#নয়নতারা
পর্ব ১০
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
—-আআআ নতুন মা আমার খুব ব্যথা লাগছে।আআআ।
মিষ্টি ফ্লোরে পড়ে চিৎকার করে কাঁদছে।তানিয়া চ্যালাকাঠ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মিষ্টির কান্না শুনে আরো এক বাড়ি দিল।মিষ্টি আরো জোরে চিতকার করে উঠলো।
—-শয়তান মেয়ে আমার সাথে মজা করতে এসেছিস তোর সাহস কম না।
—-নতুন মা আমাকে ছেড়ে দেও না।আমার খুব ব্যথা লাগছে।
এদিকে দরজা জোরে ধাক্কা দিচ্ছে রাহেলা বেগম।রাবেয়া বেগম ও সাথে আছেন।তানিয়া ঘরে দরজা বন্ধ করে মিষ্টিকে মারছে।
—-হেই মাইয়া মোর মিষ্টিরে ছাড় কইতাছি।তোরে হামি খুন কইরা দিমু কইলাম হের যদি মোর মিষ্টির গায়ে হাত দিছোস।হেই বউ খোল দোর।
রাহেলা বেগম বার বার দরজা ধাক্কাচ্ছেন।মিষ্টির চিৎকার শুনে কেদেই দিয়েছেন তিনি।
—-ঐ তানি দরজা খোল।তুই কি পাগল হইলি নাকি।
রাহেলা বেগম কান্না থামিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দরজার দিকে গেলেন।
—-নাফিজ গো বাড়ি যাই।নাইলে যে মোর মিষ্টিরে আইজকে মাইরেই ফেলবো ঐ কালনাগিন।
রাহেলা বেগমের যাওয়া দেখে রাবেয়া বেগমের গলা শুকিয়ে আসছে।
—-এই শয়তান ছ্যামরি দোর খোল।তোর শাউড়ি এলাকার মানুষ ডাইকতি গেছে।দোর খুল।ওরে কুত্তার বাচ্চা জামাই আহনের সময় হইয়া গ্যাছে।তোর কপালে আইজকে দেহিস কি আছে।
;;;;;
::::প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।আপনাদের শুভ কামনা সাপোর্ট একান্ত কাম্য।::::
;;;;;
নাফিজ বসে বসে রসায়নের বই ঘাটছে।পালে লতিফা বসে আছে।
—-কি রে বইয়ের পাতা উল্টে যাচ্ছিস।
—-কিছু মাথায় ঢুকছে না মা।কি কঠিন?
—-চেষ্টা কর সব পারবি।
দরজার ঠকঠক শব্দে কেঁপে উঠলেন লতিফা আর নাফিজ।
—-এতো জোরে কে দরজা ধাক্কাচ্ছে মা?
—-চল তো দেখি।
নাফিজ বই বন্ধ করে টেবিলে রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।তারপর লতিফার পিছু পিছু গেল।
—-আরে ও নাফিজের মা,ও নাফিজের মা।শিগগিরই দোর খোলো।হামার মিষ্টি আইজকে মইরাই যাইব।ও নাফিজের মা।
দরজার এপাশ থেকে রাহেলা বেগমের চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে লতিফা দরজা খুললো।দরজার এপাশে রাহেলা বেগম দাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে হাপাচ্ছে।
—-কি হয়েছে কাকিমা?
—-ও বউ শিগগিরই চলো।ঐ কালনাগিনী দরজা আটকাইয়া মিষ্টিরে মারতেছে।শিগগিরই আসো।হামার মিষ্টি আইজকে মইরাই যাইবো।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে আর একমুহূর্ত দেরী করল না লতিফা।রাহেলা বেগমের সাথে মিষ্টিদের বাড়ির দিকে গেল।আর নাফিজ তো দৌড়ে আরো আগে চলে গেছে।
;;;;
ফজলে শেখ কপালে ভাঁজ রেখে বসে আছে।মেঝেতে তানিয়া গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।তার পাশে রাবেয়া বেগম দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিজের মেয়ের কান্ড দেখে কপাল চাপড়াচ্ছেন।নিজের পেটের মেয়েকেই গলা টিপে মারতে ইচ্ছে করছে রাবেয়া বেগমের।
—-আপনি কি বাবা ফজলে ভাই?আপনার মেয়েটাকে দিনের পর দিন এভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছে আর আপনি কোনো বিচার করেন নি এর।
—-হেরে কইয়ো না কিছু।আল্লাহ হের মতো পোলারে ক্যান মোর পেটে দিছিল আল্লাহ জানে।কাপুরুষ একখান।
রাহেলা বেগম কেঁদেই যাচ্ছেন।লতিফা বেগম ও।মিষ্টির ওমন অবস্থা দেখে কারোর ই চোখ শুকনো থাকার কথা নয়।
—-আমি তো কেবল বাড়ি এসে এই ঘটনা দেখলাম।আমি তো জানতাম না।
—-বাড়িতে থাকলিই বা তুই কি করতি।তুই ও তো কম মারিস না মাইয়াডারে।জানোয়ার একখান।তোর মতো বিটার বাপ হওনের কুনো যোগ্যতা নাই।
—-ঐ তানিয়া একটা অমানুষ।একটু মায়া দয়া নেই ওর মধ্যে।ছোটো বাচ্চাটার গায়ের অবস্থা দেখেছেন।চামড়া ছিড়ে রক্ত বের হয়ে গেছে।কতো কষ্ট পেয়েছে ঐ টুকুন মেয়ে।কতো চিৎকার করেছে।ওর চিৎকার শুনে আমার ই যেন কলিজা ফুটো হয়ে গেছে।আর ও।ও তো মিষ্টির মা।হোক সৎ মা।মা তো।
—-আমি কি করব ভাবি। এই মেয়েটাকে সেই বিয়ের দিন থেকে বুঝিয়ে আসছি আমার বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে রাখতে।আমার মিষ্টির জন্যই তো ওকে বিয়ে করেছিলাম।আমি তো কখনো কল্পনা ও করতে পারিনি আমাকে এই দিন দেখতে হবে।
—-আপনি কি করবেন জানিনা।কিন্তু আমি আজ মিষ্টিকে আমার কাছে নিয়ে গেছি।কিন্তু আপনার কাছে আর ওকে ফেরত দেব না।ওর মামা খালাদের খবর দেব আমি।তারা এসে মিষ্টিকে নিয়ে যাক।এরকম জাহান্নামের মধ্যে থাকার ওর কোনো দরকার নেই।
;;;;;
মিষ্টি এখনো ফুপাচ্ছে।আর নাফিজ নিজেও কাদতে কাদতে মিষ্টির হাতে পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।
—-আআআ নাফিজ ভাইয়া জ্বলছে।
—-একটু জ্বলবে।পরে ঠিক হয়ে যাবে।তুই কেন ওনার সাথে মজা করতে গিয়েছিলি?
—-আমি তো মাকেও এমন ভয় দেখাতাম।জানো মা যখন রুটি বানাতো আমি কতোবার আটা দিয়ে সাপ বানিয়ে মাকে ভয় দেখিয়েছি।মা তো আমাকে এরকম মারতো না।নতুন মা আমাকে এতো ব্যথা দিল কেন?
—-তুই বুঝিস না মিষ্টি।তোর এই সরল মন টা ওনাকে মা হিসেবে দেখলেও উনি তোকে সৎ মেয়ের মতো দেখেন।নিজের মা আর সৎ মা যে এক না মিষ্টি।আর জ্বলছে?
—-খুব ব্যথা করছে নাফিজ ভাইয়া।
—-তোকে আর যেতে দেব না আমি।
—-জানো নাফিজ ভাইয়া আমার আজকে কি মনে হয়েছিল?
—-কি?
—-নতুন মা যখন আমাকে মেরেছিল আমার তো মনে হচ্ছিল আমিও বোধ হয় মায়ের মতো আকাশের তারা হয়ে যাব।
—-মিষ্টি,,,,
মিষ্টির শেষ কথাটা যেন নাফিজের একদম বুকে গিয়ে বিধলো।
;;;;;
—-আমি তো আমার বোনটা যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিনই মিষ্টিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।ফজলে তুমিই তো বলেছিলে তোমার মেয়েকে তুমি একাই মানুষ করবে।
—-আমি তো তোকে বলেছিলাম ভাইজান পুরুষ মানুষ এ কি আবার বিয়ে না করে পারবে।দেখছিস মিষ্টি কে কিভাবে মেরেছে।আজ যদি রুবি আপা থাকতো তোমাকে কখনো ক্ষমা করতো না ফজলে দুলাভাই।
মিষ্টির বড় মামা কাশেম মোল্লা আর ছোটো খালা সুমি মিষ্টিদের বসার ঘরে বসে আছে ।মিষ্টি ছোটো খালার কোলে চুপটি করে বসে আছে।
—-আপনারা মিষ্টিকে নিয়ে যাবেন না কাশেম ভাই।আমি আর এমন ভুল করব না।
—-কেন?ফজলে ভাই।আপনার তো শান্তি।মিষ্টির জন্যতো আপনার অসুবিধা হয়।আপনার মতো অপদার্থ বাবা থাকার দরকার নেই ওর।
লতিফার কথা শুনে ফজলে শেখের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এলো।মিষ্টি দের ঘরের এক কোনে নাফিজ ও দাড়িয়ে আছে।তার মনে শুধু একটাই ভয় সত্যি কি মিষ্টিকে নিয়ে তার মামা চলে যাব।মিষ্টি কি হারিয়ে যাবে তার জীবন থেকে।
মিষ্টি সবার কথা শুনছে।আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।মিষ্টির তাকানো দেখে নাফিজ মিষ্টিকে ইশারায় ডাকলো।মিষ্টি ও খালার কোল থেকে নেমে দৌড়ে গেল নাফিজের কাছে।নাফিজ মিষ্টিকে নিয়ে বারান্দার দিকে গেল।
—-ডাকলে কেন নাফিজ ভাইয়া?
—-তুই কি সত্যি তোর মামার সাথে চলে যাবি মিষ্টি?
—-মামা সত্যি আমাকে নিয়ে যাবে।কতো মজা হবে।কতোদিন মামা বাড়ি যাই না।
—-না মিষ্টি তুই যাস না।
—-কেন?
মিষ্টির কাধে হাত রেখে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো নাফিজ।নাফিজের চোখে পানি ছলছল করছে।
—-তুই আমাকে ছেড়ে যাস না মিষ্টি।তোর মনে পড়বে না আমার কথা?তুই কার সাথে খেলবি?
—-ওখানে তো টিয়া আপুরা আছে।ওদের সাথে খেলব।আর ওখান থেকে আসলে তোমার সাথে।
—-মিষ্টি তুই বুঝতে পারছিস না আমার কথা।তোর মামা যে তোকে সারা জীবনের মতো নিয়ে যাবে।আমার কি হবে রে মিষ্টি?আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব?বেবি সিনড্রেইলা র মুখ না দেখলে যে আমার দিন কাটবে না।
চলবে———-
বাস্তবতার সাথে কাল্পনিকতাকেও মেশাবো।আপনাদের গঠনমূলক কমেন্টস আশা করছি।