হলুদ_খামে #পর্ব_৫

0
383

#হলুদ_খামে
#পর্ব_৫
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

আমার আবার রাগের উপর তেমন একটা কনট্রোল নেই। তানহার কথা শুনে আমার রাগে গা কাঁপছে। হাত দু’টো মুঠ করে তানহার দিকে এগিয়ে যেতেই সে আমাকে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলে–

— আর কোনোদিনও যেনো আমার সামনে আপনাকে আমি না দেখি, বেহায়া ছেলে।

কি থেকে কি হয়ে গেলো আমি সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দু’হাত পকেটে মুঠ করে আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি।

মাথা ঠান্ডা করে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে মনে মনে কিছু দুষ্টু চিন্তা করতে লাগলাম। তবে আজ যা হলো, সেটা মোটেও হওয়া উচিত হয়নি।

এর শান্তি তোমাকে পেতেই হবে মিস তানহা। তুমি জানোনা তুমি কি করেছো, সি ইয়ু সুন বেবি।
🍁
🍁
🍁

রাতে হোটেলের দোতলার শেষের রুমের পাশে পায়চারী করছি আমি। তানহার রুম খুঁজে পেতে একটু সময় লেগেছে, তবে পেয়েছি তাতেই আমি খুশি। আমার পাশের রুমের পরই তানহার রুম। উৎ পেতে আছি কখন তানহা একটু বের হবে। আমার অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে রুমের দরজা খুলে গেলো।

দরজার ভেতর থেকে চিকন আলো বাড়ান্দায় এসে ঠেকছে। তাতেই বুঝতে পারলাম বাহিরে আসা মেয়েটি তানহা ছাড়া আর কেউ নয়। হাতে ফোন নিয়ে খুব সম্ভবত ফেসবুকিং করছে। নিঃশব্দে তার কাছে এগিয়ে গেলাম। পেছন থেকে এক হাতে তার মুখ চেপে ধরে অপর হাতে তার দু’হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে হোটেলের ছাদে নিয়ে যেতে থাকলাম আমি।

এক প্রকার ধস্তাধস্তি শেষে ছাদে এসে তানহাকে ছেড়ে দিলাম আমি। ছেড়ে দিতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে যেই না চিৎকার করতে যাবে তখনই পকেটে থাকা চাকুটা বের করে তানহার মুখের সামনে এনে ধরলাম। চেখের সামনে এভাবে কাউকে নাঙ্গা চাকু ধরে রাখতে দেখে যে কারোই ভয় পাওয়ার কথা। তানহাও তার ব্যতিক্রম হলো না, চিৎকার করতে চেয়েও ভয়ে চুপষে গেলো।

আমি আস্তে আস্তে তানহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে তাল মিলিয়ে সেও দেয়ালের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তার এই করুন অবস্থা দেখে আমার খুব হাসিই পাচ্ছে বটে যদিও তাকে হার্ম করার কোনো সুস্থ ইচ্ছে আমার নেই।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আরেকটু জব্দ করলে মন্দ হয় না।

তানহার একদম কাছে এসে আমার দু’হাত তার পাশের দেয়ালে রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। তানহার ঠোঁট অনবরত কাঁপছিলো। চোখের সবটা জুড়ে আমার জন্য শুধু মাত্র ভয়টাই দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। নিঃশ্বাস খুব দ্রুত ফেলছিলো। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো, তবে বের হবার কোনো রাস্তা আমি তাকে দেইনি।

হাসি চেপে রেখে, তাকে বললাম–

আমাকে বেহায়া ছেলে বলেছিলে না? তাই বেহায়াপনা করতেই তোমাকে ছাদে নিয়ে এলাম। আমার বেহায়াপনা দেখবে না… মিস তানহা?

আমার কথায় তানহা আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো। নিঃশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুতগতিতে চলছে তানহার। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমাকে বললো–

— কে কেনো করছেন এমন? আমি কি করেছি আপনাকে? আমার সাথেই কেনো…

তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম–

ওই যে, নির্লজ্জ আমি। লজ্জা নেই আমার, তাইতো এতোকিছু হবার পরও তোমার সামনে আসতে পেরেছি।

তানহা এবার বোধহয় কেঁদেই দেবে। একহাতে তার মুখের সামনের চুল কানের পেছনে গুজে দিয়ে বললাম– সব ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করতে এসেছি আজ!

চুল থেকে হাত সরিয়ে নিতেই তানহা আমাকে ছাড়িয়ে দৌড়ে পালাতে চাইলে তার ওড়নাধরে আমি টান দিলাম। ভদ্র মেয়েটা ওড়না ছাড়া নিচে নামবেই না পন করে নিয়েছে হয়তো, তাই তানহার ওড়না ধরে টান দিতেই সে সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলো। তানহার হাত শক্ত করে ধরে আমি টেনে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে এলাম। এক কোনায় দাঁড় করিয়ে আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর…

— তারপর? তারপর কি করেছিস তুই ভাইয়া?

তা.. তারপর আর কি? তানহাকে বুঝিয়ে বললাম সে আমাকে ভুল বুঝেছে। সেদিনের সব সত্যিটা তাকে খুলে বললাম।

আজ অনেক হয়েছে মালিহা, এবার তুই যা। যতটুকু সময় নষ্ট করে তুই কফি বানিয়ে এনেছিস তার চেয়ে আরো বেশি সময় আমি নষ্ট করেছি তোর জন্য। আবার যেদিন কফি বানিয়ে আনবি সেদিনই বাকি ঘটনা শুনতে পাবি। এখন যা আমার চোখের সামনে থেকে।

— তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি? যাই হোক, তোদের লাভ স্টোরি যতটুকু শুনলাম তোর মুখ থেকে, তাতে মনে হলো… আমার ভাইটা সত্যিই একটা লুচু।

তবে রে, তোকে আজকে দেখাচ্ছি দাঁড়া…..
🍁
🍁

সেদিন ছাদে আমার কি হয়েছিলো কে জানে। আমি প্রতি মুহূর্তে এক গভির ঘোরে চলে যাচ্ছিলাম। যতবার তোমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম ততবারই আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো কোনো এক অদ্ভুত টান আছে আমাদের। মনে হচ্ছিলো কোনো এক অদ্ভুত শক্তি আমাকে তোমার দিকে টানছিলো। সেই প্রথম স্পর্শের কথা আমি আজও ভুলি নি জান। সেই প্রথম স্পর্শ করার অনুভূতিটা আজও মনে শিহরণ জাগায়। সেদিন তোমাকে সত্যিটা বলে দিবো ভেবে যত তোমার কাছে আসছিলাম ততই অদ্ভুত এক মায়ায় আটকে যাচ্ছিলাম।

আমি কাছে আসতেই তানহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কাঁপতে থাকা ঠোঁট আর বন্ধ চোখ দেখে আমি সত্যিই সেদিন বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম। না চাইতেও তার কাঁপতে থাকা ওই ঠোঁটের নেশায় ডুবে গিয়েছিলাম আমি। থাকতে পারিনি আমি সেদিন তানহার ঠোঁটকে না ছুঁয়ে।

সেদিনও বলা হয়নি তানহাকে, আগেই সে আমাকে খারাপ ভাবতো আর সেদিনের পর তো আরো বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিলাম আমি তার চোখে। পরদিন বন্ধুদের নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে বের হলাম, কিন্তু পাহাড় দেখার পরও কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলো না আমার মন। বার বার কাল রাতের কথা মনে পড়ছিলো।

তানহা কি আমাকে সত্যিই খারাপ ভাবলো? এখন কি করছে কে জানে? তানহার সাথে আরেকবার কথা বলতে খুব করে ইচ্ছে করছে আমার। কাল যা হলো তা আমি ইচ্ছে করে…

দুপুরে হোটেলে ফিরেই জানতে পারলাম কাল তানহা বান্দরবান থেকে চলে যাবে। পাঁচদিনের সফর এসেছিলো আজই তাদের শেষ দিন। শুনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। জানিনা কি হয়েছিলো, কেনো তার চলে যাওয়াতে আমার মনটা এত খারাপ হয়েছিলো সেদিন বুঝিনি।

আমি বান্দরবান আরো দু’দিন থাকবো অথচ তানহা কালই চলে যাবে? না কিছুতেই তাকে যেতে দেবো না। মনে মনে শক্ত পরিকল্পনা করতে লাগলাম কি করে তাকে এখানে আটকে রাখা যায়।

সেদিন বার বার তানহার সাথে একটু দেখা করার সুযোগ খুঁজছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। না বাড়ান্দায় না ছাদে আর না বাগানে কোথাও তাকে একটি বারের জন্যও বের হতে দেখলাম না। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, একবার বাহিরে বের হলে কি এমন ক্ষতি হয়? ইচ্ছে করছে ভেতর থেকে টেনে নিয়ে আমার সামনে মাসের পর মাস দাঁড় করিয়ে রাখি।

ঠিক সন্ধ্যে ছুঁই ছুঁই, বাড়ান্দায় পায়চারী করছি আমি। এখনই সেই রুম থেকে কেউ না কেউ বের হবেই। প্রায় মিনিট পাঁচ পায়চারী করতেই ভেতর থেকে কেউ একজন বের হলো। দরজা খোলার শব্দ হতেই আমি দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।

কেউ একজন আমার কাছে এগিয়ে আসছে বুঝতে পেরে আমি ফোন এদিক সেদিক নেড়ে বোঝাতে চেষ্টা করছি এখানে নেট পাওয়া যাচ্ছে না। একবার ডানদিকে একবার বামদিকে উপরে নিচে ফোন নেড়ে নেড়ে সেখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই একটি মেয়ে কন্ঠ আমাকে বললো–

— এই যে শুনছেন? না মানে একটা হেল্প করবেন প্লিজ? আমরা না খুব বিপদে পড়েছি। যদি একটু আমার সাথে রুমে আসতেন…. প্লিজ একটু সময় নিয়ে আসুন না!?

হিসেব অনুযায়ী যা ভেবেছিলাম তাই হচ্ছে, তবে মেয়েটি মিলি কিংবা তানহা দু’জনের মধ্যে কেউই নয়। যাক গে তাতে আমার কি, সেই রুমের ভেতরে ঢুকাই হচ্ছে আমার উদ্দেশ্য।

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে তার প্রশ্নের সাথে সহমত বুঝিয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলাম। কাঙ্খিত রুমের ভেতরে ঢুকতেই আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠলো।

ভেতরে গিয়ে আমি যা দেখতে পেলাম তাতে আমার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো । আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে…

চলবে…

(গ্রামের বাড়িতে ছিলাম এতোদিন, নেট ছিলোনা সেখানে তাই দেরি করে গল্প দিতে হলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here