অতিথি
পর্ব: ১৭
লেখা: মিশু মনি
.
মর্ম ও মিশু বলিয়াদি জমিদার বাড়ি তে ঘুরতে আসলো।
মর্ম অনেক রেগে আছে মিশুর উপর।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।
মিশু কয়েকবার মর্মকে কাতুকুতু দিলে মর্ম নেচে নেচে উঠল। মেয়েটাকে কিছু বলাও যায় না।রাগ করে বসে থাকে।আবার সব দুষ্টুমি সহ্য করাও যায় না।
মর্ম চুপচাপ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
মিশু বলল,মর্ম আমি খেলবো।
– খেলবো মানে? কি খেলবা?
– রাজারানী।
– এখানে? মাথা খারাপ হইছে?
– না আমি এখানেই খেলবো।
মিশু পা নাচাতে শুরু করে দিয়েছে।মর্ম বাধ্য হয়ে বলল,ওকে খেলা শুরু করো আর নিয়ম বলে দাও কিভাবে খেলতে হবে?
মিশু বলল,আমি হচ্ছি রানী আর তুমি হচ্ছ রাজা।আমরা এখন প্রাসাদ ঘুরে ঘুরে দেখব আর কথা বলবো।
– ওকে চলো।
.
দুজনে পাশাপাশি হাটছে।
মিশু বলল, জাঁহাপনা…
– জ্বি বেগম,
– আপনি আজকাল আমার খোজ নেন না কেন?
– আমিতো রাজকার্য নিয়ে ব্যাস্ত থাকি রানী। তাছাড়া আমার বিশ জন রানী,অর্ধশত বাগদত্তা আর অগণিত প্রেমিকা।আমি সবাইকে সবাইকে সময় দিই কিভাবে বলো?
মিশু রেগে বলল,অর্ধশত বাগদত্তা? অগণিত প্রেমিকা? বিশ জন রানী?
– রাজাদের তো এসব থাকবেই মহারানী।
– চুপ করুন।আপনার রাজ্যের নিকুচি করি আমি। আপনি শুধু আমায় সময় দিবেন। নয়ত আপনার বংশ আমি নির্বংশ করে দিবো।
– এভাবে বললে তোমার নিকট আসা বন্ধ করে দিবো রানী।
– না মহারাজ না।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
– আমি জানি মহারানী। আমি বহুদিন পর তোমার দ্বারে এসেছি।বলো কি চাও?
– আমি মা হতে চাই মহারাজ।
মর্ম অবাক হয়ে বলল,কি হতে চাও?
– মা হতে চাই।
– ওকে আজ থেকে আমি তোমায় মা বলে ডাকবো।
মিশু ভয়ানক রেগে বলল,খেলবো না আমি।
– কেন রানী?
– চুপ করো।তোমার সাথে খেলা যায় না।আমি খেলবো না।
মর্ম হেসে বলল,আচ্ছা।কিন্তু তুমিতো মা হতে চাইছ মিশু।আমি কি বাবা হবো তাহলে?
মিশু রেগে মর্ম’র দিকে তাকালো।
মর্ম বলল,বিয়েই হলোনা।তাতেই…
মিশু চেঁচিয়ে বলল,চুপ করবা? নয়ত কিন্তু মেরে ফেলবো তোমাকে।
– হা হা হা।আচ্ছা চলো।
.
বাসায় ফিরে মিশু অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ল। খেয়েদেয়ে দিলো একটা ঘুম।
ঘুম ভাঙল রাত নয় টায়। ঘুম ঠেকে উঠে রাতের খাবার খেয়ে বসার রুমে বসে রইলো মিশু।এখন কোনো কাজ নেই।বসে বসে গেমস খেলা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই।
এমন সময় মৈত্রী এসে পাশে বসলো।
মিশু বলল,আজকাল আপনাকে দেখাই যায় না কাজী সাহেব।
– অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছি যে।
– তাই তো দেখছি।কই থাকেন সারাক্ষণ?
– আকাশে থাকি,
– আপু কেমন আছে?
– ভালো। ও তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।
– আচ্ছা,কাল যাবো কেমন?
– ওকে।মিশু,
– হুম,
– তোমাকে প্রমিস করেছিলাম বাসায় ফিরে সিগারেট খাওয়াবো। খাবা না?
মিশু লাফিতে উঠে বলল,খাবো খাবো।
– আস্তে চেচাও।আর আমার রুমে আসো, কেউ যেন জানতে না পারে।
– কিন্তু আমার পাঠক রা তো জানবে।
মৈত্রি অবাক হয়ে বলল,মানে!
– মানে হচ্ছে এসব কাহিনি নিয়ে একটা গল্প লিখবো। তখন তো পাঠক রা জানবে তাই না?
– তাই নাকি? তা কি গল্প লিখবা শুনি?
– “অতিথি ”
– বাহ! দারুণ হবে।আমাকে ও পড়তে দিও।এখন আসো আমার রুমে,
.
মিশু ও মৈত্রি দরজা লাগিয়ে দিলো।
মৈত্রি অনেক ধরনের সিগারেট বের করে বলল,এইগুলা দেশী আর এইগুলা বিদেশী।
– তেজ বেশি কোন টার?
– gold leaf এর।
– তাহলে ওই টাই খাবো।
– সহ্য করতে পারবা না।মাথা ঘুরাবে খুব।
মিশু পা নাচিয়ে বলল,আমি gold leaf ই খাবো।
– ওকে।এই নাও।
মৈত্রি একটা সিগারেট ধরিয়ে মিশুকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো।
সিগারেট থেকে ধোয়া উড়ছে। মিশু সিগারেট হাতে নিয়ে দারিয়ে আছে।সে কখনো এর গন্ধ শুকতে পারত না,আর আজ নিজে টানবে!
মৈত্রি অনবরত ধোয়া ছাড়ছে।
মিশুকে বলল,ধরে আছ কেন? টান দাও একটা।
মিশুর বুক টা দুরুদুরু কাঁপছে। জীবনে প্রথমবার সিগারেট এর স্বাদ নিতে চলেছে সে! অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে।
– মিশু,হা করে আছ কেন?
– কেমন যেন লাগছে।
– কেমন লাগছে?
– হার্ট বিট বাড়ছে।
– তুমিই তো বলছিলা খাবা।
মিশুর কেমন ভয় ভয় লাগছে।আব্বু আম্মু জানতে পারলে বকা দিবে না তো? হাত কাঁপছে।
মিশু সিগারেট মুখের কাছে এনে আবার সরিয়ে ফেললো। মৈত্রি বলল,কি হল?
– কি বিশ্রী গন্ধ!
– বিদেশী একটা নাও।নয়ত ব্লাক টা নাও,মিষ্টি আছে।
– নাহ,আমি এইটাই খাবো।
– খাও।ধরে আছো যে?
মিশু বারবার সিগারেট মুখের কাছে নিচ্ছে আর সরিয়ে দিচ্ছে।
কয়েকবার এমন করতে করতে সাহস করে দিয়েই ফেললো মুখে!
মৈত্রি অবাক হয়ে চেয়ে আছে!
মিশু একটা টান দিয়েই খুকখুক করে কেশে উঠল।
মৈত্রি হাসতে হাসতে বলল,পারবা না খাইতে।
মিশু কাশতে কাশতে বলল,পারবো পারবো।
– পারবা না।
– পারবো।
– পারবা না।
এবার মিশু জেদ করে মুখে দিয়েই কয়েক টা টান দিলো। তারপর আর সমস্যা হচ্ছে না।অনায়াসে সিগারেট ফুঁকছে। মিশুর সিগারেট ধরার স্টাইল টাও দারুণ! ফলো করার মত।সুন্দর ভাবে চেইন স্মোকার দের মত মিশু সিগারেট ফুঁকতে লাগল।
মৈত্রী একদৃস্টে চেয়ে আছে! চোখের পলক পড়ছে না!
মিশু অর্ধেক খেয়ে মৈত্রিকে বলল,এই টা তুমি খাও।আর তোমার হাতে ওই টা কি?
– পালমল।নিবা নাকি?
মিশু হেসে বলল,পালের মল নাকি মলের পাল?
– হা হা হা।
মিশু হাত বাড়িয়ে মৈত্রির অবশিষ্ট সিগারেট টা নিয়ে দুই টা টান দিয়ে বলল,ওয়াও!! সে কি স্বাদ! তবে gold leaf এর মত নয়।
– হা হা হা।আমি ইমপ্রেসড মিশু!
এমন সময় মর্ম জানালায় এসে দাড়াল।মিশুর মুখে সিগারেট দেখে মর্ম’র চোখ ছানাবড়া!
একদম চেইন স্মোকারদের মত টানছে মিশু!
মর্ম অবাক হয়ে চেঁচাল, ভাইয়া আমাকে ও নে।
মৈত্রি দরজা খুলে দিলো।
মর্ম রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলো।
মিশু এরপর বেনসন ধরালো।
দুভাই চোখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসতে লাগলো।
মিশু অর্ধেক টা খেয়ে মর্মকে দিয়ে বলল,নাও তুমি খাও।অনেক খাইছি,আর নাহ।
– কেন? খাও আরও।
– উহু,শখ পুরন হইছে।তাছাড়া একদিনে এত খাইতে নাই।
– অদ্ভুত মেয়ে তুমি!
মিশু হেসে বলল,মুখ গন্ধ করছে।ব্রাশ করতে হবে।আমার ব্যাগে চুইংগাম আর চকোলেট আছে অনেক গুলা।তোমরা খাবে?
– নিয়ে আসো যাও।আর ব্রাশ করে আসো। আডডা দিই।
.
মিশু ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে দুই হাতে চুইংগাম আর চকোলেটের বয়াম নিয়ে রুমে আসলো।
মর্ম জিজ্ঞেস করল,এতগুলা কই পাইছ?
– কাজী সাহেব কিনে দিয়েছিল।মর্ম তুমি বল ফুলাতে পারো?
– হ্যা পারি।
মিশু চুইংগাম এগিয়ে দিলো।কেমন যেন লাগছে! সিগারেট এর স্বাদ গলায় লেগে আছে,গায়ে গন্ধ!
মর্ম চুইংগাম চিবোতে চিবোতে বলল,মিশু আজ নেশা করেছ কিন্তু।এখন বড় মানুষ দের মত গল্প বলো।
মিশু অবাক হয়ে বলল,মানে!
– কখনো কাউকে মনে ধরেছিল কিনা,ক্রাশ,কিংবা প্রেম।কেউ প্রপোজ করেনি?
– করেছিল।আমিও ক্রাশ খেয়েছিলাম।
– সত্যি!
– হ্যা।আমি যাকে দেখি তার উপরেই ক্রাশ খাই।কিন্তু প্রেমে পড়ি নি কখনো।
দুভাই হেসে উঠল।
মিশু বলল,তুমি কারও প্রেমে পড় নি মর্ম?
– পড়েছি বহুবার।
– বাব্বাহ!
এমন সময় মর্ম’র মোবাইল বেজে উঠল।রিসিভ করে বলল, হ্যালো।
– আপনি কি মর্ম বলছেন?
– জ্বি মর্ম বলছি।আপনি কে?
– আমি তীব্র।নুহাশ পল্লী তে মিশু আমার নাম্বার থেকে আপনাকে কল দিয়েছিল।
মর্ম বিস্ময়ে চুপ করে রইলো।
তীব্র বলল,মিশুর সাথে একটু কথা বলতে চাই।পারবেন দয়া করে?
– অবশ্যই।দুই মিনিট পর কল দিচ্ছি।
মর্ম কল কেটে দিয়ে চোখ বড় বড় করে মিশুর দিকে তাকাল।মিশু বলল,কি হইছে?
– তীব্র কল দিয়েছিল।
– কেন?
– সে প্রশ্ন আমার ও।কেন দিবে? কি কি কথা হইছে ওর সাথে? আমার নাম্বার দিয়েছ কেন?
মর্ম ভয়ানক রেগে গেল।মিশুর মজা লাগছে! মর্ম খুব জ্বলছে,ওকে আরেকটু জব্দ করা যাক।মিশু মর্ম’র মোবাইল টা নিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটল।
.
মর্ম ভীষন রেগে আছে।
মৈত্রি বলল,তুই এত রাগ হচ্ছিস কেন?
– অচেনা একজন ছেলে কেন কল দিবে? মিশু নিশ্চয়ই কল দিতে বলেছে।
– হতে পারে মিশুর কোনো দোষ নেই,ছেলে টি ই মিশুর সাথে কথা বলার জন্য কল দিয়েছে।
মর্ম রেগে বলল,কেন বলবে?
– মানে কি,মিশুকে কারও ভালো লাগতেই পারে।মিশু ও কাউকে সময় দিতেই পারে।তুই এত জ্বলছিস কেন?
মর্ম মৈত্রির দিকে তাকিয়ে বলল,জানিনা কেন জ্বলছি!
মৈত্রি মনে মনে বলল,দারুণ জমবে এবার খেলা! মিশু মর্মকে আদিবাসী নাচ নাচাবে।
ভাবতেই মৈত্রি হেসে উঠল।
.
মিশু শুয়ে শুয়ে কথা বলছে তীব্র’র সাথে।
– আচ্ছা বলদ ডাক্তার,আপনি কল দিলেন কেন সেটা ই তো বুঝছি না।
– জানিনা কেন দিলাম।জোকার পরি টার কথা খুব মনে পড়ছিল।
– সেরেছে রে।
মিশুর খুব মজা লাগছে।এই ডাক্তার টা নিশ্চয় ই তার উপরে ক্রাশ খেয়েছে।ওইদিকে মর্ম ও দ্বিগুণ জ্বলছে।আহা! সতের বছর বয়স টা চমৎকার!
( চলবে…)