#কহিনুর,০৪,০৫
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪
দরজা খোলার শব্দ শুনে অধরার হাত কেঁপে উঠলো। ভয় পাচ্ছে। খু*ন করবে বললেই তো হয়না সাহসের দরকার হয়। তবুও চেষ্টার ত্রুটি করবে না অধরা। খঞ্জরটা শক্ত করে চেপে ধরে বসে থাকলো। বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল সামান্য কেটেও গেলো। জ্বলছে সেই সঙ্গে তরল কিছু গড়িয়ে ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে। পেটের বাম দিকে চিনচিন করে ব্যাথা করছে। জুবায়ের রুমে ঢুকলো তবে একা না সঙ্গে এক কাজের মেয়েকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটা পানি আর কিছু খাবার নিয়ে দাড়ালো। অধরার হাসি পেলো এদের ব্যবহার দেখে। আদর যত্ন করে এরা ওকে বলি দিতে চাইছে। জুবায়ের থমথমে মুখে আশেপাশে তাঁকিয়ে বলল,
> খেতে হবে। তুমি খেতে পারবে নাকি আমি সাহায্য করবো?
অধরা নাক মুখ কুচকে ফেলল। কিছুক্ষণ আগের দৃশ্যটা ওর চোখের সামনে ভাসছে। সেই সঙ্গে লোকটার উপরে ওর ঘৃণা কাজ করছে। অধরা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
> দরকার হবে না। জুবায়ের ফারুকীর হাতের খাবার আমার কাছে বিষ সমতুল্য। এই ঘরে আপনি না আসলে আমি খুশী হবো। ল*ম্প*ট চরিত্র*হীন খু*নি আপনাকে আমি ঘৃণা করি।
অধরা হাতের খঞ্জরটা আরও জোরে চেপে ধরলো। এই মূহুর্ত্তে লোকটার বুকে বসিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো কিন্তু তাঁতে কি হবে? লোকটা মরবে না। অধরা ওর শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজের অবস্থা আরও নড়বড়ে করে ফেলবে। আপাতত খু*নের পরিকল্পনা বাদ দিতে হচ্ছে। জুবায়ের ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ওর কপালে ভাজা পড়েছে। এই মেয়েটাকে যতবার ছুঁয়ে দিয়েছে ততবার মেয়েটা লজ্জায় কুকড়ে গেছে। মাথা তুলে তাঁকানোর সাহস হয়নি। সব সময় মাথা নিচু করে ওষ্ঠে হাসি রেখেছে কিন্তু আজ এর কোন রূপ এটা? আজকের মেয়েটার সঙ্গে তো জুবায়েরের পরিচয় নেই। একদম আলাদা একজন মানবী। জুবায়েরকে চুপচাপ দেখে অধরা আরও জ্বলে উঠলো। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> আমি কোনো লম্পটের মুখ দর্শন করতে চাইনা জুবায়ের। আপনি এখুনি বের হয়ে জান। আপনাকে দেখলে আমার ঘৃণা করে শুনছেন?
জুবায়ের বিরক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে অধরাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে বলল,
> তোমাকে স্পর্শ করেছি এবার কি করবে? নিজেকে মারবে নাকি আমাকে?
জুবায়ের কথাটা বলে ওকে এক হাতে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতটা অধরার বাম হাতের কব্জি ধরে সামনে তুলে ধরলো। অধরা আগেই খঞ্জর কাপরে মধ্যে ছেড়ে দিয়েছিল। জুবায়ের ওটা পেলো না কিন্তু অধরার কাটা হাতটা দেখতে পেলো। পাশের মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের মেয়েটাকে যেতে বলে অধরাকে জোর করে বসিয়ে দিলো। হাতের রক্তটা নিজের হাতে মেখে নিয়ে বলল,
> তুমি মারবে না অধরা। শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো। জানি মৃত্যুতে কারো হাত থাকে না তবুও মন বলছে যতদিন কহিনুর তোমার মধ্যে থাকবে ততদিন তোমার মৃত্যু হবে না। যদি ভেবে থাকো সুইসাইড করবে তবে ভূল করছো। তোমাকে ঘিরে আছে অদৃশ্য মায়াজাল। তুমি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছো। এভাবে মুক্তির আশা করা বোকামি। চুপচাপ খাওয়া দাওয়া করো। সুস্থ থাকো ও আসলে তোমাকে ছেড়ে দিব।
অধরা এক ঝটকায় নিজের হাতটা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল,
> আপনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলে খুশী হবো। নিজের খেয়াল রাখতে আমি পারি। জুতা মেরে গরু দান আমার পছন্দ না। অধরা তিল পরিমাণ আঘাত পেলে পাহাড় পরিমাণ ফিরিয়ে দিতে জানে। আমার চোখের প্রতিটা ফোঁটা পানির মূল্য আমি উসুল করে নিবো।
> জিদ করোনা। তুমি কখন থেকে আমাকে নোংরা নোংরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছো। আজ পযর্ন্ত তোমাকে আমি কোনো কিছুর জন্য জোরজবরদস্তি করেছি বলো? গায়ে হাত পযর্ন্ত তুলিনি। এখানে অহরহ বিয়ে ডিভোর্স বেবী এসব হয়ে থাকে। এসবে আমি খারাপ কিছু দেখছি না। জুহির আরেকজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। আমি জানি তবুও আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
> আপনি আর আপনার জুহি দুজনের চরিত্র হচ্ছে ফুলের মতো পবিত্র। আপনাদের চরিত্র তো সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাঙ্গালী বাবা মায়ের রক্ত বইছে। দেশে জন্ম হয়নি তো তাঁতে কি আমার বাবা মা আপনার বাবা মায়ের মতো অমানুষ না। আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছেন। আপনার মতো ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করতে না।
অধরা অপেক্ষা করলো না। ধাক্কা দিয়ে জুবায়েরকে পিছিয়ে দিলো। ছেলটা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো। বাবার হুকুমে এতক্ষণ নিজকে শান্ত রাখতে পারলেও এখন আর পারলো না। ছুটে গিয়ে অধরার কাটা হাতটা এক হাতে চেপে ধরে আরেক হাতে ওর মুখটা চেপে ধরে বলল,
> খুব তেজ হয়েছে না? ভেবেছিলাম দূরে থাকবো কিন্তু না। আজ থেকে আমি তোর সঙ্গেই থাকবো। আমার এই দুহাত হাত অবাধে ঘোরাঘুরি করে তোর শরীর পারলে বাঁধা দিস। খুব ঘৃণা করিস না? এটাই হবে তোর শাস্তি।
অধরার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। জুবায়ের ওর গাল ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে অধরার হাতটা ব্যান্ডেজ করে বেরিয়ে গেলো। অধরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো। রাগে দুঃখে আর অপমানে নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে। পাশে পড়ে থাকা খঞ্জরটা তুলে নিয়ে নিজের পেটে চালিয়ে দিতে গেলো কিন্তু হলো না। অদৃশ্য বাধা পেলে। একবার দুবার করে বহুবার করলো না হলো না। কেউ ওকে থামিয়ে দিচ্ছে। মূহুর্ত্তে অধরার কান্না থেমে গেলো। এমন কেনো হচ্ছে? কেউ বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু কেনো আর কে?মনে হলো জ্বীন ভূতের খপ্পরে পড়েনি তো? অধরার কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পেলো। ভাবলো শুধু শুধু জুবায়েরের সঙ্গে আর ঝামেলা করবে না। স্বামী নামের লোকটাকে আজ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রহস্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে। সত্যিটা জেনে এখান থেকে পালিয়ে যাবে। জুবায়ের নিজের ধ্বংস নিজে ডেকেছে এখানে ওর কিছু বলার নেই। কথাগুলো ভেবে ও ছুরিটা দিয়ে খপ করে হাতের বাঁধনটা কেটে ফেলল। বেইমানের ছোঁয়া ওর পছন্দ হচ্ছে না। নিজের মতো ওষুধ লাগিয়ে নিয়ে বিছানা ঠিকঠাক করে ফেলল। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো। শরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। এতক্ষণ শুধু মনের জোরে দাঁড়িয়ে থাকলেও আর হচ্ছে না। ক্লান্তিতে চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসলো।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆
আকাশ থেকে নেমে আসা এক টুকরো চাঁদ অধরার কোলে নেমে আসছে। সোনালী কেশ চোখগুলো হালকা বাদামি আর গায়ের রঙ উজ্জল ফর্সা। গোলাকার মুখোমন্ডল। অধরা কোলে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটাক হুহাতে আকড়ে ধরে কপালে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো।ওর চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। অধরা বেশ কয়েকবার মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো, কহিনুর আমার কহিনুর। অধরার খুশী বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না কেউ একজন ঝট করে বাচ্চাটাকে নিজের কাছে কেঁড়ে নিলো। অধরা দ্রুত চিৎকার করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভালো করে দেখলো এই লোকটা আর কেউ ওর নিজের স্বামী। জুবায়ের মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। পাশে আছে ওর বাবা মা বোনেরা সবাই। জুবায়েরের বাবা পাশ থেকে একটা ধারালো খঞ্জর ছুড়ে দিয়ে বললেন
> মেরে ফেল ওকে। ওর র*ক্ত দিয়ে মিটে যাবে হাজার বছরের অভিশাপ।
জুবায়ের কাঁপা হাতে ছুরিটা লুফে নিলো। অধরার চোখে পানি। ও অনবরত চিৎকার করছে। বারবার দোহায় দিচ্ছে। নিজের বাচ্চার প্রাণ জুবায়ের নিজে হাতে নিচ্ছে। ধর্মে সইবে না। আল্লাহ্ ঠিক বিচার করবে। জুবায়ের ওর কথায় কান দিলো না। বাচ্চাটাকে সামনে রেখে খঞ্জর শক্ত করে ধরে একটু একটু করে বিধতে গেলো মেয়েটার বুকে কিন্তু পারলো না। হাত কাঁপছে। বারবার অধরার দিকে আর বাচ্চার দিকে তাঁকিয়ে কিছু ভাবছে। শেষ রক্ষা হলো না। পাশ থেকে আরমান ফারুকী ওর হাত থেকে খঞ্জরটা কেড়ে নিয়ে নিজেই হাত চালাতে গেলো। অধরা ছুটে গিয়ে ছুরিটা কেড়ে নিতে চাইলো কিন্তু সেটা বিধলো ওর কোমরে। মূহুর্তে চোখ ঘোলা হয়ে উঠলো। পাশে থাকা ওর সদ্য জন্মানো শিশুর চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। জুবায়ের হতভম্ব হয়ে দেখলো সবটা। আরমান ফারুকী ছুরিটা বের করে আধরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আবারও বাচ্চা মেয়েটাকে এটাক করতে চাইলো তবে এবারও ব্যার্থ পারলো না। সামনে দাঁড়ালো উনার নিজের ছেলে। ছুরিটা দ্বিতীয়বার বিধেছে জুবায়েরের বুকে। আরমান ফারুকী দ্রুত ছুরি ছেড়ে দিয়ে ছেলের মুখটা দুহাতে আঁকড়ে নিয়ে বললেন,
> এটা কি করলে তুমি? এতদিন যার জন্য অপেক্ষা করলাম তুমি সেটা হতে দিলে না। বিষাক্ত খঞ্জরের আঘাতে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত। কেনো করলে বলো?
জুবায়ের বাবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে দুহাতে আকড়ে নিয়ে বলল,
> আমি পৃথিবীর সব চাইতে নিকৃষ্ট স্বামী হতে পারি কিন্তু এই পুতুলের মতো মেয়েটার নিকৃষ্ট বাবা হতে পারিনি ড্যাড। ক্ষমা করে দিও। ওকে তুমি পাবে না। আমি জানি আমার মৃত্যু নিশ্চিত কিন্তু আমার কহিনুরের না। সরি ড্যাড।
জুবায়ের আর সুযোগ দিলো না লাফিয়ে পড়লো পাহাড়ের চূড়া থেকে। অধরা জুবায়ের বলে চিৎকার করে উঠলো। শরীরে মৃদু মৃদু কম্পন হচ্ছে। হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো। শীতের মধ্যেও শরীর ঘেমেঘেটে একাকার অবস্থা। কি ভয়ংকর স্বপ্ন। অধরা চোখ খুঁলে ঝটকা খেলো। ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে এক সুন্দরী রমনী। রমনীর ওষ্ঠে অমায়িক হাসি। মেয়েটাকে চিনতে ওর অসুবিধা হয়নি। ওর ননদ মারিয়া ফারুকী। অধরা মনে মনে ভাবলো এরা সবাই ওকে ঝটকা দিয়ে মেরে ফেলবে। স্বপ্নে পযর্ন্ত ছাড় দিচ্ছে না। আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখছে। জুবায়েরের মতো নিকৃষ্ট মানুষ যে গার্লফ্রেন্ডকে পাওয়ার জন্য বাবার শর্ত মেনে বিয়ে করে সে কিভাবে নিজের জীবন দিবে তাও অধরার মেয়ের জন্য। স্বপ্ন দেখানো শয়তানের কাজকর্ম বড্ড বেশি ফালতু। অধরা বিরক্ত হলো শয়তানের উপরে। এসব ভেবে উঠে বসলো। প্রথমবার ননদকে নিজের রুমে দেখে ঝটকা একটু বেশি লেগেছে। মেয়েটা যত্ন নিয়ে ফলের থালা নিয়ে বসে আছে ওর পাশে। ওর দিকে ইশারা করলো বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে। জুবায়ের বাড়িতে আসেনি। দেয়াল ঘড়িতে সময় দুটো বেজে চল্লিশ মিনিট। মানে মধ্যরাত। মেয়েটা এতো রাতে ওকে খাওয়াতে এসেছে কিন্তু কেনো? অধরা কৌতূহলী হয়ে বলে উঠলো,
> বলির পাঠাকে খাতির যত্ন করে মোটাতাজা করছেন? এতো রাতে কষ্ট করে আসলেন কিন্তু আমার ক্ষুধা পাইনি।
অধরার কথা মেয়েটা শুনলো কি বোঝা গেলো না।তবে শুধু মলিন হেসে অধরার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে তাগিদ দিলো ফ্রেস হওয়ার জন্য। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে দ্রুত উঠে গেলো। ক্ষুধা যে পাইনি এমন না। পেটে রীতিমতো ইদুর দৌড়াচ্ছে। অধরা সময় নষ্ট করলো না। খেয়ে নিলো। মারিয়া ওর হাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে নীরবে ওষুধ লাগিয়ে পূনরায় ব্যান্ডেজ করিয়ে দিলো। বিছানা ঠিকঠাক করে চলে গেলো। অধরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। মেয়েটা যদি কথা বলতে পারতো কত ভালোই না হতো। নিজের কষ্ট গুলো শোনানোর মতো এই পৃথিবীতে ওর আপনার কেউ নেই। বাবা মাকে খুব মনে পড়ছে। তাঁরা কি বুঝতে পারছে তাদের আদরের মেয়েটা একদম ভালো নেই। একদম ভালো নেই। কয়েক ফোঁটা পানি অধরার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো।
ল্যাপটপে গভীর দৃষ্টি রেখে বসে আছে জুবায়ের। মেয়েটার প্রতি ওর সহানুভূতি জাগে তবে সেটা সাময়িক। বিয়েটা ওকে জোরজবরদস্তি করে করানো হয়েছে। নিজের উপরে জুলুম করে মেয়েটার সঙ্গে থেকেছে। স্বামীর দ্বায়ীত্ব পালন করেছে। ওর কি দোষ। ও নিজেও তো যন্ত্রণা পাচ্ছে। হুটকরে বিয়ে করিয়ে দিলো। জুহি ছাড়া কাউকে ও সহ্য করতে পারেনা। এই মেয়েটার জন্য ওর জুহিকে কাছে টানতে বিবেকে বাঁধে। জুহির সঙ্গে ওর ক্রমশ দুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। যেটা ওর সহ্য হচ্ছে না। অধরা কাঁদছে জুবায়েরের দেখছে আর ভাবছে,এর চাইতে হাজারগুন দুঃখ জুবায়েরের হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করছে। ও নিজে যেখানে ভালো নেই সেখানে পৃথিবীর কেউ ভালো থাকতে পারবে না। এই মেয়েটা না থাকলে ওর আর জুহির মিলনে কেউ বাঁধা হয়ে আসবে না। কতদিন সহ্য করতে হবে কে জানে। কথাগুলো ভেবে ও উঠে গেলো।
☆☆☆☆☆☆
ভোরবেলা নামাজ পড়ে বাইরে বের হলো অধরা। বাকীটা রাত ওর ঘুম হয়নি। শরীর পূর্বের চাইতে ভালো। মন খারাপ ছিল ভোরের সূর্যোদয় দেখে সেটা কেটে গেছে। আজ থেকে রহস্যের সমাধান করতে উঠেপড়ে লাগবে। শাশুড়ির রুমে আবারও যাবে। সেখানে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। খুব আফসোস হলো নিজের কাছে একটা ফোন নেই ভেবে। থাকলে ভালো হতো। বন্ধু বান্ধবী অনেকেই আছে। তাঁদের থেকে সাহায্য নেওয়া যেতো। কথা গুলো ভেবে ও শাশুড়ির রুমের দরজা খুঁলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সেদিনের পর থেকে এই রুমটা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। অধরা ভেতরে পা দিয়ে চমকে উঠলো। মেঝেতে র*ক্তা*ক্ত মানুষের মাথার খু*লি পড়ে আছে। অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলো অধরা। মনে প্রশ্ন জাগলো, এটা কার খু*লি?
চলবে
#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫
অধরা দু’পা পিছিয়ে গেলো। কক্ষের ভেতরটা কেমন গুমট আর ধুলাবালিতে পূর্ণ। দুদিন আগেও বেশ পরিস্কার ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কত বছর এখানে কেউ আসেনি। বাড়িতে এতগুলো কাজের লোক অথচ শাশুড়ির এই রুমটা নোংরা হয়ে আছে। তাছাড়া এখানে মানুষের খু*লি কিভাবে আসলো? অধরা ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। রুমের মধ্যে বৃত্ত এঁকে খুলিটা তার মধ্যে রাখা হয়েছে। ফোঁটা ফোঁটা র*ক্ত খুলির উপরে ছড়ানো। অধরা ভয় পাচ্ছে প্রচণ্ড। জীবনে প্রথমবার এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। এই বাড়িতে কোনো যাদু বিদ্যা বা কালো যাদু চর্চা হয় কি মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অধরা দ্রুত সবটা পর্যবেক্ষণ করলো। ওয়াশরুমের ট্যাপ থেকে পানি পড়ছে। অধরা দ্রুত পানি বন্ধ করতে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো ট্যাপ বন্ধ আছে। ও বেরিয়ে আসলো। চুপচাপ আলমারির ড্রয়ার চেক করে নিলো। সেখানে সন্দেহ হয় এমন কিছু খুঁজে পাওয়া গেলো না। সবগুলো কাপড় আর জুয়েলারি দিয়ে ভর্তি। অবশিষ্ট আছে বিছানার চাদর। অধরা বিছানা উল্টাপাল্টা করে দেখার সময় হঠাৎ ওর মনে হলো ওর পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অধরার ঘাড়ে তাঁর উষ্ণ নিশ্বাস পড়ছে। অধরা জমে গেলো। পুরো শরীর ফ্রিজ হয়ে গেছে। মৃদু মৃদু পা কাঁপছে । পিছনে ঘুরে তাঁকানোর শক্তি নেই। আড়চোখে দেখার চেষ্টা করলো তাঁতে আবছা কারো আবয়ব দেখে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে ওটা কোনো মেয়ে আবার মনে হচ্ছে ছেলে। অধরা এবার দ্রুত পেছনে ফিরলো কিন্তু কক্ষ শূন্য কেউ নেই। অধরা আর অপেক্ষা করলো না দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। কি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। ঢকঢক করে পানি গলাই ঢেলে নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। গতকাল ঝামেলার পর থেকে জুবায়ের এই রুমে আর আসেনি। বিষয়টা খারাপ না মোটামুটি ভালো বলা চলে। সকাল দশটা বাঁজতে চলেছে অথচ এই রুমে এখনো খাবার আসেনি এমনটা আজকে নতুন। কেনো আসেনি ওর জানা নেই নাকি এরা ওকে খাবার না দিয়ে মারার চিন্তা করছে আল্লাহ্ ভালো জানে। কথাগুলো ভেবে ও আবারও বাইরে পা বাড়ালো। দোতলা থেকে নিচে তাঁকিয়ে চমকে উঠলো। আবারও সকলে সাদা পোশাক পরেছে নিশ্চয়ই কেউ মারা গেছে। কিন্তু কে?ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমের সোফায় শাশুড়ি শশুর আর ননদেরা চুপচাপ বসে আছে। কাজের মেয়েগুলো টেবিলে খাবার সাজাতে বাস্ত। একজন ভৃত্য খাবার নিয়ে উপরে উঠে আসছে। অধরা মেয়েটার আসার অপেক্ষা করলো। মেয়েটা ওর কাছাকাছি আসতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
> আজ এতো লেট কেনো করলে? খাবার দিতে মানা করেছে?
মেয়েটার মুখে কোনো হাসি নেই। মুখটা স্বাভাবিক রেখে যেতে যেতে উত্তর দিলো,
> জুহি ম্যাম মামা গেছেন। বাড়িতে শোক চলছে। স্যার অসুস্থ।
কথাটা শুনে অধরার চোখ কপাল থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। জুহির মৃত্যু কিভাবে সম্ভব? আহারে জুবায়ের!ওর জন্য অধরার এবার কষ্ট হলো। ভাবলো যার জন্য এতকিছু করলো সেই থাকলো না। দুদিনের দুনিয়া তবুও মানুষ এমন কেনো করে বুঝি না। ভাগ্য বিধাতা কাউকে ছাড় দেননা এটা না বুঝেই মানুষ জঘন্য পাপ কাজে লিপ্ত হয়। কথাগুলো এলোমেলো ভেবে অধরার মনে প্রশ্ন জাগলো সুস্থ সবল মানুষ হঠাৎ মারা গেলো কীভাবে? কথাটা ভেবে ও প্রশ্ন করলো,
> হঠাৎ কি হয়েছিল জানো?
> মেবি খুন ম্যাম। গতকাল উনার বয়ফ্রেন্ডের বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সঙ্গে উনার বয়ফ্রেন্ড ছিল। সুইমিংপুলে গলা টিপে মারা হয়েছে। লাশ পানিতে ভাসছিল।
অধরা চোখ বড়বড় করে বলল,
> জুবায়ের ছাড়াও মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড ছিল? একজন মেয়ের একাধিক বয়ফেন্ড, জঘন্য বিষয়। আমার কি মনে হয় জানো? জেলাসি করে জুবায়ের ওদেরকে খু*ন করেছে। নয়তো হঠাৎ করে কে ওদেরকে খু*ন করবে বলো?
> সরি ম্যাম জুবায়ের স্যার রাতে বাড়িতে ছিলেন। আপনার পাশের রুমে। সকালে খবর শুনে উনারা গেছেন দেখতে। লা*শ দেখে স্যার অসুস্থ।
অধরা কিছু একটা ভেবে বলল,
> আচ্ছা তুমি কি এই বাড়িতে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছো? যেমন ধরো ভূতুড়ে কিছু যেগুলো আমরা মুভিতে দেখি। আত্মা বা জ্বীন এসব?
মেয়েটা টেবিলে খাবার রাখছিল হঠাৎ ওর এধরনের প্রশ্ন শুনে চমকে গিয়ে বলল,
> না না ম্যাম এসব দেখিনি। আপনার মনের ভূল। আপনি খেয়ে নিন আমার যেতে হবে।
অধরা চামচ উঠিয়ে নিয়ে খাবার মুখে দিয়ে বলল,
> আমার জন্য এসব অখাদ্য কে আনতে বলেছে রুশি? তোমার স্যারকে বলবে আমি এসব খাবো না। ডিম না এনে তুমি নুডুলস আনবে। ফলের জুস আমি পছন্দ করছি না।
অধরার কন্ঠ দিয়ে একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়লো। ভ্রু কুচকে খাওয়া শেষ করলো। মনের মধ্যে ভয় থাকলেও কেনো জানি জুবায়েরের কথা ভেবে শান্তি লাগছে। লোকটার উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। তবে মেয়েটার মৃত্যু নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে। একজনের পাপের শাস্তি আরেকজন কেনো পাবে এটা ঠিক হলো না।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆
গত এক ঘন্টা জুবায়েরের নিথর শরীর বিছানায় লেপ্টে আছে,অজ্ঞান অবস্থায়। একদিকে বিশ্বাস ভেঙেছে অন্যদিকে প্রিয় মানুষের অকাল মৃত্যু। জুহি ওকে মিথ্যা বলেছিল। পূর্বের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওর যোগাযোগ নেই বলেছিল কিন্তু এরকম না। বরং ওর থেকেও সেই ছেলেটার সঙ্গে জুহির বেশি ঘনিষ্ঠতা বেশি রয়েছে। ছেলেটার সঙ্গে জুহি প্রায় ওদের বাসাই যাওয়া আসা করতো। যেটা জানার পরে জুবায়ের হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। সেই সঙ্গে হতাশা। মেয়েটা ওকে কিভাবে ঠকাতে পারলো মাথায় আসছে না। এতো এতো ভালোবাসার পরেও মানুষ আবারও কিসের নেশায় আরেকজনের কাছে ছুটে যায় কে জানে। এসব বেঁচে থাকতে জানলে মেয়েটার কপালে দুঃখ ছিল। ঠকানো কাকে বলে থাপ্পড় দিয়ে শিখিয়ে দিতো। বারবার অধরার কথা মনে পড়েছে। জুবায়ের সেই দুঃখে জ্ঞান হারিয়েছে। দুঃখের থেকে রাগ আর অপমানবোধ ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। অধরার সামনে দাঁড়ানোর মুখ নেই। মেয়েটাকে ঠকানোর জন্য হয়তো আল্লাহ্ ওকে এরকম শাস্তি দিয়েছে। ডাক্তার এসে দেখে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যে ওর জ্ঞান ফিরবে। তবে আপাতত ঘুমানোর দরকার ভেবে ওষুধ দিয়ে গেছেন। মারিয়া ভাইয়ের পাশে মলিন মুখে বসে আছে। ভাইকে ও খুব ভালোবাসে। বোনদের মধ্যে মারিয়ার চেহারাটা বেশি মায়াবী। ছোট হওয়ার দরুন বাবা মা ভাই সবাই ওকে ভালোবাসে। কথা বলতে না পারলেও ওর একটা সিক্রেট বিষয় আছে যেটা শুধু জুবায়ের জানে আর কেউ জানেনা। না জানার কারণ আছে। এই বাড়ির পাঁচ মেয়ের মধ্যে ও জন্ম নিয়েছিল সিঙ্গেল। জুবায়ের ছোট থেকে বোনকে আগলে আগলে বড় করেছে। বিষয়টা যতদিন ওর নজরে আসে ও দ্রুত বোনকে শিখিয়ে নিয়েছে এসব কাউকে না বলতে। বোনটাও ভাইয়ের প্রচণ্ড ভক্ত। ভাই যা বলে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা চাই। গতকাল রাতে ভাইয়ের হুকুমে অধরার খাবার আর ওষুধ দিয়ে এসেছে। এই বাড়িতে ও ছাড়া সবাই জমজ। পরিচিতরা এটা নিয়ে বেশ মজা করে তবে এই বাড়ির লোকজন সেটা গায়ে মাখেনা। জুবায়েরের বড় বোন পসরা ফারুকীর বয়ফ্রেন্ড ছিল বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকিও হয়েছিল কিন্তু কপাল গুণে বিয়ের দুদিন আগে সে মারা গেছে।তারপর সব থমকে গেছে। বাকীদের বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু কি এক অজানা কারণে তাদের বিয়ের বিষয় নিয়ে এই বাড়িতে কেউ আলোচনা করে না। বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মানুষ দূর থেকে এই রূপ শুধু অবলোকন করতে পারে ছুঁয়ে দেখার সাধ্য কারো নেই। জুবায়ের পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে। চেহারা মায়ের মতো বিলেতি। তবে বেশ মেজাজি। কথায় কথায় হুমকি দিতে উস্তাদ। রেগে গিয়ে ভুল করতে দুবার ভাবেনা। আরমান ফারুকী ছেলের থেকে বেশি কিছু পাওয়ার আশা করেন না। উনি এই ছেলেকে দিয়ে জীবনের একটা মাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়ে নিবেন। এর চাইতে বেশি দরকার হবে না।
__________________
সারাদিন ঘরে বসে বসে দিন পার হলো অধরার। মন মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ। পাশের রুমে জুবায়ের ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ করে সে গার্লফ্রেন্ডর শোকে অসুস্থ। অধরার কাছে এসব নেকামি বলে মনে হচ্ছে। মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। মায়ের মতো চাচি মারা গেছে হেলদোল নেই। এদিকে কোথাকার কোন মেয়ে মারা গেছে সেই শোকে বেডা ভিমড়ি খেয়েছে। বিরক্তিতে অধরার চোখমুখ কুচকে আছে। কাজের মেয়েটা বারবার খাবার দিয়ে যাচ্ছে। দেখাশোনা করছে। ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ করেছে। অধরা পাত্তা দিলো না। শাশুড়ি মায়ের লাল রঙের পুটলিটা দেখার ইচ্ছে জাগলো। ভাবলো জুবায়ের পাট হয়ে পড়ে আছে তারমানে ক্যামেরা চললেও চেক করতে দুদিন সময় লাগবে। যা হবে পরে দেখা যাবে ভেবে কৌশলে আবারও কাপড় চেঞ্জ করার বাহানা দেখিয়ে পুটলিটা নিয়ে বসে পড়লো। লকেট সেই সঙ্গে বাংলাদেশ যাওয়ার পাসপোর্ট ভিসা বেশ কিছু টাকা। টাকার নিচে একটা চিত্র।। অধরা চিত্রটাতে পাশাপাপাশি জুবায়েরের দুটো ছবি দেখতে পেলো। একটাতে ওর চোখ খুব স্বাভাবিক লাগছে অন্যটাতে রক্তিম। অধরা বুঝলো না কিছু। যেমন ছিল ঠিক তেমনিভাবে রেখে দিলো। রুমের চাবি আছে ওর কাছে। বাড়ির বাকী রুমগুলোতে তল্লাশি করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি এই বন্দি দশা থেকে মুক্তি নিতে হবে। দেরী হলে ঝামেলা আছে। হাটতে চলত কষ্ট হবে। অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়াতে হবে। মাথার উপরে ছায়া নেই। যে ওকে আগলে রাখবে। কথাগুলো ভেবে ও দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। সময় রাত দশটা বেজে আঠারো মিনিট। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার দিতে আসবে কাজের মেয়েটা। অধরা অধীর হয়ে অপেক্ষা করলো কিন্তু কাজের মেয়ের পরিবর্তনে মারিয়া আসলো। মেয়েটার মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে। অধরা আফসোস করে খাবার শেষ করলো। চুপচাপ মেয়েটা সব গুছিয়ে নিয়ে চলে যেতেই অধরা দরজা সামান্য খুলে তাঁকিয়ে থাকলো। ওকে সবার শেষে খাবার দেওয়া হয়েছে। অধরাকে নিয়মকানুন মেনে খাওয়ানো হচ্ছে। টাইম দু টাইম। বাইরে চুপচাপ দেখে ও চুপিচুপি বেরিয়ে আসলো। আজ মিশন চলবে নিচের রুমগুলোতে। কথাটা ভেবে ও লম্বা লম্বা পা ফেলে নেমে আসলো। ডাইনিং রুমে কত দিন আসা হয়না ভেবে আশেপাশে ভালো করে লক্ষ্য করল। সিঁড়ির পাশের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। মৃদু মৃদু হাসি আর কথাবার্তা হচ্ছে। অধরা চুপিচুপি রুমের জানালা থেকে উঁকি দিয়ে চমকে উঠলো। জুবায়ের বোনদের নিয়ে মনের সুখে গল্প জুড়েছে সেই সঙ্গে মদ গিলছে। পাশাপাশি চার বোন আর ওর বাবা মা আছে।সবগুলো শয়তান এখানে জড় হয়েছে। অধরার কপালে ভাজ পড়লো। জুবায়ের সারাদিন প্রেমিকার বিরহে অজ্ঞান ছিল সবটা ওর ভন্ডামি ছিল। প্রচণ্ড রাগে ওর শরীর জ্বলে উঠলো। হঠাৎ জুবায়ের আশেপাশে তাঁকিয়ে কি একটা ইশারা করলো। আরমার ফারুকী কি বুঝলো জানা সেই উনি বলে উঠলেন,
> আরে কেউ নেই। এখানে নজর কে দিবে অদ্ভুত? টেনশন করোনা।
অধরার বুক কেঁপে উঠলো। ধরা খেয়ে গেলে ঝামেলা হবে। জুবায়ের উঠতে উঠতে ও দৌড়ে উপরে চলল। নিজের রুমে ঢুকতে যাওয়ার আগে পাশের রুম টপকাতে গিয়ে খোঁলা দরজা দিয়ে ঘুমন্ত জুবায়ের মুখ ওর চোখে পড়লো। ছেলেটা ঘুমিয়ে আছে। অধরা থমকে গেলো। পা চলছে না। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো। লোকটার দীর্ঘ নিশ্বাস জানান দিচ্ছে ঘুমটা কতটা গভীর। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে ও নিচে জুবায়েরকে দেখে এসেছে । ওর আগে ছেলেটা কিভাবে উপরে আসতে পারে, সম্ভব না। প্রশ্ন জাগলো ছেলেটার কি কোনো অলৌকিক শক্তি আছে নাকি দৃষ্টির অগোচরে এই বাড়িতে দুজন জুবায়েরের বসবাস?
(চলবে)