গল্প: ঠিকানা লেখা : মিশু মনি পর্ব: ০৪

0
333

গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি

পর্ব: ০৪
.
আজ বৌভাত।
সারা বাড়ি তে মেহমান গিজগিজ করছে।আমার কোনো কাজ নেই।তাই নেচে নেচে বেড়াচ্ছি আর মনে মনে ফন্দি আঁটছি কিভাবে ইফতি কে জব্দ করা যায়?
বারান্দায় অনেক গুলো প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা।চেয়ার দেখেই আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এসে গেলো। এই চেয়ারে আঠা লাগিয়ে ইফতিকে বসতে দিবো। বসার পর যখন উঠে দাঁড়াবে,চেয়ার টা ওর পিছনে লেগে যাবে।দারুণ মজার হবে ব্যাপার টা!!
যেমনি ভাবা,তেমনি কাজ।পুরো চেয়ারে খুব করে আঠা লাগিয়ে দিলাম।মজবুত ভাবে লেগে যাবে ইফতি আর চেয়ার!
এখন যেভাবেই হোক ইফতিকে এখানে বসাতে হবে।
.
মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাবিদের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর হাসছে।
এটাই সুযোগ! এখুনি ওকে চেয়ারে বসিয়েই ছাড়ব।
চেয়ার টা নিয়ে গিয়ে ওকে বললাম,দাঁড়িয়ে আছিস যে? বস এখানে।
বলা মাত্রই ইফতি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল। আমার মনে লাড্ডু ফুটছে।এইবার বুঝবে মজা কাকে বলে! আসন্ন মজাদার দৃশ্যটা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
.
একজন ভাবি জিজ্ঞেস করল,মিশু তোমাদের দুজনের বোঝাপড়া কেমন?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– শুধুই কি খুনসুটি ই হয়,নাকি সুখ দুঃখ ও ভাগাভাগি হয়?
– সবই হয় গো ভাবি।শুধু প্রেম টাই হয়না।
– কেন?
ইফতি বলল,এই ব্লাক বেংগল ছাগল টার সাথে কে প্রেম করবে? আমি ইফতি জীবনেও ওর প্রেমে পড়ব না।
আমি চেঁচিয়ে বললাম,বিয়ে করলি ক্যান কুত্তা?
– তোকে করুণা করে বিয়ে করেছি।তোর মত হাফ টিকেট কে আমি ছাড়া আর কে বিয়ে করবে?
– আমি হাফ টিকেট?
– জ্বি,থ্রি কোয়ার্টার।
– ইফু, ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
– কি হবে তাহলে?
– দাড়ালেই বুঝবি।দাড়াও না বাবু,দাড়াও।
ইফতি দাঁড়িয়ে পড়ল।আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। যা হবার কথা ছিল তাই হয়েছে।চেয়ার টা ইফতির পিছনে লেগে গেছে।খুশিতে হাততালি দিতে লাগলাম।
ইফতি বসে তো চেয়ার ও বসে,ইফতি দাঁড়িয়ে পড়ে তো চেয়ার টাও ওর পিছে আটকে থাকে।ভারী মজার দৃশ্য!!
ঘর সুদ্ধ সবাই হেসে উঠল।আমি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
মা এসে বলল,একি ইফতি চেয়ার আটকে গেলো কিভাবে?
ইফতি আতকে উঠল, আম্মু ওই ডাইনী টার ডায়নামো এইটা।
– ডায়নামো!
সবাই আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
.
অবশেষে অনেক টানাটানির পর ইফতি আর চেয়ার টাকে আলাদা করা হলো।কিন্তু ইফতির পাঞ্জাবির কিছু অংশ ছিরে চেয়ারে লেগে গেছে।
ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে চলে গেলো।
.
আমার শ্বশুর মশাই আমাকে বলল,বান্দর টাকে দারুণ জব্দ করা হয়েছে।কিন্তু মিশু,এবার ইফতি তোমাকে কিভাবে পেনাল্টি দেয় দেখো। প্রস্তুত থেকো।
– হু বাবা।আট বছর ধরে তো এইরকম ই সহ্য করে আসছি।
– হুম,ফ্রেন্ড আর সমবয়সী রিলেশন গুলা খুব মজার হয়।
– হ্যা,কিন্তু অবশ্যই আপনার মত বাবা থাকতে হবে।
বলেই বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। এই পরিবার টা আমার খুব আপন,যেন নিজের ই বাবা মা।
.
রুমে এসে দেখি ইফতির অবস্থা বগলের তলে বিষফোড়ার মত।বারবার টয়লেটে ছুটছে।
আমি হেসে বললাম,কি সমস্যা?
– বারবার যাচ্ছি।এটা তোর তেলাপোকার স্যুপের ফল।
– আহারে!!
– কতবার গিয়েছি জানিস?
– বারবার যাস কেন? বাথরুমে গিয়ে বসে থাকলেই পারিস।বালিশ নিয়ে যা,ওখানেই ঘুমাস।
বলেই শয়তান মার্কা হাসি দিলাম।
ইফতি রেগে বলল,খুব মজা তাইনা?
– হোয়াই নট?
– তোকেও আমি তেলাপোকা ডান্স করাবো মিশু।মনে থাকে যেন।
– ওকে ওকে,মিশু অলওয়েজ রেডি।
.
অনেক আনন্দ ও হৈ হুল্লোরের মধ্য দিয়ে বৌভাতের প্রোগ্রাম শেষ হলো।কিন্তু ইফতির অবস্থা ভয়ানক। পাতলা পায়খানার প্রকোপে বেচারা শান্তি মত বসতেও পারছিল না।আমার একদিকে হাসি পাচ্ছে,অন্যদিকে রাগ হচ্ছে নিজের কাজের জন্য।আর যাই হোক,ইফতির কষ্ট আমার সহ্য করতেও কষ্ট হয়।
.
রাত্রিবেলা
বসে বসে গয়না গুলি খুলে রাখলাম।ইফতি এসে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল।আমি লজ্জায় নীল হয়ে বললাম,হঠাৎ কি হলো?
– তুই আমার বউ মিশু?
– হুম,
– জানিস আমার বিশ্বাস ই হচ্ছেনা তুই আমার নিজের বউ।তোকে সারাজীবনের মত করে পাবো এটা কখনো ই কল্পনাও করিনি।
– আমিও তো কখনো ভাবিনি তোর সাথে আমার বিয়ে হবে।
– আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না তো?
আমি হেসে পিছন ফিরে ইফতির দিকে তাকালাম।কিন্তু ওর দিকে তাকানো মাত্রই ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে গেলো।
এ কে!! এটা তো ইফতি নয়।সানডে হরর স্পেশালের ভূতের মত দেখতে।ও বাবাগো! দাত গুলা কি বড় বড়, মুখে রক্ত লেগে আছে,চুল গুলা খাড়া খাড়া, কপালে ভূতুড়ে দাগ,গাল কাটা।বাবাগো আমি শেষ!!
.
শেষ হয়েও শেষ হইনি।ভেবেছিলাম মরে টরে গেছি।কিন্তু না,চোখ মেলে দেখি ইফতি আমাকে ধরে রেখেছে।বারবার ভূত টার চেহারা চোখের সামনে ভাসছে!!
ভালো করে ইফতির দিকে তাকালাম।এটা আসলেই আমার ইফতি তো? নাকি কোনো ভূত! ও বাবাগো!
আমি আবারো চেঁচিয়ে উঠলাম। ইফতি বলল,কি হইছে মিশু?
– ভূ ভূ ভূ..
– তোতলাচ্ছিস কেন? কি হইছে বল?
– ভূ ভূ ভূত।
– ভূত দেখেছিস?
– হু,
– শোন আমাদের বাসায় ভূত আছে।অশরীরী আত্মা,আবার মাঝেমাঝে শরীরের আকার নিয়ে আসে।হি হি হি।
আমার গলা শুকিয়ে গেলো ভয়ে।সত্যিই কি ভূত আছে নাকি? কালকে তো ইফতি ভূত সেজেছিল।কিন্তু আজকের ভূতটা আসল না নকল?
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ইফতির বুকে মুখ লুকালাম।ইফতি খিলখিল করে হাসছে।
.
অনেক ক্ষণ নিরবে কেটে যাওয়ার পর ইফতি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,মেয়েদের এই ন্যাকামি আমার অসহ্য লাগে।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,ন্যাকামি মানে!
– এই যে ভূত ভূত বলে ভয়ে কাঁপছিস। পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নাই।
– তাহলে ওই ভূত টা?
– ওটা তো ইফতানা।কাল বলিনি তোকে,ওটা ইফতির ফিমেল ভার্সন।
– তারমানে তুই আবার আমাকে ভয় দেখালি? ভয় পাইয়ে দিয়ে আবার বলছিস মেয়েদের ন্যাকামি সহ্য হয়না?
ইফতি চোখ মাড়ল। আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।এমন সময় পিঠে কি যেন নড়াচড়া করছে।
পিঠে হাত দিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম।আমার চুলের বেনিতে কি যেন একটা!
বেনিটা সামনে নিয়ে আতকে উঠলাম। আমার লম্বা চুলের বেনির শেষে একটা ইঁদুর ঝুলছে।ইফতি ইঁদুর টাকে আমার চুলের সাথে বেধে দিয়েছে।
আমি হাসবো না রাগবো বুঝতে পারছি না।ইঁদুর টা লাফালাফি করছে আমার চুলে।হাত দিয়ে ধরতেও পারছি না,আবার চুপচাপ দেখতেও পারছিনা।ইদুর বাবাজি সমান তালে আমার চুলে নাচানাচি করছে।
ইফতি খিলখিল করে হাসছে।আমি তো একেবারে থ!
এ কেমন ফাজলামি!
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here