গল্প: “অতিথি’র স্মৃতি” (সর্ম্পণূ গল্প) লেখা : মিশু মনি পর্ব:০১

0
597

গল্প: “অতিথি’র স্মৃতি”
(সর্ম্পণূ গল্প)
লেখা : মিশু মনি

পর্ব:০১

.
ঘরর ঘরর নাক ডাকার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো মিশুর।
ও চোখ কচলে বিছানার উপর উঠে বসলো। এই বাড়ি তে নাক ডাকছে কে!
কৌতুহলী হয়ে মিশু পাশের রুমের দরজায় এসে একটা ধাক্কা দিলো। দরজা খুলে যেতেই মিশু অবাক হয়ে খেয়াল করলো বিছানায় একটি ছেলে লম্বা হয়ে শুয়ে হা করে ঘুমাচ্ছে।তার নাকে যেন বাশি বাজছে!
মিশুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চলে আসলো। ছেলেটি কে হতে পারে সেটা পরের বিষয়, আগে মজা করা যাক।
মিশু দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গিয়ে এক মুঠো মুড়ি হাতে নিলো। তারপর ছুটে রুমে চলে আসলো। ছেলেটি অবিরত নাক ডেকেই চলেছে আর হা করে ঘুমাচ্ছে!
মিশু ঝটপট এক মুঠো মুড়িই ছেলেটির হা করা মুখে ঢেলে দিলো।
ছেলেটি গলা খাঁকারি দিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে কাশি শুরু করে দিলো।
মিশু খিলখিল করে হাসছে!
আগন্তুক মুখের মুড়ি গুলো ফেলে দিয়ে ভুত দেখার মত হা করে তাকিয়ে রইলো!
মিশু হাসি থামিয়ে বলল,এখনো হা বন্ধ হচ্ছেনা আপনার? আরো মুড়ি খাবেন?
ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে এ বাড়ি’র অতিথি। তার সাথে এ কেমন আচরণ!
মিশু বলল,মুড়ি খাবেন? এনে দিবো আরো?
আগন্তুক বিস্ময় কাটিয়ে উঠে বলল,এটা কেমন কাজ? যদি গলায় মুড়ি আটকে মরে যেতাম?
– তবে বেশ হত।অনেকদিন পর এক টা চল্লিশার দাওয়াত খাওয়া হত।
ছেলেটির বিস্ময়ের সীমা নেই! এই মেয়ে তো সাংঘাতিক মেয়ে!
মিশু বলল,আপনি হা করে ঘুমাচ্ছিলেন কেন?
– আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাই হা করে ঘুমাচ্ছিলাম।
– হাপানি আছে?
– না,সর্দি লাগছে।
মিশু হো হো করে হেসে উঠল। তারপর বলল,খুব ভালো। তাই বলে এতজোরে নাক ডাকবেন? আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছিল।
ছেলেটি অবাক হয়ে বলল,আমার নাক ডাকার শব্দ পাশের রুমেও চলে গেছে?
– হ্যা,আপনার নাক তো নয়,যেন লাউড স্পিকার। আর গলা তো নয়,যেন ব্যাঙের রাজা।
আগন্তুক অবাক হয়ে যাচ্ছে মিশুর কথা শুনে।ভারি অদ্ভুত মেয়ে তো!
মিশু বলল,আপনি কে বলুন তো?
– জ্বি?
– আপনি কে?
– আমার বাবার নাম দেলোয়ার হোসাইন।
– আ মোর জ্বালা।আপনার বাপের নাম দিয়ে কি করবো? আপনার পরিচয়?
– জ্বি?
– আচ্ছা আপনি কি কানে কম শুনেন?
– না,প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।
– কেন? আমি কি সৃজনশীল গণিত পরীক্ষা নিচ্ছি?
ছেলেটি আবারো থ মেরে তাকিয়ে রইলো।
মিশু বলল,আপনার নাম কি? আমাদের বাসায় কেন?
– জ্বি,আমি এ বাড়ির অতিথি।কমার্শিয়াল কাজে রংপুর এ এসেছিলাম।যতদিন কাজ শেষ হয়নি,ততদিন এ বাড়ি তে থাকবো।
– এটা কি কক্সবাজারের হোটেল?
ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,ঠিক বুঝলাম না।
– আ মোর জ্বালা।এ দেখি একেবারেই নিরীহ ছেলে।
– কি বললেন?
– কিছু না।আপনাকে এ বাড়ি তে কে এনেছেন?
– চৌধুরী সাহেব নিয়ে এসেছেন।
– হুম,এতক্ষনে বুঝলাম। আমি চৌধুরী সাহেবের একমাত্র মেয়ে।
– ওহ আচ্ছা।
– এমন ভাবে ও আচ্ছা বললেন যেন আপনি আমাকে চিনেন?
– না,এখন চিনলাম।
– বাই দা রাস্তা,আপনার নাম কি?
– বাই দা রাস্তা বলতে?
মিশু মাথায় হাত দিয়ে বলল,হায় রে,কিচ্ছু বুঝেনা।বাই দা ওয়ে,এইবার বুঝেছেন?
– হ্যা,
বলেই ছেলেটি হাসতে লাগলো।
মিশু বলল,নাম কি বললেন না তো?
– আমার নাম মৈত্রী।
– শুধু মৈত্রী?
– না,
– পুরা নাম বলুন?
– প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন দেলোয়ার হোসাইন কাজী মৈত্রী পরমহংস দেব।
মিশু অবাক হয়ে বলল,এই টা কি নাম? কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করেছে?
– জানিনা,আপনার নাম কি?
– আমি সাম্য।
– সুন্দর নাম!
– এটা আমি এখন ই দিলাম। আসলে আমার নাম মিশু।আপনার নাম মৈত্রী তাই আমার নাম সাম্য রাখলাম। সাম্য মৈত্রী।
– বাহ! আমার নাম মৈত্রী বলে আপনার নাম সাম্য হয়ে গেলো! দারুণ তো!
– হ্যা,এবার আমি যাই।খুব ঘুম পাচ্ছে।আবার যদি নাক ডাকার শব্দ কানে আসে,তাহলে পরেরবার এসে কিন্তু মুড়ির সাথে বাতাসা ও ঢেলে দিবো।
– বাতাসা কি?
– এটা একটা মিষ্টি জাতীয় খাবার। এবার জিজ্ঞেস করুন মিষ্টি কি?
মৈত্রী হেসে বলল,মিষ্টি আমি খাই,আমার খুব পছন্দ।
– এরকম ভ্যাবলা টাইপ হাসি দিবেন না।
মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,ভ্যাবলা টাইপ হাসি আমার?
– হ্যা,আর আপনি দেখতে মিনির মত।
– মিনি কে?
– মিনি হচ্ছে আমাদের বাড়ির পোষা বিড়াল।
– বিড়াল!
– জ্বি,বাই দা রাস্তা,আপনি এখন নাকে তুলা দিয়ে ঘুমান।শব্দ হলে কিন্তু নাক চেপে ধরবো বলে দিলাম।
– আমি এবার দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবো।
– আরে বাহ! ভ্যাবলার মত দেখতে হলে কি হবে? ঘটে বুদ্ধি আছে।
মৈত্রী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
মিশু বলল,ঘটে মানে কি বুঝেন নি?
– বুঝেছি।
– বুঝলে সাইলেন্ট মুডে ঘুমান।নাক ডাকার জন্য আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে কিন্তু সারাজীবনের মত আপনার ঘুম হারাম করে দিবো।
কথা টা বলেই মিশু ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো।বাবা কোথ থেকে যে এইসব অতিথি জোগার করে কে জানে! একেবারেই নিরীহ!
মৈত্রী মনে মনে ভাবল,ভারি অদ্ভুত মেয়ে! জীবনে কখনো এমন মেয়ে দেখিনি!
মৈত্রীর বিস্ময়ের সীমা নেই।
আবারো নাক ডাকার শব্দ হতে পারে ভেবে মৈত্রী বাকি রাত টা জেগেই রইলো।

পর্ব:০২

.
মিশু ঘুম থেকে উঠে রাতের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
সারাক্ষণ ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরপাক খেতে থাকে।শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো সারাদিনের রুটিনে কয়জন কে বোকা বানানো যাবে।
এমন সময় মিশুর মা এসে বললেন, মামনি উঠে পড়।
– কেন আম্মু?
– বাসায় অতিথি এসেছে।তাকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আয়।
মিশু খুশিতে লাফিয়ে উঠল।আজ ওই ভ্যাবলা কান্তকে দারুণ ভাবে বোকা বানানো যাবে।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে মৈত্রীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল মিশু।
সবেমাত্র সূর্য উঠেছে। চারিদিকে হালকা কুয়াশা পড়েছে।
মৈত্রী বারবার অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে যেন কখনো গ্রাম দেখেনি সে!
মৈত্রী গোলগাল চেহারার সাথে চশমা পড়ার কারনে এখন একদম হাবা হাবা দেখাচ্ছে।মিশু বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছে আর খিলখিল করে হেসে উঠছে।
মৈত্রী জিজ্ঞেস করলো,আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– সকালের গ্রাম দেখবেন। আসুন,
– আপনাদের গ্রাম অনেক সুন্দর!
– হা হা হা,
– হাসছেন কেন?
– আপনার ঢয় শুন্যে রয় চেহারা দেখে।
– মানে!
– ঢেরসের মত চেহারা।
– কিন্তু আমাকে তো সবাই বলে আমি নাকি দেখতে গোলআলুর মত।
মিশু হো হো করে হেসে উঠল।
মিশুর হাসি দেখে মৈত্রীও হাসতে লাগলো।
মিশু বলল,ধানক্ষেত দেখতে যাবেন?
– আচ্ছা।
.
মিশু আগে আগে হাটছে,মৈত্রী মিশুকে অনুসরণ করে হাটছে।
মিশু ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে একটা সরু পথে হাটা শুরু করল।মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,এই চিকণ রাস্তা দিয়ে কিভাবে যাবো?
– যেভাবে আমি আসছি,আসুন।
– আমি পারবো না।
– মোটা মানুষ দের নিয়ে এই এক সমস্যা।আসুন বলছি।
মৈত্রী মিশুর কথামত ধানক্ষেতে নেমে আসলো।
মিশু অনেক দূর চলে গিয়েছে।মৈত্রী খুব সাবধানে হাটছে।
হঠাত সামনে কাদা দেখতে পেয়ে মৈত্রী আতকে উঠে বলল,এই কাদায় কিভাবে হাটবো?
– আমি তো আসলাম। আসুন,জুতা হাতে নিয়ে কাদায় পা দিন।
মৈত্রী প্রথম টায় রাজি হচ্ছিল না,পরে মিশুর জোরাজুরিতে জুতা খুলে হাতে নিলো।
কাদায় পা দেয়া মাত্রই আর কষ্ট করে পা তুলতে হল না।কাদায় পা পিছলে একেবারে ধপাস করে ধানক্ষেতে পড়ে গেলো।
মিশুর হাসি আর দেখে কে! ও হেসেই কুটিকুটি।
মৈত্রী ধানক্ষেতের পানিতে পড়ে কাদা আর পানিতে মাখামাখি হয়ে গেলো।
মিশু খুশিতে হাততালি দিতে লাগলো।
মৈত্রী থ মেরে পানিতেই বসে আছে।
মিশু বলল,উঠুন। নাকি ধরতে হবে?
– পড়ে গেলাম কেন?
– আমি ধাক্কা দিয়েছি।
– কই নাতো,আমিতো পা পিছলে পড়ে গেছি।
মিশু হেসে বলল,তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন? আজব ক্যারেক্টার মাইরি।
বলেই হাসতে লাগলো।
মৈত্রী পানি থেকে উঠার চেষ্টা ও করছে না।ও বসে থেকে মিশুর হাসি দেখছে আর ভাবছে, মেয়েটি ভারি অদ্ভুত!
মিশু বলল,বসে বসে ধ্যান করছেন যে? উঠুন তাড়াতাড়ি।
মৈত্রী তবুও ঠায় বসে রইলো।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,আপনার পিছনে সাপ!
মৈত্রীর দৌড়ানি আর দেখে কে!
এক ছুটে ক্ষেত থেকে উপরে উঠে আসলো।
.
মিশু কিছুতেই হাসি থামাতে পারছে না।অনেক কষ্টে হাসি চেপে বলল,আজব মানুষ আপনি!
মৈত্রী হাফাতে হাফাতে বলল,তুমিও আজব মেয়ে!
.
কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর মিশু বলল,কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছেন। চলুন গোসল করবেন।
– আচ্ছা।
মিশু মৈত্রীকে নিয়ে পুকুরপাড়ে চলে আসলো।
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,পুকুরে গোসল করতে পারবো না।
– কেন?
– ভয় পাই,
– কিসের ভয়?
– জানিনা,তবে ভয় পাই।
মিশু হেসে বলল,নেমে গোসল করুন।এই কাদা শরীরে আপনাকে বাসায় ঢুকতে দিবে কে?
– তাহলে?
– পুকুরে নেমে গোসল করুন। তারপর বাসায় যাবেন।
– উহু, আমার ভয় লাগে।
– আপনাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিবো কিন্তু।
– না,একদম না প্লিজ।
মিশু হাসতে হাসতে বলল,তাহলে নামুন।
– না,
– নামুন বলছি।
মিশুর রাগান্বিত চেহারা দেখে ভয়ে ভয়ে পুকুরে নামলো মৈত্রী।
মিশু বলল,এবার ডুব দিন।
– না,
– দিন বলছি।
মিশুর কথামত একবার পানিতে ডুব দিয়েই উঠে আসলো মৈত্রী।মিশু মুখ টিপে হাসছে!
.
মৈত্রীকে দেখে মিশু মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,ও ভিজে গেলো কিভাবে?
– আম্মু,উনি শিয়াল দেখে ভয়েই কাপড় নষ্ট করে ফেলেছিলেন। তাই গোসল করিয়ে আনলাম।
বলেই হো হো করে হেসে উঠল মিশু।
মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দারিয়ে আছে।
মিশুর মা ওকে বললেন, বাবা তুমি রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।মিশুর কথায় কিছু মনে করোনা।
– জ্বি আচ্ছা।
মৈত্রী চুপচাপ রুমে চলে গেলো। মিশু হেসে মাকে বলল,আম্মু ছেলে টা একেবারেই নিরীহ প্রজাতির প্রানী।
– মিশু,এসব কি কথা? অতিথি কি মনে করবে?
– এমন handsome ছেলেটা এরকম হাবা হাবা আচরণ করলে কেমন লাগে বলো? বেশ মজা পাচ্ছি।
– মিশু,চুপ করো।বাবা শুনতে পাবে।
– কার বাবা? আমার বাবা, তোমার বাবা নাকি ওই ভ্যাবলা কান্তের বাবা?
মা রেগে তাকালেন। মিশু হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেলো।
.
বই খুলে কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না।বারবার মৈত্রীর কথা মনে পড়ছে, বেচারা কি করছেন কে জানে!
ভাবতে ভাবতে মিশু মৈত্রীর দরজায় এসে দাড়ালো।
মিশুকে দেখেই মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,এই সাম্য ভিতরে আসো।
মিশু দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলল,আমার উপস্থিতি কিন্তু আপনার জন্য বিপদজনক।
– মানে!
– আ মোর জ্বালা,এ কেমন ছেলে!
মিশু রুমে ঢুকে মৈত্রীর পাশে এসে দাড়ালো।
মৈত্রীর উচ্চতার সাথে মাপ দিয়ে বলল,আমাদের ম্যাচিং টা বেশ হইছে!
– মানে!
– আপনার মাথা।ভাবছিলাম ঘটে বুদ্ধি আছে।বাট এখন মনে হচ্ছে গোবর ছাড়া কিছুই নাই।
– জ্বি?
– ওহ মাই গড! আপনি একেবারেই 1G যুগের ছেলে।
– মানে?
– ব্যাঙের মাথা।
মিশুকে রেগে যেতে দেখে মৈত্রী বলল,আমি সবকিছু কম কম বুঝি।প্লিজ রাগ করবেন না।
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
মৈত্রী হা করে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিশু বলল,হা বন্ধ করুন।নাকি মুড়ি টুরি খাবেন?
মৈত্রী লজ্জা পেয়ে হা বন্ধ করলো।
মিশু মুখ টিপে হাসলো তারপর বলল,আপনি কি করবেন এখন?
– বাইরে যাবো,কাজ আছে।কেন?
– ওকে,তাহলে যান।ফিরে এসে দেখা করবেন।
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,কেন!
– আপনার মাথায় কাঠাল ভাঙবো।
মৈত্রী কিছু বুঝতে পারেনি এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো।
মিশু হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো।

পর্ব:০৩

.
মিশু তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে কলেজে চলে আসলো।
কলেজের গেটে এক বড় ভাইয়াকে দেখে জিভ বের করে মুখ ভেংচি কাটল।
ছেলেটি অবাক হয়ে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো।আর মনে মনে ভাবল,মেয়ে টা তো দারুণ দুষ্টু!

মিশু আবারো জিভ করে দেখালো।
ছেলেটি এবার এগিয়ে এসে বলল,এই শোনো।
– আমি ফ্রিতে কারো কথা শুনিনা।
ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,তাহলে কি টাকা দিতে হবে?
– আমাকে কি ফকিন্নি মনে হয়?
– আশ্চর্য! তুমি নিজেই তো জিভ দেখাচ্ছো।
– আমি ইচ্ছে করে দেখাই নি।আমার এক টা অসুখ আছে।handsome ছেলে দেখলে জিভ টা বাইরে বেড়িয়ে আসে।
ছেলেটি হো হো করে হেসে বলল,তাই নাকি?
– জ্বি,বাই দা রাস্তা কিছু বলবেন?
– বাই দা রাস্তা বলতে?
– আরে বাবা বাই দা ওয়ে,কিছু বলবেন?
– হা হা,তুমি তো সাংঘাতিক বান্দর টাইপ এর মেয়ে।
– বান্দর নই,আমি হচ্ছি হনুমান।মিস হনুমান প্রসাদ ব্যান্ড ওয়ালী।

মিশুর কথা শুনে ছেলেটির হাসি যেন আর থামতেই চায় না।
মিশু বলল,ওকে টা টা।আমি ফ্রিতে কাউকে এতক্ষণ হাসাই না।

কথা টা বলেই মিশু কলেজের ভিতরে ঢুকে গেলো।
ছেলেটি সেখানে দারিয়েই হো হো করে হাসতে লাগলো।
.
মিশু ক্লাসে এসেই ওর বান্ধবী মেহরিমা কে বলল,দোস্ত আজ ফাটাফাটি খবর আছে।
মেহরিমা খুশি হয়ে বলল,কিরে! বল বল তাড়াতাড়ি,
– আমাদের বাসায় গেস্ট এসেছে।একেবারেই ভ্যাবলা কান্ত।দেখতে যা handsome! বাট পুরাই হাবা হাবা।চশমা পড়লে একদম বোকা বোকা সোহমের মত দেখায়।তবে ছেলেটা ভদ্র আছে বস।
– ইস,দারুণ মজা তো! ওরে বোকা বানাইছিস নাকি?
– আরে রাত্রে উনি ঘুমাচ্ছিল।বাঘের মত হা করে ঘুমাচ্ছিল।আমি ওনার হা করে মুখে এক মুঠো মুড়ি ঢেলে দিছি।
মেহরিমা শব্দ করে হেসে বলল,তারপর?
– উনি জেগে উঠে ভুত দেখার মত হা করে চেয়ে রইলেন।
– তুই পারিস ও বাবা।
– আজ ওকে কাদায় চুবাইছি,পুকুরে ডুবাইছি।
মেহরিমা অবাক হয়ে বলল,কিভাবে!
মিশু সব কথা ওকে খুলে বলল,
সব শুনে মেহরিমা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে।
মিশুর আরো কয়েকজন বান্ধবী ও বসে বসে মিশুর গল্প শুনছে।
মিশু মেহরিমাকে বলল,দোস্ত আজ চল আমাদের বাসায়।ওই ভ্যাবলা কান্তের মাথায় কাঠাল ভাঙবো দুইজন মিলে।যাবি?
– আম্মুকে বলতে হবে রে।
– ভাবিস না,আমি ছুটির পর তোদের বাসায় যাবো। আনটিকে রাজি করিয়ে তোকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। আজ দারুণ মজা হবে রে! একদিকে ওই ভ্যাবলা কান্ত,আরেকদিকে আমরা দুই বান্দর।
মেহরিমা বলল,হ্যা খুব মজা হবে।কিন্তু কিভাবে ওনার মাথায় কাঠাল ভাঙবি শুনি?
– ভাবতে থাক,ক্লাস শেষ হতে হতে আশাকরি অনেক শয়তানি বুদ্ধি আমদানি করে ফেলবো।
– ওকে দোস্ত,ভাবছি।আচ্ছা ওনাকে রাত্রে ভুত সেজে ভয় দেখালে কেমন হয়?
– ওয়াও! গ্রেট আইডিয়া!

এমন সময় ক্লাসে প্রিন্সিপাল স্যার ও পিছনে আরেকজন লোক ঢুকলেন।
মিশু অবাক হয়ে দেখল,যে ছেলেটিকে ও কলেজের গেট এ জিভ দেখিয়েছে আর নানান কথা বলে মজা করেছে সেই ছেলেটি!

মিশুর হার্ট বিট বেড়ে গেলো। ছেলেটি বুঝি স্যারকে সব বলে দিয়েছে! আজ মিশুর কপালে শনি আছে!
মিশু মেহরিমাকে গুতা দিয়ে বলল,ওই শোন না।
– কিরে?
মিশু ফিসফিস করে বলল আজ এই ছেলেটিকে মুখ ভেংচিয়েছি।যদি স্যার কে বিচার দিয়ে থাকে?
– আরে নাহ,ছেলেটি ভদ্র আছে।আর বুদ্ধিমান বুদ্ধিমান চেহারা।স্যারকে বলতেই পারেনা।
– জানিনা রে রিমা,আজ যে কি হবে!!
এমন সময় স্যার বললেন, তোমরা সবাই কেমন আছো?
সবাই সমস্বরে উত্তর দিলো, ভালো স্যার।
– গুড,শোনো ইনি হচ্ছেন তোমাদের নতুন বাংলা শিক্ষক।উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স করেছেন এবং মাস্টার্স এ অধ্যয়ন রত আছেন। আমাদের বাংলা শিক্ষক সংকটে উনি কিছুদিন ক্লাস নেবেন।যদি তোমাদের বাংলা স্যার ফিরে আসেন, তবে উনি চলে যাবেন। নয়ত ওনাকেই আমরা রেখে দেবো। সবাই স্যারের সাথে পরিচিত হও,মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করো।
মিশু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে! এই লোকটিকে ও মুখ ভেংচি দেখিয়েছে। সর্বনাশ!
ছেলেটিকে দেখে মনে হয়,ডিগ্রিতে পড়াশুনা করছে।একেবারেই ইয়ং, এই ছেলেটি যে শিক্ষক হতে পারে সেটা মিশু কল্পনাও করেনি।
মিশু চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে!
মেহরিমা বলল,এই মিশা এইবার কি হবে রে? স্যারের সামনে ক্লাস করবি কি করে?
– বগলের নিচে বিষ ফোড়া রে দোস্ত।
মেহরিমা বলল,সাবধানে থাকিস।ফোড়া কিন্তু ভয়ানক জিনিস।
– হু,আমার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে স্যার টা দেখেছিস?

মিশুকে বিড়বিড় করে কথা বলতে দেখে নতুন স্যার হাসলেন।প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যেতেই তিনি ক্লাস শুরু করে দিলেন।
নিজের পরিচয় দেবার পর ছাত্রছাত্রী দের পরিচয় জানতে চাইলেন।
প্রথম বেঞ্চ থেকে ধারাবাহিক ভাবে সকলেই নিজের পরিচয় দিয়ে গেলো।
এইবার মিশুর পালা।মিশু দাড়িয়ে মাথা নিচু করে কলম কামড়াতে লাগলো।
স্যার বললেন,পরিচয় দাও।নাম কি?
মিশু তবুও চুপচাপ। স্যার হেসে বললেন, তুমি কি ফ্রিতে কাউকে নাম বলোনা নাকি?
ক্লাসশুদ্ধ সবাই হেসে উঠল। সবাই জানে এটা মিশুর বিখ্যাত ডায়ালগ গুলোর মধ্যে একটি।স্যার নিশ্চয় ই আগে শুনেছেন।

নবাগত শিক্ষক বললেন, তোমার নাম মিস ব্যান্ড ওয়ালি না?
সবাই আবারো হেসে উঠল। মিশু মনে মনে ভাবল,সকলেই হাসছে।এখন যদি মিশু মুখ কালো করে ফেলে তাহলে ব্যাপার টা খারাপ হবে।তারচেয়ে বরং রসিকতায় যোগ দেয়া যাক।
মিশুও হেসে বলল,জ্বি স্যার।আমি হনুমান প্রসাদ ব্যান্ড ওয়ালী।

ক্লাসশুদ্ধ হাসির রোল পড়ে গেলো।
স্যার হেসে বললেন, পাজি মেয়ে।বসো।
মিশুর দুঃশ্চিন্তা কমে গেলো। স্যার অনেক রসিক মানুষ। তাহলে আর কোনো ভয় নেই।
.
অনেক সুন্দর ভাবে ক্লাস টা শেষ হয়ে গেলো।
মিশুর অনেক ভালো লাগলো স্যারকে।ভারি মজার মানুষ!
.
স্যার বেড়িয়ে যেতেই কয়েকজন মেয়ে এসে মিশুকে ধরে ফেলল- তুই স্যারকে চিনিস?
মিশু বলল,হ্যা উনি আমাদের বাংলা স্যার,মিস্টার হৃদয় আহমেদ।
– কিন্তু আগে থেকে চিনিস নাকি? স্যার যে বলল ওইভাবে?
মিশু রহস্যময় হাসি দিলো, যেন সে অনেক কিছুই জানে।
মেহরিমা বলল,হাসছিস যে মিশা?
– হৃদয় স্যার অনেক মজার মানুষ। দেখে বুঝাই যায় না যে মাস্টার্সে পড়েন।বাই দা রাস্তা,তোরা এখন উপায় বল।
– কিসের উপায়?
– আরে আমাদের বাসায় যে অতিথি এসেছে,মিস্টার মুত্রী।তার সাথে আজ মজা করতে হবে।তাকে বয় কারে বোকা বানাতে হবে।যেন আজীবন এই মিশু চৌধুরির কথা স্মরণ রাখে।

এরপর সব বান্ধবী মিলে বুদ্ধি করল কিভাবে মৈত্রীর সাথে মজা করা যায়।
.
কলেজে ক্লাস শেষ করে মিশু মেহরিমা দের বাসায় গিয়ে ওর মাকে বলে মেহরিমাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসলো।
বাসায় ফিরে দেখল মৈত্রী এখনো ফেরেনি।
দুই বান্ধবী বসে বসে হাসাহাসি করতে লাগলো।
.
অনেক্ষন পর বাসার সামনে গাড়ি এসে দাড়ালো।
মিশু ও মেহরিমা ছুটে বাইরে আসলো।
দুজনে অবাক হয়ে দেখল,মৈত্রীর সাথে আরেকজন সুদর্শন যুবক!
মেহরিমা বলল,এই মিশা এই কালা চশমা টা কে রে?
মিশু অবাক হয়ে বলল,আগে দেখি নাই।মেয়বি ইনিও অতিথি।
– ওয়াও! যদি ইনি থেকে যায়,সেইরম মজা হবেরে মিশা।কি নায়ক নায়ক লুক দেখেছিস?
– চুপ,বেশি লাফাস না।মেয়ে মানুষ, ভাব নিয়ে থাকবি।
– ছেলে টা handsome রে মিশা।এর সামনে ভাব নেয়া চলেনা।
– ওই হারামি,ভাব নিয়া থাকবি বলে দিলাম।তুই মিশুর বান্ধবী। মুড নিয়া থাক,ওই ছেলেই তোর উপ্রে ক্রাশিত হবে,তুই না।বুঝলি?
মেহরিমা মুখ কালো করে বলল,সবসময় ভাব নিতে পারবো না।
মিশু বলল,তোর যা ইচ্ছে।এখন একটু ভাব নিয়া দারাই থাক দোস্ত।
মেহরিমা মুচকি হেসে অতিথি দের দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
অতিথি দুজন মিশুর সামনে চলে আসার পর মৈত্রী বলল,হাই সাম্য।
– হাই মৈত্রী,
মৈত্রী হেসে বলল,কেমন আছো?
– ঝিংকু,
মৈত্রী অবাক হয়ে বলল,ঝিংকু মানে!
– ঝিংকু মানে খুউউব ভালো। ভালো টু দি পাওয়ার টেন। বাই দা রাস্তা,ইনি কে?
– ও হচ্ছে আমার ছোট ভাই।ওর নাম মর্ম।
মিশু ও মেহরিমা মুচকি হাসল।
মৈত্রী মেহরিমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,ইনি কে?
মেহরিমা বলল,আমি সাম্য’র বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার নাম মেহরিমা।
উত্তরে মৈত্রী ও মর্ম হাসল।
মিশু মর্মকে বলল,আমাদের বাড়ি তে আপনাকে সাদর সম্ভাষণ মিস্টার মর্ম।
মর্ম হেসে বলল,ধন্যবাদ।
এরপর দুভাই বাসায় ভিতরে প্রবেশ করলো।
মিশু মেহরিমাকে বলল,বান্ধবী আজ দুই বান্দর মিলে এই দুই টার মাথায় কাঠাল ভাঙবো।
– শুধু কাঠাল না,বেল ও ভাঙবো।
– হু,চুল ওয়ালা মাথায় কাঠাল আর ন্যাড়া মাথায় বেল।

দুই বান্ধবী হেসে উঠল।

পর্ব:০৪

.
বসার ঘরে প্রবেশ করতে গিয়েই মিশু মর্ম’র সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল।ততক্ষণাত মর্ম ধরে ফেলল।
মিশু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,আহা! কি সুন্দর সিন! নায়িকা পড়ে যাচ্ছে নায়ক ধরে ফেলেছে! শুধু ব্যাক গ্রাউন্ডে একটা গান ই বাজলো না।
মর্ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,এটা কি সিনেমা যে ব্যাক গ্রাউন্ডে মিউজিক বাজবে?
– আজকাল নাটকেও মিউজিক বাজে।
– আমরা কি নাটক করছি?
– না,কিন্তু ব্যাপার টা সিনেম্যাটিক হয়ে গেলো না? এখন দরকার একটা গান।
মর্ম হেসে বলল,আগে জানলে গান গাইতাম। এখন শুরু করবো নাকি?
– এখন না,পরে।বাই দা রাস্তা,আপনি আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকিয়েছেন।আপনাকে কেয়া কসমেটিকস এর পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
– কেয়া!
– কেয়া কসমেটিকস।
মর্ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এই মেয়ে তো সাংঘাতিক মেয়ে!
মিশু বলল,বাই দা রাস্তা আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি নাস্তা রেডি করতে বলছি।
– রাস্তায় কি হয়েছে?
– কুকুরের বাচ্চা হয়েছে।
– হোয়াট!
– হোয়াট মানে কি?
– বাই দা রাস্তা? রাস্তায় কি হয়েছে?
– বললাম তো কুকুরের বাচ্চা হয়েছে।আপনি বুঝেন না? বাই দা রাস্তা মানে হচ্ছে বাই দা ওয়ে।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আপনি একটু স্ট্রেঞ্জ!
– জ্বি,আমি স্ট্রেঞ্জ।
– কেয়া কসমেটিকস ব্যাপার টা খুব মজা লাগছে।
– বাহ খুব ভালো। শুনে ধন্য হলাম।এনি রাস্তা,আমি ফ্রিতে কাউকে হাসাই না।
– এনি রাস্তা টা কি? এনিওয়ে?
– এইতো, ঘটে বুদ্ধি আছে! মশাই,এবার আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
মর্ম হেসে বলল,ওকে যাচ্ছি।
.
মিশু মেহরিমাকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা টা বলতেই ও হো হো করে হেসে উঠল। তারপর বলল,তুই এর মধ্যেই ব্যাটার মাথায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ঢুকিয়ে দিলি।কোথায় ভাবলাম আমার উপ্রে ওকে ক্রাশ খাওয়াবো। তুই আগে ভাগেই আমার জায়গা দখল করে নিলি।
– আ মোর জ্বালা।আমি এসবে ইন্টারেস্টেড নই বুঝলি? তুই ওনাকে পটাবি,হেল্প লাগলে মিশু পিছনে আছে।
– কিন্তু ওই কালা চশমা তো অলরেডি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে গান রচনা শুরু করে দিয়েছে মেয়বি।
– হুহ,বেশি বুঝবি না।আমি দেখছি।আমাদের এবার নাস্তা রেডি করতে হবে,চল।
.
মিশুর মা নাস্তা তৈরী করছেন।
মিশু ও মেহরিমা দুই গ্লাস শরবত বানিয়ে নিয়ে ওদের দুই ভাইকে দেয়ার জন্য বসার ঘরে আসলো।
শরবত বললে ভুল হবে,লবনের জুস বলা যেতে পারে।এক গ্লাস পানিতে এক মুঠো লবণ ছাড়া আর কিছুই দেয়া হয়নি।
মিশুর হাত থেকে শরবতের গ্লাস নিতে নিতে দুই ভাই হাসল।কষ্ট করে শরবত তৈরী করে এনেছে বলে দুই বান্ধবী ধন্যবাদ ও পেলো।
মর্ম ও মৈত্রী শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে যাচ্ছে।দুই বান্ধবীর মুখে দুষ্টুমি ভরা হাসি!
শরবতে চুমুক দিয়েই দুভাই ড্যাবড্যাব চোখে একে অপরের দিকে তাকালো।
মেহরিমা বলল,শরবত ভালো হয়নি?
মর্ম ঢোক গিলে বলল,এটা কি শরবত ছিল?
মিশু বলল,খেয়ে বুঝেন নি? এটা লবণের জুস ছিল।
দুভাই অবাক হয়ে বলল,লবণের জুস!
– জ্বি,সোডিয়াম ক্লোরাইড।
– সোডিয়াম ক্লোরাইড!
দুভাই হা করে তাকালো।
মিশু ও মেহরিমা হেসে উঠল।
মর্ম বলল,কি বলছেন এসব আপনারা?
মেহরিমা বলল,দেখলাম আপনাদের হজম শক্তি কেমন?
– মানে!
– খেয়ে ফেলুন পুরোটা।ভয় পাবেন না,এটা আয়োডিন যুক্ত লবণ।
– এটা কি খাওয়া সম্ভব?
– অবশ্যই না,খেলে বমি হবে।
দুভাই হা করে তাকিয়ে আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।মেয়ে দুজন আসলে কি কি বলছে কিছুই ওরা বুঝতে পারছে না।মজা করছে এটা নিশ্চিত কিন্তু ওদের কথা গুলো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মিশু বলল,আপনাদের সাথে একটু মজা করলাম।কিছু মনে করবেন না।
দুভাই শরবতের গ্লাস হাতে হা করে তাকিয়ে আছে।এতক্ষনে প্রকৃত ব্যাপার টা বুঝা গেলো।
মিশু বলল,এগুলা লবণ। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।গ্লাস দিন,আপনাদের আসল শরবত এনে দিচ্ছি।
মর্ম বলল,থাক থাক।আর কিছু খেতে চাইনা।
– হা হা হা।রাগ করলেন?
– না,অবাক হচ্ছি।এরকম আতিথ্য জীবনে প্রথম বার দর্শন করলাম।
– আসলে সবসময় ই তো অতিথি নারায়ণ ভেবে সেবা করা হয়।আমরাও করবো তবে মিশু চৌধুরি একটু স্ট্রেঞ্জ, তার বাসায় আসবেন অথচ ছ্যাকা খাবেন না সেটা কি হয়?
মৈত্রী বলল,ছ্যাকা তো ভালো ই খেলাম।আজীবন মনে থাকবে আপনার কথা।
দুই বান্ধবী হেসে শরবতের গ্লাস ওদের হাত থেকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসলো। কারো হাসি যেন আর থামতেই চায়না।
মিশুর মা বললেন, ব্যাপার কি তোদের? অন্যের মাথায় কাঠাল ভাংতে খুব মজা তাইনা?
মিশু হাসি থামিয়ে বলল,আম্মু এখনো কাঠাল ভাঙিনি,মাত্র তরমুজ ভাঙলাম।
বলেই দুই বান্ধবী আবারো হাসি শুরু করলেন।
মিশুর মা কিছু বললেন না।তার মেয়ে টা দুষ্টুমির শিরোমনি। ওকে কিছু বলেও লাভ নেই।
.
খাবার টেবিলে বসে দুইভাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে।কেউ খাচ্ছে না।দুজনের একই চিন্তা,যদি খাবারে কিছু মেশানো থাকে।
মিশু ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নিজের প্লেটটা মৈত্রীর সামনে দিয়ে বলল,আমার প্লেট টা নিন।তবুও চুপচাপ বসে থাকবেন না।আমরা লজ্জা পাচ্ছি।
মর্ম বলল,আপনাদের লজ্জা আছে?
মিশু ও মেহরিমা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।তাদেরকে এভাবে বলা হলো!
মিশু রেগে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।
মিশুর মা হেসে বললেন,বাবারা তোমরা নির্ভয়ে খাও।
আনটির কথায় ভরসা পেয়ে ওরা খাওয়া শুরু করলো।
মিশু চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে।মনে মনে ফন্দি আটছে কিভাবে এই কথার প্রতিশোধ নেয়া যায়?
মেহরিমা ও মিশু একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলল।

পর্ব:০৫

.
খাওয়া শেষ করে মর্ম ও মৈত্রী বসে আছে।
মিশু ও মেহরিমা এসে খিলখিল করে হাসা শুরু করলো।
দুভাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা হাসছেন কেন?
মিশু বলল,আপনারা জাবর কাটছেন দেখে হাসি পাচ্ছে।
দুজন ছেলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
মর্ম বলল,আমরা কি ছাগল যে জাবর কাটবো?
মেহরিমা বলল,আপনারা ছাগল কিনা সেটা তো আপনারা ই ভালো জানেন।
মর্ম সানগ্লাস চোখে দিতে দিতে বলল,জীবনে আপনাদের মত মেয়েমানুষ দেখিনি।
মিশু হেসে বলল,আমরাও জীবনে আপনাদের মত ছেলেমানুষ দেখিনি।বাই দা রাস্তা,এই রুমের মধ্যে সানগ্লাস চোখে দিচ্ছেন কেন? ছাদ ফুটা হয়ে আপনার চোখে সূর্যের আলো লাগছে?
– নাহ,বাইরে যাবো। আজ আর কোনো কাজ নেই,তাই ঘুরতে যাচ্ছি।
– একা একা যাবেন?
– আপনারা ও চলুন ঘুরে আসি।
মিশু মেহরিমার সাথে চোখাচোখি করে বলল,পাচ মিনিট বসুন,আমরা দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
মৈত্রী জিজ্ঞেস করল,বাকি পাচ মিনিট কি দারিয়ে থাকবো?
– না,জাবর কাটবেন।
বলেই দুই বান্ধবী হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো।
.
সাজগোজ করতে করতে দুজনে প্লান করছে কিভাবে ছেলে দুটোর মাথায় কাঠাল ভাঙা যায়?
ইতিমধ্যেই অনেক পরিকল্পনাও করা হয়ে গেছে।
.
মিশুকে দেখে মর্ম হা করে তাকিয়ে রইলো।
মিশু জিভ বের করে দেখালো।মর্ম বুঝতে পারছে না মেয়েটি এমন করলো কেন?
মিশু বলল,কি দেখছেন মশাই?
– জিভ দেখালেন কেন?
– দোষ আমার নয়,handsome ছেলেদের দেখলে আমার জিভ বাইরে বেড়িয়ে আসে।
– হা হা,কুত্তি মাইয়া।
মিশু রেগে বলল, কুত্তি! কি বললেন?
– কানে কম শুনেন?
– ওই আপনার সাহস তো কম না।
– সাহসী মানুষদের সাহস থাকা টাই স্বাভাবিক। আমিতো আপনার মত কুত্তি নই যে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই জিভ বেড়িয়ে আসবে।
– মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার মর্ম।
– আমার মাইন্ড ল্যাংগুয়েজ এই আছে।আমার সহজ সরল ভাই টাকে পেয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে বোকা বানিয়েছো।ঘুঘু দেখেছ,ফাদ দেখোনি।
মিশু মুখ ভেংচিয়ে বলল,আপনি কি ফাদ?
– আজ্ঞে হা।
– হা করেই থাকুন আর বাতাস খান।মিশু চৌধুরী কে চেনেন না।ফাদে পা দিতেও জানি,আবার পাদ দিতেও জানি।সেই বাতাসে আপনি উড়ে যেতেও পারেন।
মর্ম একদম থ! মিশুর মুখে কিচ্ছু আটকায় না,একেবারে সাংঘাতিক মেয়ে!
মিশু বলল,বুঝেছেন মিস্টার মরমর?
– আজব মেয়ে!
– চলুন আমরা রেডি।
.
চারজন মিলে বেড়িয়ে পড়ল তাজহাট জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেই মৈত্রী বলল,আমরা দুভাই আলাদা ঘুরি,আর তোমরা দুজন আলাদা ঘোরো।
মিশু বলল,আমরা সবাই আলাদা আলাদা ঘুরি।সুযোগ পেলেই আকাশে উড়ি। বেশি ঘুরবেন না,মাথা ঘুরবে।
– আচ্ছা,তুমি একটু সহজ করে কথা বলতে পারোনা মিশু? আমি তোমার ভাষা বুঝতে পারিনা।
মিশু বলল,আমি কি হুংচুংমুং মারমা নাকি চায়না গার্ল? আমার ভাষা না বুঝার কি আছে? আমি অংকে ও কথা বলিনা,আবার বাইনারিতেও কথা বলিনা।প্রমিত বাংলা ভাষায় কথা বলি।
– আসলে বড় জটিল করে কথা বলো,মাথার উপর দিয়ে যায়।
– তাই নাকি? এই যে আপনার ভাই মিস্টার মর্ম ওরফে ফাদ।তিনি আমার কথা খুব বুঝেন। আমার কথা উনার পায়ের তল দিয়ে যায়।আপনি ওনার কাছে বুঝিয়ে নিবেন।
– জ্বি,তাহলে আমরা বামদিক টা ঘুরে ঘুরে দেখি আর তোমরা ডান দিক টায় যাও।
– আ মোর জ্বালা,আমি এই জমিদার বাড়ি বহুবার দেখেছি।নতুন করে দেখার কিছু নাই।আমি জাস্ট আসলাম আপনাদের সাথে মজা করতে।
মর্ম বলল,আর তোমরা থাকলে আমাদের কোনো মজা হবে না।বাই দা রাস্তা,ফলো ইয়োর নিজের রাস্তা।
মিশু রেগে বলল,আমার ডায়ালগ আমাকেই শুনানো হচ্ছে? আর এটা কেমন বিহ্যাভ? ভুলে যাবেন না,আপনি আমাদের অতিথি।
– আর তুমিও ভুলে যেও না যে,আমরা তোমাদের অতিথি।যেভাবে খুশি সেভাবে বোকা বানাবা আর আমরা সহ্য করবো এমন টা ভেবো না।
– আচ্ছা সরি।আমরা ঝগড়া মিটমাট করে নেই?
মর্ম হেসে বলল,ওকে।কেউ সরি বললে আমি আবার না করতে পারিনা।
মিশু মনে মনে বলল,মজা দেখাচ্ছি বাছাধন, wait and see.
.
চারজন একসাথে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। মিশু সুযোগ বুঝে একটা মেয়েকে এসে বলল,আপু আপনার সাথে কথা ছিল।
মেয়েটি হেসে বলল,জি আপু বলো।
মিশু মর্মকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,ওই কালা চশমা ছেলেটা আপনাকে ডাকছে।
– আমাকে! কেন?
– আপনাকে দেখে ওনার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,ওকে চলো।
– আমি একটু চিপস কিনতে যাচ্ছি।আপনি ওনার কাছে যান,আমি এক্ষুনি আসছি।
মেয়েটি গমগম করে হেটে এসে মর্মকে বলল,আপনি আমাকে ডেকেছেন কেন?
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আমি!
– হ্যা, কি সমস্যা আপনার?
– আপনি কি হারবাল চিকিৎসক?
মেয়েটি রেগে বলল,shut up. ডেকেছেন আবার ফাজলামো করছেন?
মর্ম হা করে তাকালো!
পাশেই মেহরিমা দাড়িয়ে আছে।ওর বুঝতে বাকি নেই এটা মিশুর কাজ।মেহরিমা মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
মেয়েটি ভয়ানক রেগে মর্মকে বলল,হা করে আছেন কেন? বলুন?
– কি বলবো?
– আমাকে দেখে নাকি আপনার প্রেম প্রেম পাচ্ছে?
– আজব! প্রেম প্রেম কিভাবে পায়?
– সেটা আপনি জানেন।এসবের মানে কি?
মর্ম নিজেও অবাক হয়ে বলল,এসবের মানে কি!
মেহরিমা হাসছে!
মৈত্রী দূরে দাড়িয়ে দেখছিল।এগিয়ে এসে হা করে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবছে,মেয়েটি সুন্দরী আছে বটে! মর্ম’র পছন্দ আছে।
মর্ম চোখ বড় বড় করে বলল,আপনি কি সুস্থ?
মেয়েটি দাত কটমট করে বলল,আমাকে আপনার সাইকো মনে হচ্ছে? নাকি আপনি নিজেই সাইকো? আপনার প্রেম প্রেম পাচ্ছে তাই না? দাড়ান,মজা দেখাচ্ছি।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আর কত মজা দেখবো? এটা নিশ্চয় ই মিশুর কাজ!
( চলবে…)

“অতিথি’র স্মৃতি”
পর্ব:শেষ পর্ব
মিশু মনি

খাওয়া শেষ করে মর্ম ও মৈত্রী বসে আছে।
মিশু ও মেহরিমা এসে খিলখিল করে হাসা শুরু করলো।
দুভাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা হাসছেন কেন?
মিশু বলল,আপনারা জাবর কাটছেন দেখে হাসি পাচ্ছে।
দুজন ছেলেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
মর্ম বলল,আমরা কি ছাগল যে জাবর কাটবো?
মেহরিমা বলল,আপনারা ছাগল কিনা সেটা তো আপনারা ই ভালো জানেন।
মর্ম সানগ্লাস চোখে দিতে দিতে বলল,জীবনে আপনাদের মত মেয়েমানুষ দেখিনি।
মিশু হেসে বলল,আমরাও জীবনে আপনাদের মত ছেলেমানুষ দেখিনি।বাই দা রাস্তা,এই রুমের মধ্যে সানগ্লাস চোখে দিচ্ছেন কেন? ছাদ ফুটা হয়ে আপনার চোখে সূর্যের আলো লাগছে?
– নাহ,বাইরে যাবো। আজ আর কোনো কাজ নেই,তাই ঘুরতে যাচ্ছি।
– একা একা যাবেন?
– আপনারা ও চলুন ঘুরে আসি।
মিশু মেহরিমার সাথে চোখাচোখি করে বলল,পাচ মিনিট বসুন,আমরা দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
মৈত্রী জিজ্ঞেস করল,বাকি পাচ মিনিট কি দারিয়ে থাকবো?
– না,জাবর কাটবেন।
বলেই দুই বান্ধবী হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসলো।
.
সাজগোজ করতে করতে দুজনে প্লান করছে কিভাবে ছেলে দুটোর মাথায় কাঠাল ভাঙা যায়?
ইতিমধ্যেই অনেক পরিকল্পনাও করা হয়ে গেছে।
.
মিশুকে দেখে মর্ম হা করে তাকিয়ে রইলো।
মিশু জিভ বের করে দেখালো।মর্ম বুঝতে পারছে না মেয়েটি এমন করলো কেন?
মিশু বলল,কি দেখছেন মশাই?
– জিভ দেখালেন কেন?
– দোষ আমার নয়,handsome ছেলেদের দেখলে আমার জিভ বাইরে বেড়িয়ে আসে।
– হা হা,কুত্তি মাইয়া।
মিশু রেগে বলল, কুত্তি! কি বললেন?
– কানে কম শুনেন?
– ওই আপনার সাহস তো কম না।
– সাহসী মানুষদের সাহস থাকা টাই স্বাভাবিক। আমিতো আপনার মত কুত্তি নই যে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই জিভ বেড়িয়ে আসবে।
– মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার মর্ম।
– আমার মাইন্ড ল্যাংগুয়েজ এই আছে।আমার সহজ সরল ভাই টাকে পেয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে বোকা বানিয়েছো।ঘুঘু দেখেছ,ফাদ দেখোনি।
মিশু মুখ ভেংচিয়ে বলল,আপনি কি ফাদ?
– আজ্ঞে হা।
– হা করেই থাকুন আর বাতাস খান।মিশু চৌধুরী কে চেনেন না।ফাদে পা দিতেও জানি,আবার পাদ দিতেও জানি।সেই বাতাসে আপনি উড়ে যেতেও পারেন।
মর্ম একদম থ! মিশুর মুখে কিচ্ছু আটকায় না,একেবারে সাংঘাতিক মেয়ে!
মিশু বলল,বুঝেছেন মিস্টার মরমর?
– আজব মেয়ে!
– চলুন আমরা রেডি।
.
চারজন মিলে বেড়িয়ে পড়ল তাজহাট জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেই মৈত্রী বলল,আমরা দুভাই আলাদা ঘুরি,আর তোমরা দুজন আলাদা ঘোরো।
মিশু বলল,আমরা সবাই আলাদা আলাদা ঘুরি।সুযোগ পেলেই আকাশে উড়ি। বেশি ঘুরবেন না,মাথা ঘুরবে।
– আচ্ছা,তুমি একটু সহজ করে কথা বলতে পারোনা মিশু? আমি তোমার ভাষা বুঝতে পারিনা।
মিশু বলল,আমি কি হুংচুংমুং মারমা নাকি চায়না গার্ল? আমার ভাষা না বুঝার কি আছে? আমি অংকে ও কথা বলিনা,আবার বাইনারিতেও কথা বলিনা।প্রমিত বাংলা ভাষায় কথা বলি।
– আসলে বড় জটিল করে কথা বলো,মাথার উপর দিয়ে যায়।
– তাই নাকি? এই যে আপনার ভাই মিস্টার মর্ম ওরফে ফাদ।তিনি আমার কথা খুব বুঝেন। আমার কথা উনার পায়ের তল দিয়ে যায়।আপনি ওনার কাছে বুঝিয়ে নিবেন।
– জ্বি,তাহলে আমরা বামদিক টা ঘুরে ঘুরে দেখি আর তোমরা ডান দিক টায় যাও।
– আ মোর জ্বালা,আমি এই জমিদার বাড়ি বহুবার দেখেছি।নতুন করে দেখার কিছু নাই।আমি জাস্ট আসলাম আপনাদের সাথে মজা করতে।
মর্ম বলল,আর তোমরা থাকলে আমাদের কোনো মজা হবে না।বাই দা রাস্তা,ফলো ইয়োর নিজের রাস্তা।
মিশু রেগে বলল,আমার ডায়ালগ আমাকেই শুনানো হচ্ছে? আর এটা কেমন বিহ্যাভ? ভুলে যাবেন না,আপনি আমাদের অতিথি।
– আর তুমিও ভুলে যেও না যে,আমরা তোমাদের অতিথি।যেভাবে খুশি সেভাবে বোকা বানাবা আর আমরা সহ্য করবো এমন টা ভেবো না।
– আচ্ছা সরি।আমরা ঝগড়া মিটমাট করে নেই?
মর্ম হেসে বলল,ওকে।কেউ সরি বললে আমি আবার না করতে পারিনা।
মিশু মনে মনে বলল,মজা দেখাচ্ছি বাছাধন, wait and see.
.
চারজন একসাথে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। মিশু সুযোগ বুঝে একটা মেয়েকে এসে বলল,আপু আপনার সাথে কথা ছিল।
মেয়েটি হেসে বলল,জি আপু বলো।
মিশু মর্মকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,ওই কালা চশমা ছেলেটা আপনাকে ডাকছে।
– আমাকে! কেন?
– আপনাকে দেখে ওনার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,ওকে চলো।
– আমি একটু চিপস কিনতে যাচ্ছি।আপনি ওনার কাছে যান,আমি এক্ষুনি আসছি।
মেয়েটি গমগম করে হেটে এসে মর্মকে বলল,আপনি আমাকে ডেকেছেন কেন?
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আমি!
– হ্যা, কি সমস্যা আপনার?
– আপনি কি হারবাল চিকিৎসক?
মেয়েটি রেগে বলল,shut up. ডেকেছেন আবার ফাজলামো করছেন?
মর্ম হা করে তাকালো!
পাশেই মেহরিমা দাড়িয়ে আছে।ওর বুঝতে বাকি নেই এটা মিশুর কাজ।মেহরিমা মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
মেয়েটি ভয়ানক রেগে মর্মকে বলল,হা করে আছেন কেন? বলুন?
– কি বলবো?
– আমাকে দেখে নাকি আপনার প্রেম প্রেম পাচ্ছে?
– আজব! প্রেম প্রেম কিভাবে পায়?
– সেটা আপনি জানেন।এসবের মানে কি?
মর্ম নিজেও অবাক হয়ে বলল,এসবের মানে কি!
মেহরিমা হাসছে!
মৈত্রী দূরে দাড়িয়ে দেখছিল।এগিয়ে এসে হা করে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবছে,মেয়েটি সুন্দরী আছে বটে! মর্ম’র পছন্দ আছে।
মর্ম চোখ বড় বড় করে বলল,আপনি কি সুস্থ?
মেয়েটি দাত কটমট করে বলল,আমাকে আপনার সাইকো মনে হচ্ছে? নাকি আপনি নিজেই সাইকো? আপনার প্রেম প্রেম পাচ্ছে তাই না? দাড়ান,মজা দেখাচ্ছি।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,আর কত মজা দেখবো? এটা নিশ্চয় ই মিশুর কাজ!
_______==শেষ==_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here