হলুদ_খামে #পর্ব_৭

0
468

#হলুদ_খামে
#পর্ব_৭
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

মনে মনে চোখ বন্ধ করে হাত জোড় করে প্রার্থনা করছি আমি যেনো তানহার সাথেই বসতে পারি। চোখ খুলতেই দেখি হাতে ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে তানহা কেমন সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমাকে চিনে ফেললো নাকি? এখন কি হবে? ও গড হেল্প মি। ভয়ে ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দোকানদারকে এক কাপ চা দিতে বলবো ঠিক তখনই তানহা আমাকে বললো–

— শুনছেন, আপনার ঘড়িতে একটু দেখবেন কয়টা বাজে? আসলে আমার ফোনে চার্জ নেই। আর আমার সাথে যারা এসেছে সবার ফোন ট্রলির ভেতরে। বুঝতেই পারছেন এাখানে কত চোর ডাকাতের ভয়।

হা হা চোর ডাকাত? খেলা তো সবে মাত্র শুরু মিস তানহা। চোর ডাকাতের দেখেছটা কি? গলা ঝেড়ে হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললাম–

‘৭:৪০ বাজে’

যদিও আমার কাছে ফোন ছিলো, কিন্তু এই মুহূর্তে ফোন বের করে আমি ধরা পরার কোনো উপায় রাখতে চাইনা।

আমার উত্তরে বোধহয় তানহা সন্তুষ্ট হয়নি। ঠোঁট উল্টে আগের যায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। এদিকে আমার জান যায় যায় অবস্থা। আর একটু হলেই ধরা পরে যেতাম। এই শীতেও শরীর থেকে টপ টপ করে ঘাম বের হচ্ছে। কি বাঁচাটাই না বেঁচে গেছি। মাফলার টেনে বুকে দুই একবার ফু দিলাম।
🍁
🍁

… বাস আসতেই আমি তানহাদের আগে দ্রুত বাসে উঠে পড়লাম। লোকাল বাসের এই এক অসুবিধা, সামনের সিট একটাও খালি পাওয়া যায় না। তবে আজকে লোকাল বাসে উঠে আমার আনন্দের শেষ নেই। পেছনে মাত্র পাঁচটা সিট খালি পড়ে আছে। শেষের সিটে বসে আমি মনে মনে প্রার্থনা করছি যেনো তানহা আমার পাশেই বসে।

জানালা দিয়ে দেখলাম তানহাকে রেখে তার বান্ধবীরা এক প্রকার প্রতিযোগিতা করেই বাসে উঠছে। ওদিকে তানহা হা করে দাঁড়িয়ে আছে, কি হলো কিছুই হয়তো বুঝতে পারেনি বেচারি। তানহাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। যাক তবে, আজকে বুদ্ধি কাজে না লাগানোর জন্য তোমাকে আমার পাশেই বসতে হবে। বাসের হেল্পারের কড়া ডাকে তানহা দৌড়ে বাসে উঠে পরে। পেছনে আসতেই মিলি বললো–

— এখন কি করবি? বলেছিলাম না বাস আসলেই দৌড়ে উঠে পরতে! যা এবার পিছে গিয়ে বসে পর হা হা হা।

মিলির সাথে আজকে আমারও হাসতে খুব ইচ্ছে করছে। তবে যাই হোক, তানহার বুদ্ধিহীনতার জন্য আজকে আমার প্ল্যান ফ্লপ হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

মুখ ভারি করে ঠোঁট উল্টে আমার কাছে এসে তানহা বললো–

— এক্সকিউজমি, আমাকে জানালার পাশের সিটটা দেয়া যাবে প্লিজ?

আহ্, আগে থেকেই জানালার পাশে বসেছিলাম যেনো তানহার “প্লিজ” সম্বোধনটা শুনতে পারি। এভাবে প্লিজ বললে কি না করা যায়? আমিও না করতে পারলাম না। আর তাছাড়া কবি বলে গিয়েছিলেন, বাসে কোনো সুন্দরী মেয়ে জানালার পাশের সিট চাইলে দ্রুত ছেড়ে দিতে হয়, এই উক্তির কবিকে পেলে তাকে আজ পা ছুঁয়ে সালাম করতেও আমি দ্বীধাবোধ করতাম না । আমিও আর দেরি করিনি, তানহার দিকে একবার দৃষ্টি রেখে মাফলারটা ঠিক করে উঠে গেলাম নিজের সিট ছেড়ে। কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তেই হবে। আর তাছাড়া প্রেম করলে ছেলেদের সারাজীবনের জন্য জানালার পাশের সিট কুরবানী করতে হয়, এতে এতো মাথা ঘামানোর কিছুই নেই।

🍁
🍁

তানহার শ্যাম্পু করা চুলগুলি বাতাসে আমার চোখে মুখে এসে বারি খাচ্ছে, সেদিকে তানহার কোনো খেয়ালই নেই। সে ব্যস্ত প্রকৃতি দেখতে। আমার অবশ্য ভালোই লাগছে। লোকাল বাসের গুমোট গন্ধ আর পাবলিকের ঘামের বিচ্ছিরি গন্ধের মধ্যে থেকে কোনো মেয়ের শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ নিতে কার না ভালো লাগে তাও যদি হয় নিজের ভালোবাসার মানুষটার।

হ্যাঁ পুরো দমে ভালোবেসে ফেলেছি আমি তানহাকে। এ’কদিনেই মন বলছে কোনো পুরোনো সম্পর্ক আছে আমাদের মধ্যে। আর সম্ভম না তানহাকে ছাড়া থাকা, এক মুহূর্তও তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

বাস স্টপ থেকে বাস ছাড়তেই আমার বুক দুর দুর করে কাঁপছে। এখান থেকে সামনের স্টপেজে যেতে মাত্র বিশ মিনিট লাগে। তারপর কি হবে তা মনে হতেই আমার হাত পা কাঁপছে। তবে আজকে যদি আমি না পারি তাহলে আমি নিজের কাছে নিজেই হেরে যাবো। সো কুল তামিম কুল, শান্ত হ। তুই পারবিই তোকে যে পারতেই হবে। তানহাকে ভালোবাসার আজহার করতেই হবে’ আর তাই যা ভেবেছিস সেটাই বেস্ট তোর জন্য।

🍁

শুনেছি বাসে ছেলেরা নাকি একটু বেশিই ঘুমায়। কিন্তু আজ তানহাকে দেখে আমার সে ধারনা পাল্টে গেলো। বাসে উঠার দশ মিনিটের মাথায় সেকি ঘুম! ঘুমন্ত তানহাকে দেখতে আমার বেশ লাগছে। বাসে ছেলেদের কাঁধ বোধহয় মেয়েদের মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকার জন্যই তৈরী হয়েছে। না মানে তানহাকে দেখে তো আমার তেমনটাই মনে হচ্ছে। মেয়েটার চোখের পাপড়িগুলো বাতাসে ঢেউ খেলছে, গলার সাদা উড়নাটা সবটাই আমার গায়ে এসে পরে আছে; দু’হাতে আমার বাহু ধরে আছে, আহা কি সেই অনুভূতি। এমন দামি মুহূর্তকে ক্যামেরায় বন্দি করে রাখার কথা মোটেও ভুলিনি আমি। প্যান্টের পকেট থেকে চুপি চুপি ফোন বের করে দুই তিন এঙ্গেলে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। কিছু ছবিতে দু’জন একসাথে আর কিছু ছবিতে তানহাকে একাই রেখে দিলাম।

তানহার ঘুমন্ত ছবি তুলতে তুলতে কখন যে পরের স্টপেজে এসে পরেছি খেয়ালই করিনি। মাফলারটা ভালো ভাবে মুখে টেনে নড়ে চড়ে বসলাম আমি। তানহা তখনও আমার কাঁধে গভীর ঘুমে মগ্ন। ঘুমন্ত মেয়েটাকে জাগাতে মোটেও ইচ্ছে করছে না, থাকনা ঘুমিয়ে। আজ সারাদিন তো আর ঘুমোতেই পারবেনা।

স্যরি মিস তানহা, আমি জানিনা আমি এই কাজটা কেনো করছি। শুধু জানি আমাকে এটা করতেই হবে। তোমার সাথে একান্ত সময় কাটানো খুব প্রয়োজন আমার। তুমি জানবেও না এসব কিছুতে সম্পূর্ণ আমার হাত আছে। কি করবো বলো? খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। আর তুমি তো জানোই, ভালোবাসায় সবকিছু জায়েজ। তোমাকে পেতে হলে এইটুকু তো করাই যায় তাইনা? পরে নাহয় তোমার কাছ থেকে কান ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো।

মনে মনে তানহার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলাম ঠিক তখনই চলন্ত বাসটি থেমে গেলো। এই স্টপেজে বাসে উঠার মতো কোনো যাত্রী নেই দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তহলে বাস কেনো থামলো? তবে কি সময় হয়ে গেছে? আড় চোখে একবার তানহার দিকে তাকিয়ে নিলাম আমি। নাহ্ এখনও ঘুমিয়েই আছে মেয়েটা।

সিট থেকে উঠে বাসের সামনের দিকে গিয়ে দেখছিলাম কি হয়েছে, তখনই বাসের ভেতরে তিনজন বন্দুকধারীকে প্রবেশ করতে দেখলাম। দৌড়ে আমি আমার সিটে এসে তানহাকে ডাকতে যাবো ঠিক তখনই…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here