#হলুদ_খামে
#পর্ব_৪
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
এবার আমি তার কাঁধে আলতো ছুঁয়ে দিতেই সে পেছন ফিরে আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। তার ঐ চাহনি আমাকে প্রতি নেনো সেকেন্ডেই লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। আমি তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো- “দূরে থাকুন, কাছে আসবেন না আমার। আমি চিৎকার করবো কিন্তু।”
তার হাতের ধাক্কায় কিছুটা পিছিয়ে গেলাম আমি। বুঝতে পারছি না তার আমাকে এমন কথা বলার মানে কি? আমি তো তার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আরেকটু সামনে এগিয়ে তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে বললো-
আপনাদের মতো ছেলেদের জন্যই মেয়েরা কোথাও নিরাপদ না। ছিঃ লজ্জা লাগে না আপনার? ভাগ্যিস সেদিন আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম, নইলে আমিও কোনো পত্রিকার হেডলাইন হয়ে পরে থাকতাম। খবরদার আর এক পা-ও এগোবেন না, নইলে আমি চিৎকার করবো।
তার এমন উদ্ভট কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। কি বলছে এই মেয়ে? তাকে তো আমি সেদিন হেল্প করার জন্যই… তাহলে কি কাল রাতের কথা তার মনে নেই? মোবাইলের আলো মেয়েটির মুখে ফেলাতে আমাকে বোধহয় অন্ধকারে দেখেনি। সে হিসেবে ভালোই হয়েছে, আমাকে আর কষ্ট করে ক্ষমা চাইতে হবে না। কিন্তু আমাকে ভুল বোঝার কোনো মানেই হয়না।
সে যাই হোক, তাকে এবার কথা না শোনালে আমার শান্তি হবে না। দু’চারটা কড়া কড়া বাক্য মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম, যখনই তাকে কিছু বলতে নিবো কোথা থেকে সেদিনের ঝর্ণার নিচে খেলতে থাকা মেয়েগুলি তাকে এসে নিয়ে গেলো।
সেবারও কিছু হলো না। মনটা আমার খারাপ হয়ে গেলো, সাথে রাগও ওঠেছিলো খুব। রাগে ফুসতে ফুসতে হোটেলের ভেতর ঢুকে গেলাম। সেদিন আর ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হলো না।
🍁
🍁
🍁
বিকেলে ছাদে উঠতেই আমার জলপরির দেখা পেলাম। মনে মনে আমি ভিষন খুশি। এবার আমি কিছু একটা করবোই করবো। সাদামাটা প্রস্তুতি নিয়ে তার পেছন এসে দাঁড়ালাম।
আশপাশ তাকিয়ে আর কাউকে দেখতে পেলাম না। যাক ভালোই হয়েছে, ভুল বোঝা বুঝির একটা সমাধান শান্তিতে করতে পারবো।
তার পাশে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়াতেই সে আমাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত আমার পাশ থেকে ছিটকে সরে যায়। আমাকে দেখে এভাবে ভয় পাওয়ায় আমি ভিষণ অবাক হয়ে গেলাম। মেয়েটা আমাকে কেনো ভয় পাচ্ছে তার কারন আমার অজানা।
কাছে গিয়ে তাকে শান্ত করতে যাবো তার আগেই সে মিলি নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। সাথে সাথেই পেছন থেকে একটি মেয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে চলে আসে। মিলি নামের মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার জলপরির হাত শক্ত করে ধরে।
— কি হয়েছে তানহা? তুই ওভাবে চিৎকার করছিলি কেনো? কে এই লোকটা?
মিলির কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমার জলপরিটার নাম তানহা। তা ন হা বার বার মনে মনে নামটা আওড়াতে থাকলাম। এর আগেও এই নাম আমি অনেকবার শুনেছি কিন্তু এতটা ভালো লাগেনি যতটা না এখন লাগছে। মনে হচ্ছে এ নাম আজ প্রথম শুনছি, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর নামটিই বোধহয় তানহা। মনে মনেই হেসে ফেললাম।
আমাকে মুচকি হাসতে দেখে, আমার জলপরি ইয়ে মানে তানহা বললো–
লজ্জা করে না আপনার? বেহায়ার মতো হাসছেন আপনি! মিলি তোকে বলেছিলাম না সেদিনের কথা। এই লোকটাই ছিলো সেদিন ঝর্ণার কাছে। নির্লজ্জের মতো আমার শরীর চোখ দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছিলো। আমার কাছেও আসতে চেয়েছিলো। ভাগ্য সহায় ছিলো আমার সেদিন আমি দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলাম নয়তো আমিও আজ ধর্ষিতার খাতায় নাম লেখাতাম। আজ সকালেও আমার সাথে কথা বলার বাহানা খুঁজছিলো।
তানহার কথায় আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার মুখের দিকে। সে কি বলছে এসব? আমি আর ধর্ষন? যেখানে আমি কিনা কোনো মেয়ের সাথে সেধে কথা পর্যন্ত বলি না সেখানে সে আমাকে…! হ্যাঁ মানছি সেদিন ওভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা আমার ঠিক হয়নি তাই বলে ধর্ষকের ট্যাগ দিয়ে দেবে?
আমার আবার রাগের উপর তেমন একটা কনট্রোল নেই। তানহার কথা শুনে আমার রাগে গা কাঁপছে। হাত দু’টো মুঠ করে তানহার দিকে এগিয়ে যেতেই সে আমাকে…
চলবে…