Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera … Part – 1

0
1417

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
………………… Part – 1……………………….

——————– সাল ১৮৭৫———————
—————-ঈরানভা রাজপ্রাসাদ————–
.
…..মায়া জান আমি আর পারছি না!! একটু থামুন!! এই বুড়ো শরীর নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি হাফিয়ে উঠেছি।।
কিন্তু কোন ভাবেই থামছেনা রাজকুমারী মায়া। হাসি আর কলকাকলি তে প্রাসাদের প্রতি কোণা ভরে উঠেছে।। সব দাস দাসীরা মায়ার এর চঞ্চলতা উপভোগ করছে!!
……আমায় ধরো বিভীষা!! ধরতে পারলে তোমার সব কথা মানবো!!
….. আমি কি আপনার সাথে পারি!! একটু দয়া করুন!!
….. কোন দয়া না বিভীষা!! ধরতে পারলে সব কথা মানবো।।
এভাবে দৌড়াতে থাকে রাজকুমারী মায়া পুরো প্রাসাদময়। কিন্তু বিভীষা কোন রাজকুমারী মায়ার নাগাল পায় না। বুড়ো হাড্ডি চড়চড় করে উঠে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মায়া ধাক্কা খায় বিশাল বপু বিশিষ্ট লোকের সাথে। মায়া পড়ে যেতে থাকলেও ধরে ফেলল লোকটা।। মায়া তাকিয়ে দেখলো এটা তার পিতা। রাজা মৈনাক। এই বিশাল ঈরানভা রাজ্যের রাজা তিনি। আর মায়ার পিতা। মায়া খুশিতে লাফিয়ে তার পিতাকে জড়িয়ে ধরল। সচরাচর তার পিতার সাথে তার দেখা হয় না। সে বলে উঠল
…… বাবা আমাকে বাঁচান!! বিভীষা আমার জান নিয়ে নিচ্ছে!!
মিষ্টি করে হেসে লোকটা বলল
….. রাজকুমারী মায়া!!! আপনি কেন বিভীষার হাড়ে এত জ্বালাতন করছেন??
….. আমি কোথায় জ্বালাতন করছি?? সেই আমাকে জ্বালাতন করছে।। কতবার বলেছি আমাকে বাইরে নিয়ে যেতে। কিন্তু সে নিয়ে যাচ্ছে না।
এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে বিভীষার প্রবেশ। রাজা মৈনাক কে উপস্থিত দেখে বিভীষা কূর্নিশ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।।
…. মহামান্য অামি মায়া জান কে আমি স্নানের জন্য নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। আজ সব অতিথিরা আসবে। কিন্তু মায়া জান কোন ভাবেই রাজি হচ্ছে না।
রাজা মৈনাক মেয়ের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন
……মায়া আপনি কেন বিভীষার কথা শুনছেন না?? এটা তো ভালো না।।
…… বাবা!! আমিই সবার কথা শুনি।। কেউ আমার কথা শোনে না।।
এই বলে মায়া গাল ফুলিয়ে ফেলল।। রাজা মৈনাক হেসে ফেললেন। তারপর বললেন
…..ওয়াদা করছি আমার ছোট্ট রাজকুমারী কে যে কাল আমরা শিকারে যাব।। ঠিক আছে।।
মায়া খুশিতে লাফিয়ে উঠল।।
….অবশ্যই বাবা। আমি এবার বড় থেকে সিংহ ঘায়েল করবো।।
….. এবার তাহলে অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে নিন।
রাজা মৈনাক বিভীষার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন
…..বিভীষা রাজকুমারী কে নিয়ে তৈরি করেন। এমন সুন্দর করে তৈরি করবেন যাতে আমার রাজকুমারী কে দেখে সবাই অবাক হয় যায়।
….অবশ্যই মহামান্য!! আমি নিয়ে যাচ্ছি মায়া জান কে।।
এরপর খুশিতে খুশিতে মায়া বিভীষার সাথে রাজকীয় গোসল খানায় নিয়ে চলে গেল।
.
.
আজ ঈরানভা রাজপ্রাসাদ অপরুপ সাজে সেজেছে।। আজ এই প্রাসাদে অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে যাতে হাজারো অতিথি অাগমন করবেন। এবং আসবেন অনেক দেশের রাজ-রাজড়া!! বিভীষা মায়া কে অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করছেন।। তৈরি হওয়ার পর মায়ার রুপ দেখে বিভীষা নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল।। একটা কালির ফোটা লাগিয়ে দিল।
….. মায়া জান আপনাকে অপূর্ব লাগছে!!
মায়া ফিক করে হেসে দিল।।
….. তাই নাকি বিভীষা!!!
….. আমি মিথ্যা বলিনা মায়া জান!!
….. তোমাকে ধন্যবাদ!!
…. তোমাকেও মায়া জান!!
.
যখন অনুষ্ঠানে মায়া প্রবেশ করল তখন কিছুক্ষনেরর জন্য যেন অনুষ্ঠান থমকে গেল।। সবাই বিমুগ্ধ চোখে ষোড়শী বালিকা মায়া কে দেখতে লাগলো।। মায়া কে দেখে মায়ার পিতা রাজা মৈনাক আর রাণী অমরা এগিয়ে এলো। তারপর সবার সাথে তাদের একমাত্র রাজকুমারী ও ভবিষ্যত কর্ণধারের পরিচয় করিয়ে দিল। ইতোমধ্যে রাজকুমারী মায়া যে সকল রাজকুমার আর রাজা দের নজর কাড়েন নি তা নয়।।। কয়েক জন এই অনুষ্ঠানের মধ্যে রাজা মৈনাক কে বিয়ের কথা জানালো।। রাজা হাসি মুখেই সেই সব প্রস্তাব নাকোচ করল। কেননা রাজকুমারী মায়া সবে কৈশোরে পদার্পণ করেছে।। এত অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু তথাপি নাছোড়বান্দা কয়েকজন।। অনেক কষ্টে রাজা মৈনাক তাদের মানালো।
এসবকিছুই মায়ার অজানা।
অনুষ্টানে এক পাশে বসে তার কয়েকজন সঙ্গীদের নিয়ে দাড়িয়ে কথা বলছিল।। এরই মধ্য বিশ বছর বয়সী এক যুবক রাজকুমার এসে তার পাশে দাড়ালো।। মায়া পিছন ফিরে তাকালো। কিন্তু চিনতে পারলো না। দেখলো ফর্সা ধরনের হাস্যোজ্জল এক রাজকুমার তার দিকে তাকিয়ে আছে।।
…… রাজকুমারী মায়া
…… বলুন
…… আমি কালক।। ক্রিস্টা থেকে এসেছি।।
….. রাজকুমার কালক??
….. হ্যাঁ!!
…. আপনার কথা অনেক শুনেছি!!
…. লজ্জা দিচ্ছেন।। আমি এক রাজকুমার বটে তবে অসাধারন কেউ নই।
রাজকুমারী মায়া রাজকুমার কালকের সরল কথাবার্তায় মুগ্ধ হলেন। সময় কোন দিকে কেটে গেলো। দুজনেই বুঝতে পারলো না।।
রাতে মায়া কে মিট মিট করে হাসতে দেখে বিভীষা কিছুটা অবাক হল।। সে জিজ্ঞেস করল
…… মায়া জান কি হয়েছে আপনার??
বিভীষার কথায় চমকে উঠল। তারপর লজ্জায় লাল হয়ে গেল তার গাল।। আর বিষয়টি নজর এড়ালো না বিভীষার।। সে বিভীষার দিকে তাকিয়ে বলল
…… কিছু না!!
বিভীষার বিষয়টা মোটেও ভালো লাগল না। কিন্তু মুহুর্তেই সেটা প্রকাশ করল না।
.
পরদিন সবাই তৈরি হয়ে নিলো শিকারে যাওয়ার জন্য।। রাজকুমারী মায়া প্রচুন্ড খুশি। শুধু অখুশি তে আছে রাণী অমরা।। তার মতে রাজকুমারী দের শিকারে যাওয়া নিষ্প্রয়োজন।। কিন্তু তথাপি মানা করলেন না। শিকারের জন্য মায়া নিজেই কালো একটা ঘোড়া বেছে নিলেন। এবং পিতা রাজা মৈনাক কে বললেন
….. বাবা আমি আজকে বড় সিংহ ঘায়েল করবো।।
শুনে রাজা মৈনাক হাসল।।
….. অবশ্যই রাজকুমারী।। দেখতে হবে না তুমি কার মেয়ে??
….. ঠিক বলেছেন মহামান্য!!
সবাই খুশিতে খুশিতে যাত্রা শুরু করল।। রাজা মৈনাক অনেক ভালো ভালো শিকার করলেন। তার সভাসদরাও শিকার করলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য বিশিষ্ট রাজকুমারী মায়া একটা পাখি পর্যন্ত শিকার করতে পারলেন না।। এদিকে দুপুর গড়িয়ে এলো। সবাই শিকার নিয়ে রান্না তে ব্যস্ত হয়ে গেল।। রাজা মৈনাক তার সেনাপতি আর মন্ত্রি কে নিয়ে গুরুত্ব পূর্ণ আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। আর মায়া তীর ধনুক নিয়ে শিকার ধরার চেষ্টা করছিল। এভাবে এগুতে এগুতে শিকারের নেশায় মায়া অনেক গভীর জঙ্গলে চলে আসল। হঠাৎ গুরু গম্ভীর কান্নার শব্দে মায়ার হুশ ফিরল। সে চারদিকে তাকিয়ে ঘন জঙ্গল ছাড়া আর কিছু নজরে পড়ল না।। সে উল্টা পথে আবার দৌড়াতে শুরু করল।। কিন্তু কিছুক্ষন দৌড়ানোর পর সে ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের নিচে বসে পড়ল।। কিছু সময় পর একটা ঝোপে কিছু একটা নড়তে দেখলো।। কৌতুহলী হয় মায়া সেদিকে এগিয়ে গেলো।। কিছুক্ষন ভালো করে দেখার পর সে বুঝতে পারলো যে এটা একটা বনমোরগ।। মায়া তাড়াতাড়ি তীর ধনুক নিয়ে ওটার দিকে নিশানা লাগালো।। কিন্তু তার প্রথম তীর ফসকে গেল। আর বনমোরগ টি পালিয়ে গেল। সে দ্বিতীয় বার নিশানা লাগিয়ে বনমোরগ টির পেছনে দৌড়াতে লাগল।। সুযোগ পেয়ে দ্বিতীয় তীরটিও ছুড়ে দিল।। কিন্তু বনমোরগের আর্তনাদের বদলে সে অস্পষ্ট একটা আর্তনাদ শুনলো।
এবার মায়া ভয় পেল।। তার মন সায় দিচ্ছিল দৌড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু সে একপা ও নড়তে পারলো।। এভাবে কয়েক সেকেন্ড বাদে কেউ একজন বেড়িয়ে এলো।।
সে চিনতে পারলো না।। তার বুক বেয়ে রক্ত পড়ছিল। ঐ তো মায়ার ছোড়া তীর টা ওই মানুষের বুকে বিধে আছে।।। মায়া ভয়ে হিম হয়ে যেতে লাগল। কারন মানুষটা তার দিকে এগিয়ে আসছিল।। সে মাত্র ষোল বছর বয়সি বালিকা।। ভয় পাওয়াটা তার স্বাভাবিক।। সে এক পা এক পা করে পিছু হটতে লাগলো। কিন্তু লোকটা তার আগেই মায়ার অনেক কাছে চলে আসলো। মায়ার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। সে আমতা আমতা করে বলল
…… বি-বিশ্বাস ক-ক-করুন!! আ-আমি ইচ্ছা করে আপনাকে মারি নি।।
এই বলে মায়া আর এক বার লোকটার বুকের দিকে তাকালো।। মায়া ভাবলো লোকটার কি ব্যাথা হচ্ছে না?? বুকে আঘাত লাগলে তো মারা যাওয়ার কথা।। সে আবার লোকটার দিকে তাকালো।। লোকটা শুধু এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। এরপর লোকটা তার এক হাত তুলল। তারপর ধীরে ধীরে মায়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেল।। মায়া সেখানে ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। কিছু বলতে পারলো না।। লোকটা তার গাল স্পর্শ করতে লাগলো।। তারপর গলা।। তার গলায় থাকা লকেট টা ধরে গম্ভীর গলায় অস্পষ্ট স্বরে জিজ্ঞেস করল
…… কি নাম তোমার??
মায়া উত্তর দিল না।। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।। উত্তর না পেয়ে লোকটি লকেট থেকে নজর সরিয়ে মায়ার দিকে তাকালো।। তারপর চিৎকার দিয়ে বলল
…… কি নাম তোমার??
মায়া চমকে উঠল।। তার সাথে কোন দিন কেউ এভাবে কথা বলে নি।। সে ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বলল
….. মা মা-মায়া
….. মায়া….. মায়া……মায়া!!
কয়েকবার উচ্চারন করল নামটা। তারপর মায়াকে বলল
…… মায়া আমার জন্য অপেক্ষা করবে।। আমি আসবো।।
এই টুকু বলে লোকটি ধপাস করে মায়ার বুকের উপর পড়ে গেল।। আর মায়া আচমকা এরকম হওয়ায় ভয়ে কান ফাটা চিৎকার দিল।। লোকটি তার উপর বেহুশ হয়ে পড়ে গেছে। এবং লোকটির ভার সামলাতে না পেরে মায়া লোকটি কে সহ মাটিতে পড়ে গেল।। শোয়াতে সেই অবস্থায় মায়া কতক্ষণ চিৎকার করল। কিন্তু লোকটির সাড়া শব্দ না পেয়ে মায়া চিৎকার থামালো।। তারপর ধীরে ধীরে দেখতে লাগলো।। দেখলো যে লোকটি বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। সেটা দেখে মায়া অনেক কষ্টে লোকটিকে তার শরীরের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু দেখল লোকটি অনেক ভারী।। তারপরও সে চেষ্টা করতে লাগল।। প্রায় তার আধা ঘন্টা চেষ্টার পর সে লোকটির নিচ থেকে বেরিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারলো।। তারপর সেখান থেকে বেড়িয়ে একটা ভৌ দৌড় দিল।
.
(চলবে)
.
কেমন লাগল জানাবেন?? আমার নতুন গল্প। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here