গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি
পর্ব: ০৫
.
আমি রাগী রাগী মুখে তাকিয়ে আছি দেখে ইফতি নিজেই আমার চুল থেকে ইঁদুর টা খুলে নিলো। তারপর ইদুরের লেজ ধরে আমার মুখের সামনে সেটা ঝুলিয়ে নাচাতে লাগলো।
আমি আতকে উঠলাম। এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা।
ইফতি জানালা খুলে ইদুর টা ফেলে দিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।
আমি বললাম,সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আয়।
– হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুলে হবে না?
– হুইল,ভিম যা পারিস তাই দিয়ে ধুয়ে আয়।
ইফতি হাতটা আমার নাকের উপর ধরে বলল,দ্যাখ কেমন গন্ধ?
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,যাবি তুই?
ইফতি হো হো করে হাসতে হাসতে বাথরুমে চলে গেলো।
.
ও বেড়িয়ে আসার পর বললাম,কি রে এখন শরীর কেমন?
– হুম অনেক টাই ভালো।
ইফতি এসে আমার সামনে বসলো।
ওর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো।মুখ ধুয়ে এসেছে,মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।কপালে চুলের সামনের দিকটা ভেজা।খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে।কেমন মায়াবী চাহনিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কেমন যেন লাগতে শুরু করেছে।বুকের ভিতরে ধুকপুকুনি টা বাড়তে শুরু করেছে,অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে।এর আগে কখনো ইফতিকে দেখে এমন হয়নি।আজই প্রথম, তাই অনুভূতি টা নতুন।
দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না।অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলাম দুজন দুজনের দিকে!
আমার হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে গেছে।ইফতির প্রেমে পড়ে যাচ্ছি না কি!
আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম।ইফতি একটু কাছে এগিয়ে আসলো। আমার হার্টবিট আরো বেড়ে গেলো। এবার ওর নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।ইফতি একটু একটু করে কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো।
আমি মাথা নিচু করে নিরবতা পালন করছি।ইফতি আমার একদম কাছে চলে আসলো।তারপর দুহাতে আমার মুখটা ধরলো।
আমি লজ্জায় নীল হয়ে উঠলাম।ইফতির উষ্ণ হাতের স্পর্শে কেমন যেন ভালোলাগা কাজ করছে।শরীর শিউরে উঠলো আমার।
ইফতি দুহাত দিয়েই আমার মুখটা ওর মুখের কাছে নিয়ে আসলো।তারপর ফিসফিস করে বলল,আমি তোর কত কাছে এসেছি..
আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছি।ইফতি বলল,
– কখনো কি ভেবেছিলি এত কাছে আসবো?
আমি মাথা নাড়লাম।
ইফতি বলল,আরেকটু কাছে আসি?
আমি লজ্জায় কথা বলতে পারলাম না।মাথা নেড়ে না বললাম।
– একটু?
– উহু..
ইফতি বারণ শুনলো না।আরো কাছে টেনে নিলো।আমার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় শিহরিত হচ্ছে!
এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো। দুজনেই চমকে উঠলাম।ইফতি বিরক্তির সুরে বলল,ফোন আসার আর সময় পেলো না?
আমি হেসে ফোনটা হাতে নিলাম।আম্মু কল দিয়েছে।কিন্তু রিসিভ করার আগেই ফোন বন্ধ হয়ে গেলো।চার্জ নেই ফোনে।
ইফতি বলল,ভালো হয়েছে।মোবাইল রাখ ওইদিক।
আমি হেসে বললাম,চার্জে লাগিয়ে দিই?
– না,পরে দিস।
ইফতির চোখের দিকে তাকিয়ে আমি লজ্জা পেয়ে হাসলাম।
ও বলল,কি রে মিশু পাগলী?
– কিছু না।
ইফতি গান গেয়ে উঠলো,
“আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে…
ইফতি গান গেয়েই চলেছে।আমার এত বেশি ভালো লাগছে যা বলে বোঝানো সম্ভব না।ফোন টা নিয়ে এসে চার্জে লাগিয়ে দিলাম।আমার মুখে প্রশান্তির হাসি!
কিন্তু চার্জে লাগিয়ে দেয়ার সময় ঠিক কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।আমার শরীর কেপে উঠলো, মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। হাতটা যেন কেটে নিলো এমন মনে হচ্ছে।শরীরে ইলেক্ট্রন চলে এসেছে হয়ত।বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ শক লেগে গেছে।হাত সরিয়ে নিলাম ঠিক ই,কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না।মাথা ঘুরে উঠলো,অনেক দূরে ছিটকে পড়ে গেলাম।মেঝেতে পড়ে যাওয়া মাত্রই মাথায় আঘাত পেলাম, হাত টাও অবশ হয়ে যাচ্ছে।সারা শরীরে যন্ত্রনা হচ্ছে,সব শিরা উপশিরা কেন ছিড়ে যাচ্ছে।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
আর কিছু বলতে পারিনা,অচেতন হয়ে পড়লাম।