নয়নতারা পর্ব ১১

0
503

#নয়নতারা
পর্ব ১১
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

বসার ঘরে বসে কাশেম মোল্লা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন তিনি আর এক মূহুর্ত নিজের ভাগ্নিকে এখানে রাখবেন না।

—-তোমাকে ফোন করলে তুমি তো শুধু এটাই বলো মিষ্টি ভালো আছে।এই ভালো থাকার নমুনা!
—-ভাইজান আর কি কথা বলছো এনার সাথে।চলো মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি যাই।
—-দাড়া।আমার বোন বোনের মেয়েকে কি এমনি এমনি নিয়ে যাব।আমার ভাগ্নির সব প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে ফজলে কে।নিজে আরেক বিয়ে করে এখন আমার বোন মরেছে বলে আমার ভাগ্নীকেও ফাকি দেবে এটা আমি হতে দেব না।

এদিকে দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সবার কথা শুনছেন রাবেয়া বেগম।তানিয়া চুপচাপ খাটে বসে আছে।

—-আপনারা কি বলছেন এসব!মিষ্টিকে আমি দেব না।একবার ভুল করেছি।আর করব না।আমার মেয়েকে নিয়ে যাবেন না।
—-দুলাভাই কিসের এতো মেয়ে মেয়ে করছেন।মেয়ের দিকে ভালো করে চোখ তুলে দেখেছেন?মিষ্টিটার কি অবস্থা করেছে আপনার ঐ বউ।কোথায় ঐ শয়তান মেয়েটি।ডাকুন আপনার ঐ বউকে।ওর নামে পুলিশে শিশু নির্যাতনের কেস করব আমি।

সুমির কথায় ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে রাবেয়া বেগমের।তিনি দরজা থেকে সরে গিয়ে তাড়াতাড়ি তানিয়ার কাছে গেলেন।

—-আরে ঐ তানি এ হন আর বইহা থাইস না।তোরে কইছিলাম এট্টা কথা হুনলি না।দ্যাখ ওরা কি কইতাছে।তোর নামে কেস কইরা তোরে পুলিশে দিব।

রাবেয়া বেগমের কথায় এক প্রকার লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে পড়লো তানিয়া।

—-কিহ!কি বলছো কি তুমি মা।
—-হ।আরো কইতেছে মিষ্টির মা আর মিষ্টির সম্পত্তির অংশ মিষ্টিরে বোঝাই দিতে।হেইবার বুঝোস তোর ল্যাটার কড়ি কিছু থাকপো না।বেশি বুঝোস খালি।একবার ও হামার কথা হুনোস না।
—-মা এখন কি করব আমি?
—-যা।এক্ষুনি গিয়া ওগে পায়ে ধইরা মাফ চা।নাইলে তোর ঘাটের কুল সব শ্যাষ।
—-আমি মাফ চাইবো!
—-হ।যা কইতাছি।এহনো ভালোয় ভালোয় হামার কথা হুন।পরে কাইনদে কুল পাবি না।

;;;;

নাফিজ মিষ্টিকে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে রেখেছে।

—-জানো নাফিজ ভাইয়া তোমার চুলগুলো না একদম কদম ফুলের মতো লাগে।কি সুন্দর খাড়া খাড়া।

নাফিজ চুপচাপ বসে মিষ্টির কথা শুনছে।আজকে তার আর মিষ্টির সাথে কথা বলতৃ ইচ্ছে করছে না।তার মনে যে ভয় ঢুকেছে।সত্যি কি তার মিষ্টি তাকে ছেড়ে চলে যাবে?

—-ও নাফিজ ভাইয়া তুমি কথা বলছো না কেন?
—-তুই কেন এতো ছোটো রে মিষ্টি?কবে বড় হবি তুই।খুব বড়।তোকে নিয়ে গিয়ে আমি আমার নয়নতারা বাগানে সাজিয়ে রাখব।কাউকে তুলতে দেব না আমার এই নয়নতারা ফুলকে।

মিষ্টি ড্যাপ ড্যাপ করে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট্ট মিষ্টির মাথায় নাফিজের কথার মর্মার্থ কিছুই ঢুকছে না।

—-কি হলো কি দেখছিস?
—-তুমি যে কি কঠিন কঠিন কথা বলো আমি কিছুই বুঝি না।
—-বোঝা লাগবে না।আমিও চাইনা তুই এখন বোঝ।তুই সেদিন বুঝিস যেদিন আমি ও তোকে বোঝাতে চাই।

মিষ্টি এবার ও নাফিজের কথার প্যাচ বুঝতে অক্ষম।

—-কিছু মাথায় ঢোকেনি না।
—-উহুম।

মিষ্টি মাথা দুদিকে দুলিয়ে উওর দিল।

—-শুধু এইটুকু বুঝে নে তুই চলে গেলে আমি খুব রাগ করব।তোর সাথে আড়ি দিয়ে দেব।সারা জীবনের মতো।আর কখনো তোর সাথে পুতুল খেলব না।

;;;;;

তানিয়ার সুমির পা ধরে বসে আছে।সুমি বড্ড অস্বস্তি বোধ করছে তানিয়ার এই কাজে।

—-আমাকে মাফ করে দিন আপনারা।অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।আপনারা আমার মিষ্টি কে নেবেন না।রাগের মাথায় ওকে মেরে ফেলেছি।আপনারাই বলুন সারাদিন ও কার কাছে থাকে।আমার কাছেই তো।আপনাদের ও রাগ হয় না।

তানিয়ার কথা শুনে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম লতিফা আর রাহেলা বেগমের।

—-এই বউ।কি নতুন নাটক শুরু করিছিস হ্যাঁ?
—-এখন অন্যায়ের কথা মাথায় আসছে।কাল রাতে যখন মিষ্টিকে এভাবে চেচিয়ে কাঁদছিল তখন মন গলেনি।নিষ্ঠুর মহিলা একটা।মেয়ে মানুষ মায়ের জাত হয়।আর তুমি তানিয়া তুমি কি হ্যাঁ?
—-আমার ভুল হয়ে গেছে।ক্ষমা করে দিন।মিষ্টিকে আমার থেকে নেবেন না।ওকে বকাবকি করি যাই করি ওকে তো আমি ভালোবাসি।

তানিয়ার কথার সাথে তাল মেলাতে শুরু করলেন রাবেয়া বেগম।

—-কথায় আছে শাসন যেইতি করে সোহাগ ও সেইতি করে।হামার মাইয়াডা মিষ্টিরে ভালোবাসে বলেই তো ওরে শাসন করে।আপনারাই কন শাসন ছাড়া কি ছেলে মেয়ে মানুষ হয়।

রাবেয়া বেগম তানিয়াকে চোখ ইশারা করছেন বারবার।ফজলে শেখের পা ধরে মাফ চাইতে।মায়ের কথা মতোন সুমির পা ছেড়ে তানিয়া হামলে পড়লো ফজলে শেখের পায়ের কাছে।

—-আমাকে মাফ করে দেন।আর জীবনে এরকম হবে না।
—-ও জামাই।মাফ কইরা দেও।দেহ হেতির যদি এতোই রাগ থাকতো মিষ্টির ওপর তাই লে কি মিষ্টির যাওয়ার কথা শুইনা আটকাইতে আসতো।হে তো মিষ্টির যাওনের কথা হুইনা কাইনদে ভাসাইতেছে।হেইবার মাইয়াডারে মাফ কইরা দেও।হামি কইতাছি।হের পর যদি হেতি ওমন করছে তুমি লাথি মাইরা হেরে বাইর কইরা দিও।মুখ কিছুটি কমু না।

রাবেয়া বেগমের কথা শুনে আর তানিয়ার কান্না দেখে ফজলে শেখের ও মন টা ঘুরে গেল।তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাবেন।

—-দেখেন কাশেম ভাই মানুষ মাত্র ভুল হয়।এরপর যদি তানিয়া এরকম করছে তাহলে আমি ওকে তালাক দেব।এই আপনাদের সামনে বলে রাখছি।

;;;;;

এক সপ্তাহ কেটে গেছে।

রাবেয়া বেগমের কথা মেনে চলে তানিয়া মোটামুটি ভালোই ব্যবহার করছে মিষ্টির সাথে।যদিও সেটা মন থেকে না।লোক দেখানো মাত্র।

—-কিরে তানি তোর কি খবর ক তো দেহি?
—-কোনো খবর ই নাই।ঐ ঘটনার পর থেকে দূর দূর করেন আমাকে।এই দুদিন যা একটু কাছে টানেন।
—-মুই আর কদিন বা থাকুম।দ্যাখ কি হয়।বাচ্চা লইয়া ফেল।

সকাল বেলা দরজা খুলে হা হয়ে গেলেন লতিফা।জোরে জোরে নাফিজকে ডাকলেন।

—-নাফিজ,নাফিজ তুই কোথায়?আরে শিগগিরি এসে দেখে যা।কে এসেছে?

মায়ের কথা শুনে নাফিজ দৌড়ে দরজার সামনে আসলো।নাফিজ ও হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দরজার বাইরে মিষ্টি শার্ট, ছোটো স্কার্ট স্কুল ড্রেস পড়ে,কাঁধে ছোটো কার্টুন ওয়ালা ব্যাগ ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে ।মাথার দু পাশে ঝুঁটি করা।

—-আরে মিষ্টি কুমড়ো তুই?

নাফিজকে দেখে মিষ্টি তার ভুবন ভুলানো হাসি দিল।

—-দেখো নাফিজ ভাইয়া আমিও তোমার মতো স্কুলে যাচ্ছি।বাবাই আমাকে স্কুলে দিতে যাচ্ছে।
—-বাপরে।তা কবে ভর্তি হলি শুনি।
—-দুদিন আগে ভর্তি করে এসেছি।

ফজলে শেখের কথা শুনে সামনের দিকে তাকালো নাফিজ আর লতিফা।

—-আরে ফজলে ভাই।
—-হ্যাঁ।এখন নতুন ডিউটি শুরু হয়ে গেল অফিস যাওয়ার আগে ওকে স্কুলে দিয়ে আসা।
—-ওকে নিয়ে আসবে কে?
—-তানিয়াকে বলেছি।না হয় আমি যেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি সেদিন আমি নিয়ে আসবো।স্কুল ড্রেস পড়ে কি খুশি।বলে কাকিমা আর নাফিজ ভাইয়াকে না বলে সে যাবে না।

মিষ্টি হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।লতিফা নাফিজ কে ইশারা করতেই নাফিজ ভেতর থেকে একশত টাকার একটা নোট এনে মিষ্টির হাতে দিল।

—-এটা নিয়ে আমি কি করব?
—-মিষ্টি বুড়ি আজ না তোর পড়াশোনার যাত্রার প্রথম দিন।মিষ্টি মুখ করবি।
—-এগুলো কেন করছেন ভাবি?
—-আরে ভাই কি যে বলেন।আমাদের মিষ্টি বুড়ি প্রথম স্কুলে যাচ্ছে ওর জন্য এটা দোয়া।

ফজলে শেখের হাত ধরে মিষ্টি লতিফা আর নাফিজকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিল।

—-টা টা নাফিজ ভাইয়া।

চলবে———-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here