তুই_আমারই_থাকবি💜 #Esrat_Jahan💜 #Part_18

0
521

#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_18
!
‘আমি তো পড়াতেই পারি,তাই না?

না না,আপনাকে পড়াতে হবে না,আমিই পারি।

নাহ!আমাকেই পড়াতে হবে। তুমি তো আর পড়বে না!

কে বলেছে পড়বো না?আমি পড়ছি।

রিয়েলি?

হ্যাঁ হ্যাঁ!

যাক,তোমাকে বিশ্বাস করা যায়! সো পড়বে কখন?

বিয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে?

হুম,না মানে একটু পর!আপনি যান…..

বোকা পেয়েছ আমাকে?আমি যেই রুম থেকে বের হবো ওমনি তুমি দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে?তাই না?

আমি অবাক হলাম,উনি আমার প্ল্যান জানলো কী করে?বললাম,না না!

যাইহোক, তুমি পাঁচমিনিটের মধ্যে রেডি হও!নইলে যা করার আমি করবো!

আরে আমি বলেছি তো পড়বো!

পড়বে যখন এখুনি পড়তে হবে।আর আমি কোথাও যাচ্ছি না।সো…. বুঝে নাও!

আর কোনো উপায় না দেখে আমি শাড়ি হাতে নিয়ে রেডি হয়ে এলাম।উনি আমাকে দেখেই বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,বাহ!

আমি ভেঙচি কেটে দিলাম।উনি চুলগুলো স্পাইক করতে করতে বললেন, আমরা হলাম বেষ্ট কাপল, তাই না?

আমি উনার দিকে ফিরে বললাম, মোটেও না।আপনার মতো লম্বু ছেলের সাথে আমার মতো ছোটখাটো মানুষকে ম্যাচ হয় না।সো আমরা বেষ্ট কাপল না।বেস্ট কাপল হলো আনিকা-সাদাফ ভাইয়া!আপু আর আরহাম ভাইয়া!আর আমি আর আপনি হলাম চুইক্কা কাপল!

উনি রেগে বললেন, মোটেই না!তুমি এক নম্বরের ফালতু মেয়ে।ডাফার একটা!যাও কচু গাছের সাথে গিয়ে ফাঁসি লেগে……

ওয়েট, ওয়েট!আপনি তো কচু চিনেন না।দেখতে চান?আসুন,দেখিয়ে আনি আপনাকে।

কচু গাছ?কোথায়?

এইতো আমাদের বাসার পিছনেই!চলুন।দাঁড়ান আগে একটু সাজগোজ করি!

নাহ!সাজগোজ করতে হবে না।এমনিতেই বেশী সুন্দরী লাগছে।

বললেই হলো নাকি?

হুম!একটু পর ভাইয়ার একটা ফ্রেন্ড আসবে,বুঝলে?ওই ছেলে এক নম্বরের খারাপ।মেয়ে দেখলেই ছোক ছোক করবে।তাই বলছি।তোমাকে দেখতে এখনই যা ড্যাশিং লাগছে তাতেই ওই ছেলে হার্ট এট্যাক করবে।আর সেজো না প্লিজ।জানি না ওই ছেলে সবসময় কেন আমার জিনিসের দিকে নজর দেয়।

আরহাম ভাইয়া কিছু বলে না?চলে কেন?

ভাইয়া জানে না!লণ্ডনে একবার এক মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিলো আর আমার সামনে পড়ে যাওয়ায় আমি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম ওকে।তারপর থেকেই ও আমার জিনিসের দিকে নজর দেয়।ভাইয়া এসব কিছুই জানে না!ভাবে,ও বুঝি ভালো ছেলে!

ওহহহ…..

যাইহোক, তুমি অতিরিক্ত ভুত্নী সেজো না!এমনিতেই পরী পরী লাগছে,বেশী সাজলে ভুত্নী-পেত্নী লাগবে এবার!

আমি উনার কথা শুনে হেসে দিলাম।উনি আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কেমন করে! নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে হঠাৎ করেই আচমকা উনি বলে উঠলেন,’আমি ভালোবাসি গো!’

আমি হাসি থামিয়ে…… বললাম,কি বললেন?

তুমি কি কালা?শুনতে পাওনি?নাকি আবার শুনতে চাইছো?

আপনি কি বলেছেন একটু আগে?

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন, ভালোবাসি বলেছি!

আমি ভাঙ্গা গলায় কাঁদো কাঁদো হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কাকে ভালোবাসেন?

বাসি একজনকে?বাট তোমাকে বলা যাবে না!

কেন?আমি তো আপনার ওয়াইফ!আমার জানার অধিকার আছে!রেগে….

উনি স্পাইক করা চুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে বললেন,সো হোয়াট?আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম তোমাকে বলবো কেন?ওর সাথে আজ রাতে ডেটে যাবো!কে তুমি?

আমি আচমকা রেগে উনাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে উনার উপর উঠে বসলাম।শার্টের কলার ধরে চিল্লিয়ে বললাম,কিহ?তুই কি বললি?তোর গার্লফ্রেন্ড আছে?তুই ওর নাম বলবি না আমাকে? ঘরে বউ রেখে তুই ডেটে যাবি?এতবড় স্পর্ধা তোর?

উনি আমাকে ছাড়াবার চেষ্টা করে বললেন,ওহহ…নো।তুমি আমার এত সুন্দর সাজগোজ নষ্ট করে দিলে?আমার বাবুটার সাথে আমি আজ ডেটে যাবো,ও কী ভাববে?

আমি দ্বিগুণ চিল্লিয়ে বললাম, কিহ?তুই তোর বাবুর সাথে আজ ডেটে যাবি?ওর জন্য এমন হ্যান্ডসাম সাজ দিয়েছিস?ওহহ.. তলে তলে তুই পরকীয়াও করিস,আর আমি জানি না?

তুমি কে?তোমাকে জানাবো কেন?

দাঁড়া, ঘরে বউ রেখে তুই ডেটে যাবি?তোর ডেটে যাওয়া বের করছি আমি।বলেই,স্পাইক করা চুলগুলো এলোমেলো করে দিলাম।তারপর দেখি,উনাকে এই এলোমেলো চুলে আগের চেয়েও বেশী হ্যান্ডসাম লাগছে।তাই আর কিছু না করে আমি মন খারাপ করে শার্টের কলার ধরে আগের মতোই বসে আছি।

উনার গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যথা অনুভূত হচ্ছিলো। উনি কেমন করে পারলেন আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে?ঠিকই তো,কে আমি?এমন করছি কেন আমি?উনার মতো ছেলের জন্য আমি হয়তো পারফেক্ট না,উনি আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন।আমার মতো ভ্যাবলি,বোকাসোকা মেয়ের সাথে উনাকে মানায় না।কিন্তু আমি যে উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি!
উনাকে দেখেও তো মনে হয় যে উনিও আমাকে ভালোবাসেন।কিন্ত?হয়তো এটা উনার আমার প্রতি মোহ!আমার উচিৎ উনার কাছ থেকে দূরে থাকা!হুম সেটাই ভালো হবে,আমি কারো জীবনে উটকো ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না। অতিরিক্ত রাগ,ভয়,হতাশার চোটে আমি হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।

আমাকে কাঁদতে দেখে উনি চমকে জিজ্ঞেস করলেন,কাঁদছো কেন?কি হয়েছে? বলো আমাকে!

আমি কেঁদেই চলেছি।দু হাতে মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে বসে আছি আর ফুপাচ্ছি!উনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন,কি হয়েছে?চুপ করো প্লিজ!

হঠাৎ করেই উনি আমাকে উনার বুকে টেনে নিলেন।আমি উনার হার্টবিটের কাপুনি শুনতে পাচ্ছি।তবুও আমার কান্না থামছে না।

উনি ম্লান গলায় বললেন, কান্না থামাও প্লিজ।আমার কেমন অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।এভাবে কাঁদতে হয় না সুগন্ধা!

আমি উনার কন্ঠ শুনে চমকিত হলাম।কিছু বলতে যাবো তখনই উনার গার্লফ্রেন্ড এর কথা মনে হলো। আর আমি ধাক্কা দিয়ে উনার বুক থেকে সরে আসলাম।মুখচোখ মুছে, কাপড় ঠিকঠাক করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি।আর উনি আমার কান্ড দেখে হতবিহ্বল হয়ে আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছেন।থাকুক না মানুষ নিজের মতো!যার যার জীবন তাকেও সাজাতে দেয়ার অধিকারটুকু দিতে হয়।নইলে জীবন হয়ে যায় একঘেয়ে, আনন্দহীন!আর আমি কাউকে বেঁধে রাখতে চাই না!
!
রুম থেকে বেরিয়েই খেলাম এক ধাক্কা। নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই দেখি একটা ছেলে আমার দিকে বাজেভাবে তাকিয়ে আছে।আমি চলে যেতে নিলেই লোকটা বলল,হাই বেবি!
!
আমি বিরক্তি নিয়ে পেছনে ফিরে বললাম,রাসকেল কোথাকার!
!
ওহহ…বেবি!তোমার কথাগুলো কি মিষ্টি!
!
আমি রেগে কিছু না বলেই অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনের দিকে পা বাড়াতেই লোকটা আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। আমি হতবাক হয়ে গেছি এমন কান্ডে।
!
বাক্যহারা হয়ে কিছু বলার আগেই দেখি,আবরার গুন্ডা এক ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে নিচে ফেলে দিলো।রেগে চিৎকার করে বললো, ইউ ডাফার!তোর সাহস কি করে হয় আমার ওয়াইফের আঁচল ধরার?
!
লোকটা নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শয়তানি নোংরা একটা হাসি দিয়ে বললো, ও মাই গড আবরার!এই সুন্দরী তোমার বউ?তাই জন্যই তো আমার ওকে এতো পছন্দ হয়েছে।জানোই তো,তোমার সবকিছুতেই আমার নজর একটু বেশি!
!
উনি রেগে ঠাস করে এক থাপ্পড় দিয়ে বললেন, আএ একটা কথা বললে তোকে কি করবো তুই ভাবতেও পারবি না।
!
আমি আকস্মিক এসব কান্ড দেখে চুপ করে রইলাম।

তোমার বউকে যদি আমি আমার করে নিতে না পারি তাহলে আমার নামও রাফাত নয়!
!
উনি রেগে ওই লোকটার কলার ধরে দেয়ালে চেপে ধরে বললেন, কিহ?তুই কি বললি?তোর এতো বড় স্পর্ধা?তুই এই কাজ কেন তোর মুখ থেকে যদি এমন কথা আর একটাও বের হয় তাহলে তোকে আমি জ্যান্ত পুতে দেব!বলে এমন জোরে ধাক্কা দিলেন যে,দরজার সাথে বারি খেয়ে মাথা ফেটে গেলো।লোকটা মাথা চেপে ধরে আহ শব্দ করে মাটিতে পড়ে রইলেন।
!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।হতভম্ব ভাবটা কাটিয়েই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি উনার মাথা ফাটিয়ে দিবেন,এটুকু কথায়!
!
অফকোর্স দেবো।আরে তুমি জানো না ও কে…
!
কে ইনি?
!
এই শয়তানটার কথাই বলেছিলাম তোমাকে।
ওর মতো খারাপ একটা লোক কখনো মানুষ হবার নয়।
!
কিহ?এটাই এই লোকটা? এতো খারাপ? ছিহ!

শুধু ওর এটুকু রুপ দেখলে আর সবটা যদি শুনো তাহলে ঘেন্নায় ওর দিকে তাকাতেই ইচ্ছা হবে না তোমার।

আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম।মেহমানরা সবাই সামনের দিকের ড্রইংরুমে আর আমরা যেখানে আছি সেদিকে কেউ নেই,তাই রক্ষা।আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে বললাম,এই ফাজিল লোকটাকে বাসা থেকে বিদায় করেন প্লিজ।আমি চাইনা আপুর বিয়েতে কোনো সিনক্রিয়েট হোক!

উনি কিছুক্ষণ ভাবলেন,তারপর মাটিতে পড়ে থাকা শয়তান লোকটাকে তুলে একপ্রকার থ্রেট দিয়ে বাসা থেকে বিদায় করলেন।যাবার আগে শয়তানটা ও হুমকির ভাষায় কিছু একটা বললেন যেটা আমি শুনতে পাইনি।

এতবড় একটা ঘটনা ঘটার পর নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম।আপুর বিয়ে বলে কথা।

যাইহোক আমি ভাবনা চিন্তা দূর করে একমনে বিয়ে এনজয় করছি।আর উনাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছি।যত বারই উনি কথা বলার চেষ্টা করছে আমি ততবারই নানা বাহানায় উনাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছি।

একসময় বিয়ের পর্ব শেষ হলো। আমি চোরাচোখে আশেপাশে দেখলাম উনি কোথায়,কিন্তু দেখতে পেলাম না।আসলে অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি না।

উনাকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজেও যখন পেলাম না তখন হাল ছেড়ে দিলাম।সবাই আপু আর আরহাম ভাইয়াকে নিয়ে হাসাহাসি করছে,কথা বলছে।আমিও সেদিকে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই একটা মেয়ে এসে বললো, আপনাকে একজন বাইরে যেতে বলেছে।

কে?সন্দিহান গলায়।

তা বলতে পারবো না,নিষেধ আছে।

কেন?

স্যরি।বলেই মেয়েটা হুট করে চলে গেলো।

আমি ভাবছি আমাকে আবার কে ডাকবে?এতো রাতে?আর বাইরেই বা কেন যেতে বলেছে? কেউ কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে….. না না। এসব আবার কি ভাবছি?ধুর….

ঠিক করলাম যাবো না।কে না কে ডেকেছে তাতেই হুট করে বাইরে চলে যাবো এতোটা বোকাও আমি নই।যার দরকার সে নিজে থেকে আসবে।হুহ…

প্রচুর খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সারাদিনে পেটে কিছু পড়েনি আমার।আম্মু জোর করে খাইয়ে দিলো।

সোফায় বসে চোরাচোখে তাকিয়ে খুঁজছি গুন্ডাটাকে,কিন্তু উনি লাপাত্তা।আজব!কোথায় উনি?

ঠিক এমন সময় রোগা-সোগা একটা মেয়ে এসে আগের মেয়েটার মতোই এক কথা বললো।

এবার আমার সন্দেহ হচ্ছে।তাও ভাবলাম যাই,দেখে আসি,কার এতো দরকার আমাকে।

যেই ভাবা সেই কাজ।আম্মুকে কিছু একটা বুঝিয়ে অনেক কষ্ট করে বেরিয়ে এলাম।বাসার সামনের রাস্তাটায় কাউকে দেখতে পেলাম না।একটু সামনে গিয়ে খুঁজে আসলাম বাট কেউ নেই।ফিরতে গেলেই পেছন থেকেই হাতে টান অনুভব করলাম।চেনা চেনা অনুভূতি আরো গভীরভাবে চেনা হয়ে বুকে গিয়ে লাগলো। উনি ভ্রু কুঁচকে নাক উঁচু করে মন উজাড় করা প্রিয়ময় অদ্ভুত রঙ্গিন হাসিটা দিয়ে বললো,এতক্ষণে এলে?কখন খবর পাঠিয়েছি?দুবার ডাকার পর এলে?

ওহহ…যে সে যখন তখন ডাকবে আমি সুড়সুড় করে চলে আসবো, তাই না?রেগে।

যে সে না,তবে আমি ডাকলে যে আসতে হবেই।

আজব! আমি কি জানতাম নাকি যে আপনি ডেকেছেন?

বুঝো না?যে আমি ডেকেছি?কানেক্টিভিটি আছে তো তোমার আমার মাঝে!আমি কিন্তু বুঝি।

কচু বুঝেন।

উনি গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললেন, বাই দ্যা ওয়ে,চলো।

কোথায়?

কচু দেখাতে!

এখন?

কেন?

না মানে, এতো রাতে?

এটা কোনো প্রবলেমই না!

তাহলে আসুন।

চলো।আচ্ছা,তোমার মন কি খুব খারাপ?

কেন?
।।
না ওই শয়তানটা যা বিহেভ করলো তোমার সাথে,সেজন্য জানতে চাইছি।

প্রথম প্রথম মন খারাপ লাগছিল।এখন ওই লোকের উপরই রাগ হচ্ছে।শালা বজ্জাত।

উনি হেসে বললেন, বাহ!কি গালি!

আচ্ছা,ওই বজ্জাত যাবার সময় আপনাকে মিনমিনিয়ে কি বলছিল?

এই কথা শুনে উনার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কিছু না।

মিথ্যা কথা।

যা মনে হয়!

আমি ভেংচি কেটে দিলাম।

উনি হেসে বললেন, আসলেই তুমি সো কিউট!একটা চুমু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

উনার কথা শুনে রেগে বললাম, ফাজলামো করেন?

নাহ।বউয়ের কাছ থেকে আদর…..

উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমরা কচু বাগানে চলে এসেছি। আমিও উনাকে থামিয়ে বললাম,এইতো চলে এসেছি কচু বাগান।

এটা?

হুম।তারপর একটা কচু পাতা হাতে নিয়ে বললাম,এই যে এই লাভ শেইপের যে পাতাটা দেখছেন এটাই কচু পাতা।এই পাতার উপর পানি লাগে না কখনো। বৃষ্টি হলে এরউপর পানি পড়লেও সেগুলো গড়িয়ে পড়ে যায়,কিন্তু কখনোই ভিজে না।অনেকে এটাকে ছাতা হিসেবে ইউজ করে,তবে সেটা একান্তই কোনো বিপাকে পড়লে আরকি।

উনি মুগ্ধ হয়ে আমার কথা শুনে বললেন,তুমি কি ভার্সিটির লেকচারার?যেভাবে বলছো!

হুহ!আমার ঠ্যাকা পড়ছে।আমি আসলে বুঝাচ্ছিলাম।

বাদ দাও।এটা তো মানে এই কচু গাছ তো নিজের জীবন নিয়েই বিপাকে, শুকনো কাঠি,বাতাস একেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে।তাহলে সবাই এই গাছের সাথে ফাঁসি লাগতে বলে কেন?হাউ?এতো মানুষের ভারই নিতে পারবে না!

আমি উনার বেক্কল মার্কা কথায় হেসে দিলাম।বললাম, আপনাকে এত বুঝতে হবে না।দেখতে চেয়েছিলেন দেখিয়েছি।এখন এতো রাতে আপনার গবেষণা বন্ধ করুন।আর বাসায় ফিরে গিয়ে ধন্য করুন!

কেন?

আরে আজব তো!ঢ্যাঙ্গার মতো লম্বা শরীর নিয়ে সারারাত কি কচুবাগানে বসে থাকবেন? যত্তসব।

এই পকপক বন্ধ করো তো।এত সুন্দর একটা রাতে হাওয়া খেতে বেরুলাম আর তুমি পকপক শুরু করলে?বিরক্তিকর।

ওহহ…আমি তো বিরক্তিকরই।থাক,আমি হাওয়া খান একা একা,স্যরি গার্লফ্রেন্ডকে ফোন করে দেখাতে ভুলবেননা কিন্তু।

বাট গার্লফ্রেন্ড তো অলরেডি দেখে ফেলেছে!

আমি উনার কথাটা ধরতে পারলাম না।আস্তে করে কিছু বলার আগেই আকাশে ঝিলিক দিলো বিদ্যুৎ!
আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। আমি উনাকে বললাম, আসুন বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে!!

বৃষ্টি হলে আমি কি করবো?

মানে?বৃষ্টি হলে কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজবেন নাকি?

ভিজলে কি হবে?

মানে?

ভিজলে কি হবে?কিছু তো হবে না?তাহলে বাসায় গিয়ে কি করবো?এমনিতেই তোমাদের বাসায় একগাদা মানুষ! আমার তো দমবন্ধ হয়ে আসছিলো,মাই গড!
উনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন।

উনার অবস্থা দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো।আমি মিটিমিটি করে হাসছি।আর উনি তাকিয়ে আছেন।হঠাৎ করেই কচু পাতার সবচেয়ে বড় একটা পাতা নিয়ে আসলেন।

আমি ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বললাম, কি?এতে কি হবে?

কাজ হবে।

কিসের কাজ?

বৃষ্টি হলে ছাতার কাজ করবে,তুমিই তো বলেছিলে।এখন এক্সপেরিমেন্টটা করে ফেলি।

অসহ্য। এত রাতে ঢ্যাঙ্গা শরীর নিয়ে করবে নাকি এক্সপেরিমেন্ট। বলি,রাস্তাঘাট কি আপনার এসব ফালতু এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য তৈরি করা হয়েছে?

মোটেও আমায় ঢ্যাঙ্গা বলবে না।আমি যথেষ্ট ফিট।
জানি জানি।লম্বায় দশহাত,দেখলে মনে হয় বাঁশগাছের বাঁশ!

তুমি কিন্তু আমায় ইনসাল্ট করছো।রেগে বললেন!

ওকে বাদ দেন।এখন যাবেন কিনা বাসায়, বলুন।

উনি রেগে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, না যাবো না।তোমাকেও যেতে দেব না।বৃষ্টি আসলে আসুক না আসলে নাই।এখানেই থাকবো।

আরে কি মুশকিল।

এই,পকপক বন্ধ না করলে এক থাপ্পড় দেব।

কচু!

উনার এসব আবালের মতো কাজকর্মে আমি ভীষণ বিরক্ত হলাম,কথা না বলে চুপ করে বসে আছি একটা বেঞ্চিতে।আর উনি পাশে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে এদিক ওদিক দেখছেন।

হঠাৎ করে বাতাস বেশ জোরে বইতে লাগলো। গাছের পাতা উড়ছে অবিরাম।আমি বিরক্তি নিয়ে মাঠের সেই বেঞ্চিতেই বসে আছি।উনি খুশি খুশি গলায় বললেন,ওয়াও!কি সুন্দর ওয়েদার।ফ্যান্টাসটিক।

এমন করছেন কেন?জীবনেও দেখেননি নাকি?আজব!

আবার পকপক? বলতে বলতে আমার মুখের দিকে তাকালেন।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বাতাসে উনার চুল উড়ছে অবিরাম।আমি মাথা নিচু করে চুটকি বাজিয়ে বললাম, কি মিয়া?ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন?

উনি কিছু না বলে আবারও তাকিয়ে রইলেন।

ভূতে ধরলো নাকি?আমি মনেমনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলাম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছি।ভাবছি উনাকে রেখেই সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে বাসায় চলে যাবো।নইলে উনার ভূতটা আমার ঘাড়েও চাপবে!

আড়চোখে তাকিয়ে দেখি সেই, উনি তাকিয়েই আছেন।

আয়াতুল কুরসি পড়ে ভাবলাম দৌড় শুরু করি।যাই ভাবা সেই কাজ।চোখ খুলে দেখি উনি আমার মুখের কাছে এসে বসেছেন,আমার পাশে।আমি ভাবলাম এইবার শেষ!

উনি ধীরে ধীরে আমার চুলে হাত দিলেন।ভাবলাম শেষ, ঘাড় মটকে রক্ত খাবেন এবার।কিন্ত না, তা না করে হাতটা নিয়ে আসলেন সামনে।তাকিয়ে দেখি একটা পাতা,তাও শুকনো।হয়তো উড়ে এসে মাথায় লেগে গিয়েছিলো।

উনি হু হা করে হেসে বললেন,ভয় পেয়েছিলে বউ??

আমি মুখ কালো করে উনার চুল টেনে ধরে বললাম,এই ছিলো তোর মনে? আর আমি কি ভয়ই না পেয়েছিলাম।

কিহ বললে তুমি?তুইতুকারি করছো কেন?

ভয় দেখালি কেন?

আমি কাউকে ভয় দেখাইনি।তুমি নিজেই ভয় পেয়েছ।এখন তার দায় আমার উপর চাপাতে চাইছো।

তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?

আমার বউ!আমার যখন ইচ্ছা তাকাবো। তুমি বলার কে?চুল ছাড়ো আমার।

তাহলে শুনে রাখ!আমিও আমার বিলেতি বরের চুল ধরেছি।ছাড়বো না।

তুইতুকারি করছো কেন?

আমার ইচ্ছা।প্রথমদিন তুইও তো আমাকে তুইতোকারি করেছিলি।ভুলে গেলি?

না, অবশ্য তুইতোকারি করলেও প্রবলেম নেই।ইচ্ছে করলে তুমিও বলতে পারো!

আমি উনার চুল ছেড়ে দিয়ে রিল্যাক্স হয়ে বসলাম। বললাম, এই পাতাটার জন্য এতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আর আমি ভেবেছিলাম কি না কি,আপনাকে বোধহয় ভূতে পেয়েছে। বাবারে বাবা।

আর তুমি ভয় পেয়ে আমার থেকে পালাতে চেয়েছিলে।বলেই হা হা করে হাসতে লাগলেন।

আমি উনার হাসি দেখছি একমনে।এমন সময় আকাশ ভেঙ্গে নেমে এলো জল।উনি তাড়াতাড়ি কচুপাতা দিয়ে উনার মাথা আমার মাথা ঢাকলেন।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।উল্টো একটা দমকা হাওয়ায় কচু পাতা যে কোথায় উড়ে গেলো তার ইয়াত্তা পাওয়া গেলো না।

আমি রেগে কটমট করে তাকালাম।উনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ততক্ষণে দুজনেই ভিজে চুপচুপ।আমার সালোয়ার কামিজ,ওড়না সব ভিজে গিয়েছে।আর উনার পরণের পোলো শার্ট,হাফ প্যান্ট আর বিখ্যাত লুপার ভিজে চুপসে গিয়েছে।

কি হলো এটা?আপনার এসব ফালতু এক্সপেরিমেন্ট এর কবলে পড়ে সব হয়েছে।যত্তসব।

এখন তো সব আমারই দোষ, তাই না?আমি কি আটকে রেখেছিলাম তোমাকে?

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। গিরগিটি বলে কি?এমন মিথ্যুক, নিজেই জোর করে আমায় বাসায় যেতে দেয়নি এখন বলে উনি নাকি আমায় আটকে রাখেননি।

আমি কটমট করে তাকানোর আগেই উনি তুলে নিলেন আমাকে উনার কোলে।তারপর হেঁটে চললেন বাসার দিকে।

আমি হাত পা ছুড়ে নামাতে বলছি,কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। মুখ কালো করে বললেন, এত পাতলা কেন তুমি?আমার ডাম্বেলের ওজন ও তোমার থেকে বেশি।ইশ জুতো গুলো ভিজে পা কেমন করছে।ধুর….জুতো গুলো নষ্ট!

আমি হেসে বললাম, উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।

দেখো…..’

!
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here