🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy #Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা #পর্ব(৪৩)

🍁আরহাম🍁#The_Innocent_Boy

#Writer-ফারহানা আক্তার রুপকথা

#পর্ব(৪৩)
_________
রাত অনেক এখন কাউকে ঘুম থেকে উঠিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়াটা নিশ্চয়ই খুবই বাজে কাজ হবে। কিন্তু কি করবো এর সাথে এক বিছানায় থাকাটাও তো সম্ভব হবে না। যতোই হোক ও একটা মেয়ে আর আমি ছেলে, আমি তো আর সিনেমার হিরো না যে নিজেকে সব সিচুয়েশনেই কন্ট্রোল রাখতে পারবো। ভাবতে ভাবতে আরহাম একটা টি শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।মিনিট কয়েকবাদে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মৃত্তির বিপরীত পাশে শুয়ে পড়লো। লাইট অফ করার আগ মুহুর্তে আরহামের নজর গেলো মৃত্তির ফোলা ফোলা গাল দুটোতে। একেবারে টমেটোর মতো দেখতে, আরহামের শান্ত মনে আচমকাই এক ভয়ংকর অদ্ভুত ইচ্ছা জেগে উঠলো। মৃত্তির গাল দুটোকে ছুঁয়ে দেখার। কিন্তু এই অদম্য ইচ্ছেটাকে মাটিচাপা দেওয়া জরুরি। করলোও তাই দ্রুত লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আর চোখে ধরা দিচ্ছে না।জেগে থেকে বেশ কিছুক্ষণ উসখুস করে উঠে গেলো সে বিছানা থেকে। তারপর বারান্দায় গিয়ে বেতের একটা চেয়ার ছিলো সেটায় গা এলিয়ে দিলো। বাইরে মৃদু বাতাসে বেশ খানিকটা সময় বসে থেকে বুঝতে পারলো চোখ লেগে আসছে তার। তাই এবার টলতে টলতেই রুমে এসে শুয়ে পড়লো।ঠিক ভোরের দিকে ঘুমটা যখন খুব আরামের তখনই মৃত্তির এক অবাঞ্ছনীয় কাজ আরহামের ঘুমটাকে নষ্ট করে দিলো।ঘুমের ঘোরে মৃত্তি আরহামের গলা পেঁচিয়ে ধরলো। আর ধরার স্টাইলে একটু বুঝতে বাকি রইলো না এই মেয়ে তাকে নিজের কোলবালিশ ভেবে জড়িয়ে আছে। আরহাম তো চোখ খুলেই মৃত্তির দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু তাতে লাভ কি ঘুমের মানুষ নিশ্চয়ই কোন কিছু দেখতে পায় না। মনে মনে ভাবছে একে তুলে একটা আছাড় দেওয়া দরকার কিন্তু এখানেও সে অপারগ। অনেক কষ্টে আবারও কিছু সময় ঘুমিয়ে নিলো। তবে এবার ঘুম মৃত্তির জন্য নয় মায়ের জন্য ভাঙলো।

-আরহাম এই আরহাম উঠ বাবা কতো বেলা হয়ে গেছে এতো কিসের ঘুম তোর বুঝি না।(মা)

চোখ কচলাতে কচলাতে আরহাম শোয়া থেকে উঠে বসলো।পাশেই মা দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু একি দরজা খুললো কি করে মা! কয়েক সেকেন্ডেই খেয়াল হল সে বিবাহিত, এক উটকো ঝামেলা এসেছে তার ঘাড়ে। সেই ঝামেলাও এখন পাশে নেই মানে ঝামেলাটাই দরজা খুলে দিয়েছে।

কি হলো আবার বসে আছিস কেন জলদি উঠ আবার তো শপিং করতে যেতে হবে।(মা)

কিসের শপিং মা? আর এতো সকালে কি শুরু করলে বলো তো? (আরহাম)

এখনও কিছুই শুরু করি নি আহনাফ বলেছে সে এসে সব করবে। আমরা শুধু মৃত্তি আর তোর জন্য শপিং করবো।(মা)

আরহাম বিছানা ছাড়তে ছাড়তে হাতে তোয়ালেটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো । আপাতত মায়ের সাথে পাগল হওয়ার মতো তার কাছে টাইম নেই।কিন্তু পাগল সে সত্যিই হয়ে গেলো যখন দেখলো ঘড়িতে ঠিক এগারোটা বেজে গেছে।এতো বেলা অব্ধি সে কি করে ঘুমালো!পেটেও খুব খিদে কিন্তু আপাতত খিদেটাকে দমিয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে ভার্সিটি চলে গেলো। আজ তার মাত্র দুইটা ক্লাস তাতেও সে প্রথমটায় লেইট।

মৃত্তি শ্বশুড় কে নাস্তা খাইয়ে উনার মন জয় করে ফেলেছে। যদিও নাস্তা বানিয়েছে শ্বাশুড়ি মায়েরা। কিন্তু খুব মিষ্টি মিষ্টি গল্প আর যত্ন করে খাওয়ানোতেই বড় বাবা খুব খুশি মৃত্তির ওপর।ওনার আজ মৃত মেয়ে সায়নীর কথা মনে পড়ে গেছে। সায়নীও ঠিক এমনভাবেই ওনাকে খাবার খাওয়াতেন। হাজারটা কথা বলে কখনো কোন শাসন করে যেন তিনিই ছেলে আর সায়নী মা। নাস্তা করার সময় বড় বাবার চোখ দু’টে ছলছল করছিলো মৃত্তি দেখেছে। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি।সবাই নাস্তা সেরে তৈরি হচ্ছে শপিং করতে যাবে। সবাই বলতে বড় মা, শ্বাশুড়ি মা আর মৃত্তি। বড় বাবা বাড়িতে একা থাকবে। আর এই মহিলাদের নিয়ে যেতে আরহামকে কল করা হয়েছে।ক্লাস শেষ তবুও সে শপিং এ নিয়ে যাবে না বলে মিথ্যা বলেছে তার আরও ক্লাস আছে।মৃত্তি কাল জিনিয়ার সাথে বেশি কথা বলতে পারেনি আরহাম রুমে চলে এসেছিলো তাই ভাবলো এখন বলা যাক সুযোগে খবর নেওয়া যাবে। আরহামের আর ও কোন ক্লাস আছে কিনা?

দু’বার কল বাজলো কিন্তু জিনিয়া রিসিভ করেনি।কিছুক্ষণ বাদে মেসেজ আসলো সে শপিংমলে আছে গ্রামে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে।

মৃত্তি রিপ্লাই করলো কোন শপিংমলে?
জিনিয়াও কোথায় আছে জানাতেই মৃত্তি তার মাকে কল দিলো । শপিং এ যাওয়ার জন্য মাকে বলতেই মা তৈরি হয়ে তাদের গেটের নিচে গাড়িতে ওয়েট করতে লাগলেন। আর মৃত্তি শ্বাশুড়িদের এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো।

শপিংমলে পৌঁছে মৃত্তি জিনিয়াকে কল দিলো জিনিয়া কল রিসিভ করে বলল সে কোথায় আছে। আর মৃত্তিও মা আর শ্বাশুড়িদের বিয়ের শাড়ি পছন্দ করতে বলে নিজে জিনিয়ার কাছে গেল।

জিনিয়া একটা কসমেটিক শপে ছিলো মৃত্তি শপে ঢুকতেই অবাক! জিনিয়ার পাশে দাঁড়ানো সাদনানকে দেখে।

সাদনানের চোখেই আগে পড়লো মৃত্তি আর সে শালি সাহেবা বলে ডেকে উঠলো। জিনিয়া ও এবার ফিরে তাকালো।

কিরে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছিস কেন! কেমন আছিস?(জিনিয়া)

এইতো ভালো, তুই বল? (মৃত্তি)

বাহ্ শুধু বান্ধবীকেই জিজ্ঞেস করছেন আর এখানে যে উনার বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে তাকে কি চোখেই পড়েনি?(সাদনান)

ওহ স্যরি আপনি কেমন আছেন?(মৃত্তি)

আমি তো খুব ভালো আছি লাইফলাইন সাথে নিয়ে ঘুরছি খারাপ থাকি কি করে!(সাদনান)

হুম তা তো ঠিক বলছেন তবে আপনি আমাকে চিনলেন কি করে! মানে আমরা তো পূর্বে কখনো পরিচিতো হইনি।(মৃত্তি)

ওওও শালি সাহেবা বিংশ শতাব্দীতে আপনার এমন প্রশ্ন সত্যিই হাস্যকর। অফকোর্স ছবি দেখেছি আপনার। (সাদনান)

জিনিয়া এতোক্ষণ খুব মনোযোগে মৃত্তির কথা শুনছিলো আর অবাক হচ্ছিলো। কতোটা চেঞ্জ হয়ে গেছে এই এক সপ্তাহে। আর কতোটা স্পষ্ট ভাবে শুদ্ধ শব্দে কথা বলছে। জিনিয়ার চাহনির ভাষা বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি মৃত্তির। দু’জন দু’জনের মুখের আগেই চোখের ভাষা বুঝতে পারে এটাই তাদের বন্ধুত্বের বিশেষত্ব।
মৃত্তিও ইশারা করলো সাদনানের দিকে তাই জিনিয়া বুঝতে পারলো সাদনান সামনে বলে মৃত্তি এভাবে কথা বলছে।তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে জিনিয়া কানের দুল পছন্দ করছিলো আর সাদনানও বারবার জিনিয়ার গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছিলো। ব্যাপারটাতে জিনিয়া খুব উসখুস করছে আনইজিও ফিল করছে তা চোখে পড়লো মৃত্তির। একপর্যায়ে সাদনান একজোড়া চুড়ি নিয়ে কিছুটা জোড় করেই জিনিয়ার হাতে পড়াতে যাচ্ছিলো আর মৃত্তিরও খুব রাগ চড়ে গেলো দেখে। মৃত্তি কিছুটা সামনে এগিয়ে যেই সাদনানকে কিছু বলতে যাবে তখনি সাদনানের মোবাইল বাজলো। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে কেমন জানি চুপসে গেল সাদনান। মৃত্তি, জিনিয়া দুজনেই খেয়াল করলো।

“আচ্ছা তোমরা কেনাকাটা করো আমি একটু আসছি জরুরি কল” বলেই সাদনান বেরিয়ে গেলো। আর মৃত্তিরও কল বাজছে তার মা কল করছে। মৃত্তি জিনিয়াকে নিয়ে চলে গেলো যেখানে মা, শ্বাশুড়িরা ছিলো।

দুই শ্বাশুড়ির হাতে দুইটা গর্জিয়াস লেহেঙ্গা। একটা অফ হোয়াইট,একটা লাল রঙের। দুজনই চায় বিয়ের দিন তাদের পছন্দেরটা পড়বে মৃত্তি। আর মৃত্তির মা দুজনের চয়েজের মাঝে ফেঁসে গেছে কারটা বিয়ের জন্য পারফেক্ট বলবে বুঝতে পারছে না। দোকানদার আর তার কর্মচারীরাও অবাক। এক বউয়ের জন্য দুই লেহেঙ্গা নিয়ে কেমন মন কষাকষি চলছে শ্বাশুড়িদের। মৃত্তি আর জিনিয়া যে কথা বলতে দেখা করতে চেয়েছিলো তা আর হলো না।প্রথমে সাদনান পাশে ছিলো আর এখন শ্বাশুড়িদের কান্ড দেখে সে পাগল প্রায়। জিনিয়া তো খুব হাসছে আর মৃত্তির মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

অনেক কথা কাটাকাটির পর দোকানদার বলে উঠলো আপনারা বউ আর বরের পছন্দ জিজ্ঞেস করেন তারা কি চায়। এবার দুই শ্বাশুড়িই মৃত্তির দিকে তাকালো। মৃত্তি আগেই বলে দিলো আমি কিছু জানি না আপনারা যা বলবেন তাই।বড় মা মৃত্তির কথা শুনে আরহামের মা কে বলল আয়শা ছেলেকে কল কর। তিনিও তাই করলেন।

আরহাম কল রিসিভ করতেই বড় মা তার মায়ের হাত থেকে মোবাইল কেঁড়ে নিয়ে, “বড় মা বলছি বাবা বলতো অফ হোয়াইট কালার বেশি ভালো লাগে বউদের নাকি লাল কালারে!”
বড় মায়ের কথা শুনে কিছুটা ভ্যাবাচেকা অবস্থা আরহামের। সে ম্যানেজারের সাথে কথা বলছিলো কিন্তু তার চেহারার হাল দেখে ম্যানেজার সাহেব প্রশ্ন করলেন “স্যার কোন সমস্যা”?

চলবে

(খুব চেষ্টা করেছি গল্পটাকে বড় করে আর ভালো করে লিখতে কিন্তু একেবারেই পারছি৷ না।মনের ওপর জোর খাটানো সত্যিই দুঃসাধ্য। যাই হোক, আপনাদের কাছে আমার একটাই রিকুয়েষ্ট প্লিজ আমার কোন গল্প যখনই মনে হবে অন্য কারো গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে বা কপি করা মনে হচ্ছে তো কমেন্টে আমাকে অবশ্যই জানিয়ে উপকৃত করবেন আশা করি।)