হলুদ_খামে #পর্ব_১৪

0
316

#হলুদ_খামে
#পর্ব_১৪
𝘼𝙙𝙝𝙖𝙧𝙚𝙧 𝙈𝙪𝙨𝙖𝙛𝙞𝙧 (ইফ্ফাত)

চোখ বুজে ফেললাম আমি, না আর নিতে পারছি না। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে আমার। ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরতেই আমার চোখ জোড়া আপনা-আপনিই বড় হয়ে গেলো। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ঐ ছেলেটা মুচকি মুচকি হাসছে। আর আমি কি-ই না মনে করেছিলাম। উড়নাটা কাঁটাযুক্ত ডালের সাথে আটকে আছে। উড়নাটা ছাড়িয়ে সামনে হাঁটতে যাবো আবারও পা বেঁকে পড়ে যেতে নিলে ছেলেটা আমাকে কোলে তুলে নিলো।

দেখুন আপনি কিন্তু…

— তামিম, কল মি তামিম।

এবার আর তাকে বাঁধা দিলাম না আমি। এবারের মতো নাহয় এই তামিম ওরফে বাজে ছেলেটার কাছ থেকে সাহায্য নেয়াই যাক। যেখানে আমি পা নাড়াতে পর্যন্ত পারছি না সেখানে হেঁটে হেঁটে জঙ্গল পার করা আমার পক্ষে আপাদত অসম্ভব।

তামিম ছেলেটা আমাকে কোলে নিয়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে কে জানে? একটু পর পর আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মুখে মুচকি হাসিটা লেগেই আছে। এতক্ষন পর ভালো করে লক্ষ করলাম আমি তার দিকে। দেখতে তেমন একটা খারাপ না, ভদ্র ঘরের মনে হয়। ফর্সা চেহারা, ভাসা ভাসা চোখ, সরু নাক, মুখে কেমন একটা মায়া কাজ করে। মনে হচ্ছে কোথায় যেনো এ চেহারা আমি আগে দেখেছি, মনে হচ্ছে অনেকদিনের পুরোনো কোনো মুখ দেখছি আমি। স্মৃতি হাতড়িয়ে কোথাও এই ছেলের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না। কিন্তু মনে হচ্ছে এই ছেলের সাথে আমার গভীর একটা সম্পর্ক আছে। তবে এই ভদ্রমানুষীর পেছনে যে বিচ্ছিরি একটা মুখোশ লুকিয়ে আছে সেটা আমি দেখেছি। কি খারাপ ভাগ্য আমার, এমন একটা জঘণ্য মানুষের কোলে আমি উঠে আছি যে কিনা—–

আমার তাকিয়ে থাকার মাঝেই তামিম বললো–

— এটা নতুন কিছু না, সব মেয়েরাই আমার দিকে এভাবে হা করে চেয়ে থাকে। তবে তোমাকে আমি বাঁধা দেবো না। আমাকে দেখার পূর্ণ অধিকার তোমার আছে।

তামিমের কথায় আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাবার উপক্রম। একে তো তার গলা জড়িয়ে ধরে আছি তার উপর হা করে বেহায়ার মতো এভাবে তাকিয়ে থাকার কি দরকার ছিলো? হাত দিয়ে নিজের মাথায় গাট্টি মারতে ইচ্ছে করছে খুব। চোখ নামিয়ে নিলাম আমি, তবুও তার চেহারা আমার মুখের সামনে থাকায় সে যে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি। ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে, কেনো যে এই ছেলের দিকে তাকাতে গেলাম কে জানে।

— আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে।

কি বলছে কি এই ছেলেটা? কেমন কেমন লাগছে মানে? কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই তো এর মনে? বড় করে ঢোক গিলে বললাম–

কেমন কেমন লাগছে মানে?

— না মানে, তোমার ঐ লজ্জা মাখা মুখ দেখে আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে।

কেমন কেমন?

— জানতে পারবেন ম্যাডাম, এত অধৈর্য্য হলে হবে? আরো দিন তো পরেই আছে।

কি বললেন? আরো দিন পরে আছে মানে? আপনি কি করে জানলেন এখানে আমরা কতদিন থাকবো?

— না… না মানে, জ.. জঙ্গলের যা অবস্থা তাতে মনে হয়না আজ কালকের মধ্যেই এখান থেকে বের হতে পারবো। রাস্তা পেয়ে গেলে তো ভালো কিন্তু না পেলে কতদিন থাকতে হয় কে জানে?

🍁
🍁
🍁

প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে অথচ পেটে এক দানা পরিমান খাবারও যায়নি। ক্ষুধা আর পায়ের ব্যাথায় আমি ক্লান্ত। আমাকে বিশাল একটা বটগাছের নিচে বসিয়ে দিয়ে আমার পাশ ঘেষে বসে পরে তামিম। এদিকে ক্ষুধায় আমার পেট মোচড় দিচ্ছে। লজ্জায় ঘৃণায় তামিমকে খাবারের ব্যপারে কিছু বলতেও পারছি না। কিন্তু আমি না বললেও সে কিভাবে যেনো আমার মনের কথা বুঝতে পারে। পকেট থেকে মাঝারি আকাড়ের একটা চকলেট বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমিও আর দেরি করিনি, কিছু না বলেই তার হাত থেকে চকলেট নিয়ে খোশা ছাড়িয়ে একের পর এক বাইট খেয়ে ফেলতে লাগলাম। তামিমের দিকে ফিরে তাকানোর সময় আমার নেই। কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে হুট করেই সে দাঁড়িয়ে গেলো।

— তুমি এখানে বসে থাকো, আমি এখনই আসছি। এসেই যেনো তোমাকে এখানে পাই, এক পাও নড়বে না এখান থেকে।

বলেই প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিয়ে ধুপ ধাপ পা ফেলে সে চলে গেলো একটা ঝোপঝাড়ের পেছনে। হঠাৎ কি এমন হলো যে এভাবে দৌড়ে চলে গেলো। আর আমিই বা এখান থেকে নড়বো কিভাবে? পা নাড়ানোর জো নেই সেখানে আমি কিনা জঙ্গল ঘুরে বেড়াবো। কি যে চিন্তা ভাবনা কে জানে?

🍁
🍁
🍁

— ও গড, ফোন কোথায় গেলো? প্যান্টের পকেটেই তো রেখেছিলাম গেলো কোথায়? মনেহয় দৌড়ানোর সময় কোথাও পড়ে গেছে। ও শিট এখন কি হবে! যোগাযোগ করবো কিভাবে আমি! রেহানকে তো বলতে হবে কি করছি বা পরবর্তীতে কি করবো। শিট ম্যান, এখন কি হবে’ ফোনে ম্যাপ অনুসরন করেই তো ফিরে যেতাম। ওকে ফাইন, এভাবেই যদি থাকতে হয় তাতেও আমি রাজি।

🍁
🍁

সরি আমি সবটা চকলেট খেয়ে ফেলেছি।

— হ্যাঁ হ্যাঁ খাবেই তো, আমার কথা কি আর মনে থাকবে নাকি তোমার?

আপনার কথা আমি কেনো মনে করতে যাবো?

— ইয়ু নো তানহা, তুমি একটু দ্রুতই রেগে যাও।

চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটি বললো তামিম। এই মুহূর্তে তাকে মোটেও বাঁজে ছেলে বলে মনে হচ্ছে না। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমি কোনো গোলক ধাঁধাঁয় আটকে আছি। কি নির্মল হাসি তার, যে কোনো মেয়েই ঐ হাসির প্রেমে পড়তে বাধ্য; তবে আমার তার প্রেমে পড়া বারন। আমার কল্পনার মাঝেই তামিম ছেলেটি এমন একটা কাজ করে বসলো আমি চিৎকার না করে থাকতে পারলাম না, তামিমের হাত শক্ত করে ধরে আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে তামিম আমার…

চলবে…

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here