#নয়নতারা
পর্ব ১২
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
রাহেলা বেগম বসে বসে ট্রে তে করে চাল বেছে যাচ্ছেন।চালের মধ্যে ছোটো ছোটো কালো পোকা।তাই চাল গুলো কে রান্নার আগে ঝেড়ে বেছে নিচ্ছেন তিনি।পাশের পিড়িতে বসে রাবেয়া বেগম নিজের মতো বকবক করেই চলেছেন।রাহেলা বেগমের প্রচন্ড বিরক্তি হচ্ছে।
—-শোনেন বেয়াইন।আমি বুঝতাছি আপনে হামার কতায় খেইপা যাইতেছেন।কিন্তু একখান কতা কি জানেন “গরিবের কতা বাসি হইলেও সত্যি”।
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে রাহেলা বেগম চাল বাছা বাদ দিয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকালেন।
—-কিসির সত্যি মিথ্যা বলেতেছেন আপনে?
—-দেহেন ব্যাটা মানুষ ছাড়া কি আর সংসারের পাল নড়ে?বংশের বাতি ফুটাইতে গেলিও একখান ব্যাটা মাইনসের দরকার।নয় আপনিই কন আপনার একখান মাত্র পোলা হইলো জামাই।এ ছাড়া তিন কুলে আপনের কিডা আছে।হের যদি একখান পোলা না হয় তাইলে আপনের বংশ তো ভাইসা যাইবোগা।
রাহেলা বেগম রাবেয়া বেগমের কথা শুনে গভীর চিন্তায় ডুব দিলেন।আসলেই তো তার এই এক ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই।স্বামীকে ও হারিয়েছেন অনেক আগে।তার স্বামী ও তার শ্বশুরের একমাত্র ছেলে ছিল।আর সন্তান সন্ততি বলতে তার এক ননদ আছে।সে ও মারা গেছে এই বছর দুয়েক হলো।
—-ও বেয়াইন শুনেতেছেন আমার কতা।
—-হ হুনতাছি।কন।
—-আপনের আগের বউডা তো মইরা গেছে গা।হে তো এক মাইয়া জন্ম দিয়াই কাজ সারিছে।এহন আপনের বংশের বাতি দিবার লাইগে হলিও তানিরে আপনের দরকার।কইতাছি হেতি যদি অন্যায় করে মাফ কইরা দেন।আর জামাই রে এট্টু বুঝান।হুনেন মিষ্টি এক সময় বড় হইবো।পরের বাড়ি চইলা যাইবো।তহন কি হইবে?জামাই কারে লইয়া থাকপে।এতো বড় বাড়ি আপনেগে জমি যাতি হেইগুলো কেডা দেখপে।আপনে কন মুই কি কিছু ভুল কইছি?
—-না ঠিক কইছেন।এহন আপনে এক খান কতা কন দেহি।
—-কি কতা?
—-এক মাস হতি গেল।আর কতদিন জামাই এর ঘাড়ে বইসা গিলবেন।আপনের কি লজ্জা শরম আছে?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে রাবেয়া বেগমের মুখটা আপনা আপনি হাড়িকালি হয়ে গেল।রাহেলা বেগম তাকে এভাবে অপমান করবেন তিনি কল্পনা ও করতে পারেননি।
;;;;;
নাফিজের বিছানার ওপর পা উঠিয়ে দুই হাত মুখে বাধিয়ে চুপচাপ বসে আছে মিষ্টি।এদিকে নাফিজ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে এটা ওটা বলে মিষ্টির মুখ খোলার চেষ্টা করছে।কিন্তু মিষ্টি যে মুখ বন্ধ করেছে তো করেছে খোলার নাম নেই।
—-এই মিষ্টি তোর কি হয়েছে বলতো?এক সপ্তাহ ধরে আমার সাথে খেলতে আসিস না।বাড়ির সামনে এসে হাত নাড়িয়ে চলে যাস।কথা ও বলিস না।
মিষ্টি এখনো চুপ করে আছে।মিষ্টির এই চুপ করাটা নাফিজ মেনে নিতে পারছে না।একে তো এ কদিন পরীক্ষার চাপে মিষ্টির সাথে কথা না বলে তার কতোটা কষ্ট হয়েছে সে জানে।তারপর মিষ্টির এমন নিরবতা।
—-তুই কি বলবি?না হলে বের হয়ে যা এখান থেকে।আর কখনো আমার কাছে আসবি না।
নাফিজ এবার যথেষ্ট রেগে গেছে।মিষ্টি নাফিজের রাগ দেখে আরো ভয়ে চুপসে গেল।মিষ্টির ভয়ার্ত চেহারা দেখে নাফিজের রাগ নিমিষেই উধাও।নাফিজ গিয়ে মিষ্টির পাশে বসলো।
—- কি হয়েছে মিষ্টি পাখি?আমাকে বলবি না।আমার ওপর রেগে আছিস?
নাফিজের কথায় মিষ্টি দু দিকে মাথা নাড়লো।অর্থ সে রেগে নেই।
—-তাহলে?
মিষ্টি মুখের ওপর হাত একটা রাখলো।যাতে তার ঠোট দেখা না যায়।
—- কি হয়েছে?
—-আমার বেড়া ভেঙে ঈদুর ঢুকেছিল নাফিজ ভাইয়া।আমার বেড়া ভেঙে দিয়ে দাঁতের বারান্দা খুলে নিয়ে ঈদুর চলে গেছে।
মিষ্টির কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না নাফিজ।জোর করে মিষ্টির মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিল।তারপর হো হো করে হেসে উঠলো নাফিজ।
—-দেখেছো নাফিজ ভাইয়া।তুমি পচা হয়ে গেছো।তুমি ও আমাকে নিয়ে হাসছো।ক্লাসের সবাই বলে মিষ্টির দাঁতের বারান্দা ফাকা।
নাফিজ নিজের হাসি বন্ধ করলো।মিষ্টির ওপরের পাটির একটা দাঁত পড়ে গেছে।এবার নাফিজ বুঝতে পেরেছে মিষ্টির কথার অর্থ।
—-আরে তুই তো এবার সত্যি সত্যি বুড়ি হয়ে গেলি মিষ্টি পাখি।তোর দাঁত নেই।হা হা।
মিষ্টি তেড়ে নাফিজকে কিল ঘুষি মারতে লাগল।
;;;;
রাতের বেলা বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছেন রাহেলা বেগম।এবার স্থির হয়ে তিনি মিষ্টির দিকে ফিরে শুয়ে পড়লেন।মিষ্টির ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আছেন তিনি।
—-আসলেই তো।মিষ্টি তো মাইয়া মানুষ।আইজ বাইদে কাইল পরের ঘরে যাইবো।মোর পোলার বংশের কি হইবো।
সকাল বেলায় রাবেয়া বেগমের বলা কথা গুলো কিছুতেই ভুলতে পারছেন না রাহেলা বেগম।
—-তোর ভাল লাগতেছে তানি?
—-হ্যাঁ মা এখন একটু লাগছে।
—-এই মাঝরাতে এইরাম বমি করলি যে।কচুর লতি খাইয়া গ্যাসে ধরছে নাকি।
—-না মা।আমি তো লতি খাইনি।খাবারের গন্ধ শুকলেই বমি আসতেছে।
তানিয়ার কথা শুইনা রাবেয়া বেগমের চোখ খুশিতে জ্বল জ্বল করে উঠলো।
—-ওরে তানি।এতোদিন কইসনাই ক্যান?কালকেই ডাক্তারের কাছে যাবি জামাই রে লইয়া।
চলবে———-