তুই_আমারই_থাকবি💜 #Esrat_Jahan💜 #Part_34

0
181

#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_34
!
‘রাঙ্গামাটির খুব সুন্দর একটা নিরিবিলি জায়গায় গেলাম আমরা।চারপাশে প্রচুর পাহাড়,মেঘেরা উড়ছে সবর্ত্র!আকাশ গাঢ় নীল।মেঘেদের ছোঁয়া যাচ্ছে,ভীষণ সুন্দর একটা অনুভূতি । এর আগে যদিও আমি রাঙ্গামাটি আসিনি,তাও পাহাড় সবসময়ই আমার পছন্দ ছিলো। সিলেটে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে আমার।তাও রাঙ্গামাটির এই পাহাড় সিলেটের থেকে আলাদা মনে হচ্ছে আমার কাছে।

পাহাড়ি রাস্তাগুলো কেমন আঁকাবাকা,সরু।সারাদিনের জার্নির পর রিসোর্টে এসেই কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে পরেছিলাম আমি আর আবরার মিয়া।

আপু আর আরহাম ভাইয়া এসেই গভীর ঘুম দিয়েছে,আনিকার রাগ ভাঙ্গাতে সাদাফ ভাইয়া ব্যস্ত।বেচারি নিজের চুলগুলোতে কালার করতে না পারায় সারারাস্তা মুখ ফুলিয়ে এসেছে।ওরা নিজেদের রুমেই আছে।সাদাফ ভাইয়া সারাদিন বেবি বেবি করে ওর সাথে লেগেই থাকে। আর আনিকা বেচারি কিছু করতে না পেরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে থাকে।

যাইহোক, হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকটা দূরে চলে এলাম।সরু একটা রাস্তা এঁকেবেঁকে উপরে উঠে গিয়েছে।হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পরেই আমি একটা পাথরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে গেলাম,সেসময় আবরার গুন্ডাটা ধরে ফেললো।গা জ্বালানো বিরক্তিকর হাসি টেনে বললেন, তোমাকে কোলে নিতে হবে দেখছি,নইলে তো হাত-পা ভেঙে বসে থাকবে!

হাত-পা যাতে না ভাঙ্গে সে ব্যবস্থা করুন তাহলে।

বেশ তো,কোলে নিয়ে হাঁটি!

আমি হেসে বললাম, সেদিনের মতো আবার পড়ে যাবেন,তার চেয়ে ভালো একটা গাড়ি টারির ব্যবস্থা করুন।

এই সরু রাস্তায় গাড়ি পাবো কোথায়?

আমি কি জানি!

উনি চিন্তিত মুখ নিয়ে এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করতে লাগলেন।আর আমি একটা পাথরের উপর পা উঠিয়ে বসে আছি।পা দুটো ভীষণ ব্যথা করছে।

কিছুক্ষণ পর একটা আদিবাসী ছেলে সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনি আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো।আমি ছেলেটিকে ডেকে আনলাম নিজের কাছে।সে এসে কেমন ভাঙ্গা গলায় বললো, কি?

আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি।

কি সমস্যা?

তারপর আমি ছেলেটিকে মোটামুটি কিছু একটা বললাম।জিজ্ঞেস করলাম রিসোর্টে পৌঁছাতে কোনো রিকশা পাওয়া যাবে কিনা।

কিন্তু ছেলেটি বললো, রিকশা পাওয়া যাবে না।রিসোর্টে পৌঁছাতে বিশ-পঁচিশ মিনিটের মতো লাগতে পারে।আমরা ওর সাইকেলটা ব্যবহার করতে পারি।কিন্তু সমস্যা একটাই,আমি সাইকেল চালাতে পারি না।

আমাকে আর আদিবাসী ছেলেটাকে কথা বলতে দেখে এতক্ষণে উনি আসলেন কাছে।আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বললো, এ কে?

একটা ছেলে?

এ কি করে এখানে?

কথা বলছে আমার সাথে।

কিসের কথা?

আমার আর ওর গভীর আলাপ-সালাপ চলছে।

তুমি ওকে চেনো?

আমি মজা করে বললাম, চিনি তো।ও আমার বয়ফ্রেন্ড টাইপ।

বাহ।এখানে আসতে না আসতেই এই আদিবাসী তোমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো?

আমি রেগে বললাম, আপনার সমস্যা?সমস্যা থাকলে ভাগেন এখান থেকে।

উনি কিছু বলতে যাবার আগেই আদিবাসী ছেলেটা অবাক হয়ে বললো,সেকী তোমরা ঝগড়া করছো কেন?ঝগড়া করা ভালো নয়।

ওকে, আর ঝগড়া করবো না।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি সাইকেল চালাতে পারেন?

উনি অবাক হয়ে বললেন, কেন?

না মানে, ওর সাইকেল আছে তো।এটা দিয়েই আমরা রিসোর্টে পৌঁছাতে পারতাম।

ওহহ,আমি পারি।

রিয়েলি?কোথা থেকে শিখলেন?

উনি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, পরে বলবো।

ঠিক আছে,চলুন।

তারপর আদিবাসী ছেলেটার কাছ থেকে ওর সাইকেলটা নিয়ে চড়ে বসলাম।ছেলেটার নাম রক্তিম ত্রিপুরা! ছোট ছোট চোখ,আর চ্যাপ্টা নাক,দেখতে বেশ কিউট।ওর সাইকেলটা ধার হিসেবে নিলাম, ও পরে গিয়ে সাইকেল নিয়ে আসবে।যাইহোক,উনি সাইকেলের সামনের সিটে বসলেন আর আমি পেছনের একরত্তি স্ট্যান্ডে কোনোমতে বসলাম।উনি প্যাডেল ঘুরিয়ে সাইকেল চালাতে লাগলেন।উনাকে দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে,এতবড় লোক সাইকেল চালাচ্ছে এর চেয়ে বেশি মজার জিনিস আমি আর দেখিনি।

উনি আমাকে হাসতে দেখে পেছন ফিরে বললেন,হাসছো কেন?

আপনাকে দেখতে জোকার জোকার লাগছে।

রিয়েলি?আর তোমাকে আমার প্রেমিকা লাগছে বেবি।

কিহ?চোখ গোল গোল করে অবাক হয়ে বললাম।

রিয়েলি বেবি।তোমাকে আজকে সত্যিই জোলির মতো লাগছে।লাভ ইউ সো মাচ,বলেই হু হা করে হাসতে লাগলেন।

আমি উনার পিঠে কিল দিয়ে বললাম,শয়তান, অসভ্য।

তাই নাকি বেবি?

আমি আপনার বেবি না।আপনার বাচ্চা হয়নি এখনো, নিজের বাচ্চাকে গিয়ে বেবি বলুন।দরকার হলে আপনার গার্লফ্রেন্ড বান্দরনিকে বেবি বলুন।আমাকে না।

তোমার বাচ্চা লাগবে সরাসরি বললেই হয়।এতো প্যাঁচিয়ে বলার কি দরকার?

উনার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেলো। উনার চুল টেনে ধরে বললাম, বাজে কথা বন্ধ করুন।

ওকে, এখন আমার বাচ্চাগুলোকে ছাড়ো।ব্যাথা পাচ্ছি।

মানে?কিসের বাচ্চা?

এইতো আমার চুল।

চুল আপনার বাচ্চা?

হুম, সকল পুরুষের কাছে তার চুল,দাঁড়ি,গোঁফ হলো তার সন্তানের মতো। বুঝলে?

আমি হা হয়ে বোকার মতো বললাম, হুম।



রিসোর্টে এসে নিজেদের রুমে চলে এলাম আমরা। গুন্ডাটা এসেই বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।বললো, আমি এখন ঘুমাবো বেবি।একটুও ডিস্টার্ব করো না বেবি।

এই আপনি বেবি বেবি বলা বন্ধ করুন।

শুনো আমার মুখ,আমি যা ইচ্ছা বলবো। সেটা তোমাকে বলতে হবে না।গট ইট!

অসহ্য।

একথা শুনে উনি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনো, তুমি তোমার ওই বয়ফ্রেন্ডকে ভুলে যাও,হুম।তুমি তো শুধু আমারই,তাই না?

বয়ফ্রেন্ড কিসের?

ভুলে গেলে?তোমার ওই দুমিনিটের আদিবাসী বয়ফ্রেন্ড!

ওহহ!ওর কথা বলছেন?

হ্যাঁ।

আহারে,ওকে কি করে ভুলি বলুন তো।কি সুন্দর কিউট ছেলে,উম্মাহহ,,দু মিনিট দেখেই ফিদা আমি।ও বসবাস করবে আমার মনে আজীবন। ভুলতে পারবো না আমি আমার দুমিনিটের বয়ফ্রেন্ডকে।

তুমি ওকে কিসি করছো?

হুম,দূর থেকেই কিসি করছি,সামনাসামনি তো করতে পারবো না,তাই!

বেগানা ছেলেকে দূর থেকেই কিসি করছো,আর আমাকে তো একদিনও দূর থেকে কিসি করলে না,কাছে থেকেও করোনি।

আরে বুঝেন না।ক্রাশ ও আমার,দুই তিনটা কিসি এমনিতেই দেওয়া যায়,কিন্তু আপনার মতো লম্বুকে কিস করতে গেলে আমাকে চেয়ারের উপরে উঠতে হবে, দ্যান কিস করতে হবে!

তাহলে চেয়ারের উপর উঠেই করো।’

চলবে…..

ভালো লাগলে নেক্সট দেবো ইনশাল্লাহ ❤।

গল্প ভালো না লাগলে এভয়েড করুন।দয়া করে বাজে মন্তব্য করবেন না।আমাকে আমার মতোই গল্পটা লিখতে দিন।আজকের পর্বটা ভিন্ন লাগছে হয়তো। 💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here