বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট১৮

0
675

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১৮

বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে।প্রেমা যখন বের হয়েছিলো।তখন এসব খেয়াল করেনি।তাই বাড়িতে প্রবেশ করতেই প্রেমা অবাক হয়ে যায়।

গুটিগুটি পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সোফার দিকে চোখ দিতেই চমকে যায় প্রেমা। আরিয়ানকে দেখে। সে তো ভেবেছিলো মাজা ভেঙেছে বাড়িতে বিশ্রাম নিবে। কিন্তু এ তো ড্যাং ড্যাং করে এখানে চলে এসেছে। আরিয়ানের চোখে চোখ পড়তোই আরিয়ান একটা হাসি দেয় প্রেমাকে উদ্দেশ্য করে।

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকায়। এই মানুষটাকে কেন যেনো প্রেমা সহ্য করতে পারেনা।পেঁছনে একবার তাকায় অভ্র আসছে কী না দেখার জন্য। না নেই। তাই প্রেমা অপেক্ষা না করে ছাদে চলে যায়।কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছেও নেই।

ছাদেও লাইটিং করা হয়েছে।বেশ জ্বলমলে পরিবেশ।কিন্তু পুরো ছাদ ফাঁকা। এখানে থাকতেও হালকা ভয় করছে।পরক্ষণে ভাবলো।ভুত বলতে কিছুই নেই সবই মনের ভ্রম।সাহস জুগিয়ে চেয়ারে বসে এবং অন্য একটি চেয়ারে পা তুলে দেয়। তারপর নিজের ফোনটা টেপাই মনোযোগ দেয়।এই যন্ত্র গোটা দিন টিপলেও সে বিরক্ত হয় না।

ক্ষনিক বাদে প্রেমা ঘাড় বাঁকা করে পেছনে ফিরে তাকায়। কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছিলো প্রেমা কিন্তু কাউকেই দেখেনি।

ছাদের অপরপ্রানতে দাঁড়ানো অভ্র।হাত জোড়া বুকে গুঁজানো। প্রেমাকে দেখতে মত্ত সে। অভ্রের অবস্থান এমন একটা জায়গায় যে অভ্র প্রেমাকে ভালোভাবে দেখতে পারবে কিন্তু প্রেমা অভ্রকে দেখতে পাবে না।

অভ্র এবার নিজের ফোনটা বের করে।মেসেঞ্জার থেকে প্রেমাকে আনব্লক করে। দেখে প্রেমার এক্টিভ রয়েছে।
নিজের গ্যালারি থেকে একটা ছবি প্রেমাকে সেন্ড করে।

নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে মেসেজ টিউন ভেজে উঠে । খেয়াল ছুটে যায়। “বসন্ত পথিক” নামটা ভেসে উঠে।এক সেকেন্ড দেড়ি না করে মেসেজ সিন করতে গেলেই ফোনটা স্লো হয়ে যায়। নিজের মধ্যে আকস্মিক ভাবে আকুলতা দেখে প্রেমা নিজেও হতবাক । অপেক্ষা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এক মিনিট পরেই সে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।

একটা ছবি দেখতেই প্রেমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।ভাবনায় পড়ে যায় ছবিটি কখনকার। এই ছবিটি ব্যাক সাইডের। কলা পাতা রঙের শাড়ির সাথে সাদা কাঠবেলি ফুলের মালা।যেটা বাগানে একটা কাঁচের বাক্সে পেয়েছিলো।

মনে পড়ে যায় প্রেমার। বটতলায় মেলার কথা। তাদের গ্রামেই হয় মেলাটা। মিম,এবং আরো দুজন বান্ধবীর জোরাজোরিতে মেলা যেতে বাধ্য হয়েছিলো। শাড়ির পড়ানোর জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করেছিলো সবাই প্রেমার সাথে। সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতেই প্রেমার মনে হলো ওর খোঁপায় গুঁজানোর জন্য ফুলের মালা দরকার।নাহলে সে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে পারবে না। ছুটে যায় বারান্দার দিকে।এবং পেয়েও যায় মালা। কে যে মুখ ফুটে বলার আগেই ওর মনের কথাটা বুঝে যায়। ভেবে পায় না। এ যেনো অভ্যক্ত মনোমিলন।

গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রেমা ছবিটা দেখছে।এ ছবির মূল কেন্দ্র যেনো খোঁপাটা ছিলো।৷ বেশ আকর্ষনীয় এবং সুন্দর দেখাচ্ছিলো।

এবার প্রেমার আঁখিজোড়া সেই ব্যাক্তিকে দেখার জন্য ছটপট করতে লাগে। তার অজান্তেই। আজ কোনো প্রকার ভয় হচ্ছে না প্রেমার। বরং অজানা অনুভূতিতে শিহরিত হচ্ছে। বিরবির করে বলে হঠে-
“তাহলেই এই সেই ব্যাক্তি। বসন্তটা শুর হয়েছিলো যার আগমনে। আমায় সই বানিয়েছিলো ফুলেদের। কী চায় সে?? কী নাম দিবো তার? বসন্ত পথিক,,,হ্যাঁ সেটাই।

এসবের ভাবতে ভাবতে প্রেমা ফোনের দিকে চোখ দেয়। দেখে বসন্ত পথিক আবারও ব্লক দিয়েছে তাকে।দুঃখে চোখের কোণায় পানি এসে জমে। দূর থেকে অভ্রের উন্মাদিত দৃষ্টি প্রেমাতে থাকলেও।প্রেমার চোখ মুখের অবস্থা তার চোখ আবদি আসেনি। ফলস্বরূপ প্রেমার অস্থিরতা নড়াছড়া দেখলেও মুখে বিষন্নতার চাপ দেখতে পায়নি।

কিছুসময় পর পায়ের শব্দ কানে ভেসে আসে অভ্রের। সতর্কতার সহিতে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এহেন সময় ঘটে আরিয়ানের আগমন।নাক ফুলিয়ে শক্ত করে রেলিং চেপে ধরে অভ্র। নিজেকে শান্ত রাখার জন্য।নাহলে সে নিজেকে আটকাতে না পেরে আরিয়ান গায়ে হাত তুলে ফেলতে পারে।

” কেমন আছো প্রেমা?”(আরিয়ান)

আরিয়ানের কথা প্রেমার কানে আসলেও চুপচাপ থাকে।আরিয়ান দেখতে খারাপ এটাও না।কোনো খারাপ অভ্যাস আছে এমন ও না।তবুও প্রেমা সহ্য করতে পারেনা।

“কী হলো উত্তর দিচ্ছো না যে??

এবার প্রেমা দাঁড়িয়ে আরিয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ায়। পা থেকে মাথা অবদি ভালোভাবে দেখে নেই। তারপর বলে৷ উঠে-

” সিঁড়ি থেকে নাকি পড়ে গিয়েছিলেন?তো হাড্ডি-গুড্ডি কী ভাঙেনি?? ভাঙলে বেশি খুশী হতাম।(দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে প্রেমা নেমে যায়।আরিয়ান আহাম্মকের মতো তাকিয়ে ছিলো।)

হলুদের অনুষ্টানে সবাই সবার মতো আনন্দ করলেও এসবের ধারে কাছেও ছিলোনা প্রেমা আর অভ্র। এদের একটা জায়গায় বিষণ মিল সেটা হচ্ছে তারা মানুষের ভিড়ে থাকতে চায় না।

অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।বেশিরভাগ মেহমান চলে যায়।এবং বাকিরা শুয়ে পরে। কাল বিয়ে তাই একটু শরীরে বিশ্রামের দরকার।

চুল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় প্রেমা।রাজ্যের ঘুম চোখের পাতায় এসে ভার করে।অতঃপর তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে।

মাঝরাতে প্রেমার চুলে টান পরতে লাগে অনবরত।ঘুমের মাঝেও রেগে যায়।তবুও চোখ মেলতে পারছে না।কিন্তু চুলের টানটা বেশ অনুভব করতে পারছে। চোখ মেলতে গিয়েও অক্ষম হয়। আবারও পাড়ি জমাই ঘুমের রাজ্য।

হাতে একজোড়া নুপুর নিয়ে বসে আছে অভ্র। এবং মৃদু হাসছে। প্রেমার চুলে বিনুনি করা শেষ এখন এই নুপুরজোড়া যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার পালা।

(চলবে)

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here