বসন্তের_ফুল🌺🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট৫২_শেষপর্ব

1
895

বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৫২_শেষপর্ব

শরীরে চাদর মুড়িয়ে বিছানায় বসে ল্যাপটপে অনলাইন ক্লাস করছে প্রমা। পাশে শায়িত আদ্র। মনোযোগ দিয়ে গেইম খেলছে।
প্রেমা কিছুক্ষণ পর পর আদ্রের দিকে নজর দিচ্ছে।

বাইরে ভীষণ ঠান্ডা। স্নো পড়ছে।কোন মতে প্রেমা অভ্রকে ঠেলে ঠেলে ভার্সিটিতে পাঠাল।
আগের চেয়েও বেশি ফাজিল হয়ে গিয়েছে অভ্র। প্রেমাকে জ্বালানোর একটা সুযোগও ছাড় দিচ্ছেনা।
আর অভ্রকে জ্বালানোর বিভিন্ন কায়দা বের করে আদ্র। এখানে প্রেমার জন্য অাদ্রকে তুই ও বলতে পারে না অভ্র।

ছয়’মাস হলো অভ্র আর প্রেমা দেশ ছাড়ল। এখন তারা কানাডায়। এখানের একটা ভাড়সিটিতে ভর্তি হয়েছে অভ্র। শুধু ট্রান্সফার নেয়নি প্রেমা। অনলাইন থেকে ক্লাস করে যাচ্ছে প্রতিদিন। অভ্রের বাবা সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

কানাডায় আসার কথা ছিলো শুধু অভ্র আর প্রেমার। বাঁধা সাধলো আদ্র। তাকে ছাড়া আসা অসম্ভব।আদ্রকে মানানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই আদ্রও উড়াল দিলো প্রেমা আর অভ্রের সাথে।নিজের দেশ ছেড়ে।অন্য দেশে।

প্রেমার সাথে দেখা হওয়ার পূর্বে অভ্র তাঁর বাবাকে কথা দিয়েছিলো দেশের বাইরে গিয়ে নিজের পড়াশোনা শেষ করবে। বদলে দিলো সব মুহূর্তেই, কোন এক বসন্তের আগমনে অভ্রের সুন্দর মনটাও পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু একসময় প্রেমার প্রতি দুর্বলতার কারণ অভ্রের বাবা জেনে যায়। ফলে শর্ত দেন। যদি প্রেমাকে চাই তাহলে দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনাটা করতে হবে,মানে করতেই হবে। এটা উনার আদেশ ছিলে। সেদিন কোন মতে হ্যাঁ বলে অভ্র তার বাবাকে মানিয়ে নিলো। আসল সমস্যাটা হয় অভ্র কথা দিলেও সে মন থেকে প্রেমাকে রেখে দেশের বাইরে গিয়ে পড়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারছিলো না। অভ্রের ভেতরে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ হলেও বাইরে প্রকাশ করেনি সে। নিজের মধ্যে পুষে রাখে। কিন্তু অভ্রের বাবা এমন একজন মানুষ,যিনি অভ্রের দিকে এক নজর চোখ রাখলেই অভ্রের মনের ভেতরের চাপা আর্তনাদ এবং তার কারণ বুঝতে পারতেন।

পড়াশোনাটা জরুরি। স্ট্রং ক্যারিয়ারের জন্য। ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই অভ্রের বাবা সবটা ঠান্ডা মাথায় ভেবে অভ্রকে দেশের বাইরে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেন।সঙ্গে প্রেমাকেও।
প্রেমাও যে অভ্রের সাথে যাবে, অভ্র নিজেও এ ব্যাপারে জানতো না। সেদিন পাসপোর্ট করতে গেলেই প্রেমাকে সাথে নিয়ে আসার আসল সূত্রের উদঘাটন করেছিলো। ওইদিন অভ্রের মধ্যকার চাপা উৎফুল্লতা অভ্রের বাবা একচোট দেখেই ঠাওর করতে পারলেন।ছেলের খুশীতেই উনার খুশী। অভ্রের কাছে সইদিনটা বিশেষ দিন ছিলো।
পরিবারের বাকি সদস্যদের ব্যাপারটা অভ্রের বাবা নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।চিন্তামুক্ত করেন অভ্র আর প্রেমকে।

সোনায় মোড়ানো কপাল ছিলো অভ্র আর প্রেমার। এয়ারপোর্টে আসার ঠিক দু’ঘন্টা আগেই অভ্রের বাবা নিজ দায়িত্বে অভ্রের সাথে প্রেমার বিয়েটা পড়িয়ে দিলেন। সেদিন শতগুন চমকে গিয়েছিলো অভ্র এবং প্রেমা দুজনেই।প্রচণ্ড অবাক হয়ে গিয়েছিলো অভ্র। কিছু সময়ের জন্য থমকেও গিয়েছিলো। পরে নিজেকে সামলে প্রেমার দিকে আমোদিত দৃষ্টি নিয়ে তাকাল অভ্র। বিশ্ব জয়ের হাসি উপহার দিলো তাঁর প্রিয়াকে।
অভ্র ভাবে। তাঁর বাবা তার থেকেও কম যায় না। আড়াল থেকে সব করলেন। সত্যিই নিজের ছেলে না হয়েও স্বযত্নে আগলে রেখেছেন অভ্র এবং আদ্রকে।হয়তো এতেই উনার নিঃসন্তান হওয়ার খোরাকটা মিটবে।

সময় সব পাপ কর্মের শাস্তি দিয়ে দেন। অভ্র মা আয়শা সারাটা জীবণ কষ্টে পুড়ে মরবেন। উনার করা ভুলটা অস্বীকার করতে পারেনি।তবে কষ্টটাও মেনে নিতে পারছিলোনা। নিজের সন্তানদের কোনদিন কাছে পাবেন না। না পাবেন বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের ছায়া। রুপ,যৌবণ সময়ের তালে তালে হারিয়ে যায়। যার কিঞ্চিৎ পরিমাণ সৌন্দর্য্য সেই বৃদ্ধ বয়সে অবশিষ্ট থাকবেনা। কুঁচকানো চামড়ার আড়ালে হারিয়ে যাবে।

অভ্রের বাবা তার মায়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরেও পরকীয়াতে আসক্ত হয়ে যান। ফলে পবিত্র সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে যায়। কিন্তু অতীতটাকে নিস্তব্ধ পরিবেশে বসে ভাবতে নিলে উনি বুঝতে পারেন কতোটা ভুল করেছেন,অন্যায় এবং পাপ করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় উনার বর্তমান দ্বিতীয় স্ত্রী এর উসকানিতেই করেছিলেন। এটা উনি অস্বীকার করতে পারবেন না। টাকা,সম্পত্তি নিয়ে একদিন প্রচন্ড জামেলা বাঁধিয়ে ফেলেন মি.আশিক সাহেব উনার দ্বিতীয় স্ত্রী এর সঙ্গে।
কথা কাটাকাটির মাঝখানে আশিক সাহেব মুখ ফসকে বলে ফেললেন উনার সব সম্পত্তি অভ্রের নামে করে দিবেন। ব্যস এই কথাটাই অভ্রের জীবণ বিপদের মুখে গিয়ে পড়ে। বারবার অভ্রকে মারার চেষ্টা চালান, অভ্রের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী রুজিনা।
যা অভ্র জেনেও চুপ ছিলো।সময়ের অপেক্ষায়।
আশিক সাহেব ব্যপারটা জানতে পারলেন। তাই অভ্রকে বাঁচানোর জন্য স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে এক বছর ঘরবন্ধি রাখলেন। খাবার, পানি সঠিক সময়ে পেতো।শুধু অভ্রকে ভালো রাখার জন্য এমনটা করলেন। অভ্রকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে ক্ষ্যান্ত হন আশিক সাহেব।

সময় বড়ই নিষ্ঠুর। আজ টাকা কড়ি সব আছে অভ্রের বাবার। নেই একটি সুখী পরিবার।ছেলের সামনে গিয়ে দাড়াবে সেই মুখটাও নেই। সব নিজ হাতে শেষ করলেন। ডান চোখে দেখতে পাননা, বাম চোখটাও এখন ঝাপসা দেখা দিচ্ছে। হয়তো সময় ঘনিয়ে আসছে বিদায় জানাবার…….

_______________________

কলিং বেলের আওয়াজে ফোন থেকে চোখ সরালো প্রেমা। তার প্রাণভোমড়া চলে এসেছে। যার জন্য সময়টা বড়ই কষ্টে কাটছিলো। আসলেই প্রেমা নিঃশ্ব।অভ্রকে ছাড়া। দরজাটা আদ্র খুলতে পারে।কিন্তু তাতে অভ্রের ক্ষোভ। দরজা শুধু প্রেমা খুলবে৷বাইরে থেকে এসে সর্বপ্রথম অভ্র শুধু প্রেমার মিষ্টি এবং মায়ামাখা মুখটা দর্শন করতে চাই।

খোলা চুল হাত খোঁপা করে দরজা খুলতে গেলো প্রেমা। দরজা খোলেই দেখলো অভ্রের ক্লান্তিমাখা মুখ। এতো অপূর্ব কেন ছেলেটা। মনেমনে ভাবলো প্রেমা।
আবার ভাবনা ঝেড়ে চোখ তুলে অভ্রের দিকে তাকাল। মিটিমিটি হাসছে অভ্র। ততক্ষণে অভ্র ভেতরে এসে দরজাটা বন্ধ করে প্রেমাকে বুকের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে। প্রেমাও আলতো করে অভ্রকে স্পর্শ করে।বাইরে থেকে আসার ফলে অভ্রের শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে।

আচমকা কোলে তুলে নিলো প্রেমাকে। অভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে প্রেমা লাজুক হাসি দিলো। অভ্র কোলে নিয়েছে যার অর্থ অভ্রের কাছ থেকে আর রেহাই নেই।
ভাগ্যভালো আদ্র তার রুমে নাহলে প্রেমার ছোটাছুটিতে অতিষ্ঠ হয়ে যেতো অভ্র।

রুমে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলো প্রেমাকে।
শার্ট খুলতে খুলতে বলল,

— বসে থাকো,এভাবেই,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।আর হ্যাঁ আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।

প্রেমা চেয়েও কিছু বলতে পারেনি।অভ্র তার মুখ বন্ধ করে দিলো। এই অভ্র সবকিছুতেই নাছোড়বান্দা।
প্রেমা গাল ফুলিয়ে বলল, ‘ভীষণ ঠান্ডা পড়ছে’

প্রেমার কথা শুনে হাসলো অভ্র। দিন যাবে,মাস যাবে, তবে প্রেমার বাহানা দেওয়ার অভ্যাসটা যাবেনা। অভ্রকে একবার কাছে চাইবেও,আবার কাছে আসলে বাহানাও দিবে।

প্রেমার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি অভ্র। ফ্রেস হতে চলে যায়। ফ্রেস হয়ে এসে দেখে প্রেমা বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছে।একদম শরীরের সাথে পেঁছিয়ে ফেলেছে। হালকা হেসে অভ্র দরজাটা বন্ধ করলো।
বিছানার পাশে এসে কম্বল সহ প্রেমাকেও টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। প্রেমা ছুটতে চাইলে অভ্র প্রেমার দু’গাল ধরে প্রেমার ঠোঁটে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
এমনিইতে অনেক ঠান্ডা। সেখানে অভ্রের মৃদু উষ্ণ স্পর্শ প্রেমা আরো জমে গেলো। শরীর অবশ হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় অনুভুতি জড়ানো মুহুর্ত।

____________

সহস্র অনুভুতি মাখিয়ে পেরিয়ে গেলো এক যুগ,
পনেরো বছর কাটায় কাটায় পূর্ণ হলো অভ্র এবং প্রেমার বিয়ের।
অভ্র এবং প্রেমার তিন ছেলে।তারা তিন সন্তানের মা-বাবা।শুধু অপূর্ণ রয় একটা মিষ্টি রাজকন্যার।

প্রেমা হাতের কাছে যা পাচ্ছে তা ছুড়ে মারছে অভ্রকে। অভ্র এক প্রকার এদিক-ওদিক ছুটছে,প্রেমার থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। প্রেমা মৃৃদু তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
–তিন ছেলের বাপ হয়েছো,এখনো স্বভাব সেই আগের মতোই। বুড়ি হয়ে যাচ্ছি,এখন সাজুগুজুর বয়স আছে? কোন আক্কেলে আমাকে সাজতে বলো তুমি?’

অভ্র হেসে বলে,

— ডিয়ার…সাজলে তোমাকে সেই আগের মতোই লাগে।প্লিজ একটা মিষ্টি! একদম তোমার মতো রাজকন্যা গিফ্ট করো,সত্যিই আর জ্বালাবো না।

–মিথ্যুক…

—সত্যিই, ডিয়ার…

ছুটাছুটির মাঝে প্রেমা হাঁপিয়ে যায়।ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। সাথে অভ্রও এসে প্রেমা পাশে বসলো। ক্লান্ত হয়ে পড়লো দু’জনে। ছুটির দিনগুলো এভাবেই কাটায় তারা। খুনসুটিপূর্ণ মুহূর্ত দিয়ে।
অভ্র আলতো করে প্রেমার হাত স্পর্শ করে। প্রেমা আঁড়চোখে অভ্রের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো।
সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তন হয়েছে চেহারার। কিন্তু চাহিদা সেই আগের মতোই। অভ্র সেই আগের মতোই আছে। এক চুল পরিমাণও বদলে যায়নি। অভ্র ঠিকই বলেছিলো অনুভুতিদের নিয়েই যুগ যুগান্ত পাড় করবে,কিন্তু ‘ভালোবাসা’ নামক সেই শব্দটা তাদের সম্পর্কে জায়গা পাবে না। শুধুই অদ্ভুত অনুভুতিরা ছোটছুটি করবে।মাতিয়ে রাখবে তাদের বাকিটা পথ চলায়………

সমাপ্ত🌺🌺

গল্প কেমন হয়েছে জানাবেন। গল্পের ভালো-খারাপ সব দিক এই পোস্টের কমেন্টে জানাবেন।আর যারা নীরব পাঠক ছিলেন তারাও আজকে মন্তব্য করবেন আশা করি। আমার কষ্ট করে লেখা হয়তো স্বার্থক হবে তাতে।
বিদায় নিচ্ছি সাময়িক সময়ের জন্য।.. Tarin Jannat

1 COMMENT

  1. আপু খুব ভালো লাগলো গল্পঃ টা পড়ে
    সত্যি অনুভূতি শেষ হয়না ভালোবাসা শেষ হলেও
    ❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here