শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর লেখক- এ রহমান পর্ব ২০

0
510

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ২০

–ইভান ভাইয়া।

ইভান মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছিল। ঈশানের চিৎকারে তার মনজগে ব্যাঘাত ঘটে গেলো। বেশ বিরক্ত হল। এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তার উপর এরকম চিৎকার। গম্ভির গলায় একবার ঘাড় ফিরিয়ে বলল
–প্লিজ ঈশান। আমার মন মেজাজ কোনটাই ভালো নাই। এখন বিরক্ত করিস না। পরে কথা বলবো।

ঈশান থেমে গেলো কপালে ভাজ ফেলে বলল
–এরপরের ঘটনা শুনলে মন মেজাজ আর কিছুই নিজের জায়গাতে থাকবে না।

ইভান টিভি অফ করে দিলো। ঈশানের দিকে ঘুরে বলল
–বল। কি বলতে এসেছিস।

ঈশান স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–বিকেল থেকে ঈশা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। দরজা ভেঙ্গে ফেলা বাকি শুধু। কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাউন্ড আসছে না।

ইভান ঈশানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। খুব স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে। ঈশান ইভান কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
–কিছু বল।

ইভান স্বাভাবিক ভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। একটু ভেবে শান্ত কণ্ঠে বলল
–আমার এসব পাগলের পিছনে ওয়েস্ট করার মতো টাইম এনার্জি কোনটাই নাই। তুই গিয়ে তোর বোনকে উদ্ধার কর।

ইভানের এমন কথা শুনে ঈশান পুরই বোকা হয়ে গেলো। এতো শান্ত ভাবে ইভান যে এরকম কিছু বলবে সেটা ঈশানের ধারনার বাইরে ছিল। বিস্ময় মাখা কণ্ঠে বলল
–তুমি কিছুই বলবে না?

ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশান আবার বলল
–না মানে তোমার চিন্তা হচ্ছে না?

ইভান ওভাবে তাকিয়েই বলল
–ঈশার কপাল ভালো যে ও এখন আমার সামনে নাই। ঘর থেকে বের হলে ওকে বুঝিয়ে বলিস যে আমার সামনে যেন না আসে। নাহলে ধরে এমন মাইর দিবো সব পাগলামি ছুটে যাবে।

ঈশান বোকা বোকা চোখে তাকাল। ইভানের এমন আচরন বোধগম্য হল না তার। কোন কথা না বলে সেখান থেকে বের হয়ে এলো। সব কিছু কেমন তারও মাথার উপর দিয়ে গেলো। চিন্তিত ভঙ্গিতে নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে। পকেট থেকে ফোন বের করে ঈশার নাম্বারে ফোন করলো। ঈশা ফোনটা ধুরতেই ঈশান বলল
–ইভান ভাইয়া মনে হয় অসুস্থ। উলটা পাল্টা কথা বলছে।

ঈশা একটু হেসে বলল
–তুমি চলে আসো। কিছুক্ষনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।

ঈশান চলে গেলো ঈশাদের বাড়িতে। ঈশান বাড়িতে ঢুকে সোজা ঈশার রুমে গেলো। একবার ঈশার দিকে দেখে বিছানায় বসলো। ঈশা থম্থমে মুখে জিজ্ঞেস করলো
–আসেনি না?

ঈশান চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। অস্থির শ্বাস ছেড়ে বলল
–আচ্ছা তোদের সমস্যা টা কি? মনে হচ্ছে দুজন দুজনের বিরুদ্ধে কম্পিটিশনে নেমেছিস। একজন বিয়ে করতে অস্থির হয়ে গেছিস আর আরেকজন সমানে না বলে যাচ্ছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

ঈশা হাসল। কোন উত্তর দিলো না। ঈশান আবার বলল
–আমার মনে হয় ইভান ভাইয়া সব নাটক বুঝতে পেরেছে। তাই আসতে চাইছে না। আর তাছাড়াও তার মধ্যে সেরকম কোন চিন্তা দেখলাম না। তোর কিছু হলে সেই আগে বিচলিত হয় কিন্তু আজ যা দেখলাম বিষয়টা সত্যিই অদ্ভুত।

ঈশা মুচকি হেসে বলল
–আসবে। তুমি বাইরে গিয়ে বস। অপেক্ষা করো। সময় হলেই চলে আসবে।

ঈশান ঈশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। তারপর বাইরে গিয়ে বসলো। সত্যি সত্যি কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ইভান চলে এলো। এসেই কারো দিকে না তাকিয়েই সোজা ঈশার ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–২ মিনিট সময়। দরজা না খুললে পরের এপিসোড পুরটাই তোর জানা।

আশ্চর্য জনক ভাবে ঈশা দরজা খুলে ফেলল। ইভান ঘরে ঢুকে শান্ত ভাবে ঈশাকে দেখে নিয়ে বলল
–এসব নাটকের কারন কি?

ঈশা চোখ নামিয়েই বলল
–বিয়ে!

ইভান চোখ বন্ধ করে ফেলল। বিরক্তি কাটিয়ে ঈশার পাশে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত দিয়ে বলল
–ঈশা পাখি। আমি রিকুয়েস্ট করছি। প্লিজ! আমরা এসব নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলবো। এখন পাগলামো করোনা।

ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান আবার বলল
–আমার সাথে এক জায়গায় যাবে? শুধু তুমি আর আমি। যাবে?

ঈশা এবার ইভানের দিকে তাকাল। তার চোখে পানি। কাপা কাপা গলায় বলল
–আমাকে বিশ্বাস করে আমার সাথে যাবে তুমি?

ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। বলল
–কোথায়?

–কাজী অফিসে!

ইভান নিজের রাগটা সংবরণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। ঈশার মুখ চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
–এনাফ ইজ এনাফ! আমার প্রতিটা কথার পিছনে অনেক কারন থাকে। আমার উপরে চোখ বন্ধ করে তোর বিশ্বাস করা উচিৎ। আমার সিদ্ধান্তের উপরে ভরসা করে আমার জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ। এর থেকে বেশী কিছু আমি তোকে দিতে পারবো না। আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করিস না।

ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে ঘুরে বের হতে যাবে তখনি ঈশা বলল
–আমাকেও খারাপ কিছু করতে বাধ্য করোনা। বারবার আমার ভাগ্য ভালো হবে সেটা কিন্তু না।

ইভান কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঈশার কথার মানে স্পষ্ট। এলোমেলো লাগছে তার নিজেকে। ঈশা এবার কেদে ফেলল। দুই হাতে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেদে উঠলো। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল
–সেদিনের মতো তুমি আজকেও আমার কাছে কোন অপশন রাখছ না। আমি তোমার বাড়িতে থাকতে চাই। তোমার কাছে। সেদিন যদি কবুল বলে তোমার সাথে আমার বিয়ে হতো তাহলে আমি তোমাকে এতো কিছু করতেই বলতাম না। নিজে নিজেই চলে যেতাম। আমি এমন কঠিন কিছুই করতে বলিনি তোমাকে। কেন এতো আপত্তি করছ? কেন জোর করতে হচ্ছে?

শেষের কথাটা বেশ অসহায় শোনালো ঈশার মুখে। ইভান শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। কোন কথা বলল না। এলোমেলো মন। বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক নিয়ে কিছুক্ষন ভাবল। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে আদুরে কণ্ঠে বলল
–কাদিওনা। থামো। তুমি যা চাও তাই হবে।

—————–
বাসর ঘরে বসে আছে ঈশা। সন্ধ্যার পরে তিন কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাদের। বিয়ের পুরো সময়টা ইভান মাথা নিচু করে বসে ছিল। একবারও ঈশার দিকে তাকায় নি। বড়দের সাথে ইভান বেয়াদবি করেনা জন্য চুপ করে বসে ছিল। নাহলে এতক্ষন থাপ্পড় দিয়ে ঈশার গাল ফাটিয়ে দিতো। ঈশাও সেটার সুযোগ নিয়েই এতো কিছু করে ফেলল। ইভান ধারনাও করেনি ঈশা এরকম কিছু করে বসবে। ঈশার উপরে তার প্রচণ্ড রাগ। কোন রকমে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে রেখেছে সে।

ঈশার বাবা মা মেয়েকে বিদায় দিতে কাদলেও ঈশার মধ্যে সেরকম কোন অনুভুতি প্রকাশ পায় নি। তাকে দেখে মনে হয়েছে সে খুব চিন্তিত আর ভীত। তার এরকম অদ্ভুত আচরন সবার দৃষ্টি গোচর হলেও কেউ কারণটা বুঝতে পারেনি। আর কেউ সেটা নিয়ে মাথাও ঘামায় নি। বিয়ে তো হয়েই গেছে। এখন তাদের ব্যপার তারা বুঝবে।

সাদা মাটা একটা শাড়ি পরেছে ঈশা। সাজ বলতে কিছুই নেই। চোখে কাজল টানা আর ঠোটে হালকা লিপস্টিক। বেশ রাত হয়েছে। আশে পাশে কাজিনদের বহর। নিজেদের মতো কথা বার্তায় ব্যস্ত তারা। সেসবের কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। তার বুক ধুকপুক করছে ভয়ে। ইভান আসার পর ঠিক কিভাবে রিয়াক্ট করবে সেটাই তার মাথায় ঘুরঘুর করছে। বাসর রাতে আদরের পরিবর্তে ঠিক কয়টা থাপ্পড় খেতে হতে পারে সেটারও হিসাব কষা শেষ তার। দমবন্ধ কর একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষন পরেই ইভান এসে দরজা খুলল। সবাই দাড়িয়ে গেলো তাকে দেখে। ঈশা একবার চোখ তুলে তাকাল। মুখ দেখে বোঝার উপায় নাই রেগে আছে কিনা। সেটাই ভয়ের বড় কারন। রাগটা আন্দাজ করা গেলেও হয়তো কমানো সম্ভব হতো। কিন্তু বুঝতেই না পারলে কমাবে কিভাবে? ইভানের চোখে চোখ পড়তেই ঈশা নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। বেশ অবাক হল। এতো শান্ত থাকার তো কথা ছিল না। তাহলে এটা কি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস! ভয়ে চুপসে গেলো সে। ইলু একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
–ইভান ভাইয়া। বিয়ে তো করেছ। আমাদের প্রতি তো কিছু দায়িত্ব থাকেই। সেটা এখন পালন কর।

ইভান শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। কোন কথা বলল না। ঈশান ঢোক গিলে এক কোণায় দাড়িয়ে আছে। সে ইভানের কাছে আসার সাহস পাচ্ছে না। কারন কোনভাবে যদি ইভান জানতে পারে। সে ঈশার এই বিয়ের নাটকের সঙ্গি তাহলে তো তার নিস্তার নেই। ইভান ঈশানের দিকে তাকাল। চোখের ইশারায় কাছে আসতে বলল। ঈশান ভয় কাছে এসে দাত বের করে হেসে বলল
–কিছু বলবে ইভান ভাইয়া?

ইভান মৃদু হেসে ঈশানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–সব থেকে বড় উপহারটা তোর পাওয়া উচিৎ তাই না? তুই বড় উপকার করলি।

ঈশান ইভানের কথা আন্দাজ করতে পেরে হাসি থামিয়ে দিলো। ইভান পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ঈশানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
— এবার বিরক্ত না করে সবাই বাইরে যা। আমি ভীষণ টায়ার্ড। মন মেজাজ এমনিতেই ভালো না। আরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে কিন্তু সব কয়টার খবর আছে।

সবাই একটু কথা বলতে গেলেও ঈশান থামিয়ে দিলো। সবাইকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেলো। কারন সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ইভান সবটা বুঝে গেছে। আর তার মেজাজ খুব খারাপ। সে কোন রকমে কন্ট্রোল করে রেখেছে নিজেকে। সবাই বাইরে চলে গেলো। ইভান দরজা লক করে দিলো। ঈশা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বসে আছে। সে বুঝতেই পারছে তার কপালে শনি আছে। ইভান কোন কথা না বলে ফোনটা পকেট থেকে বের করে পাশের টেবিলে রাখল। ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়াতেই ফোন বেজে উঠলো। ইভান পিছন ফিরে ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা একবার দেখে ঈশার দিকে তাকাল। চোখ ফিরিয়ে ফোনটা রিসিভ করতে যাবে সেই মুহূর্তেই ঈশা এসে ছো মেরে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিলো। ইভান ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকাল। আশ্চর্য জনক ভাবে ঈশা একটুও ভয় পেল না। উলটা একটা সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here