তুই_আমারই_থাকবি💜 #Esrat_Jahan💜 #Part_20

0
561

#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_20
!
‘কাচ ভাঙ্গার শব্দটা প্রচন্ড জোরে কানে এসে লাগলো।চোখগুলো কেমন লেগে আছে,খুলতে কষ্ট হচ্ছে।মাথায় প্রচন্ড ব্যথা।তাও ধীরেধীরে কোনোমতে চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটা জায়গায় আবিষ্কার করলাম।নড়েচড়ে ওঠতেই বুঝতে পারলাম,আমি গাড়িতে।কিন্তু গাড়িটা অচেনা ঠেকলো আমার কাছে।

হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে উঠতেই সবকিছু মনে পড়ে গেলো।মাথাটা ঝাড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসতেই সামনে কারো চিৎকার শুনতে পেলাম।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফ্লুরোসেন্ট আলোয় দেখলাম,আরহাম ভাইয়ার সেই বন্ধুটা!নামটা এ মুহূর্তে কিছুতেই মনে পড়ছে না আমার।পাশ ফিরতেই দেখি,হাতে ইয়া বড় একটা রড নিয়ে আবরার গুন্ডা ওর হাতে আঘাত করলো। আর রাফাত,, হুম মনে পড়েছে এই গুন্ডার নাম রাফাত ছিলো। যাইহোক, রডের আঘাত পেয়ে শয়তানটার হাত ভেঙ্গে গেলো, চিৎকার করে ব্যাটা নিচে বসে পড়লো।আবরার ওকে আবার একটা লাথি দিয়ে দুহাত দূরে ফেলে দিয়ে রড দিয়ে ইচ্ছামতো পায়ে আর পিঠে বারি দিতে থাকলো। রেগেমেগে উনি ফায়ার হয়ে গিয়েছেন।আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে উনাকে গিয়ে ধরলাম।বললাম, উনাকে এভাবে মারছেন কেন?

উনি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও রাফাতটাকে মাটি থেকে তুলে গালে প্রচন্ড জোরে দু দুইটা থাপ্পড় মারলো,আর তাতে রাফাতটার গাল কেটে রক্ত বের হয়ে এলো। আমি এ অবস্থা দেখে রেগে উনাকে টেনে একপাশে এনে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,কি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি?এভাবে কেউ মারে?ও তো মরে যাবে!!

মরে গেলেই ভালো, ওকে আজ মেরেই ফেলবো।

কিন্ত কেন?কি করেছে উনি?

উনি এবার অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলেন,তোমার সাথে যা হয়েছে তার পরেও তুমি এসব বলছো?

অবাক হয়ে বললাম, কি হয়েছে আমার সাথে?

মানে?এই রাফাত তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছো তোমার সাথে কি হয়েছে?

সিরিয়াসলি?

আজব!আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?

হচ্ছে,আসলে আমি ভাবিনি এমনটা হবে!

ওকে আজ মেরেই ফেলবো।ওর লুচ্চামো স্বভাব যদি আজ না ছাড়াই তাহলে আমিও আবরার চৌধুরী না।বলতে বলতেই তেড়ে যেতে লাগলো ওর দিকে…….

আমি উনাকে পেছন থেকে টেনে ধরে বললাম, এসব না করে ওকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিন।

উনি ভেবে বললেন, পুলিশকে তো বলেছিই,ওরা আসছে,বাট ওকে তো একটু পিটাতে হবে। নইলে রাগটা মিটবে না!বলেই উনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন।

তারপর ঘুরে রাফাতটার কাছে গিয়েই দিলেন আরেকটা লাথি ওর পিঠ বরাবর।তাতেই ও লুটিয়ে পড়লো একটা পাথরের উপর, তাতে ওর মাথা ফেটে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।


কিছুক্ষণের মধ্যেই রাঙ্গামাটি থানা থেকে পুলিশরা এলো। এসে অজ্ঞান অবস্থায়ই রাফাত শয়তানটাকে ধরে নিয়ে গেলো।

এসব আজগুবি ঘটনায় আমি বেশ বিরক্ত হলাম।প্রায় মধ্যরাত হতে চললো।পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘাপটি মেরে বসে আছে ঘন অন্ধকার। দু’চোখ ঘুমে লেগে আসছে।মাথায় একশো একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে রাস্তায়ই ঘুমিয়ে পড়ি।কিন্তু তা আর হলো কই,,আমার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে আবরার গুন্ডা আমার হাত ধরে টানতে লাগলেন।

আরে,, কি হচ্ছেটা কি?

কিছু হচ্ছে না,তুমি এতো রাতে রিসোর্টের বাইরে এসেছো কেন?

আমার ইচ্ছে তাই,আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো!

তুমি জানো,ও তোমায় কিডন্যাপ করতে এসেছিলো, বুঝেছ তুমি?গলা ফাটিয়ে বললো উনি,,,

বাই দ্যা ওয়ে আপনি এসব জানলেন কিভাবে? এখানে আসলেনই বা কিভাবে? আর আপু,ভাইয়া,আনিকা ওরা এসব জানে?

উনি একথা শুনে কিছুক্ষণ গুম মেরে বললেন, না ওরা কেউ জানে না।এতরাতে ওদের ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে হয়নি!আর রাফাত নিজেই আমাকে ফোন করে বলেছে যে ও তোমাকে কিডন্যাপ করেছে।

আর আপনি নায়ক সেজে আমাকে বাঁচাতে চলে এসেছেন?

দেখো,বাজে কথা বন্ধ করো।এমনিতেই…. যাইহোক,,এখন চলো।বলেই আমার হাত ধরলেন।

আমি একবার উনার মুখের দিকে আর আরেকবার হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলাম।উনার প্রতি আমার রাগ নেই,যেটা আছে সেটা অভিমান,এক আকাশ সমান অভিমান।উনার প্রথম করা খারাপ আচরণ গুলো আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছে। দাগটা এতোটাই গভীর যে কোনো কারণ ছাড়াই আমি উনার সাথে খারাপ আচরণ করছি।এখনো ঠিক তাই হচ্ছে,অভিমান প্রচন্ড অভিমানে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।শিহরণ বয়ে যাচ্ছে সারা মনে।গলায় শান্তভাব এনে বললাম,হাতটা ছাড়ুন।

উনি আচমকা তাকিয়ে বললেন, কেন?

ভালো লাগছে না।তাই।রেগে রেগে বললাম।পাগল পেয়েছেন আমায়?



উনার উত্তর না পেয়ে আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি,উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন।গম্ভীর গলায় বললেন, ঠিক আছে,তুমি তো আমায় ভালোবাসো না,তাই তো?

কতবার বলবো?

উনি চোখমুখ শক্ত করে বললেন, আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই।তুমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।আমি সেটা নই।যাও তোমাকে আমি মুক্ত করে দিলাম,যেখানে ইচ্ছা যাও।

চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে কাহিনী দেখছি।বাংলা সিনেমা যে আমার জীবনে ও ঘটবে, ভাবতে পারিনি।

কি হলো যাও?দাঁড়াবে না এখানে, আমার সামনে। যাও,,,,,যাও ফার্স্ট ফার্স্ট!

একথা বলতে বলতেই উনি উনার গাড়ির জানালার কাঁচে প্রচন্ড জোরে একটা ঘুসি দিলেন,তাতে কাঁচ ভেঙে উনার হাত কেটে যায়।

আমি দৌড়ে উনার কাছে যেতেই উনি মাঝপথে আমাকে থামিয়ে উনার কাছে যেতে নিষেধ করলেন।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছি তাও উনি উনার হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো গাড়িতে বারি দিতে লাগলেন।এতে হাত পুরো রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে।আমি উনাকে থামতে বললেও উনি থামছেন না।

আমি কেঁদে বললাম,প্লিজ থামুন এমন করছেন কেন?

তুমি আমাকে ভালোবাসো না,আমি মরে যাবো।

না না, আমি ভালোবাসি আপনাকে প্লিজ থামুন এবার।কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লাম।

উনি একরাশ কষ্ট নিয়ে হেসে বললেন, আবরারকে মিথ্যে বলা?তুমি আমায় বোকা পেয়েছ ইউ ডাফার গার্ল।?

আমি সত্যি বলছি,প্লিজ বিলিভ মি!বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে উনার দিকে যেতেই উনি হাতে কাঁচের টুকরো নিয়ে অন্য হাতের শিরাতে ধরে বললেন, তুমি আমাকে, এই আবরারকে সান্ত্বনা দিচ্ছো?দয়া করছো?আমি কারো দয়া নিই না,বুঝেছ!আর আমি মরে গেলে তুমি আমাকে বুঝবে,আমার ভালোবাসাকে বুঝবে!গট ইট!

এই বলে হাতের শিরাতে কাচ লাগাতে যাবেন তার আগেই আমি উনার কাছে গিয়ে হাত থেকে ওটা ফেলে দিয়ে ঠাস করে উনার গালে চড় মেরে বললাম,কি করতে যাচ্ছিলেন? পাগল হয়ে গিয়েছেন?আমি তো বলেছিই আপনাকে ভালোবাসি,ভালোবাসিইই!তাহলে এরকম করছেন কেন!!

উনি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি আবারও বললাম, শুধু একটু অভিমান করেছিলাম আপনার সাথে,আর আপনি এখানে হাত-পা কেটে বাজে সিচুয়েশন ক্রিয়েট করতে চাইছেন।

চুপ… করে দাঁড়িয়ে আছেন।

এখন মুখে তালা কেন?এতক্ষণ ধরে বলছি বিশ্বাস হয় না আমাকে? আমি তো ভালোবাসিই আপনাকে!

মিথ্যে!! আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছো?লাগবে না….তুমি,,,, আ

উনি কিছু বলার আগেই উনার ঠোঁটে চুমু খেলাম গভীর ভাবে।তারপর জড়িয়ে ধরে বললাম, সত্যিই বলছি।আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি।

তাহলে ওইসময় এরকম করেছিলে কেন?

অভিমান হয়েছিলো।

কিসের?

বলবো না,আপনার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।প্লিজ কিছু করুন……

উনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বললেন,কিছু করতে হবে না,তুমি আছো সেটাই অনেক।

আরে,,,ছাড়ুন আমায়।প্লিজ রক্ত মুছুন।’

রাঙ্গামাটির সেই ঘটনার পর আজ কয়েকমাস কেটে গিয়েছে। আনিকা প্রেগন্যান্ট এটাই পরিবর্তন আর বাকি সবকিছুই স্বাভাবিক,কিন্তু আবরার শয়তানটার ছাগলামি কমেনি একটুও।সারাক্ষণ কিছু না কিছু করছেই আর মামানির কাছে বকা খায়।অবশ্য সেটা আমার জন্যই,,,আমি মা-ছেলের কান্ড দেখে রীতিমতো হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাই।

সন্ধ্যাবেলা আমি আপু আর আরহাম ভাইয়ার রুমে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। এমন সময় সাদাফ ভাইয়া ফোন দিলো।উনার কন্ঠ খুশি খুশি,,, জানালেন যে তাদের ফ্যামিলিতে একটা পরী এসেছে! আমি অবাক হয়ে বললাম,কখন ঘটলো এসব?

আর বলো না,তুমি তো জানোই তোমার বান্ধবী কত ভিতু,,,আজ বিকেলে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে।পরে হসপিটালে নিয়ে আসার পর ডাক্তার ইমিডিয়েট সিজার করতে বলে,নইলে মা-বাচ্চা দুজনের জন্যই রিস্ক!তাই তড়িঘড়ি করে সব ফর্মালিটি শেষ করতে গিয়ে তোমাকে জানানোর সুযোগ পাইনি।আবরারকে জানিয়েছিলাম,,,,ও আসার পরই আমি একটু চিন্তামুক্ত হলাম।

উনি জানতেন?আমাকে তো বলেনি?

তুমি নাকি আনিকার এই অবস্থা দেখে কষ্ট পেতে,,তাই।

আমি কি বাচ্চা নাকি?কষ্ট পাবো কেন?আমার বেস্টির বেবি হয়েছে আর আমিই নেই?ভাবা যায়!আমি এক্ষুনি আসছি।

না না,আসার দরকার নেই।হসপিটালে রাতে আর কাউকে এলাউ করবে না।আমি বেবীর ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,,,

তাহলে কাল আসবো,,,,আর আপনার ওই গুন্ডা বন্ধুটাকে বলে দিয়েন যে,আমার সাথে তার আর কথা নেই।বলেই ফোন কেটে দিলাম।

রাগে গা জ্বলছে।ছোটবেলার বেস্টি আজ মা হয়েছে,তাও আবার আমার কলিজা আনিকা!আর আমি কিনা কিছুই জানি না!আসলে সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে পাল্টে দেয় ভীষণভাবে।খুব কাছের মানুষটার খবর রাখাটাও যেন অনেক কঠিন!এইসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো,, এমন সময় আপু আমার পাশে বসে বললেন, কিরে, তোর বেস্টির প্রিন্সেস হয়েছে,, জানিস তো?

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম, জানি।

মন খারাপ নাকি?

তো হবে না?তোমার দেবর আমাকে কিছুই বলেনি!!শালা… হাতি!

আরে রাগছিস কেন!

ইচ্ছে হয়েছে,,শুনো আপু,,আমি আজ তোমার সাথেই থাকবো।ওই গুন্ডা আসলে বলে দিও তার সাথে আমার কোনো কথা নেই।হুহ

তুই গিয়ে বলিস,আমার ভাইটা রাতে একা ঘুমাতে যাবে কেন বউ থাকতে?সে রাতে ভয় পায়।

ওহহ!তাই বুঝি?এত দরদ? বাহ!!

হবেই তো।একটা মাত্র ছোট দেবর আমার!

আমি কটমট করে আপুর দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।পেছন থেকে আপু হাসছে,,,আমি সোজা মামানির রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।মামানি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, কি হয়েছে আমার বাচ্চাটার?

আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম, তোমার ছেলের জন্য আমি আমার বেস্টির কাছে থাকতে পারিনি,তার বাচ্চাকে আদর করতে পারিনি।সব দোষ তোমার ওই ছেলের।

আহা!থাক, এতো রাগ করতে নেই।তোর ভালোর জন্যই নিয়ে যায়নি, হয়তো।

যাইহোক, তোমার ছেলে আজ একা থাকুক রাতে,আমি এখানে থাকবো।উনি আসলে বলে দিও,,,

ঠিক তো?

হুম।

তাহলে ভালোই,,,তোর মামুকে বলে দেবো গেস্ট রুমে ঘুমুতে।

বলে দিও।বিশেষ করে তোমার ছেলেকে…..

এই কথা বলতেই আবরার মিয়া হাজির।দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দুইহাত ভাঁজ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,তাই নাকি?কিন্তু আমার যে একা থাকতে ভয় করে।।আমার বউকে তো আমার লাগবেই,,,,নাহলে আমার ঘুম আসবে না।একটু রোমান্স-টোমান্স এর ব্যাপার আছে না?

উনার কথা শুনে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।মামানির দিকে তাকিয়ে দেখি মিটিমিটি হাসছেন।ইশ,,,কি লজ্জ্বায় পড়লাম রে বাবা!!!!

আমি কিছু বলতে যাবার আগেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে রওনা হলেন।আমি হাত-পা ছুড়ছি,,, ছি ছি লজ্জ্বা,, লজ্জ্বা। মায়ের সামনেই ছেলে বউকে কোলে তুলে নিলো!!

বেলাজ ছেলে ছাড়ুন আমাকে।।

ধুর….পকপক বন্ধ করো।নইলে আছাড় মারবো।


রুমে এনেই বিছানার উপর ধপাস করে ফেলে দিলেন উনি।

দরজা লক করে এসে আমার কাছে বসলেন।বললেন, জানো সাদাফের একটা প্রিন্সেস হয়েছে!

জানি জানি।আপনি আমাকে নিয়ে গেলেন না কেন?

এমনিই,কাল নিয়ে যাবো।

হুহ,,,লাগবে না।আমি ওকে দেখতাম,ছোট বেবীরা কত্ত কিউট হয়,ছোট ছোট হাত-পা,,,ওয়াও!!

উনি কেমন নেশাভরা গলায় বললেন,খুশবু তোমায় একটা কথা বলি?

বলুন।

আমার একটা প্রিন্সেস চাই!

হুহ,,,,বললেই হলো?আপনি আমার মতো সুন্দরী প্রিন্সেস রেখে আবার প্রিন্সেস চাইছেন?এতবড় সাহস?

আরে আমি তোমার কথা বলছি না!!

জানি তো।বাইরে কার সাথে পিরিতি করে এসেছেন? হুম?ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বললাম।

উনি ধৈর্য্যহীন হয়ে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,আমি আমাদের বেবীর কথা বলছি!!

আমি তব্দা লেগে বসে রইলাম উনার কথা শুনে।

প্লিজ,,,আমার একটা বেবী চাই,,,,

আমি ঢোক গিলে বললাম,কিভাবে!!!

প্লিজ খুশবু আমার একটা মেয়ে বেবী চাই!!

আরে বেবী কি আকাশ থেকে আসবে নাকি?কথা কাটাবার জন্য বলছি,,,

ওফফ,,তুমি কি বোকা খুশবু,,,আমি তো দেখেছিই কিভাবে বেবী হয়।

আমি চোখ বড়বড় করে বললাম, মানে? আপনি কি লুনুষ!!ছিহহ,,,

এখানে লুনুষের কি হলো?রোমান্স টাইপ কথা…..

আহ!লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধ করুন তো!!

তাহলে আমার ইচ্ছেটার কি হবে? বাঁকা হাসি দিয়ে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললেন!

ওফ,,দূরে যান তো।সবসময়….

ভয় পাচ্ছ নাকি?

মোটেও না!

মোটেও হ্যাঁ।

আপ…নি…আমা….

উনি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন, হুশ…শ..শ..একদম চুপ করে থাকো ডাফার মেয়ে!

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি আমার ঠোঁট দখল করে নিলেন।
.
.
___________
.
____________
.
বেশ কিছু বছর পর!

খুশবু তুমি পকপক বন্ধ করো,আমি আমার বেবীর সাথে খেলা করবো।

ওহ!আমার মেয়ে আমার না?আপনার একার?

অফকোর্স! তাই না আহর্শি?

হুম,বাবাই।

ওহ,,তাহলে আহর্শির তাঁর মাকে দরকার নেই,তাইতো?

হুম।

আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম ঠিক আছে,আমি চলে যাচ্ছি!আহর্শির মা একা থাকবে এখন থেকে।

বলেই চলে যেতে নিলাম।ওমনিই আমার চার বছরের মেয়েটা পেছন থেকে বলে উঠলো,ইউ আর গ্রেটেস্ট মাম,,আই লাভ ইউ! আমাদের ছেড়ে যেও না প্লিজ!

আর গুন্ডাটা আমার ওড়নাটা টেনে ধরে বললো, আমি কি আর সুগন্ধি আপাকে ছেড়ে থাকতে পারি?রাতে একা ঘুমাতে পারি না,ভয় করে। তাছাড়া রোমান্স এর ব্যাপারটা তো আছেই!!

ছিহ!আপনি লুনুষের লুনুষ!

তাহলে বলো আমাদের ছেড়ে যাবে না?নইলে আমি আমার প্রিন্সেসের সামনেই চুমু দিয়ে ফেলবো কিন্তু। বাঁকা হাসি দিয়ে।

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,জ্বি জ্বি যাবো না।

আমার চার বছরের আহর্শি খিলখিলিয়ে হেসে বললো,মাম্মি তুমি পাপাকে ভয় পাও, তাই না?

আবরার গুন্ডা বাঁকা হাসি দিয়ে আহর্শিকে কোলে তুলে নিয়ে চুলগুলোতে বিনুনি করতে করতে বললো, তোমার মাম্মি একটা ভিতু তো,তাই!

আমি চোখ পাকিয়ে বলে উঠলাম,মোটেও না।

মোটেও হ্যাঁ!

হুহ….

তুমি আমারই থাকবে,,,বলেছিলাম না!দেখলে তো কিভাবে রেখে দিলাম।

না, দেখিনি।আপনি আপনার মেয়ে নিয়ে থাকুন,আমি চলে যাবো।

পারবে না।বিকজ ইউ আর মাই লাইফ!

আহর্শি আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলো। তারপর উনার কোল থেকে নেমে আমার মুখে চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেলো আপুর ঘরে। ওখানে আপুর বেবী আর আহর্শির একমাত্র ছোট ভাই আহনাফ।দু’বছর বয়স ওর।হাঁটতে শিখেছে মাত্র।আহর্শি সারাদিন ওর সাথেই খেলা করে।নিজের মেয়েকে এরকম খুশিতে দেখতে পেয়ে আমার আনন্দের কোনো সীমা থাকে না।আহর্শি ঠিক আমার ছোটবেলার মতো।আমার নিজের অস্তিত্ব, আমার মেয়ে,আমার পৃথিবী!

এমন সময় আবরার গুন্ডা আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে বললেন,আহর্শির আম্মা এত ভাবে কেন?

আমি হেসে বললাম, আহর্শির আব্বা এতো ফাজিল কেন?

আহর্শির আব্বা তাঁর বউকে কাছে পেতে সবসময় ফাজলামো করে ফাজিল হতে রাজি আছে!

ধরুন,আমি যদি মরে যাই?

এমন হবে না।আর এমন হলেও তুমি আমারই থাকবে!

এত ভালোবাসেন কেন?

জানিনা,এমনিই!তুমি ভালোবাসো না?

ভালোবাসি তো।

তুমি যে কারণে ভালোবাসো ধরে নাও আমিও সেই কারণেই ভালোবাসি!

আমি তো কারণ ছাড়াই ভালোবাসি আপনাকে!

আমিও কারণ ছাড়াই ভালোবাসি।জানো তো,’ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না?’

উনার কথা শুনে আমার চোখের কোণে চিকচিক করে উঠলো জল!উনি আমায় জড়িয়ে ধরে।কারণ ছাড়াই জল চলে এলো কেন হঠাৎ উনার কথা শুনে! সত্যিই কী ‘ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না?’
_______

সমাপ্ত। প্রথম লেখা বলে ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন!

October is a peaceful month. He is announcing that the autumn of 2020 is about to start. Happy October. 02-10-2020 💛

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here