1506747323119787/