তুই_আমারই_থাকবি💜 #Esrat_জাহান💜 #part_19 !

0
374

#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_জাহান💜
#part_19
!
‘দেখো,মেজাজ খারাপ করাবানা।যত্তসব।

আমি কি বলেছি আমাকে কোলে নেন?

না,বলোনি।

তাহলে এত মেজাজ আমাকে দেখাচ্ছেন কেন?

দেখছ না আমার জুতো ভিজে গিয়েছে?আমি হাঁটতে পারছি না।

সারাদিন এইসব সু’জুতো পড়ে রাখেন তার ফল এটা,বুঝলেন?

মানে? আমি কি জুতো ছাড়া খালি পা নিয়ে ঘুরবো নাকি?

এইটাকে বুঝাই কিভাবে? বললাম, সারাদিন জুতা পড়ে রাখার কোনো দরকার আছে? বাইরে গেলে বা কোনো দরকারে পড়তে পারেন।কিন্তু আপনি সারাদিন রাত জুতা পড়ে ঘুরাঘুরি করেন,তাই এটা আপনার বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

উনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা পাথরের উপর উষ্ঠা খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে।

আমি বেশি ব্যথা না পেলেও উনার হাত একটু ছিলে গেলো। উনি আহ করে চেঁচাতে লাগলেন।

এই অবস্থায় আমি হা হা করে হেসে উঠলাম।

উনি চেঁচানো থামিয়ে ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ালেন,আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে গমগম করে বললেন, খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?

হুম,পাচ্ছে তো!

তোমার হাজব্যান্ড এর হাত কেটে রক্তারক্তি হয়ে গেছে।আর তুমি মজা নিচ্ছো?

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, রক্তারক্তি কোথায় হলো?সামান্য হাত ছিলে যাওয়ায় আপনি এটাকে রক্তারক্তি বলছেন?আজব!

উনি মুখ ফুলিয়ে বললেন,ওহহ!এটা সামান্য?হাত দিয়ে রক্ত বের হয়েছে আর তুমি এসব বলছো?কতটা ব্যথা হচ্ছে জানো তুমি?

কেন?এখন কি করবো তাহলে আমি?

তুমি মুভিতে দেখো না?কারো হাত কেটে গেলে ওড়নার আঁচল ছিঁড়ে বেঁধে দিতে হয়?

কি সব যাতা বলছেন?বাংলা সিনেমার কাহিনী যত্তসব!

তুমি আমার সেবা না করে এসব বলছো?থাক লাগবে না….!

আরে আপনি ভুল বুঝছেন।আপনার তেমন কিছুই হয়নি,সামান্য ছিলে গিয়েছে শুধু।

উনি চোখ লাল করে বললো,এখনো এসব বলছো?বলবেই তো…!

ধুর!আপনি শুধু শুধু ভুল বুঝছেন।আর আপনি না জিম করেন,আর এটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না?চলুন বাসায় চলুন।



আমি উঠে দাঁড়িয়ে দেখি,উনি সেই মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জোর করে উনাকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।মেহমান থাকায় দরজা খোলা ছিলো,সামনে কেউ না থাকায় আমি চুপিচুপি উনাকে নিয়ে সোজা আমার রুমে চলে এলাম।

দরজা লাগিয়ে উনাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললাম,উনি চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যলকুনিতে দাঁড়িয়ে রইলো।

আমি ওনার হাতের ছিলে যাওয়া জায়গাটাতে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দিলাম। উনি কিছু বললেন না।মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

উনার এইসব ন্যাকামি দেখে আমার খুব হাসি পেলো।তারপর আমি কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

লম্বা একটা শাওয়ার নিলাম,বেশ ঠান্ডা পড়েছে আজ।একটু আগে বৃষ্টি পড়ায় এমন ঠান্ডা পড়েছে!



শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি উনি মোবাইল টিপছেন।মুখচোখ আগের মতোই।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।আম্মু আমাকে দেখে বাংলা সিনেমা টাইপ ভাষণ শুরু করলো, যে আমি নাকি উনার খেয়াল রাখিনা,উনার খাওয়ার খোঁজ নেই না ইত্যাদি ইত্যাদি হ্যান-ত্যান!

একগাদা কথা শুনিয়ে হাতে বিরিয়ানির প্লেট ধরিয়ে দিলেন।উনি নাকি খাননি।তাই আমি যাতে খাবারটা রুমে নিয়ে যাই সেজন্যই।

আমিও বিরক্ত হয়ে গেলাম রুমে।গিয়ে দেখি মোবাইল টিপাটিপিই করছেন।আমি গিয়ে বললাম,নেন খান।

উনি তাকিয়ে বললো, কি?

খাবার।

কিসের?

আজব!রাতের খাবার।

ওহহ!এতক্ষণে মনে পড়লো যে আমি খাইনি?

জ্বি না।আমার মনে পড়ে নাই।আমার আম্মু মানে আপনার ফুপি মনে রেখেছে যে উনার মেয়ের জামাই খায়নি।

তাই নাকি?

জ্বি,খেয়ে নিন।

খাবো না।নিয়ে যাও।

কেন?

ইচ্ছে।

বললেই তো হবে না।খেতে হবেই।আমি কষ্ট করে বয়ে নিয়ে আসলাম আর আপনি খাবেন না, তা হয় না।

উনি ভ্রু কুঁচকে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,তুমি খাইয়ে দাও।

আমি হতভম্ব হয়ে বললাম,মানে?

মানে সিম্পল। তুমি খাইয়ে দাও।নইলে ভাগো।ডিস্টার্ব করবা না।

ভাবলাম সারারাত না খেয়ে থাকবে!এর চেয়ে ভালো খাইয়েই দেই।

যেই ভাবা সেই কাজ। আমি বিরিয়ানি এক চামচ নিয়ে উনার মুখে পুরে দিলাম।উনি হা করে তাকিয়ে রইলেন। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগলেন।

আমি বাতাস গিললাম লজ্জায়। উনি মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসলেন।আমি যাইহোক, যেমন যেমন করে উনাকে খাইয়ে দিলাম।একপ্লেট শেষ করে আমি হাফ ছাড়লাম।ভাবলাম যাই রেখে আসি প্লেট।

পিছন ঘুরতেই উনি বলে উঠলেন বিরিয়ানিটা জাস্ট ওয়াও।আরো একপ্লেট নিয়ে আসো যাও।

কিহ?আরও? আমি আর পারবো না।

ছিহ খুশবু! তোমার বাসার গেস্ট আমি,আর তুমি এসব কি বলছো?মিনিমাম সেলফ-রেসপেক্ট ও নেই তোমার!ছিহ!ফুপি কিছু শিখাইনি তোমাকে?আমাদের বাসায় তো সারাদিন খাই খাই-ই করো!

উনার গা জ্বালানো কথায় আমি রেগে গেলাম।সাথে লজ্জাও পেলাম।ঠিকই তো, উনি গেস্ট আমাদের বাসার।কিন্তু মোটেও আমি উনাদের বাসায় খাই খাই করি না।যাইহোক, আমি আরও একপ্লেট বিরিয়ানি নিয়ে উনাকে খাইয়ে দিলাম।আর উনি সুযোগ পেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে খেলেন।

প্রায় দুইঘন্টা পরিশ্রম করে উনার এসব ন্যাকামি সহ্য করলাম। তারপর সবকিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুতে গেলাম।

এখানেও উনার আবালের মতো নাটক আমি সহ্য করলাম।তারপর লম্বা এক ঘুমে রাত কাটিয়ে দিলাম।

পরদিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গলো।বিয়ে বাড়ির হৈচৈ শেষে ঠিক হলো আমরা সবাই বাইরে ঘুরাঘুরি করে আসি।তাই আমি আনিকা আর সাদাফ ভাইয়াকেও ফোন করে আসতে বললাম।উদ্দেশ্য সবাই মিলে সময় কাটাবো।’
!
‘রাঙ্গামাটির খুব সুন্দর একটা নিরিবিলি জায়গায় গেলাম আমরা।চারপাশে প্রচুর পাহাড়,মেঘেরা উড়ছে সবর্ত্র!আকাশ গাঢ় নীল।মেঘেদের ছোঁয়া যাচ্ছে,ভীষণ সুন্দর একটা অনুভূতি । এর আগে যদিও আমি রাঙ্গামাটি আসিনি,তাও পাহাড় সবসময়ই আমার পছন্দ ছিলো। সিলেটে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে আমার।তাও রাঙ্গামাটির এই পাহাড় সিলেটের থেকে আলাদা মনে হচ্ছে আমার কাছে।

পাহাড়ি রাস্তাগুলো কেমন আঁকাবাকা,সরু।সারাদিনের জার্নির পর রিসোর্টে এসেই কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে পরেছিলাম আমি আর আবরার মিয়া।

আপু আর আরহাম ভাইয়া এসেই গভীর ঘুম দিয়েছে,আনিকার রাগ ভাঙ্গাতে সাদাফ ভাইয়া ব্যস্ত।বেচারি নিজের চুলগুলোতে কালার করতে না পারায় সারারাস্তা মুখ ফুলিয়ে এসেছে।ওরা নিজেদের রুমেই আছে।সাদাফ ভাইয়া সারাদিন বেবি বেবি করে ওর সাথে লেগেই থাকে। আর আনিকা বেচারি কিছু করতে না পেরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে থাকে।

যাইহোক, হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকটা দূরে চলে এলাম।সরু একটা রাস্তা এঁকেবেঁকে উপরে উঠে গিয়েছে।হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পরেই আমি একটা পাথরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে গেলাম,সেসময় আবরার গুন্ডাটা ধরে ফেললো।গা জ্বালানো বিরক্তিকর হাসি টেনে বললেন, তোমাকে কোলে নিতে হবে দেখছি,নইলে তো হাত-পা ভেঙে বসে থাকবে!

হাত-পা যাতে না ভাঙ্গে সে ব্যবস্থা করুন তাহলে।

বেশ তো,কোলে নিয়ে হাঁটি!

আমি হেসে বললাম, সেদিনের মতো আবার পড়ে যাবেন,তার চেয়ে ভালো একটা গাড়ি টারির ব্যবস্থা করুন।

এই সরু রাস্তায় গাড়ি পাবো কোথায়?

আমি কি জানি!

উনি চিন্তিত মুখ নিয়ে এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করতে লাগলেন।আর আমি একটা পাথরের উপর পা উঠিয়ে বসে আছি।পা দুটো ভীষণ ব্যথা করছে।

কিছুক্ষণ পর একটা আদিবাসী ছেলে সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনি আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।আমি ছেলেটিকে ডেকে আনলাম নিজের কাছে।সে এসে কেমন ভাঙ্গা গলায় বললো, কি?

আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি।

কি সমস্যা?

তারপর আমি ছেলেটিকে মোটামুটি কিছু একটা বললাম।জিজ্ঞেস করলাম রিসোর্টে পৌঁছাতে কোনো রিকশা পাওয়া যাবে কিনা।

কিন্তু ছেলেটি বললো, রিকশা পাওয়া যাবে না।রিসোর্টে পৌঁছাতে বিশ-পঁচিশ মিনিটের মতো লাগতে পারে।আমরা ওর সাইকেলটা ব্যবহার করতে পারি।কিন্তু সমস্যা একটাই,আমি সাইকেল চালাতে পারি না।

আমাকে আর আদিবাসী ছেলেটাকে কথা বলতে দেখে এতক্ষণে উনি আসলেন কাছে।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বললো, এ কে?

একটা ছেলে?

এ কি করে এখানে?

কথা বলছে আমার সাথে।

কিসের কথা?

আমার আর ওর গভীর আলাপ-সালাপ চলছে।

তুমি ওকে চেনো?

আমি মজা করে বললাম, চিনি তো।ও আমার বয়ফ্রেন্ড টাইপ।

বাহ।এখানে আসতে না আসতেই এই আদিবাসী তোমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো?

আমি রেগে বললাম, আপনার সমস্যা?সমস্যা থাকলে ভাগেন এখান থেকে।

উনি কিছু বলতে যাবার আগেই আদিবাসী ছেলেটা অবাক হয়ে বললো,সেকী তোমরা ঝগড়া করছো কেন?ঝগড়া করা ভালো নয়।

ওকে, আর ঝগড়া করবো না।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি সাইকেল চালাতে পারেন?

উনি অবাক হয়ে বললেন, কেন?

না মানে, ওর সাইকেল আছে তো।এটা দিয়েই আমরা রিসোর্টে পৌঁছাতে পারতাম।

ওহহ,আমি পারি।

রিয়েলি?কোথা থেকে শিখলেন?

উনি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, পরে বলবো।

ঠিক আছে,চলুন।

তারপর আদিবাসী ছেলেটার কাছ থেকে ওর সাইকেলটা নিয়ে চড়ে বসলাম।ছেলেটার নাম রক্তিম ত্রিপুরা! ছোট ছোট চোখ,আর চ্যাপ্টা নাক,দেখতে বেশ কিউট।ওর সাইকেলটা ধার হিসেবে নিলাম, ও পরে গিয়ে সাইকেল নিয়ে আসবে।যাইহোক,উনি সাইকেলের সামনের সিটে বসলেন আর আমি পেছনের একরত্তি স্ট্যান্ডে কোনোমতে বসলাম।উনি প্যাডেল ঘুরিয়ে সাইকেল চালাতে লাগলেন।উনাকে দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে,এতবড় লোক সাইকেল চালাচ্ছে এর চেয়ে বেশি মজার জিনিস আমি আর দেখিনি।

উনি আমাকে হাসতে দেখে পেছন ফিরে বললেন,হাসছো কেন?

আপনাকে দেখতে জোকার জোকার লাগছে।

রিয়েলি?আর তোমাকে আমার প্রেমিকা লাগছে বেবি।

কিহ?চোখ গোল গোল করে অবাক হয়ে বললাম।

রিয়েলি বেবি।তোমাকে আজকে সত্যিই জোলির মতো লাগছে।লাভ ইউ সো মাচ,বলেই হু হা করে হাসতে লাগলেন।

আমি উনার পিঠে কিল দিয়ে বললাম,শয়তান, অসভ্য।

তাই নাকি বেবি?

আমি আপনার বেবি না।আপনার বাচ্চা হয়নি এখনো, নিজের বাচ্চাকে গিয়ে বেবি বলুন।দরকার হলে আপনার গার্লফ্রেন্ড বান্দরনিকে বেবি বলুন।আমাকে না।

তোমার বাচ্চা লাগবে সরাসরি বললেই হয়।এতো প্যাঁচিয়ে বলার কি দরকার?

উনার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেলো। উনার চুল টেনে ধরে বললাম, বাজে কথা বন্ধ করুন।

ওকে, এখন আমার বাচ্চাগুলোকে ছাড়ো।ব্যাথা পাচ্ছি।

মানে?কিসের বাচ্চা?

এইতো আমার চুল।

চুল আপনার বাচ্চা?

হুম, সকল পুরুষের কাছে তার চুল,দাঁড়ি,গোঁফ হলো তার সন্তানের মতো। বুঝলে?

আমি হা হয়ে বোকার মতো বললাম, হুম।



রিসোর্টে এসে নিজেদের রুমে চলে এলাম আমরা। গুন্ডাটা এসেই বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।বললো, আমি এখন ঘুমাবো বেবি।একটুও ডিস্টার্ব করো না বেবি।

এই আপনি বেবি বেবি বলা বন্ধ করুন।

শুনো আমার মুখ,আমি যা ইচ্ছা বলবো। সেটা তোমাকে বলতে হবে না।গট ইট!

অসহ্য।

একথা শুনে উনি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনো, তুমি তোমার ওই বয়ফ্রেন্ডকে ভুলে যাও,হুম।তুমি তো শুধু আমারই,তাই না?

বয়ফ্রেন্ড কিসের?

ভুলে গেলে?তোমার ওই দুমিনিটের আদিবাসী বয়ফ্রেন্ড!

ওহহ!ওর কথা বলছেন?

হ্যাঁ।

আহারে,ওকে কি করে ভুলি বলুন তো।কি সুন্দর কিউট ছেলে,উম্মাহহ,,দু মিনিট দেখেই ফিদা আমি।ও বসবাস করবে আমার মনে আজীবন। ভুলতে পারবো না আমি আমার দুমিনিটের বয়ফ্রেন্ডকে।

তুমি ওকে কিসি করছো?

হুম,দূর থেকেই কিসি করছি,সামনাসামনি তো করতে পারবো না,তাই!

বেগানা ছেলেকে দূর থেকেই কিসি করছো,আর আমাকে তো একদিনও দূর থেকে কিসি করলে না,কাছে থেকেও করোনি।

আরে বুঝেন না।ক্রাশ ও আমার,দুই তিনটা কিসি এমনিতেই দেওয়া যায়,কিন্তু আপনার মতো লম্বুকে কিস করতে গেলে আমাকে চেয়ারের উপরে উঠতে হবে, দ্যান কিস করতে হবে!

তাহলে চেয়ারের উপর উঠেই করো।’

-এসব আপনি কি বলছেন,মাথা খারাপ নাকি?

নাহ!আসলে কিসি খেতে মন চাইলো আরকি।

তাহলে আপনার ওই গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।

আমার গার্লফ্রেন্ড তো তুমিই।দাও না একটা…..

চুপ করুন।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!!!

উনি রেগে আমার গাল চেপে ধরে বললেন, শোনো তুমি শুধু আমারই, আমারই থাকবে।সবসময় থাকবে,আজীবন থাকবে।আর তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে মিথ্যা কথা বলবে না,আমি জানি এগুলো তুমি ইচ্ছে করেই বলো।তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।সো,তুমি আমারই থাকবে।

আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন,বাজে কথা বন্ধ করুন।আমি এসব পছন্দ করিনা।সবসময় আপনার জোরাজুরি ভালো লাগে না।

জোরাজোরি করছি না,জাস্ট তোমার হতে চাইছি।

আমি মুখ ঘুরিয়ে প্রচন্ড রেগে বললাম, ছাড়ুন আমায়।লাগছে….কষ্ট হচ্ছে!

তুমি আমার।আর আমার দেওয়া কষ্ট তোমায় সহ্য করতে হবে। কজ তুমি আমার।

আমি আপনার না।শুনুন, আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে অন্যকাউকে ধরুন।আমিও আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে থাকি।এতদিনে নিশ্চয়ই আপনার থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গিয়েছে!তাহলে এবার মুক্তি দিন আমায়।

উনি এবার আমার গাল ছেড়ে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বললেন, তুই আমার।এবং তুই আমারই থাকবি সবসময়। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।আমি দেবো না।আমি মরে যাবো তাও তোকে আমারই থাকতে হবে। থাকতে হবে মানে থাকতেই হবে।

আপনার বিহেভ ঠিক করুন আগে।নইলে কোনো মেয়েই থাকবে না।আমি তো থাকবোই না!জাস্ট পালিয়ে যাবো।

উনি নিজের চুল দুহাতে খামচে ধরে বিছানার একপাশে বসলেন। বললেন,ওকে ওকে।আমি আর খারাপ বিহেভ করবো না।বাট তুমি প্লিজ এসব কথা বলবে না।বিকজ আই লাভ ইউ,আই রিয়েলি লাভ ইউ খুশবু।তোমাকে ছাড়া কিন্তু আমি কিছু ভাবতে পারিনা।তুমি প্লিজ এসব ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না।

উনার কথায় আনমনা হয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম। ফর্সা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। লাল হয়ে আছে চোখগুলো, যেন কি কষ্ট চেপে আছেন।চুলগুলো এলোমেলো ভঙ্গিতে হাওয়ায় দুলছে।হলুদ আলোয় উনাকে কেমন সুন্দর দেখাচ্ছিলো। হুম,অদ্ভুত সুন্দর, এর আগে এতোটা সুন্দর উনাকে লাগেনি।দুচোখের গভীরে ভালোবাসার ছাপ।অদ্ভুত ভাবে ওই চোখগুলো যেন বলছে,উনাকে ছেড়ে না যেতে।উনার পাশে থাকতে।আচ্ছা,ছেলেরা কাঁদলে ওদেরকে কি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লোকটা মনে হয়?হয়তো হয়!নইলে আমার এরকম লাগছে কেন?

আমি অদ্ভুত ভাবে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনার পাশে বসে মুখটা উঁচু করে চোখগুলো টিস্যু দিয়ে মুছতে লাগলাম।

তারপর ফিরে আসার জন্য উঠে দাঁড়াতেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন, প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিও না,আমি নিতে পারছিনা!

আমি উনার হাত কোমড় থেকে ছাড়িয়ে কাটাকাটা গলায় বললাম, নাটক বন্ধ করুন প্লিজ।বলেই উনাকে তাচ্ছিল্য করে ঘুরে দাঁড়াতেই উনি আমার ওড়না টেনে ধরলেন।বললেন, নাটক করছি না আমি।

তাহলে এসব বন্ধ করুন।রাতারাতি এতো প্রেম হয়ে গেলো আমার প্রতি আপনার? আমার তো ডাউট হচ্ছে।

কিসের ডাউট?

আমাকে কিস করার জন্য এইসব, তাইনা?

যা করার সবসময় কি আমিই করবো?তুমি কখনোই আমাকে….

দে..খুন…সবসময় আপনার……

চুপ….একদম… প্লিজ এক বার।জাস্ট একবার তুমি… কেমন ঘোর লাগা কন্ঠ উনার!

উনার নেশাভরা কন্ঠে আমি কাঁপতে লাগলাম।দুহাত দিয়ে ঠেলে উনাকে সরিয়ে দিয়ে গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বেরিয়ে যাওয়ার আগে পেছন ফিরে দেখি উনি দুহাতে মাথা চেপে ধরে মুখ নিচু করে বসে আছেন।দেখলে মনে হবে যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।উনি ছলছল চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।



উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কেমন লাগলো। একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম ঘর থেকে।নিজের কাছে নিজেকেই অচেনা লাগছে।কেন উনাকে নিজের করে নিতে এতোবার ভাবতে হচ্ছে আমায়?উনাকে ভালোবাসা স্বত্বেও কেন বলতে পারিনা আমি?উনি তো নিজের ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করে ফেলেছেন,আমি নিশ্চিত যে উনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই,যদিও উনার মুখেই শোনা!তাও কেন আমি সহজ হতে পারছিনা?এই সহজ হবার বিষয়টাতে সবসময় আমিই কেন পিছিয়ে থাকি?কি করবো আমি?উনার এতো কষ্ট আমি কেন মুছে দিতে পারছিনা?
খেয়াল করে দেখি আমার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।

দু’চোখ মুছে পা বাড়ালাম সাদাফ ভাইয়ার রুমে।গিয়ে দেখি ওরা ঘুমুচ্ছে,অবেলার ঘুম।এই সন্ধ্যারাতে কেউ ঘুমায় নাকি?আপুদের রুমে যাওয়ার ইচ্ছে হলো না।পা ঘুরিয়ে হাঁটতে লাগলাম বাইরের দিকে।একটু প্রকৃতির কাছে যাওয়ার ইচ্ছে হলো, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য মনটা আকুপাকু করছে।

ভাবলাম রিসোর্টের বাইরে গিয়ে একটু হেঁটে আসি।তার আগে রুমে একটু উঁকি দিয়ে আসলাম।দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখি,উনি আগের মতোই উস্কুখুস্ক মেরে বসে আছেন।চুল এলোমেলো, চোখ লাল,গড়িয়ে পড়ছে পানি।দেখে আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম নিজের অজান্তেই। আমার অবচেতন মন হয়তো এটাই চেয়েছিলো।

উনি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমাকে ছেড়ে যাবে না প্লিজ,পাগল হয়ে যাবো আমি তাহলে।

আপনি চুপ করুন তো।সিরিয়াস মুডটা বাদ দিয়ে এখন ঘুমান।

তাহলে বলো আমাকে ছেড়ে পালাবে না?

আমি মজা করে বললাম, আমি আপ-
নার মতো লম্বুকে নিয়ে পালাবো নাকি?একা একাই পালাবো।

উনি অস্ফুট স্বরে কি যেন বললেন, তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমিয়ে কাদা!!!

এটা কি হলো?ঘুমালো কখন গুন্ডাটা?ওহহহ,,বলেছিলো তো উনি ঘুমাবে, সেই ঘুম এখন?আমাকে তো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তাই আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে উঠালাম।উনি আমার কোলে মাথা রেখে বললেন, ডিস্টার্ব করবেনা,আমি ঘুমাবো।

শুনুন, আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি না।এসব ন্যাকামি বন্ধ করুন।আপনি ঘুমান আপনার মতো, আমাকে ছাড়েন,ভালো লাগছে না এসব ন্যাকামি।আর…

এটুকু বলতেই উনি আমার ওড়নাটা সরিয়ে পাগলের মতো গলায়, মুখে চুমু দিতে লাগলেন।

আচমকা আমি ফ্রিজড হয়ে গেলাম।হুঁশ ফিরতেই আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।ওড়নাটা গায়ে জড়িয় উঠে দাঁড়াতেই উনি একটান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন আমায়।।

উনার চোখের দৃষ্টি দেখে ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপাকাঁপি করছে।লাল টকটকে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে,বেশ সুন্দর লাগছে যদিও।আমার ওড়নাটা
আবারও সরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে উনার রাগ মেটাচ্ছেন।গলায়,গালে,মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছেন।

এবার আমি আর আমার রাগ চেপে রাখতে পারলাম না।প্রচন্ড এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম উনাকে।উনি আবারও এগিয়ে আসলে আমি প্রচন্ড জোরে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলাম।পুরো পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসে গিয়েছে। গাল জ্বলছে বোঝাই যাচ্ছে।

উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।


আমি চিৎকার করে বললাম, এসবই জানেন আপনি। আপনার কাছ থেকে এসবই আশা করা যায়।আর ঠিক এই কারণের জন্যই আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই।নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন এতদিন,আমি কিছু বলিনি, বাঁধা দিইনি।কিন্তু আজ আপনি সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছেন।
এর জন্য আপনাকে চাইলেও ক্ষমা করতে পারবো না।

উনিও বললেন, তোমার ক্ষমা আমি চাই না।আমি শুধু তোমাকে চাই,আর কাউকে না।তোমাকে আমারই থাকতে হবে। সবসময়ের জন্য।নইলে বেঁধে রাখবো!!

এরকম লো ক্লাস মেন্টালিটির লোকের সাথে থাকতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।বলেই আরও একটা ঠাস করে থাপ্পড় মারলাম।

উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন,আমাকে মেরে ফেললেও সমস্যা নেই,কিন্তু আমারই থাকতে হবে।বলেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলেন।

আমি উনাকে সরিয়ে একরাশ ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম উনার দিকে।তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম বাইরে।

সোজা রুম থেকে বেরিয়ে রিসোর্টের বাইরে চলে এলাম।দূরের পাহাড়গুলোর দিকে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে মানুষজন নেই।কুয়াশারা ধোঁয়ার মতো উড়ে বেড়াচ্ছে,অন্ধকার লেগে আছে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে।


রিসোর্ট থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি আমি।তাও ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।রাস্তার পাশের একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে পড়লাম।গলা শুকিয়ে কাঠ,হঠাৎ করেই প্রচন্ড পানি খাবার ইচ্ছে হচ্ছে।এরকম যে একটা আস্ত নদীর পানি খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।চুলগুলো হাতখোপা করে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।

হঠাৎ করেই কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে।অন্ধকারে কেউ আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। কেউ একটা রুমাল আমার মুখে চেপে ধরায় আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here