#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৩
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)
আমি গাছের সাথে হেলে দাঁড়িয়ে আছি, পা নাড়ানোর শক্তি আমার নেই। ছেলেটাও পেছাচ্ছে না, একটু একটু করে একদম আমার মুখের সামনে এসে দু’হাত আমার পাশে গাছে ভর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো–
— তোমাকে ভেজা শরীরে থাকতে কে বলেছিলো মিস তানহা?
তার কথায় আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। বড় বড় চোখ করে তাকে ধাক্কা দিতে গিয়ে আমি নিজেই তার উপর পরে গেলাম। কিন্তু আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে ছেলেটা আমাকে কোলে তুলে নিলো, ইশশ কি লজ্জা।
এই প্রথম কোনো ছেলে আমাকে পাজাকোলা করে কোলে নিলো। এভাবে আমি কোনো ছেলের কোলে উঠবে তা আমার কল্পনাতেও ছিলো না!
লজ্জায় আমি তার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না অথচ সে দিব্যি আমার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে জঙ্গলের আরো ভেতরে চলে যাচ্ছে। লজ্জায় আর থাকতে না পেরে তাকে বললাম–
আমাকে নামিয়ে দিন, আমি হাঁটতে পারবো।
আমার কথা যেনো ছেলেটির কান অবদি পৌছায়নি। কি সুন্দর বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে যেনো কতদিনের চেনা রাস্তা।
দু’হাত দিয়ে ছেলেটির গলা জড়িয়ে ধরে আছি আমি। হাঁটার কোনো শক্তিই নেই আমার কিন্তু এমন একটা ছেলের দয়া কিছুতেই আমি নেবো না। তাই আবারও জোড় গলায় বললাম–
কানেও শুনতে পান না নাকি? নামিয়ে দিতে বলেছি আমি, আমাকে নামিয়ে দিন।
আমার মুখ থেকে এ’কথা শোনা মাত্রই সে আমাকে তার কোল থেকে মাটিতে ধপাশ করে ফেলে দেয়। এমনিতেও পায়ে প্রচন্ড ব্যাথায় আমি পা নড়াতে পারছিলাম না তার উপর এভাবে ফেলে দেয়াতে কোমড়ে মারাত্মকভাবে ব্যাথা পেলাম। না পারছি কিছু বলতে আর না পারছি সইতে। অসহ্য ব্যাথায় আমি চিৎকার করে উঠলাম। এক হাত কোমড়ে রেখে আমি কাঁদছি। ছেলেটা নিচে বসে আমার দিকে ঝুকে বললো–
— ইগোটা তোমার থেকে আমার একটু বেশিই আছে মিস তানহা। কিন্তু তোমার মতো আমি সব যায়গায় ইগো দেখাতে যাই না। নাও, এবার এখান থেকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও, ফিরে যাওয়ার পথটাও ধোঁয়াটে। দৌড়াতে দৌড়াতে কোন দিক থেকে কোন দিকে এসেছি সেটা তোমার জানা নেই আমিও ভুলে গেছি। এবার তুমি তোমার রাস্তা মাপো। আমি বরং জঙ্গলটা একটু ঘুরে আসি, দেখি কোনো বাঘ ভাল্লুকের দেখা পাই কিনা।
নিষ্ঠুরের মতো একটা কাজ করে আমাকে এই জঙ্গলে একা ফেলে চলে যাচ্ছে। আমি তো দাঁড়াতেই পারছি না সেখানে হেঁটে যাওয়া তো দূরের কথা। কিছুক্ষন অন্যমনস্ক থেকে ছেলেটির যাওয়ার পথের দিকে তাকাতেই দেখি সেখানে কেউ নেই। আমাকে একা রেখে সত্যিই চলে গেলো, একটুও মায়া হলো না!
খুব কান্না পাচ্ছে আমার, এই জঙ্গলটা একেবারেই নিরব। দু’তিনটা অপরিচিত পাখির ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না। কোমড়ে হাত রেখে বসে আছি আমি। ওদিকে ছেলেটির আসার নামই নেই। সত্যিই কি চলে গেলো নাকি আমাকে রেখে।
পেছনের ঝোপঝাড় থেকে কিছু নড়ে উঠার শব্দ পাচ্ছি। কি ওখানে, বাঘ ভাল্লুক নয়তো? এখানে যদি আমাকে কোনো মায়াবী হরিনী এসেও ছুঁয়ে যায় তাতেই আমার পিলে চমকে উঠবে সেখানে যদি অন্য কিছু হয়?
শব্দটা ক্রমশই আমার কাছে আসছে, সেই সাথে আমার হৃদস্পন্দনও বেড়ে চলছে। কোমড় আর পা ধরে উঠে দাঁড়াবো তখনই আমার ঠিক পেছন থেকে আমার উড়না কোনো কিছুর সাথে আটকে যায়।
আমার হৃদপিন্ডে কেউ যেনো হাতুড়ি পেটা করছে। শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশই দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। মন বলছে এবার আমার আর নিস্তার নেই, মৃত্যুটাকে বোধহয় এবার সামনা করতেই হবে।
চোখ বুজে ফেললাম আমি, না আর নিতে পারছি না। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে আমার। ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরতেই আমার চোখ জোড়া আপনা-আপনিই বড় হয়ে গেলো…
চলবে…
(গল্পটা প্রতিদিন দেবো, বুঝতে পারছি ছোট হচ্ছে কিন্তু আমার ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে তাই বেশি বড় করা সম্ভব হচ্ছে না, ক্ষমা করবেন)