বসন্তের_ফুল #তারিন_জান্নাত #পার্ট১৫

0
537

#বসন্তের_ফুল
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১৫

ভোরে মৃদু মৃদু আলোতে বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে প্রেমার অপেক্ষায় রয়েছে অভ্র। চারপাশের হীমশিতল বাতাস শরীরে মাখিয়ে নিচ্ছে। পাখির কিচির-মিচির ডাক ও কানে ভেসে আসছে। সবকিছুতে অভ্র বিমোহিত হয়ে যায়। নিজেকে বেশ হালকা লাগছে অভ্রের।

ফোনের স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরেকবার। সাড়ে পাঁচটা বেজে আরো পনেরো মিনিট হয়েছে।অর্থাৎ পাঁচটা পয়তাল্লিশ মিনিট এখন। প্রেমাকে যখন ফোন দিয়েছিলো তখন সাড়ে পাঁচটা ছিলো। অথচ প্রেমার আসার কোনো নামগন্ধ নেই। আস্তে আস্তে সূয্যিমামার আলোক রশ্মি ছড়িয়ে পরছে চারদিকে। ভোরের মৃদু আলোটা কেটে এখন পরিপূর্ণ স্নিগ্ধ সকালে রুপান্তর হয়।

ফোন নিয়ে প্রেমাকে কল দিলেই কলের টিউন কানে ভেসে আসে। ঘাড় ঘুরিয়ে পেঁছন ফিরে তাকাতেই অভ্রের চোখ আটকে যায় প্রেমাতে। মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার ফুলরানীর দিকে। প্রেমা অভ্রের দিকে এগিয়ে আসছে সে অবস্থায় অভ্রেক চোখ যায় প্রেমার পেঁছনে।

রাগ আর বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মুহুর্তেই।বিরবির করে বলে উঠে-

“কাবাব মে হাড্ডি!
প্রেমা তখনি অভ্রের সামনে এসে দাড়ায়। মুচকি হাসি দিয়ে জানায়-
” শুভ সকাল!!
প্রতিউত্তরে অভ্রও মুচকি হেসে বলে-
“শুভ সকাল!!

তারপর মাথা হালকা বাঁকা করে অভ্র প্রেমার পেঁছনে তাকাই। দেখে আদ্র লুকানো অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।

” কিরে এতো সকাল সকাল এখানে কী??(অভ্র)
“আমিও যাবো তোমাদের সাথে”! (আদ্র)
” যেতে হবে না যা বাসায় যা “(চোখ লাল করে বলে)
” আরে থাকনা! আদ্র ও যাবে আমাদের সাথে সমস্যা কী তাতে??(প্রেমা)
প্রেমার কথাটা শুনে আদ্র একটা বড় করে হাসি দেয়।কিন্তু অভ্রের মুখটা চুপসে যায়। এসব তোয়াক্কা না করে আদ্র প্রেমার হাত ধরে টেনে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একবার পেঁছন ফিরে আদ্র অভ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়। এতে অভ্রের রাগ টগবগিয়ে উঠে। কোনো রকম মাথা ঝাকিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করে।এবং তাদের পেঁছনে হাঁটা দেয়।

একসময় অভ্র এসে প্রেমার পাশে দাঁড়ায়। প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল। আকাশী রঙের টি-শার্ট, চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। এবং ঠোঁটের দিকে প্রেমার দৃষ্টি আঁটকে যায়। কারণ অভ্রের ঠোঁট লাল। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। প্রেমার এভাবে খুঁটিয়ে দেখা অভ্রের বেশ মজা লাগছে। সামনের দিকে চোখ থাকলেও প্রেমার একটু পর পর তাকানো অভ্রের চোখ এড়াইনি। ঠোঁটে মৃদু হাসি রেখে প্রেমাকে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে অভ্র-

“হাবলির মতো তাকিয়ে কী দেখছেন?
প্রেমার থমথম খেয়ে যায়।পরক্ষনে নিজেকে সামলে উত্তর দেয়-
” হাবলাকে দেখছি!
প্রেমার কথা শুনে অভ্র একটু শব্দ করে হেসে দেয়।সাথে প্রেমাও। ওদের হাসির কারন উপলব্ধি করতে না পেরে মাঝখান থেকে আদ্র অনুসন্ধানী গলায় মাথা চুলকিয়ে জিজ্ঞেস করে-
“তোমরা হাসছো কেন?? আমাকেও বলো? আমিও হাসবো! “এবার আদ্রের কথা শুনে প্রেমা আর অভ্র হেসে উঠে একসাথে।
” ধূর'” অভিমানী গলায় কথাটা বলে আদ্র প্রেমার হাত ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

” সকাল সকাল গোসল করেছো?? “প্রেমা প্রশ্ন করে অভ্রকে!
” হ্যাঁ,,
“শীত করে না??
” আমি তো রোজ সকালেই গোসল করি! সকালে গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। (অভ্র)
” কি যে বলো প্রচুর শীত লাগে!
” অভ্যাস হয়ে যাবে।
“কী??
অভ্র আচমকা কথাটা বলে থমথম খেয়ে যায়। পরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে-
” আপনি রোজ সকালে গোসল করার চেষ্টা করলে অভ্যাস হয়ে যাবে। সেটা বললাম!
“ওহ”
এরপর আর কোনো কথা বলেনি দু’জনে। প্রেমা একটু হেঁটে সামনে গিয়ে আদ্রের কাছে যায়। এবং আদ্রের হাত ধরে হাঁটতে লাগে। আর অভ্র ওদের পেঁছনে পরে যায়।

অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটে তারা।প্রায় দু’ঘন্টা। আটটার দিকে তারা বাড়ি ফিরে আসে। পুনরায় ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পরে তিনজনে। হঠাৎ প্রেমার দৃষ্টি যায় তার সোজা সাইকার দিকে। কেমন করে যেনো ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। চোখে মুখে কঠিন্য একটা ভাব। মনেমনে প্রেমা কারণটাও হয়তো কিঞ্চিৎ উপলব্ধি করতে পারে। প্রেমার চোখে সাইকার চোখ পরলেই সাইকা অস্বস্তিতে পরে যায় এবং চোখ নামিয়ে ফেলে।

আরো কিছুসময় পর প্রেমা সাইকার দিকে তাকালেই দেখে সাইকার দৃষ্টি অভ্রের দিকে। এবং মুচক মুচকি হাসছে।এবার প্রেমার কাছে সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। এবং সাইকার তখনের মুখের কঠিন্য ভাবটার কারনটাও আঁচ করে পারে।।

এরপর প্রেমা আবার অভ্রের দিকে তাকাল। দেখে সে নিজের মনে নাস্তা করে যাচ্ছে। তখনি অভ্র মাথা তুলে প্রেমার দিকে তাকাল।এবং জিজ্ঞেস করে-

“কিছু লাগবে?? (অভ্র)
প্রেমা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে জানায় ” না”!
সে সময় সাইকা একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে-
“ভাইয়া পানি দাও তো এক গ্লাস!(সাইকা)
অভ্র সাইকার কথাটা শুনতেই জগটা সাইকার দিকে এগিয়ে দেয়। এবং দাঁড়িয়ে যায়। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে চলে যায়। আচমকা প্রেমার হাসি চলে আসে।কোনো রকম ঠোঁট চেপে হাসি আটকায়। এবং নাস্তা শেষ করে অাদ্রকে সাথে নিয়ে চলে যায়।

প্রেমা তার দাদি যেখানে আছে সেখানে যায়।দেখে প্রিয়া সেখানে। বাকি সবাই দাদির বয়সের।সবাই নানা রকম গল্পে মেতে উঠেছে। এখানে প্রেমার আরো বিরক্ত লাগবে তাই রুমে না ডুকেই অন্যদিকে হাঁটা দেয়।

ফোনে মেসেজ টিউন বেজে উঠলে মেসেজটা প্রেমা সিন করে এবং দেখে এটা অভ্রের মেসেজ।-

” ছাদে আসতে পারেন মন চাইলে!”

প্রেমা মেসেজটা দেখেই প্রেমা ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই। গিয়ে দেখে অভ্র চেয়ারে বসা। পাশে একটা চেয়ার খালি। প্রেমা সেখানে গিয়ে বসে পড়ে।
” খুব বোরিং লাগছে তাইনা??(প্রেমা)
“হু” (অভ্র)

অভ্রের ছোট করে কথা বলাই প্রেমা অভ্রের দিকে তাকাল।দেখে আঙুলের সাথে খেলছে। প্রেমার হাসি পেয়ে যায়। সেই অবস্থায় বলে উঠে-
“বাচ্চাদের মতো আঙুল দিয়ে খেলছো?? (প্রেমা)

অভ্র প্রতিউত্তরে কিছু না বলে প্রেমার দিকে তাকাল। প্রেমার অভ্রের দিকে নজর পড়তেই আতকে উঠে। আকর্ষনীয় চোখ দু’ দুটো লাল বর্ণ ধারন করেছে। হঠাৎ এমন হওয়ার কারনে প্রেমা ভয় পেয়ে যায়।ভাবে? একটু আগে তো স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে এখন কী হয়েছে।

” আচ্ছা তুমি বোধহয় বিরক্ত হচ্ছো?
আমি যায় পরে কথা হবে।(প্রেমা দাঁড়িয়ে যায় চলে যাওয়ার জন্য)
অভ্র আলতো হেসে বলে-
“তেমন কিছু না, বসেন। (অভ্র)
অভ্রের কথা শুনে প্রেমা চুপচাপ বসে যায়।
তখনি অভ্র প্রেমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে-
” হাতের বেসলেট কোথায়?? (অভ্র)
সাথে সাথে প্রেমা হাতের দিকে তাকাল।তখনি মনে পড়ে একটু আগে আসার সময় খুলে এসেছিলো হাতে জ্বালা করছিলো তাই।কিন্তু এটা অভ্রকে বলা যাবে না তাই ভ্রু হালকা উঁচু করে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকাল অভ্রের দিকে। অভ্র তখন প্রেমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।প্রেমার অসহায় দৃষ্টি দেখে হেসে দেয়। তারপর বেসলেটটা হাতের মুঠ থেকে বের করে। আবারও প্রেমার দিকে তাকাল।

প্রেমা ইনিয়েবিনিয়ে বলে উঠে-
“আরে পড়ে গিয়েছিলো মনে হয়। আমি খেয়াল করিনি। দাও আমি পড়ে নিচ্ছি! (প্রেমা)

অভ্র কিছু না বলে বেসলেট পকেটে রেখে দেয়। তারপর উঠে চলে যায়।প্রেমা হতবুদ্ধি হারিয়ে অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
” নিজের চোখেই তো দেখলাম খুলে রেখে দিয়েছিলেন। কাজটা কী ঠিক করেলেন??(অভ্র মনেমনে কথাটা বলে)

প্রেমাকে মেসেজ দেওয়ার পরেই অভ্র প্রেমাকে ডাকতে আসে। তখনি দেখে প্রেমা বেসলেটটি খুলে রেখে দিয়েছে এবং ওয়াসরুমে ঢুকে। রাগ হলেও নিজেকে সামলে অভ্র বেসলেট নিয়ে ছাদে চলে যায়।

(চলবে)

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here