Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 32

0
443

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 32…………………..

রাতে বিছানার নরম তোষকেও মায়ার ঘুম আসছিল না।। শুধু এপাশ ওপাশ করছিল।। ভেবে কুল পাচ্ছিল না যে অলোক কি সত্যিই ওই খানে হামলা চালাবে?? ওরা তো ঘুমন্ত থাকবে।। জানবে না কিছুই।। আবার এপাশ ফিরল।। ফিরতেই অলোকের ঘুমন্ত মুখ খানা নজরে পড়ল।। তার পাশে শুয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে।। ইদানিং মায়া অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে অলোকের সঙ্গ পেতে পেতে।। বরঞ্চ তার ঘুমই আসে না যেদিন অলোক পাশে থাকে না।। ছটফট করতে থাকে।।
মায়া হাত বাড়িয়ে অলোকের মাথায় হাত রাখলো।। তারপর ধীরে ধীরে বুলাতে লাগলো।। ঘুমন্ত অলোকের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।। কি নিষ্পাপ প্রশান্তি ময় চেহারা।। এই চেহারা দেখে কেউ কি বলবে অলোক কতটা নিষ্টুর হতে পারে?? নাকি সব নিষ্টুর লোক ঘুমন্ত অবস্থায় নিষ্পাপ দেখায়??
ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে মায়া উঠে গেল।। তারপর আস্তে আস্তে পায়ের নূপুর গুলো খুলে রেখে দিল।। কারন ওগুলো অনেক শব্দ করবে।। এরপর মায়া কেদারায় বসে একটা পত্র লিখলো।। তার সেই শূভাকাংখী কে।। পত্র লিখেই ধীর পায়ে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এলো মায়া। এরপর সোজা দাসী কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল।।
যখন দাসী কক্ষ হতে পায়ে ফিরে এল তখন রাত অনেক টুকু পেরিয়ে গেছে।। আবারো ধীর পায়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই মায়া চমকে উঠল।। কারন বিছানায় অলোক নেই।। কোথায় গেল? এখানেই তো ঘুমন্ত অবস্থায় শোয়া ছিল।। মায়ার পিছু পিছু গেল নাতো? যদি গিয়ে থাকে তাহলে তো সব জেনে যাবে।। বুক ধক করে উঠল মায়ার।। এখন কি হবে?? অলোক কি তাকে মেরে ফেলবে??
এরকম ভাবতে ভাবতে পিছন ফিরতেই আবার চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে গেল মায়া।। তার ঠিক পিছনে অলোক দাড়িয়ে।।
—– স-সম্রাট!!
—- কোথায় ছিলে??
—- স-সম্রাট আ-আমমি””””
—- তোমাকে খুজে পাচ্ছিলাম না।। তোমার পায়েল ও এখানে রয়ে গেছে।।
—- আ-আমমি একটু বাগানে গিয়েছিলাম।। ঘুম আসছিল না তাই।।
—- কিন্তু দারাহ বলল সে নাকি তোমাকে দাসী কক্ষের দিকে যেতে দেখেছে??
—- দাসী কক্ষের দিকে??
মায়া ঢোক গিলল।। কি জবাব দিবে??
—- আ-আমি দা-দা”””””
চারদিক টা কেমন দূলে উঠল।। অলোক কিছু বোঝার আগেই মায়া সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলল।। সেও হঠাৎ মায়া কে এভাবে সংজ্ঞা হারা হতে দেখে চমকে উঠল।। তারপর মায়া হে বিছানায় শোয়ায় দিয়ে চিল্লাতে লাগল।।
—– দারাহ দারাহ!!
মুহুর্তের ডাকে দারাহ ছুটে এলো।। সেই সাথে আরবাগী সহ আরো কয়েক জন ছুটে এলো।। সবাই ছুটে আসতেই অলোক নির্দেশ দিল রাজ বৈদ্য এক্ষুনি আসার।।
খবর পাঠাতেই রাজ বৈদ্য দ্রুত চলে আসলেন।। অলোক চিন্তিত ভাবে পায়চারি করছে।।
পর্দার আড়াল থেকে রাজ বৈদ্য মায়ার হাতেরর স্পন্দন অনেক পরিক্ষা নিরীক্ষা করে অলোক কে সু সংবাদ দিল।। সে পিতা হতে চলেছে এবং বার্বান সাম্রাজ তাদের উত্তরাধিকারী কে পেতে চলেছে।। কথা শুনে অলোক প্রথমে ভ্যাবাচাকা খেলেও পরে নিজেকে সামলিয়ে নিল।। ভোর রাতেই নগরে নগরে সানাই ডঙ্কা বেজে উঠলো।। খবর ছড়িয়ে গেল বার্বান সাম্রাজ্যে নতুন অতিথি আসছে।। খুশিরই সংবাদ।। পুরো রাজ্য জুড়ে খুশির বন্যা বয়ে গেল।। বার্বান রাজ্য আবারো অপরুপ সাজে সাজলো।। অলোক মনের মধ্যে খুশিটা চেপে হাসি মুখে রাজ্যে অসংখ্য মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত বিলি করতে লাগলেন।। উপহার পেয়ে সবাই ধন্যি হল এবং ভবিষ্যত সন্তানের জন্য অনেক আশীর্বাদ করল।।
.
সকালের কিরনের আভা মুখে পড়তেই মায়া জেগে উঠলো।। সে জেগে উঠতেই দারাহ, আরবাগী সহ আরো কয়েক জন প্রবীণ দাসী তার কাছে দৌড়ে এলো।। তাতে মিষ্টি মুখ করাতে লাগল।। তারপর তাকে বিভিন্ন সেবা যত্ন করতে লাগল।। সে বুঝতেই পারছিল না এসব কি হচ্ছে আর অলোকই বা কোথায়??
এত ঝামেলার মধ্যে লিয়া কে একটু খানি কাছে পেয়েই মায়া ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল
—- এসব কি হচ্ছে লিয়া? সবাই এমন করছে কেন?
—- রাণী মায়া আপনি জানেন না?
—- জানালেই তো জানবো! কি হচ্ছে এসব?
লিয়া এবার কানের গোড়ায় এসে আরো ফিস ফিসিয়ে বলল
—- রাণী মায়া আমাদের এখানে নতুন অতিথি আসছে।।
ভ্রু কুচকে মায়া বলল
—- কে আসছে?
—- একজন রাজকুমার!!
—- মানে??
—- মানে আপনি মা হতে চলেছেন।।
লাইন টা শুনেই মায়ার মাথা ঝিন ঝিন করতে লাগল।। বড় বড় চোখে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
—- কি বলছো এসব??
—- আমি সত্যি বলছি রাণী।। আজ ভোর রাতেই সংবাদ টা নিশ্চিত করেছে রাজ বৈদ্য।।
—- আ-আমি মানে মা””””” কখন, কিভাবে??
মায়া আপন মনেই যেন কথা বলতে লাগল।। সে এত কিছুতো ভাবে নি।। সেও যে কখনো সন্তানের মা হবে এমন কথা তার মাথায় আসেনি।। আর আজ তার গর্ভে একটা সন্তানের জন্ম হয়েছে।। ভাবতেই কেমন যেন একটা অনুভুতি হলো তার।। কাল রাতে তো”””””
কাল রাতের কথা মনে পড়তেই মায়ার মনে পড়ে গেল তারই রাজ্যের কথা।। অলোকের আজ ভোর রাতেই হামলা চালানোর কথা ছিল।। যদিও বা মায়া আগাম সংবাদ পাঠিয়ে ছিল তারপরও যদি সংবাদ না পেয়ে থাকে?? তাহলে এতক্ষনে নিশ্চয় তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।। শিউরে উঠলো মায়া।। লিয়া তার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।। লিয়ার দিকে চোখ যেতেই মায়া খপ করে তার হাত ধরে ফেলল।। তারপর এক কোনে টেনে নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে কিছু বলল।। লিয়া চোখ তুলে বলল
—- এখনি যাব??
—- হ্যা এখনি।। তার কাছে আমার কিছু গুরুত্ব পূর্ন জিনিস আছে।।
—- জো হুকুম রাণী মায়া।।
.
দুপুরে সম্রাট কক্ষে এলে মায়ার বুক আবারো ঢিপ ঢিপ করতে লাগল।। কিন্তু অলোক তার কাছে এসেই তাকে জড়িয়ে ধলল।।
—- আজ আমি অনেক খুশি মায়া!! অনেক অনেক খুশি।।
মায়া ফিকে একটা হাসি দিল।। তারপর অলোক মায়ার হাত দুটো ধরে হাতের পিঠে দুটো চুমু খেল।। তারপর মায়ার চোখের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
—- বল তুমি কি চাও।। যা চাইবে সব তোমার।। বল বল কি চাও।।
মায়া আরো একবার হাসি দিল অলোকের কথা শুনে।।
তারপর অলোকের গলায় হ্ত দুটো পেচিয়ে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল।। তারপর বলল
—- কিছুই না সম্রাট।। শুধু আপনি আমার পাশে থাকলেই হবে।।
.
খেতে বসলে মায়া খানিকটা ইতস্তত করে অলোক কে ডাকল
—- সম্রাট??
—- হুম?
—- এ-একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
—- হুম!!
—- কাল রাতে আপনি বলেছিলেন বিদ্রোহী দের উপর হামলা চালাবেন।
—- হ্যা বলেছিলাম।।
—- তাহলে হামলা কি চালিয়েছিলেন?? মানে ওদের কি দমন করা গেছে??
অলোক মায়ার দিকে তাকালো শূন্য দৃষ্টিতে।। অলোক কে তাকাতে দেখে মায়া তাড়াতাড়ি বলে উঠল
—- এ-এমনিই বলছিলাম সম্রাট!! চিন্তা হচ্ছিল তাই।।
—- না।। আমার সৈন্যরা বিদ্রোহী দের গিয়ে খুজে পাই নি।। তারা যেন কোথায় পালিয়ে গেছে।। নিশ্চয় কেউ আগাম সংবাদ পাঠিয়েছে।। না হলে ওদের জানার কথা না।।
—- ওহ!!
মায়ার বুক থেকে বিরাট একটা পাথর নেমে গেল।। সে শান্তিতে খেতে লাগল।। কিন্তু অলোক আবারো বলে উঠল
—- তোমার ওসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই মায়া। তুমি শুধু আমার সন্তানের আর নিজের চিন্তা কর।। বাকি সব বাদ।। আমি দারাহ কে বলে দিচ্ছি যাতে সে তোমার খেয়াল রাখে।।
অলোক সাথে সাথেই দারাহ কে ডেকে মায়ার দেখাশুনারর কথা বললেন আর মায়া!! এক রাশ নিঃশ্বাস শুধু বুক থেকে বের করে দিল।।
.
অলোক যাওয়া পরপরই হুড়মুড় করে তার কক্ষে প্রবেশ করল রাণী ইরাভ আর রাজকুমারী অধরা।। নিজে দাদী হচ্ছে শুনে রাণী ইরাভের খুশীর সীমা নেই।। এক গাদা উপহার দিয়ে গেলেন তার রাজবধূ কে।। আর অধরা ফিস ফিসিয়ে বলে গেলেন যে তার একটা টুকটুকে রাজকুমার চাই।। মায়া হেসে দিলো কথা শুনে।।
.
শেষ বিকেলে ঘুম ভাঙতেই মায়া দেখলো লিয়া তার পাশেই দাড়িয়ে।। হুড়মুড় করে উঠে বসেই মায়া জানতে চাইল
—- ও এসেছে??
লিয়া একটু নিচু হয়ে বসেই জানালো
—- না রাণী মায়া।। ও আসে নি।। তবে খবর খুব খারাপ!!
—- মা-মানে??
—- মানে আপনি যে দাসী কর নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাকে আজ সকালে মৃত অবস্থায় প্রহরী রা খুজে পেয়েছে।।
চমকে উঠলো মায়া।।
—– কি বলছো এসব??
—– আমি সত্যি বলছি রাণী।। নিজে দেখে আসছি লাশটা।।
—– অসম্ভব।। এ হতে পারে না।।
এই বলেই মায়া বিছানা থেকে নেমে গেলো।। কোথাও যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই লিয়া বলে উঠল
—- রাণী মায়া আপনি কোথায় যাচ্ছেন??
থমকে উঠল মায়া।। সত্যিই তো।। সে কোথায় যাচ্ছে??
.
(চলবে)
.
সবাই কে রমজানের শূভেচ্ছা জানায়।। আশা করি এই সংযমের মাসে সবাই নিয়মিত নামাজ, রোযা আর কুরআন তিলাওয়াত সহ ভালো কাজের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি কামনা করবে আল্লাহর কাছে।। ভালো থাকবেন সবাই।। এখন থেকে প্রতিদিনই এই গল্প টা দেয়ার চেষ্টা করব এবং এই মাসেই শেষ করে দিব।। আল্লাহ হাফেজ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here