বসন্তের_ফুল🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট১২

0
757

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১২

“বিকাল থেকেই সবাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছে। অভ্রের ফুফু সাইকা এবং সাইরাকে নিয়ে হাজির হয়। বেশ সেজেগুজে এসেছে তারা।বিয়ের অনুষ্ঠান নাকি আজ থেকেই শুরু। সবার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। ”

কিন্তু বিপত্তি ঘটায় প্রেমাকে নিয়ে। সে কোনো রকমেই বিয়েতে যেতে না করে দিয়েছে।তাই সবাই মিলে প্রেমাকে রাজি করানোর প্রচেষ্টায় রয়েছে। কারন বিয়ে বাড়ির নামে প্রেমার প্রচুর এলার্জি।

আরিয়ানের মা খুব সুন্দর একটা শাড়ি এনে দেয় প্রমাকে পরানোর জন্য। যেতেতু আজ মেহেদি অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য আয়োজন রয়েছো তাই আগে থেকে তৈরি হয়ে গেলে ভালো হয়। কিন্তু প্রেমা ঠায় বসে থাকে।

হঠাৎ একটা মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে প্রেমার কানে।এটা তার পরিচিত কন্ঠ।দরজার দিকে তাকায় প্রেমা–

“প্রেমাপ্পি!!! (অনেকটা চেঁচিয়ে ডাকে প্রেমাকে)

” আরে প্রিয়া তুই?? ” এখানে?? (বলেই দাড়িয়ে যায়)

প্রিয়া কিছু না বলে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিন পর দেখা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। প্রেমা প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করে–

“প্রিয়ুমা এখানে কীভাবে এসেছিস??(প্রেমা)

” ওই আংকেলটার সাথে..(আঙুল দিয়ে দরজার দিকে দেখায়। প্রেমা তাকিয়ে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে)

“তুমি?? কীভাবে গিয়েছো?? আমাদের বাড়ি চিনো তুমি?? (ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে প্রেমা)

” না ওইদিন যে ড্রাইভারটা আনতে গিয়েছিলো।উনাকে নিয়ে গিয়েছি আপনাদের বাড়িতে। (অভ্র)

” হ্যাঁরে প্রেমু শুধু কথা বলবি নাকি। নে শাড়িটা পরে নে।আমি আর কোনো কথা শুনতে চায় না।প্রিয়াও এসেছে বিয়েতে যাওয়ার জন্য। (প্রেমার দাদি কথাটা বলে চলে যায়)

আরিয়ানের মা এবার প্রেমাকে নিজের রুমে নিয়ে যায় শাড়ি পরানোর জন্য।কিন্তু প্রেমা শাড়ি পরতে নারাজ। উপায় না পেয়ে যেতে হয়।

অভ্র দাড়িয়ে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্র নিজেও চায় না প্রেমা শাড়ি পরুক।তাই আদ্রকে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

আধ ঘন্টা পর প্রেমার রেডি হয়ে বের হয়।একটা মিষ্টি কালারের শাড়ি সাথে সাজ।গাঢ় কাজল আর লিপিস্টিক যা প্রেমাকে জোর করে দেওয়া হয়েছে। সবাই রেডি হয়ে বসে আছে ড্রয়িংরুমে। প্রেমাকে সাজ এবং শাড়িতে দেখে অভ্রের একটু ভালো লাগছিলো না।পার্সনালি সে এসব অপছন্দ করে তা না। কিন্তু অভ্র চায় না প্রেমা এভাবে সেজো কোথায় যাক।

আচমকা আদ্র দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলো হাতে কিছু নিয়ে। এবং অসাবধানতার কারনে আদ্রের সাথে ধাক্কা লেগে যায় প্রেমার। এবং হাতের পলিথিন থেকে তরল জাতীয় কিছু প্রেমার শাড়িতে পরে যায়।

” সর্বনাশ! (অনেকটা চেঁচিয়ে বলে আরিয়ানের মা)

“আরে কী হয়েছে?? কী এগুলা?? (অভ্রের মা)

প্রেমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। মনেমনে যে সেই লেভেলোর খুশী হয়েছে সে। এখন এ শাড়িটা আর পরতে হবে না।ভাবতেই চোখেমুখে হাসির ঝলক দেখা দেয়।

” আরে এগুলা তো কাপড়ের নীল রঙ। আদ্র এগুলা নিয়ে কই যাচ্ছিলিস তুই?? (প্রচন্ড রেগে আরিয়ানের মা বলে উঠে)

“আন্টি প্লিজ আদ্রকে কিছু বলিয়েন না।ও ছোট মানুষ আমি বরং চেঞ্জ করে আসি।(প্রেমা)

” হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি বরং তাই করো। আরেকটু পর বেরুতে হবে আমাদের। (অভ্রের মা কথা গুলো বলে)

প্রেমাকে আরিয়ানের মা সাথে করে নিয়ে যায় আবারো।আদ্র তার মায়ের সাথে যেতে যেতে অভ্রকে বুড়ো আঙুল দেখায় এবং বুঝিয়ে দেয় যে কাজ হয়ে গেছে। অভ্রও একটা লম্বা হাসি দেয় আদ্রের দিকে তাকিয়ে।

প্রেমা একটা গাঢ় গোলাপি রঙের গাউন পরে। আরিয়ানের মা আর কিছু বলতে পারেনি।খুব শখ করে প্রেমার জন্য শাড়িটা কিনে এনেছিলো যাতে সবাইকে নিজের ছেলের হবু বউ বলে বিশেষ ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। তাই মন খারাপ করে বসে আছে।

প্রেমা নিজের পূর্বের মেক-আপ টা ধোয়ে ফেলে। কারন ওই সাজটা শাড়ির সাথে মানানসই ছিলো।আর এখন যেহেতু গাউন পরেছে তাই সিম্পল সাজ দেওয়াটাই ব্যাটার।

ব্যাগ খুলে মেক-আপের জিনিসগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখে খালি।কিছু নেই একটা কাজল বাদে। চারপাশটা ভালোভাবে খুঁজতে লাগল প্রেমা!

“কী খুঁজছো আমাকে বলো??(আরিয়ানের মা)

” আন্টি আমার মেক-আপের জিনিস গুলো পাচ্ছি না। একটু আগেই তো সব ব্যাগে রেখেছিলাম।এখন পাচ্ছি না…(প্রেম)

“আচ্ছা এখানেই থাকবে।পরে এসে খুঁজিও রুমের দরজা লক করা থাকবে। তুমি আমার সাথে চলো আমার কাছে আছে সব।(আরিয়ানের মা)

প্রেমাও আরিয়ানের মায়ের সাথে যায়। আরিয়ানের মা ড্রয়ার খুলতেই দেখে উনার সব জিনিস ঘায়েব।

” আরে এখানেই তো ছিলো??(চারপাশে খুঁজতে খুঁজতে বলে)

” অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রেমা।কী হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছে না।আউলা-ঝাউলা লাগছে সব।

“দাড়াও মা খুঁজতে গেলে সময় বেশি লাগবে। আমি বরং অভ্রের মার কাছ থেকে নিয়ে আসছি। তুমি একটু বসো..(আরিয়ানের মা)

” আরে না আন্টি প্লিজ লাগবে না আর।আমার এমনিতেও সাজতে মন চায়ছে না। আমি এভাবেই ঠিক আছি। (প্রেমা)

উনি আর কিছু না বলে প্রেমাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে। প্রেমাকে দেখতেই অভ্র একটা শান্তির শ্বাস ছাড়ে। ভাবছে শাড়ি পরে যদি বিয়েতে যেতো তাহলে কতোজন প্রেমার দিকে তাকাতো।যা অভ্র কোনোদিনই সহ্য করতে পারবে না।

কিন্তু গাউনে আরো বেশি সুন্দর লাগছে প্রেমাকে।চেহারাই মিষ্টি হাসিই যতেষ্ট সাজের কোনো প্রয়োজন নেই। এসব ভাবছিলো অভ্র তখনি অাদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙে অভ্রের। অভ্র কিছু একটা আদ্রকে এগিয়ে দিতেই সেটা নিয়ে চলে যায় হেসে হেসে।

সবাই গাড়িতে উঠার জন্য বেড়িয়ে যায়। আরিয়ানের মা-বাবা অভ্রের মা-বাবা একটা গাড়িতে। প্রেমার দাদু আর অভ্রের দাদু,আর সাইকার মা এবং সাইকা এক গাড়িতে। যদিও সাইকা চেয়েছিকো অভ্রের গাড়িতে করে যেতে কিন্তু অভ্রের মা তাদের সাথে নিয়ে নেয়।

” দেখেন আংকেল আমার হাত ছাড়েন ব্যাথা করছে।(প্রিয়া)

“আমি তোমার আংকেল হলাম কখন?? আর আমাকে নাম ধরে ডাকবে বুঝছো? আমার নাম আদ্র!!(আদ্র)

” কি করছিস আদ্র ছাড় ওর হাত..চল আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(সাইরা)

” প্রিয়া এই নাও এ চকলেট গুলো তোমার জন্য। আর আজ থেকে তুমি আমার বউ বুঝেছো?(আদ্র)

আদ্রের কথায় প্রিয়া আরো কাঁদতে লাগলো। সাইরা তো চোখ বড় বড় করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।

“ও তোর বউ হলে আমি কী ??(সাইরা)

” তুই গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের মতো থাক।আমার বউ হওয়ার চেষ্টা করিস না। (আদ্র)

“প্রিয়া চকলেট গুলো নাও…(আদ্র)

সাইরা প্রচন্ড রেগে আদ্রর সেট করা ছোট ছোটা চুলগুলো ধরে টানতে লাগে। তখনি আদ্র চকলেট ফেলে একহাতে প্রিয়ার হাত ধরে থাকে আরেক হাতে সাইরা চুল ধরে টানতে লাগে। আকস্মিকভাবে তারা তিনজনেই চিৎকার করতে লাগে। চিৎকার শুনে অভ্র দ্রুত পেঁছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে এই অবস্থা দৌড়ে গিয়ে তাদের ছাড়াতে শুরু করে।

তাতেও আদ্র আর সাইরা থামছিলো না তাই অভ্র দুজনকে ধরে ঠাঁঠিয়ে চড় লাগিয়ে দেয়। এবার তারা কিছুটা শান্ত হয়। সাইরাকে অভ্র তার মা-বাবার গাড়িতে তুলে দেয় এবং প্রিয়া এবং আদ্রকে নিয়ে প্রেমা যে গাড়িতে বসেছে সে গাড়িতে বসে পরে।

গাড়িতে বসতেই আদ্র প্রেমার সাথে লেগে বসে। প্রিয়া আদ্র দুপাশে আর প্রেমা মাঝখানে।আদ্রের পাশেই অভ্র বসে। প্রেমা অভ্রের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।এরপর আবার ফোন টেপায় মন দেয়।

” আমি সব বলে দিবো দেখিও(আদ্র ফিসফিসিয়ে অভ্রকে বলে)

” যাহ বল! আমিও তোর কথা সব বলে দিবো মাকে। প্রিয়াকে আনার পথে গাড়িতে কী কী বলেছিলি সব রেকর্ড করা আছে আমার কাছে।(ফিসফিসিয়ে)”

অভ্রের কথা শুনে এবার অাদ্র চুপ হয়ে যায়।এবং প্রেমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে।

(চলবে)

রিভিশন দেয় নি তাই ভুল হলে একটু ধরিয়ে দিবেন!

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here