মেঘনিবাসী #Part-8

0
163

#মেঘনিবাসী
#Part-8
#Esrat_Jahan

সকাল সকাল ওরকম একটা বিশ্রি পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরে বিভা থম মেরে ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল! আরিয়া তখন রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করছিল। মেহরাবের চেঁচামেচি শুনে আরিয়া দ্রুত সেখানে এসে বিভাকে দেখতে পান এবং উদ্বিগ্ন হয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে বিভা নম্র স্বরে পুরো ঘটনাটা খুলে বলে। বিভা নিজের দোষও স্বীকার করে। এসব শুনে আরিয়া ছেলের ওপর ভীষণ রেগে যান। মেয়েটা বাসায় আসতে না আসতেই খারাপ ব্যবহার শুরু করে দিল? এই ছেলে কী মানুষ হবে না কোনোদিন? বিভার সাথে যে আচরণ করেছে এটা মোটেই কাম্য নয়। আরিয়া বিভাকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে আদুরে গলায় ধমক দেন৷ মেহরাব যে সবার সাথেই ওরকম অভদ্র ব্যবহার করে সেটাও বললেন। সামান্য একটা কারণে মন খারাপ করার কারণ নেই৷ তাছাড়া মানুষ মাত্রই ভুল হয়, মেহরাবের নিজেরও দোষ ছিল। এসবই বুঝালেন তিনি বিভাকে। বিভা সব বুঝতে পারলেও নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ে গেল না৷ পাছে আবার মেহরাবের মুখোমুখি হতে হবে এটা ভেবেই আর যায় নি। আরিয়া সেটা বুঝতে পেরে ঘরেই পাঠিয়ে দেন খাবার। বিভা সেখানে বসেই নাস্তা সেরে নেয়। বিভার ঘরে খাবার পাঠিয়ে আরিয়া ডাইনিংয়ে এলেন। মেহরাব তাঁর জন্য বসে অপেক্ষা করছে। এটা ছোটকাল থেকেই হয়ে আসছে৷ যতক্ষণ না আরিয়া মেহরাবকে নিজহাতে খাবার বেড়ে না দিবেন ততক্ষণ এভাবেই বসে থাকবে ও। আরিয়া ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপচাপ ওর ব্রেকফাস্ট রেডি করে দিলেন। কাজের বুয়া লুবনা কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে এলে ইশারায় না-বোধক জবাব দেন তিনি। তারপর মেহরাবের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। কন্ঠে ধীরতা এনে ওকে বললেন, ‘এটা তুই ঠিক করিস নি। তোর কাছ থেকে ও এরকম ব্যবহার আশা করে নি নিশ্চয়ই!’
মেহরাবের মনোযোগ কফির মগে। মায়ের কথা কর্ণপাত হলেও কফির মগ থেকে নজর সরালো না৷ বলল, ‘সবার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয় আমার কাছে।’
আরিয়া বললেন, ‘আমারও না?’
মেহরাব এবার মায়ের দিকে তাকালো, ‘তোমার কথা ভিন্ন৷ আমি ওই মেয়েটার কথা বলছি। কী যেন নাম.. ‘
আরিয়া চটপটে গলায় বললেন, ‘বিভা।’
‘সে যাইহোক। বলে দিবে আমার ত্রিসীমানায় যেন ওনাকে না দেখি।’
আরিয়া ব্যথিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কেন? বিভা কী করেছে?’
‘আমার অতিপ্রিয় ফোনটা ভেঙেছে। আর আমার প্রিয় জিনিসপত্রের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি সেই চোখ উপড়ে নিই। সেখানে ওনি তোমার দায়িত্বে আছে বলে ছাড়া পেয়ে গেল। নেক্সট টাইম আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলবে।’
আরিয়া বলল, ‘এসব কী ধরনের ব্যবহার তোর? বিভা খুবই নম্র-ভদ্র, সুশীল একটা মেয়ে। ও ইচ্ছা করে তোর ফোন ভাঙেনি। এটা একটা দুর্ঘটনা। মেয়েটা কেঁদেকেটে একাকার হয়ে বারবার মাফ চাইছে। আমার নিজেরই লজ্জা লাগছিল। তাছাড়া তুই নিজে দেখতে পাসনি যে, সামনে দিয়ে কেউ আসছে? ওর কথা বাদ দে, যদি আমিই হতাম? আমি যদি ফোনটা ভেঙে দিতাম তাহলে তুই আমাকেও ছাড় দিতি না?’
এ পর্যায়ে এসে মেহরাব কথা এড়ানোর মাধ্যম খুঁজতে লাগলো। বসা থেকে ওঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘এই বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।’
আরিয়া ঝাঁঝালো স্বরে বললেন, ‘চলে যাচ্ছিস কেন এখন? উত্তর দিয়ে যা। মেয়েটার শুকনো চেহারা দেখে আমারই মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের বাড়িতে কেউ এরকম করেছে কখনো? আর তুই এখানে ডায়লগ শুনাচ্ছিস, এখন প্রতিবাদ করতেই পালিয়ে যাচ্ছিস!’
মেহরাব দরজার দিকে এগিয়ে গিয়েও ফিরে এলো। ব্যস্ত কন্ঠে আরিয়ার উদ্দেশ্যে বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে, আজ ফিরতে লেট হবে।’
আরিয়া শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন দেরি হবে?’
‘একটা ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে রাতে। ওখানে এ্যাটেন্ড করতে হবে। তুমি চিন্তা করো না, ঘুমিয়ে পড়ো বেশি দেরি হলে।’
‘রাতে কীসের কাজ?’
‘বলা যাবে না। এসব বিষয়ে জিজ্ঞেসও করো না কখনো। আমার পছন্দ নয়।’
আরিয়া জানতো জবাবটা ওরকমই হবে। তাই আর ঘাঁটালেন না ওকে। স্বামী এমদাদ আনামে’র মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর হাসিখুশি ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেল! না-হলে আজকের ঘটনাটার কথাই ধরা যাক না৷ মেহরাব কখনোই এতটা কঠোর হয়ে কারোর কথা বলতো না৷ কিন্তু আজ? আজ তাঁর ছেলেটা হৃদয়হীনদের মতো আচরণ করে সবার সাথে! অতি সন্তপর্ণে আরিয়ার বক্ষস্থল থেকে বেরিয়ে এলো একরাশ ভারী দীর্ঘশ্বাস। যার পরিমাপ করতে গেলে মাপযন্ত্রের পাল্লায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন তিনি!

মেহরাব আরিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো৷ মায়ের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে। বারবার মনে পড়ায় অস্বস্তিতে ভুগলো কিছুক্ষণ। একপর্যায়ে জোর করে ব্যাপারটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো মেহরাব!

continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here