#ফুফু_শ্বাশুড়ি
#লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
#পর্ব: ১০ (অন্তিম পর্ব)
!!১৯!!
আহুর রুমে আহুর বিছানার মধ্যখানে বধূ বেশে বসে আছে নিশু। পরনে লাল বেনারসী। গুন্ডী নিশুকে বধূ বেশে এত সুন্দর লাগছে যা কল্পনার বাইরে। নিশু নিজের চুড়িতে আঙুল টানতে টানতে রিনঝিন শব্দের আবেশে হারিয়ে ভাবছে,
_শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়ে গেলো। সাড়ে চার বছরের অপেক্ষার অবসান হলো। যখন কবুল বলছিলাম, তখন ভয় আর সুখের ছোঁয়া এসে মনকে ঘিরে ধরছিল। আজ থেকে আহু আর আমি দুজন দুজনার। বহু প্রতিক্ষার অবসান হলো দুজনার।
পুরো রুম জুড়ে গোলাপি আর নীল রঙ তার হালকা আলোয় স্নিগ্ধতায় মুড়ে দিয়েছে। এ আলোর কারণে নিশুর চুড়ি আর গায়ের গয়না ঝিকমিক করছে, ঠিক আলোকছটার মত। নিশুর নাকের হীরের নাকফুলটা বারবার চমক দিচ্ছে । এত ভারী শাড়ি গয়না পরেও নিশুর অস্বস্তি লাগছে না। বরং বেশ ভালো লাগছে। ভালো লাগছে আজ আহুর জন্য অপেক্ষা করতে। রুম স্প্রে এর হালকা বেলী ফুলের ঘ্রাণে মন মাতাল মাতাল করছে।
কিছুক্ষন পর আহু এলো। নিশুর মুখোমুখি বসে আঙুল দিয়ে নিশুর চুড়িতে টান দিলো। হালকা টানে চুড়িগুলো রিনঝিন শব্দে নেচে উঠল। নিশু কিছুটা কেঁপে উঠল। আহু নিশুর আঙুলের ভাজে আঙুল ডুবিয়ে বলল,
_তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নিশু। হালকা গোলাপী আর নীল আলোয় তোমাকে নীল ঝিলে ফোটা গোলাপি পদ্মের মত মায়াবী, র্নিমল আর স্নিগ্ধ লাগছে। তোমার নাকের নাকফুলটা সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগে যে তারাটা দেখা যায়, সেই শুকতারার মত জ্বলজ্বল করছে। যা অপরূপ ভাবে চমকাচ্ছে। তোমার চুরির রিনঝিন শব্দ বৃষ্টির মত ছন্দ তুলছে। আর তোমার খোঁপায় লাগালো বেলী ফুলগুলো আমায় মাদকের মত টানছে। আজ তোমার পুরোটা জুড়ে মাদকতা বিরাজ করছে নিশু।
নিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
_আহু আমার খুব ভয় করছে।
_আঁ! আমার বাঘিনীর ভয় করছে!
_না ঠিক ভয় না তবে কেমন জানি লাগছে!
_প্রথম রাত তো তাই। পড়ে ঠিক হয়ে যাবে।
আহুর কথা বলার স্টাইল প্রচন্ড দুষ্টু ছিলো।
_আহু ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।
_ভালো তো এখন হবে, চলো তোমাকে সুন্দর একটা জিনিস দেখাই।
_কী?
_পূর্ণিমার দুটো চাঁদ একসাথে দেখাবো।
_দুটো চাঁদ?
_হ্যাঁ।
_একটা আকাশের আরেকটা আমার ঘরের নিশু।
_নো ফিল্মি ডায়লগ আহু!
_হা হা হা।
আহু নিশুর হাত ধরে নিচে নামিয়ে নিয়ে বারান্দায় যাবে তখন দরজায় টোকা পড়ল।
আহু কপাল কুচকে চোখে মুখে বিরক্তি ভাব টেনে বলল,
_এ সময় কে আসল?
নিশু নাক ফুলিয়ে বলল,
_আমি কী করে বলব! দরজা খুলে দেখো।
আহু দরজা খুলতেই রেশমী আহুকে ঠেলে রুমে ঢুকে বলল,
_তোদের দুজনকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আমি নিশুর বিয়ের গিফ্ট দিতে এলাম।
_নিশু মৃদু হেসে বলল, গিফ্ট লাগবে না ফুপি দোয়া করলেই হবে।
রেশমী হাসি দিয়ে নিশুর হাতে র্যাপিং পেপার দিয়ে সাজানো পরিপাটি সুন্দর একটা বক্স তুলে দিয়ে বলল,
_হ্যাপি ম্যারেড লাইভ।
নিশু বক্সটা হাতে নিয়ে বলল,
_ধন্যবাদ ফুপি।
_ওয়েল কাম টু অ্যাওয়ার ফ্যামিলি বৌ মা। আজ থেকে রোজ তোমার সাথে, বৌ শ্বাশুড়ি, বৌ শ্বাশুড়ি খেলবো। তার আগে গিফ্টটা খুলে দেখো। আহুকে উদ্দেশ্য করে বলল, আহু তুই অন্য দিকে তাকা! আহু অন্য দিকে তাকানোর পর নিশু বক্স খুলে ৮৮০ ভোল্টের ঝটকা খেলো। চোখ বড় বড় করে রেশমীর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এগুলো কী আন্টি!
রেশমী আওয়াজ কিছুটা নিচু করে বলল,
_মাল্টি কালার থার্ড পেপার বৌ মা। কেন তুমি না ব্রান্ড জানতে চেয়েছিলে! তাই পুরো সেটসহ কিনে দিলাম। সাইজ মিলিয়ে নিও। তুমি তো আবার আমার মত মোটু না বরং পাঠকাঠি।
নিশু হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। বিয়ের দিন শ্বাশুড়ি তার ছেলের বৌ কে এমন উপহার দিতে পারে বলে নিশুর ধারনা ছিলো না। নিশু ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
_আপনি এখনো আমাদের ফার্স্ট মিটিং মনে রাখছেন?
_ওটা ভোলা কী এত সহজ বৌ মা! আচ্ছা শোন বিয়ের সময় তোমাদের বাসায় একটা মেয়ে দেখলাম, চেহারা হুবহু তোমার মত। নীল চোখ মেয়েটার। সে কে? আগে তো দেখিনি!
_ও ইশু! আমার বড় কাকার ছোট মেয়ে। এতদিন ভারতের দার্জিলিং এ পড়াশুনা করত। আমার বিয়ে উপলক্ষে আসছে।
_মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি, লক্ষ্মী, শান্ত। ভাবছি রিমনের সাথে বেশ মানাবে তোমার বোনকে। তুমি কী বলো তোমার পরিবারের সাথে কথা বলব?
কিছুক্ষন ভেবে নিশু বলল,
_হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই বলুন। ইশুর মত মিষ্টি মেয়ে খুব কমই পাবেন।
_আচ্ছা তবে তোমাদের বৌ-ভাতের পর কথা বলব।
_ওকে।
_এখন তোমাদের সময়। ইনজয় বেবি। (চোখ মেরে)
বেস্ট অব লাক সংসার জীবনের জন্য। আর তার সাথে আমার মত ফুফু শ্বাশুড়ির সাথে সারা জীবন কাটাবে বলে স্বাগতম।
রেশমী যেতেই নিশু মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_হায়রে গিফ্ট, হায়রে মাল্টিকালার মাল, থুক্কু ফুপু।
আহু কাছে এসে বলল,
_কী গিফ্ট দিলো ফুপি!
নিশু জলদি বক্সটা পিছনে লুকিয়ে বলল,
_কিছুনা কিছুনা।
_আজব, লজ্জা পাচ্ছ কেন দেখি!
_খবরদার একদম হাত দেবে না।
_ওকে কিন্তু বাঘিনীকে আজ তার বাঘের খাচায় বন্দি করবোই।
_আসছে আমার বাঘ রে!
!!২০!!
গভীর রাত,
আহু নিশুর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,
_নিশু
_হুম।
_ফুুপু ইশুর কথা কী বলছিল?
_ফুপি ইশুকে তোমার ভাই রিমনের বৌ করে আনতে চাচ্ছে!
আহু শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলল,
_কী?
নিশু হাসতে হাসতে বলল,
_ফুপির মতে ইশু খুবই শান্ত, ভদ্র মেয়ে!
_হায় আল্লাহ্ তুমি ফুপিকে বলোনি তিনটা নিশু চরিত্র মিলে একটা ইশু।
_হি হি হি না। তোমার ফুুপি আমাকে ফুফু শ্বাশুড়ি পানা দেখাচ্ছে। সে তো জানে না ইশুকে ছেলের বৌ করা মানে কী! সে ইশুর চেহারা দেখে ভাবছে মিষ্টি। কিন্তু সে জানে না ইশু তাকে এক হাঁটে ছ’বার বেঁচে সে হাঁট থেকেই ন’বার কিনবে। তোমার ফুপিকে আমি তো কিছুটা ভয় পাই। কিন্তু ইশু——– । তোমাদের বাড়ি থেকে হয়ত তোমার ফুপির রাজত্বে অবসান ঘটবে।
আহু হা হা করে হেসে বলল,
_ফুপি পৃথিবীতে আর মেয়ে পেলো না শেষ পর্যন্ত ইশু! তোমার এলাকায় নিশু বলতে সবাই ভয় পেলেও ইশু বলতে সবাই ছুটে পালায়।
_হ্যাঁ ফুপু শ্বাশুড়ি এখন শুধু শ্বাশুড়ি হবার জ্বালা হারে হারে টের পাবে।
★★★★★★★★সমাপ্ত★★★★★★★★