কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড পর্ব:৪

0
639

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
পর্ব:৪

মৃদু কম্পিত হচ্ছে অধরার শরীর। রিসোর্টের এক কর্মচারী গতকাল রাতে খু*ন হয়েছে। অভি খুনের সঙ্গে হুবহু মিল।।পুলিশ এসেছিল কিছুক্ষণ আগে। তদন্ত চলছে।।সবটা শোনার পরে অধরার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে। বহুকাল আগে নিজের সঙ্গে হওয়া কথাগুলো মনে পড়ছে। ধাঁধার বিষয়টা নিয়ে ভাবাচ্ছে। অভির রুমে থাকা ধাঁধার সঙ্গে নতুন খু*ন হওয়া ছেলেটার রুমে পাওয়া ধাঁধার কোনো মিল নেই। এখানে লেখা ছিল,
“নুন খেয়ে গুণ না গেলে কপাল পোড়ে ভাগ্য দোষে। বধির বোবার বাক্য দোষে রক্ত ঝরে ক্ষণেক্ষণে।”
অধরা ঝিম মেরে বসে আছে। কয়েকবার কথাগুলো বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো। এখানেও সেই বধির বোবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বধির বোবার বাক্য দোষে বলতে কি বুঝিয়েছে মাথায় আসছে না। সুলতান পরিবার বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ওরা আশেপাশে কোথাও আছে নিশ্চয়ই। ওদের মধ্যে থেকে কেউ এই খুন গুলো করছে অধরা মুখ ঢেকে ফেলল। যুক্ত মিলছে না।কিন্তু ওরা এই সাধারণ লোকদের মেরে কি করতে চাইছে? বধির বোবারা কি কথা বলতে পারে যে ওদের বাক্য দোষের কথা বলা হয়েছে? হঠাৎ কিছু একটা ভেবে অধরা দ্রুত কহিনুরের রুমে ঢুকে পড়লো। মেয়েটার ড্রয়িং খাতায় প্রকৃতির ছবি আঁকছে। মেয়েটার মধ্যে সব নরমাল থাকলেও কিছু অদ্ভুত বিষয় আছে। কহিনুর জন্ম থেকে কখনও কাঁদেনি। চোখে পানি আসেনি কিন্তু কেনো? হোক বোবা বধির তবুএ তো কষ্ট পেলে চোখে পানি আসা চাই। অধরা মেয়ের সামনে বসে আছে। কহিনুর এতোক্ষন মাথা নিচু করে ছিল হঠাৎ মাথা তুলে ইশারা করলো কি হয়েছে। অধরা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে ওর মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> ওরা ফিরে এসেছে আমার খুব ভয় হচ্ছে তোমাকে নিয়ে । তোমার বাবা আর আমার সব কষ্ট বিফল না হয়ে যায়। আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখবো। কেউ তোমার নাগাল পাবেনা।
অধরা কথা শেষ করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো। বাড়িতে মেহমান আসছে রাতে। সেই নিয়ে তোড়জোড় চলছে। অধরা চৌধুরী সাহেবের কক্ষে গিয়ে উঁকি দিয়ে অনুমতি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। আজ এতদিন পরে ছেলেমেয়েরা আসছে হয়তো উনি এটা নিয়ে খুব খুশী। অধরাকে দেখে উনি হাসি মুখে বললেন,
> কিছু বলবে,
অধরা মাথা নিচু করে বলল,
> আঙ্কেল আমি কিছুদিন মেয়েকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকতে চাই। বাড়িতে মেহমান আসছে তাই।
চৌধুরী সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। উনার কপালে চিন্তার রেখা। অধরার কথাটা উনার পছন্দ হলো না। ভ্রু কুচকে বললেন,
> মেহমান আসছে তো কি হয়েছে? তুমি কোথাও যাচ্ছো না। এখানেই থাকবে। যদি অসুবিধা হয় কারো সামনে আসতে হবে না। এতো বড় বাড়িতে কে কোথায় আছে জানতে পারবে না। আমি জানি নিজেকে আড়ালে রাখতে পারবে তুমি।
অধরা কিছু একটা ভেবে বলল,
> আচ্ছা থাকবো কিন্তু রিসোর্টের ছেলেটার সম্পর্কে কিছু তথ্য লাগবে আমার। আপনি কি ব্যবস্থা করতে পারবেন?
> ম্যানজারকে বলছি পাঠিয়ে দিবে। তুমি যাও চিন্তা করোনা। যারা আসছে ওরা আশাকরি তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না।
অধরা লজ্জা পেলো চৌধুরী সাহেবের কথা শুনে। ওতো ভয় পেয়েছে অন্য কারণে। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। উঠে আসলো।
*******
শান্ত বাড়িটা হঠাৎ গমগম করছে। বাড়িতে হৈচৈ হচ্ছে। ভাইবোনেরা মিলে আড্ডা বসিয়েছে ডাইনিং রুমে। ছোটরা ছাদে বসেছে। কথার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে সবাই। অধরা রান্নাঘরে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। কহিনুরের খাবার ও নিজের হাতে রান্না করে। মেয়েটার পোশাক পযর্ন্ত নিজে চয়েজ করে কেনাকাটা করে। মাঝেমাঝে মিষ্টি সাহায্য করে। অধরা কয়েক কাফ কফি তৈরী করে কাজের মেয়েকে দিয়ে ছাদে পাঠিয়ে দিলো। ডাইনিং রুমের জন্য চা তৈরী করে নিলো। আপাতত কাজ শেষ। কহিনুরের জন্য খাবার নিয়ে মুখ ঢেকে উপরে চলে গেলো। ছাদে ছোটদের আড্ডার চলছে। জার্মান থেকে আসা চৌধুরী সাহেবের বড় ছেলে ফয়েজ চৌধুরীর এক ছেলে এক মেয়ে। উনার কন্যা তমালিকা চৌধুরীর দুই ছেলে। আর ওদের সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু এসেছে। আড্ডার মধ্যে মিষ্টি বলে উঠলো, >আমাদের আদি ভাইয়া যে এসেই দরজা বন্ধ করেছে বিষয়টা কি? ভাইয়ার সঙ্গে তো আলাপ করা হলো না।
মিষ্টির কথা শুনে পাশ থেকে মিঠি বলল,
> ভাইয়া এমনিই। বাবা মা ওকে জোরকরে এনেছে তাই গম্ভীর হয়ে আছে। বলেছে এক সপ্তাহ পরে একা একা ফিরে যাবে। আমরা এবার অনেকদিন থাকবো ভেবে এসেছি। কত কত প্লান আছে।
রিয়াদ ফড়ন কেটে বলল,
> চলে যেতে চাইলেই কি আর যাওয়া যায়? সমুদ্রের কিনারে গেলে ফিরে যাওয়ার নাম ভূলে যাবে।
মিষ্টি খুশী হলো। মিঠি মলিন হাসলো। এখানে আসার উদ্দেশ্যে হলো কক্সবাজার ভ্রমন। তাইতো বন্ধুকে নিয়ে এসেছে। ঘুরবে হৈচৈ করবে। ভাইয়ের ফিরে যাওয়ার বিষয় নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ওদের আড্ডা আর বেশিক্ষণ হলো না। কক্ষে ফিরতে হলো। অতিরিক্ত মেহমান আসার জন্য মিষ্টি কহিনুরের কক্ষে গিয়ে ঘুমালো। মৌসুমীর কক্ষে মিঠি আর ওর বন্ধু কারিমার জায়গা হলো। আদি কারো সঙ্গে বেড শেয়ার করতে পারে না তাছাড়া ছেলেদের জন্য এক্সটা রুমের অভাব হলো না। মেয়েরা গল্প আড্ডার জন্য সব এক সঙ্গে আছে। বাড়িতে আসা মেহমানদের কেউ জানেনা অধরা বা কহিনুরের বিষয়ে। অধরা মানা করেছে। রাতের ডিনার শেষে সকলে কক্ষে চলে গেছে। অধরা কহিনুরের কক্ষে মিষ্টিকে ঘুমাতে দেখে অন্য কক্ষে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। কিছু তথ্য সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। সকাল হলে নিজে রিসোর্টে যাবে। এভাবে বসে থাকলে বিপদ কমবেনা

**
লেট করে ঘুমানোর দরুন মিঠির কিছুতেই ঘুম আসছে না। মৌসুমী আর কারিনা গভীর ঘুমে অচেতন। কক্ষের বাইরে বিল্ডিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ থেকে নিশাচর পাখির ডাক ভেসে আসছে। ভৌতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। মিঠি বিছানা থেকে উঠে আসলো। মিষ্টির সঙ্গে ওর বেশ ভাব। মিঠি ওর খোঁজ নিতে সাবধানে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। সারিসরি অনেকগুলো কক্ষ। মিষ্টি বলেছিল দক্ষিণ দিকের শেষ কক্ষে ও থাকবে। আবছা আলোতে ও সাবধানে পা ফেলে কক্ষের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজা সামান্য ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। মিঠি ডান পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই সামনে একটা মুখ দেখে চমকে উঠলো। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে ওর কিছুতেই কোনো মানুষ বলে মনে হলো না। মিঠির চোখ জুড়িয়ে গেলো। কয়েকবার ঢোক গিলে আবারও বেরিয়ে আসলো।কহিনুর ওয়াশরুমে গিয়েছিল হঠাৎ বাইরে বের হয়ে মিঠির সামনে পড়েছে। কিন্তু মেয়েটা কিছু না বলে চলে গেলো দেখে ও মিষ্টিকে গিয়ে ধাক্কা দিলো জাগানোর জন্য। অন্যদিকে মিঠি বারান্দা ধরে দ্রুতগতি হাটার সময় আদির সঙ্গে ধাক্কা খেলো। অদি কোনো রকম নিজেকে রক্ষা করে মিঠিকে ধমক দিয়ে বলল,
> চোখে দেখিস না? এখুনি তো হাসপাতালে যেতাম। এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় গিয়েছিলি?
মিঠি আদির প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলল,
> ভাইয়া ও ঘরে পরি আছে?
আদির মেজাজ খারাপ হলো। ধাক্কা খেয়ে এমনিতেই পায়ে ব্যথা পেয়েছে তারপর আবার মিঠির উল্টপাল্টা কথা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ধমক দিয়ে ওকে কক্ষে পাঠিয়ে নিজেও দরজা বন্ধ করলো।
*****
ভোরবেলা নামাজ পরে চুপিচুপি বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো অধরা। সাদা বোরখাতে নিজেকে আবৃত করে নিয়েছে। হাতে ফোন আর কাধে ব্যাগ। অধরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তৈরী থাকে। ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসার মতো মেয়ে ও না। পরপর দুটো খু*নের পেছনে সুলতান পরিবারের কেউ আছে কিনা ও আজ থেকে খোঁজ করবে। তাছাড়া গতকাল ও জামসেদ জুবায়ের ফারুকীকে দেখেছিল। লোকটা দিনের বেলায় ওর সামনে এসেছিল যেকিনা রাত ছাড়া কারো সামনে আসতো না। কিভাবে সম্ভব এটা? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও মেইন রাস্তায় উঠে আসলো। লোকজন রাস্তায় খুব একটা নেই। অধরা আনমনে হাটছিল হঠাৎ পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে দিলো। অধরা হুড়মুড় করে পড়ে গেলো। পায়ে সামান্য চোট পেয়েছে কিন্তু মাথা কে*টে গেলো। যেটা নেকাবের আড়ালেই রয়ে গেলো। নেকাব ভিজে যাচ্ছে র*ক্তে। অধরা দ্রুত উঠতে গেলো কিন্তু পারলো না। গাড়ির দরজা খুলে এক ভদ্রলোক ওর দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। অধরা লোকটার পা থেকে দৃষ্টি দিয়ে ক্রমাগত মুখে গিয়ে থামলো। একবার তাকিয়েই ও চমকে উঠলো। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা সুলতান জুবায়েরের ফারুকী। অধরার মনে হলো সবটা কল্পনা। ও টলতে টলতে পিছিয়ে আসতেই জুবায়ের ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। অধরার মাথা ঘুরছে। খুব করে চাইলো চোখ দুটো খুঁলে রাখতে কিন্তু হলো না জ্ঞান হারালো। জুবায়েরের দৃষ্টি অধরার চোখের দিকে। মেয়েটার জ্ঞান নেই তবুও ভ্রু কুচকে আছে। জুবায়ের সেটা দেখে বাঁকা হাসলো।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here