বসন্তের_ফুল🌺🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট৪৮

0
466

বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৪৮

দৃঢ়ভাবে কাঁধে কেউ স্পর্শ করতেই প্রেমা চমকে পেঁছন ফিরল।গভীর দৃষ্টি ছুঁড়ে বিপরীত ব্যক্তিটির দিকে৷ স্পর্শদাতার মুখটা তার চেনা-অচেনা দু’টোর মধ্যে পড়ছে। ভয় এবং সংকোচময় মুহুর্তে আঁটকে যায় প্রেমা। দু’পা পিছিয়ে গেলে,সেই আগুন্তকঃ প্রেমার কোমড়ে হাত রেখে কাছে টেনে আনে। প্রেমা চমকাতে গিয়েও চমকালো না,কারন এ স্পর্শ তার চেনা খুব করে চিনে!দৃষ্টি স্থির করে ফেলে সাথে সাথে
শ্বাসরুদ্ধকর কন্ঠে বলল,’অভ্র!

প্রেমার এতক্ষণের ভিতু চোখের চাহনিতে অভ্র বেশ মজা পায়। যখন প্রেমা চিনতে পারে শরীর কাঁপিয়ে হাসে।
-‘উফ্ চিনে ফেললে?
অভ্রের রসিকতায় প্রেমা অসন্তুষ্ট হয়।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাল।অভ্র ভ্রুকুঞ্চিত করে প্রেমাকে দেখে,তার মৃদু আওয়াজে বলল, প্রেমা রিলেক্স! আমাকে ভালো করে দেখো,এতক্ষণ তো মুখ দেখলা,এবার পুরো শরীর দেখো।
অভ্রের কথার মধ্যখানে প্রেমা একচোট অভ্র দেখে নেই, থেমে যায় সে।হঠাৎ ধম ফাটানো হাসিতে মেতে উঠে প্রেমা। হাসিমাখা স্বরে বলল, ‘তুমি লুঙ্গি পড়েছো? কেন? আবার মাথাটা গামছা দিয়ে বাঁধলে,মতলব কী?
প্রেমার প্রশ্নে অভ্র প্রেমাকে ছেড়ে দেয়,নিজের নকল দাঁড়ি তুলতে তুলতে বলল, ‘ তুমি তো বলেছিলে, তোমার মাঝি হতে।তাই লুঙ্গি, মাথায় গামছা বাঁধলাম।আর নকল দাঁড়ি লাগিয়েছি তোমার জন্য। দেখতে চেয়েছিলাম.….?

অভ্র কথা থামালে,প্রেমা ব্যাস্ত গলায় বলল, তো কী দেখলে?

মাথার গামছাটা খুলে কোমড়ে বেঁধে নেয়।লুঙ্গি তুলে গিট্টু দিয়ে, প্রেমার দিকে তাকাল,দেখে প্রেমা প্রশ্নাত্বক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, অভ্র ঠোঁটে মৃদু দুষ্টু হাসি ঝুলায়,এরপর প্রেমার দিকে এগোতে এগোতে বলল,’বলবো? কী কী দেখেছি?

প্রেমা মুখ কুঁচকাল,এটা তো তার উত্তর নয়,বরং অভ্র তার কথার ট্যারা জবাব বের করেছে। নাক ফুলিয়ে মৃদু পিছুপা হয়ে প্রেমা বলল,’ থামো! বলতে হবে না,আমি বুঝেছি আগেই,

দাঁত সব করে হেসে বলল, ‘ঠিক আছে,

প্রেমা আবারও অভ্রকে দেখতে শুরু করে,প্যান্টর উপরে লুঙ্গি পড়েছে,হাস্যকর। অভ্রকে এই অবস্থায় দেখবে ভাবেনি।’মাঝি’হতে বলেছিলো,কিন্তু সোজা মাঝির বেশ ধরে আসবে কে জানতো। মাথা ঝাঁকিয়ে প্রেমা নিজেকে স্বাভাবিক করে,অভ্রের উদ্দেশ্যে বলল,’নৌকা কোথায়?

প্রেমাকে পেঁছন ফিরতে ইশারা করে অভ্র,নৌকা ‘পদ্মবিলে’ বাঁধা,বড় বড় পাতার জন্য দৃষ্টিতে আসছেনা। প্রেমা নৌকা দেখে দৌড়ে সেদিকে গেলো। অভ্র হাসে, প্রেমার আচরণে।সেও প্রেমার পেছনে ছুটে গেলো নৌকার দিকে।

নৌকাতে উঠে অভ্র বৈটা দিয়ে নৌকা চালিয়ে মাঝখানে চলে যায়। ঠিক সেই মুহুর্তে আকাশ কাঁপিয়ে মেঘের গর্জন শুরু হয়, দুজনে নৌকার মাঝামাঝি অবস্থানে বসে আছে। প্রেমা শাড়ির আঁচল অভ্রের মাথায় তুলে দেয়।অভ্র আবার মাথা থেকে আঁচলটা সরিয়ে প্রেমার মাথা ঢেকে দেয়। এবং বলে,’ ভয় পাচ্ছো?
প্রেমা মাথা নেড়ে না জানায়। অভ্র মায়াভরা হাসি হাসে।প্রেমা ভয় পেয়েছে সেটা তার জন্যই।
বাতাস বইছে। হিমশীতল বাতাস। প্রেমার অবাধ্য চুল বাতাসে এলোমেলো হয়ে যায়। হাত দিয়ে ঠেকিয়েও শান্তি পাচ্ছে না।একসময় অভ্র প্রেমার হাত জোড়া ধরে ফেলে।
পরমুহূর্তে সে নিজেই প্রেমার অবাধ্য চুলের গুচ্ছ নিজ হাতের মধ্যে নেয়,দৃঢ়তার সহে বেশ গুছিয়ে চুলে খোঁপা বেঁধে দেয়। প্রেমার কাছ থেকে সরলেই প্রেমা অভ্রের হাত ধরে ফেলে।
অভ্র প্রশ্নাত্বক চাহনি ছুঁড়ে প্রেমার দিকে,
খেয়াল করে প্রেমার চোখে পানি চিকচিক করছে। অভ্র অপরহাতে প্রেমার হাত চেপে ধরে বলল,’ কী হয়েছে প্রেমা? তোমার চোখে পানি কেন? আমি কি কিছু করেছি।
অভ্রকে থামিয়ে দিয়ে প্রেমা বলে,’ কালকের পর থেকে তো আমরা একসাথে থাকবো না,মানে আমি তো তখন মা-বাবার সাথে থাকবো।কিন্তু আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তোমাকে ছাড়া থাকার।অভ্যাস হয়ে গেছো তুমি। আই নিড ইউ এভরি মোমেন্ট। ‘
এতটুক বলা শেষ করেই প্রেমার চোখ দিয়ে আষাঢ়ি বৃষ্টি নেমে আসে। বিষণ কষ্ট অনুভব হচ্ছে তার। অভ্রকে ছাড়া তো প্রেমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হবে যেনো।
অভ্র নীরব থাকে একটুর জন্য।পরে মৃদু শ্বাস ছেড়ে আলতো হাসে। চোখমুখে তার প্রশান্তি।
-সিউর আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না?

প্রেমা দ্রুতু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়,তার কষ্ট হবে।দূরে থাকা তো দ্বায়।কাছাকাছি থাকলেও হতো।

অভ্র হালকা ধমকে বলে,
-মুখ নেই? মুখ দিয়ে বলো?
-হ্যাঁ, বিশ্বাস করো,আমার কষ্ট হবে। তোমাকে ছেড়ে থাকতে।
অভ্র ঠোঁট টিপে হেসে বলল,’ তাহলে কাছে আসো,এখানেই তোমাকে একেবারে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
অভ্রের কথায় প্রেমার গলায় কাটা আঁটকে যাওয়ার মতো অনুভব হয়। গম্ভীর মুখ করে চোখের পানি মুছে ফেলে।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,’ সবসময় মজা। এতো সিরিয়াস কথার মধ্যেও মজা করছে আমার সাথে। বিয়াদব ছেলে।

অভ্র এবার বেশ জোরে হাসে। প্রেমার সাথে যদি সেও ইমোশনাল হয়ে যায় তাহলে প্রেমা আরও বেশি কাঁদতো। সান্তনা বাক্য ও কাজে দিতো না,বরং কান্নার গতি বাড়াতো। তাই অভ্র উল্টোটা করেছে।তাতেই কাজ হয়েছে।প্রেমার কান্না অটোমেটিক থেমে যায়।

প্রেমা দাঁত খিঁচে ঝাঁটকা মেরে অভ্র হাত ছেড়ে দেয়।অভ্রের বুকে ধাক্কা দেয়। এবং নিজেও দূরে সরে বসে।
-‘আজকেই চলে যাবো।খবরদার আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না তুমি।আমি অন্য একজনকে বিয়ে করে নিবো।তখন তুমি থেকো তোমার মতো।

এতক্ষণ সব স্বাভাবিক থাকলেও এখন প্রেমার কথাটায় অভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। চোখ তুলে প্রেমার দিকে তাকাল। চোখ শিথিল করে আবার অন্যদিকে তাকাল। ফোঁড়ন কটে বলে,
-‘ কেউ চলে যেতে চাইলে আমি আঁটকানোর কে? ইচ্ছে হলে যাবে,তুমি যেভাবে খুশি সেভাবে থাকবা।আমার আপত্তি নেই।

যদিও অভ্র মন থেকে কথাগুলো বলেনি।তবে বলাটা জরুরি ছিলো। এটা একটা শাস্তিও বটে।সে নিশ্চিত এরপর থেকে চলে যাওয়ার কথা প্রেমা ভুলেও বলবে না।

প্রেমা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। অভ্রের খাপছাড়া কথা ওকে বিষণ জ্বালায়। যেনো আগুনের গোলা নিক্ষেপ করছে। নরম স্বরে বলে,
‘ সরি অভ্র। ‘
অভ্র চুপ থাকল। যেটা প্রেমাকে আরো অস্থির করে তুলে। পেঁছন ফিরে বিরিয়ানির প্যাকেটটা হাতে নেয়। অভ্র সামনে এসে বসে বাক্স থেকে বিরিয়ানি এর চামচ বের করে।
চামচ অভ্রের হাতে ধরিয়ে দেয়। ‘খাও’
আমার খিদে পেয়েছে তাই উল্টাপাল্টা কথা বলছি। তোমার খিদে পেয়েছে তাই না।
অভ্র ঠোঁট বাঁকা করল।রাগত্ব স্বরে বলল, ‘না’

প্রেমা এবার নরম স্বরে বললে,’সরি তো!’

অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে,হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে একপাশে রেখে দেয়। প্রেমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ‘ এটা লাস্ট, এইভাবে যদি আর কখনো বলো, তো তোমাকে আমি মেরে ফেলবো।সত্যিই মেরে ফেলবো।তারপর নিজে মরবো।আমি এসব শুনতে চাই না। একদম না।

অভ্রের কথা থামলে প্রেমা অভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
-তুমি আমার কথা সিরয়াসলি নাও না,আমি বলেছি এক আর তুমি বললে আরেক।
অভ্রের স্বরে শীতলতা নেমে আসে,একটু স্পর্শেই। মৃদু স্বরে বলে,
‘একটা বছর অপেক্ষা করো। আমি তো বলেছিই সব তোমাকে।আমি তো আর উধাও হয়ে যাচ্ছি না।তোমার কাছাকাছি থাকবো। কাল থেকে আমিও তো আর ওই জায়গায় থাকবোনা।বাড়িতে চলে যাবো। রোজ কলেজে দেখা তো হবেই। আর যদি খুব একান্তে চাও তো,রাতে ফোনে কথাও হবে।মাঝে মাঝে মন অবাধ্য হয়ে গেলে,তোমার সাথে দেখা করতে যাবো।আগে যেতাম না? কতোদূর থেকে যেতাম শুধু তোমাকে দেখার জন্য। এমনি এমনি এসব কেউ করে?
শান্ত হও,কান্না থামাও আর আমাকে খাইয়ে দাও।

প্রেমা চট করে অভ্রের থেকে সরে আসে। এবার তাঁর মাথায় সব ঢোকেছে।শুধু শুধু কান্না আর মন খারাপ করেছিলো। এতো সিম্পলভাবে বুঝিয়েছে অভ্র।

প্রেমা অভ্রকে খাওয়াই,সাথে নিজেও খেয়ে নেই। প্রেমার ঘুম পাচ্ছিলো।চোখমুখের ঝিমুঝিমু অবস্থা দেখে অভ্র আর নৌকায় থাকেনি। দ্রুত উঠে যায় পদ্মবিলের মধ্যে থেকে।প্রেমা না ও করেলেও অভ্র মানেনি। আশেপাশে কারো উপস্থিত আবারও টের পেয়েছে অভ্র।আজ হয় চলে যাবে,নয়তো মেরে তারপর যাবে।

সাড়ে তিনটা! তারপরেও আকাশে মেঘ।বৃষ্টি
তো নামেই নি।প্রেমার আশায় জল পড়েছে।সে মনে প্রাণে বৃষ্টি চেয়েছিলো। প্রেমাকে শক্ত করে নিজের সাথে ধরে আছে অভ্র।

আরেকটু দূর যেতেই অভ্রের মুখ কুঁচকে যায়।যা সন্দেহ করেছিলো তাই হয়েছে।
বাইক থেকে তিনজন ছেলে নেমে আসে।মুখে শয়তানি হাসি। অভ্র একবার প্রেমার দিকে তাকাল,প্রেমাও ছেলেগুলোর দিকে চেয়ে আছে। তাৎক্ষণিক চেঁচিয়ে বলে উঠে,
-‘অভ্র এরা তো সেদিন রাতের ছেলে গুলা।আরো একজন বেড়েছে দেখছি।
অভ্রের মাথায় হাত।আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা কী জরুরি ছিলো?

ছেলেগুলো ভাবছে তারা তিনজন,আর অভ্র তো একজন। সাথে তো একটা মেয়েও আছে।
তাহলে কী দুজনকেই মেরে দিবে?নাকি…

পকেট থেকে একজন ছুরি বের করে। দুজন এগিয়ে আসে। অভ্র থমকে যায়।তার সাথে যা হওয়ার হবে কিন্তু প্রেমার কোন ক্ষতি মানবেনা।প্রেমাকে পালাতে বললেও পালাবে না।

ছেলেগুলো যতো এগিয়ে আসছে,অভ্র প্রেমাকে নিয়ে পিছিয়ে আসে। প্রেমাও বাঁচার জন্য উপায় খোঁজছে। আচমকা নিচে চোখ যায়। এবার প্রেমার মুখেও শয়তানি হাসি চলে আসে।

অভ্রকে ঝাঁটকা মেরে সরিয়ে নিচু হয়ে দু’মুঠো বালি মিশ্রিত মাটি নিয়ে ছেলেগুলোর চোখের দিকে ছুঁড়ে মারে। ছেলেগুলোর পা থেমে যায়।হাত থেকে ছুরি ফেলে তারা চোখ কচলাতে শুরু করে। তখনি অভ্র বলে উঠে, ‘ প্রেমা চলো তাড়াতাড়ি।
-‘একদম না আমি এদের না মেরে যাবো না।সেদিন তোমার হাতে আঘাত করেছিলো,কুত্তা গুলা। সরো তুমি।
প্রেমা একপ্রকার পাগলের মতো ছুটে গিয়ে ছেলেগুলোকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আরো বালি নিয়ে মুখে ছুঁড়ে মারে। পা দিয়ে কয়েকটা লাথি দেয় পেটে।
অভ্র একসময় প্রেমাকে টেনে নিয়ে আসে।দু’গালে হাত রেখে প্রেমাকে থামানোর চেষ্টা করে।প্রেমা বারবার তেড়ে যাচ্ছিলো।সেদিনের ক্ষোভটা আজ আবার জীবিত হয়েছে।
-‘ প্রেমা প্রেমা! থামো প্লিজ,কেন তুমি নিজেকে ঝড়াচ্ছো।পরে তোমার ক্ষতি করবে। এটা আমি সামলে নিবো।এখন চলো।
‘-আগে বলো, কে? কারা তোমাকে বারবার মারতে আসে।বাল গুলার সাহস আসে কেমনে? তোমার গায়ে হাত দিলে আমি হাত কেটে ফেলবো।জবাব দাও কে করছে এসব?

প্রেমা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গিয়েছে। কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে পড়ে।অভ্র প্রেমাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,’ আগে চলো, পরে কোন এক সময় বলবো। তার আগে না।চলো!
অভ্র প্রেমাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।মাথায় একটা ভাবনা প্রেমার কোন ক্ষতি হতে সে দিবে না।

কে এসব করছে সব জানা আছে অভ্রের।তাতে কী? সে আর তাদের কবলে পড়বেনা।একটা বছর শেষ হলেই সে অনেক দূর চলে যাবে।

যতোই হোক,পাপকে পশ্রয় দিবে না সে।

(চলবে)

রিভিশন দেয়নি,ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়েন একটু, Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here