হলুদ_খামে #পর্ব_৬ #Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

0
421

#হলুদ_খামে
#পর্ব_৬
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

ভেতরে গিয়ে আমি যা দেখতে পেলাম তাতে আমার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো । আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার জলপরি। পাশে মিলি নামের মেয়েটিও আছে। আমাকে দেখে তানহা যে খুশি হয়নি সেটা তার চেহারা দেখে ঢের বোঝা যাচ্ছে।

মিলি আর তানহা দু’জন কানাকানি করে কি যেনো বলছে। তাদের দু’জনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির মুখোমুখি আমি আর হতে পারছি না। ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে আমাকে নিয়ে আসা মেয়েটিকে বললাম–

বলুন আমাকে এখানে কেনো ডেকে নিয়ে এসেছেন? আসলে আমি একটু ব্যস্ত…

আমার কথার উত্তরে মেয়েটি একবার উপস্থিত সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো–

— প্লিজ আমাদের হেল্প করুন। আসলে সন্ধ্যা থেকেই হুট করে ওয়াশরুমে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। বিকেলে তো সব ঠিকই ছিলো কিন্তু এখন কি যে হলো! মেনেজারকে ফোন দিয়েও পাচ্ছিনা। নিচে নেমে কাউকে ডেকে আনবো তখনই আপনার দেখা পেলাম।

আমার পরিকল্পনা সফল হয়েছে বলে মনে মনে খুব খুশিই হলাম। রেহানকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিয়ে বুক ফুলিয়ে তানহাদের ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষন পানির কল নেড়ে চেড়ে তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে’ আমি এ কাজে দক্ষ। চিন্তিত মুখ নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করার ভঙ্গিমা করছি।

আমাকে দেখে তানহা ঐ মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো–

— আর কাউকে পাস নি? এই লোকটাকেই তোর ডেকে নিয়ে আসতে হলো?

তানহার কথা শুনে মিলি নামের মেয়েটিও তার সাথে সায় দিলো। আমাকে ডেকে নিয়ে আসা মেয়েটি বললো–

এই ভদ্র লোককে যে পেয়েছি এবং সে আমাদের সাহায্য করতে রাজি হয়েছে তাতেই আমাদের উচিত তার পা ধরে বসে থাকা, তা না তুই সেখানে নাক ছিটকাচ্ছিস?

— হুহ ভদ্র লোক মাই ফুট!

তাদের সব কথা যে আমি শুনতে পাচ্ছি সেটা আর তাদেরকে বুঝতে দিলাম না। এদিক সেদিক তাকিয়ে তানহাকে উদ্দেশ্য করে বললাম–

এই যে মিস.. আপনি, একটু এদিকে আসুন। আপনাকেই প্রয়োজন আমার, না মানে একজনকে প্রয়োজন এখানে।

আমার কথা শুনে তানহার চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো। বাকি মেয়েদের দিকে তাকাতেই তারাও আমার কথায় সায় দিয়ে তানহাকে যেতে বললো। অগত্যা উপায় না পেয়ে কপাল কুচকে তানহা আমার কাছে আসতেই আমি হেঁচকা টানে তাকে ওয়াশরুমের ভেতরে নিয়ে এলাম। তানহার হাত ধরাতে সে বারুদের মতো ক্ষেপে গিয়ে আমাকে বললো–

— কি হচ্ছেটা কি? এভাবে টেনে নিয়ে এলেন কেনো আপনি? আর এখানেই বা কেনো এসেছেন?

ও মিস, আমি সেধে সেধে এখানে আসিনি। আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আর… আর কি শুনছি আমি এসব? কাল নাকি তুমি চলে যাবে?

— আমি যাবো কি যাবো না সেটা আপনাকে কৈফিয়ত কেনো দেবো? কে হন আপনি আমার? যে কাজের জন্য আপনাকে ডাকা হয়েছে সেটা করে বিদায় হন এখান থেকে। আপনার চেহারা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

আমি আমি কে হই… দেখো! (তুমি এভাবে বুঝবে না। তোমাকে ভিন্ন ভাবে বোঝাতে হবে’)

রেহানকে আরেকটা মেসেজ দিয়ে ফোন ভালো করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। ওয়াশরুমের ঝর্ণার কল ছেড়ে তানহার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানহা চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো–

— কি করতে হবে বলুন?

মুচকি হেসে তাকে বললাম–

আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।

বলতে না বলতেই ঝর্ণা দিয়ে দ্রুতগতিতে পানি পড়তে থাকলো। পানির বেগে তানহার সম্পূর্ন শরীর ভিজে গেলো। ঠিক সেদিনের দেখা জলপরিটার মতো। ভেজা চুল, ভেজা শরীর, কাঁপতে থাকা ঠোঁট, কাজল কালো চোখ। আমি আবারও হারিয়ে গেলাম তানহার মাঝে।

তানহাকে রেখে গা ঝেড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দৌড়ে ছাদে চলে এলাম। আমাকে দেখে রেহান বললো–

— কাহিনী কি বলতো? আমাকে ছাদে এসে দোতলার পানির পাইপ বন্ধ করতে বললি কেনো?

রেহানের এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবো তা আমার জানা নেই। মুচকি হেসে বললাম– অন্য কোনো একদিন বলবো। তুই নিচে যা, আমার কাজ আছে।

🍁
🍁

ছাদের রেলিংয়ে দু’হাতের ভর রেখে ভাবছি কি করে তানহাকে আটকে রাখা যায়। কাল যে করেই হোক তানহাকে যেতে দেয়া যাবে না। কিন্তু তাকে আটকে রাখার মানে কি? আমি কেনো তানহাকে নিয়ে এতো বারাবারি করছি? ওয়েট… কি হচ্ছে আমার? আমিই কি সেই আল-মানাফ আহমেদ তামিম? প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে তো আমি দু’চোখে দেখতেই পারি না সেখানে তানহার কথা মনে হতেই আমার এমন কেনো হয়? মনে হয়… মনে হয় সময়টা থেমে গেছে। মনে হয় সে ছাড়া আমার চারপাশে আর কিছুই নেই। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। আরিফের কাছ থেকে শুনেছিলাম এসব নাকি ভালোবাসলে তবেই হয়। তাহলে কি…! না না এতো দ্রুত কি ভালোবাসা হয় নাকি? তানহার সাথে পরিচয় তো আমার মাত্র পাঁচদিনের। আমাকে সময় নিতে হবে’। কিন্তু যাই হয়ে যাক, তানহাকে আমি এখান থেকে কিছুতেই কাল যেতে দেবো না।
🍁

সকালের নাস্তা করে বাস স্টপে এসে বসে আছি আমি। মুখে মাফলার টেনে মাথায় ক্যাপ পড়ে চায়ের দোকানের পুরোনো কাঠের ব্যাঞ্চটায় বসে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি চলে এসেছে আমার। পকেটে ফোন, মোটা মানিব্যাগ আর শরীরের কাপড় ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে আসিনি। রেহানদের বলে দিয়েছি তারা যেনো সাতদিন শেষ হতেই চলে যায়। আমি সময় সুযোগ বুঝে ফিরে আসবো।

আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে তানহা বাস স্টপে এসে পৌছেছে। ইশ কি অপেক্ষাটাই না করালো। শীতের সকালে পাহাড়ী অঞ্চলে এভাবে বসে থাকতে কারই-বা ভালো লাগে? তবে তানহাকে দেখে আমার সব শীত উবে গেলো। শরীরে কেমন যেনো এক উষ্ণতার অনুভব হচ্ছে।

মুখের মাফলারটা আরেকটু ঢেকে আড় চোখে একবার সেদিকে তাকালাম। তানহার সাথে তার গ্যাং-ও আছে। মানে মিলি সহ আমার কাছে হেল্প চাওয়া মেয়েটা আর আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছি। সবাইকে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো? এখন হিসেব অনুযায়ী তানহার সাথে যদি বসতে না পারি তখন কি হবে?

মনে মনে চোখ বন্ধ করে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছি আমি যেনো তানহার সাথেই বসতে পারি। চোখ খুলতেই দেখি হাতে ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে তানহা কেমন সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমাকে চিনে ফেললো নাকি? এখন কি হবে? ও গড হেল্প মি। ভয়ে ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দোকানদারকে এক কাপ চা দিতে বলবো ঠিক তখনই…..

চলবে…

(বর্তমান পরিস্থিতিতে গল্পে নূন্যতম রোমান্টিকতা আনতে নিজের কাছেই ঘেন্না লাগছে। দেশের এ অবস্থায় রোমান্টিক গল্প লেখা আসলেই বেমানান। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভালো না লাগলে দয়া করে গল্পটি ইগনর করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here