গল্প: ঠিকানা লেখা : মিশু মনি শেষ পর্ব .

0
660

গল্প: ঠিকানা
লেখা : মিশু মনি

শেষ পর্ব
.
মনটা খুব অশান্ত হয়ে আছে।সে তার ঠিকানা হারিয়ে ঠিকানা খুঁজছে।ইফতি কি কখনো বুঝতে পারবে এ অনুভুতির কথা?
সারা বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছি।কিছুই ভাল লাগছে না।মৈত্রী হয়ত সকালে উঠেই চলে যাবে।কিন্তু হারিয়ে ফেলা সুন্দর রাত টার কথা ভেবে বড়ই আফসোস হচ্ছে!
দাদির ঘরের দরজায় এসে উকি দিয়ে বললাম,দাদি আসবো?
– মিশু? আয়।
ভিতরে ঢুকে দাদির পাশে বসলাম। দাদি বলল,ব্যাপার কি বনু? বরকে রেখে বুড়ির ঘরে?
– সে সৌভাগ্য কি আর আছে বনু? বর তো নয়,যেন ঝাল মরিচের গুড়া।
– হু, খুব জ্বালায় না?
– প্রচুর,
– সোহাগ করে তো?
– কি হাগ?
– সোহাগ সোহাগ,
– সোহাগ তো ইফতির চাচাতো ভাইয়ের নাম।
– আরে পাগলী, ভালো টালো বাসে তো?
– ভালো বাসে।কিন্তু টালো আবার কিভাবে বাসে?
দাদি হাসলো।আমিও হেসে বললাম,ভালো তো বাসেই।হসপিটালে সে কি কান্না! কিন্তু কাছে পাইনা ওকে।একটা না একটা বাধা আসেই।
– সে আবার কি কথা?
আমি দাদিকে খুলে বললাম কথাটা।সব শুনে দাদি হেসে বলল,এইভাবে চললে তোদের আর জীবনে প্রেম করা হবে না।
– হু দাদি।প্রেম ট্রেম বুঝি কপালে নাই।
– দাড়া,তোকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দেই।অভিনয় করতে পারবি?
আমি অবাক হয়ে বললাম,কিসের?
– তুই তো বেশ ঢং করতে পারিস।একটু অভিনয় করবি।এমন ভান করবি যেন পেট ব্যাথায় মরে যাচ্ছিস।পেট চেপে ধরে চিল্লাবি।তোর অবস্থা দেখে ইফতির দশা কি হয় দেখিস।বেচারা খালি ছটফট করবে।কাছেও আসবে,ভালো ও বাসবে।পারবি তো?
– খুউউব পারবো গো দাদি।থ্যাঙ্ক ইউ সোনা দাদি আমার।
দাদি হাসলো।
.
আমি নাচতে নাচতে আমার ঘরের দরজায় চলে আসলাম। তারপর শুরু করলাম অভিনয়। এমন ভান করছি যেন পেট ব্যাথায় কুকড়ে মুকড়ে যাচ্ছি।প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।কিছুতেই সহ্য করা যাচ্ছে না।কস্মিনকালেও এমন মারাত্মক পেট ব্যাথা কারো হয়নি।
দুহাতে পেট চেপে ধরে রুমে ঢুকলাম। ইফতি এখনো বেলকুনিতেই আছে।
আমি চিৎকার করে উঠলাম, ওহ মা গো,মরে যাচ্ছি গো।
ইফতি ছুটে এসে বলল,কি হইছে মিশু?
আমার চোখ দিয়ে টপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ইফতি অবাক হয়ে বলল,কাঁদছিস কেন?
– খুব পেট ব্যাথা ইফু।
– হঠাৎ? কি খেয়েছিস?
– কিছুনা।
– তাহলে?
– জানিনা।
বলে আবারো চেঁচিয়ে উঠলাম, মা গো! মরে গেলাম।
ইফতির কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। আমার মনে লাড্ডু ফুটে উঠলো।
ইফতি বলল কি হলো তোর হঠাৎ?
আমি এমন ভান করলাম যেন কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।বহু কষ্টে বললাম,অসহ্য ব্যথা।
– কিসের ব্যাথা এটা?
– জানিনা।
আমার চোখে পানি দেখে ইফতির মুখ শুকিয়ে গেলো। হয়ত ওর ও খুব কষ্ট হচ্ছে।আহারে! বেচারা ইফতি!
ইফতির চোখ টলমল করছে।যদি ছেলেদের জন্য ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা জায়েজ থাকত,নিশ্চয় ই ইফতি কেঁদে কেঁদে পুরো এলাকায় লোক জড়ো করে ফেলতো।
আমি চেঁচিয়ে বললাম,ইফুউউউ..
ইফতি বলল,হ্যা মিশু
– কষ্ট হচ্ছে।
ইফতি এগিয়ে এসে বলল,আম্মুকে ডাকবো?
-আম্মুর সাথে কথা বলেই এসেছি।
– কি বলল আম্মু?
– ওষুধ খাইয়ে দিলো। আর চুপ করে শুয়ে থাকতে বলল।
– কিসের ব্যাথা এটা বলেনি?
– আম্মু কি করে জানবে? আম্মু কি ডাক্তার নাকি ডাক্তারের চ্যালা?

বলে আবারো চিৎকার করে উঠলাম, মা গো,মরে গেলাম গো!

ইফতি এসে করুণ ভাবে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।অস্থির হয়ে উঠেছে।আমার বেশ মজা লাগছে।
ইফতি বলল,মিশু তুই প্লিজ চুপ করে শুয়ে থাক।
– হুম।ইফু আমি বুঝি মরে যাবো?

ইফতি চেঁচিয়ে বলল,খবরদার আরেকবার বললে আমি নিজেই মেরে ফেলবো তোকে।
– খুব কষ্ট হচ্ছে রে।
আমার দু গাল বেয়ে অশ্রুর বন্যা বইছে।নিজের কান্না দেখে নিজেই ক্রাশ খেলাম।আমি যে চেষ্টা করলেই এত ভালো কাঁদতে পারি,জানা ছিলো না।

ইফতি বলল,মিশু
– হুম
– খুব কষ্ট হচ্ছে?
– হুম।
ইফতি এগিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়লো। আমাকে বলল, শান্ত হয়ে শুয়ে থাক।
আমি আরেকটু ঢং করে বললাম,ডান হাত টা অবশ হয়ে আছে ইফু।আমি যদি মরে যাই,তুই কাকে নিয়ে বাঁঁচবি?
– মিশু,মরার কথা বলবি না প্লিজ।

আমি আবারো চেঁচালাম। আর মুখবিকৃত করছি।কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বলছি।
ইফতি আমার হাত ধরে বলল,এত ভয় পাচ্ছিস কেন?
তারপর আমার চোখ মুছে দিলো।
আমি মনে মনে মহা খুশি।দাদির বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে।
বললাম,খুব খারাপ লাগছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
ইফতি আমাকে বুকে টেনে নিলো। আহা! এই মুহুর্তটার জন্যই এত অপেক্ষা!
খুশিতে মনটা টগবগ করছে।আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি।
ইফতি দুহাতে আমার মুখ টা ধরে বলল,তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারিস না।আমি যেতে দিবো না।
– তাহলে এত জ্বালাস কেন?
– এটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
– একটু তো ভালোবাসতেও পারিস।
বলে আবারো চিৎকার করলাম।
ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,এখন থেকে ভালো ও বাসবো।
– সত্যি তো?
– এই যে তোকে ছুঁয়ে বললাম।

আমি ও ইফতিকে শক্ত করে ধরলাম।ওর বুকে মাথা রেখে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো মনটা।এইতো আমি আমার ঠিকানা পেয়ে গেছি।মনেহচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের জায়গা!
ইফতি বলল,ব্যাথা কমেছে?

আনন্দের ঠেলায় ব্যাথার কথা ভূলেই গিয়েছিলাম।একটু চেঁচিয়ে বললাম,না কমেনি।
আমার কপালে ইফতির ঠোটের স্পর্শ অনুভব করলাম। মুহুর্তেই পরম সুখের আবেশে হারিয়ে গেলাম।
ইফতি বলল,I love you Mishu.
আমি আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম ওকে।এবার আর আটকাবে কে?
থ্যাঙ্ক ইউ দাদি!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here