নয়নতারা পর্ব ২৩

0
478

#নয়নতারা
পর্ব ২৩
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys

এক ঝাঁক বিষন্নতার ছাপ চেহারায় নিয়ে নাফিজ সাইকেল ঘুরিয়ে নিল।রওনা হলো কুয়াটারে র উদ্দেশ্যে।

যাবার সময় যতদূর অবধি দেখা যায় ততদূর অবধি বার বার পিছু ঘুরে দেখছিল নাফিজ।যদি একবার তারার দেখা পায়।

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললো লতিফা।

—-কি রে মুখটা এরকম পেঁচার মতো করে রেখেছিস কেন?
—-কই মা।নাতো।
—-ঠিক দেখতে পাচ্ছি।তুই তো বেশ হাসিখুশি মুখ নিয়েই বের হয়েছিলি।তাহলে?
—-কিছু না।তুমি তৈরী হয়ে নেও।নাস্তা করে আমরা সিএম এইচ এ যাব।
—-আচ্ছা চল।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পোশাক ঠিক করছে নাফিজ।যেহেতু আউটপাশ নিয়েছে তাই ইউনিফর্ম না সাধারণ পোশাকেই তৈরী হচ্ছে সে।

—-আপনি কেন এলেন না তারা?আমার সারাদিন বিধ্বস্ত করার কি খুব দরকার ছিল?আমাকে এভাবে হতাশ করে কি আপনি ঠিক করলেন?আপনি যে আমার লেডি লাক হয়ে গেছেন।আপনি বোঝেন না।

আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল নাফিজ।

—-বুঝবেন বা কি করে?আমি কি বোঝার মতো কিছু করেছি?কিন্তু আমি কি করব?আমার কি সত্যি বোঝার মতো কিছু করা উচিত?

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন ছুড়েছে অথচ নিজেই সেই প্রশ্নের উওর সাজাতে পারছে না নাফিজ।

;;;;;

—-স্যার এবার আশা করছি আর সমস্যা হবে না।ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি।
—-আপনাকে ধন্যবাদ।আসলে মেয়ে টা কাল রাতে এতো ছটফট করছিল ব্যথায়।
—-আসলে স্যার এতো বড় অপারেশন হয়েছিল তারার পায়ে এজন্য সামান্য আঘাত টাও ওর জন্য অনেক বড় কিছু।আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছি।আবার যদি ব্যথা বাড়ে তবে ইনজেকশন টা দিলেই কমে যাবে আশা করি।
—-আচ্ছা আসি তাহলে।
—-ওকে স্যার।

ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাইরে বেরিয়ে এলেন মেজর আব্রাহাম।

—-আফা দেহেন ঐ ফুলখান কততো সুন্দর।
—-হ্যাঁ চলো ওখানে একটা ছবি তুলি।
—-চলেন চলেন।

গাসু তারা কে নিয়ে সামনের ফুলের বাগানে ছবি তুলছে।মাহমুদা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।

—-আহ।মেয়েটাকে নিয়ে পারিনা।এতো বড় হয়েছে তাও দুষ্টুমি গেল না।কাল কতো ব্যথা পেয়েছে।ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ হতেই ব্যস ওনার দুষ্টুমি শুরু।তারা তারা,, ,,,।

সিএমএইচ এর একদম সম্মুখে বিশাল বাগানের মতো।অনেক ধরনের ফুলগাছ খুব সজ্জিত ভাবে লাগানো।মধ্যিখানে একটা বিশাল গোল চৌবাচ্চার মতো।ভেতরে একটা ভাস্কর্য এর মতো।পানিতে ভাসমান শাপলা,শাপলাটিকে ঘিরে আছে একটি সাপ।কমবাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল(সি এম এইচ) এর লেগো এটা।শাপলার চারপাশে পানির ফোয়ারা বইছে।ভেতরে কিছু মাছ ছেড়ে দেওয়া।পানির স্রোতের তালে তালে মাছগুলো খেলছে।

উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে গাসু আর তারা সেই দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত।এপাশে মাহমুদা বেগমের কথা তাদের কানে আসছে না।

—-আফা দেহেন ঐ মাছখান, এক্কেরে নাগিন ড্যান্স দিতেছে।
—-আহ গাসু।তুমি কোথ থেকে কি এনে মিশাও বুঝি না।এখন কথা বলো না আমাকে ভিডিও করতে দেও।

আব্রাহাম সাহেব বেরোতে যাবেন হঠাৎ করেই বেখেয়াল বশত কারোর সাথে ধাক্কা লাগল তার।

—-আহ সরি সরি।
—-স্যার আপনি।
—-আরে নাফিজ।

আব্রাহাম সাহেব সামনে তাকিয়ে দেখেন যার সাথে তার ধাক্কা লেগেছে তিনি আর কেউ নন ক্যাপ্টেন নাফিজ।নাফিজ ও বেশ অবাক হয়েছে আব্রাহাম সাহেব কে দেখে।

—-স্যার আপনি সি এম এইচ এ?
—-আমার ও তো সেই একি প্রশ্ন।তুমি এখানে?
—-স্যার আমার মা অসুস্থ।তাই আজ আউটপাশ নিয়েছিলাম।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লতিফার দিকে ইঙ্গিত করলো নাফিজ,

—-স্যার ইনি আমার মা।মা উনি মেজর আব্রাহাম স্যার।
—-আসসালামু আলাইকুম।
—-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আব্রাহাম সাহেব লতিফার সাথে সালাম বিনিময় করে নাফিজের দিকে তাকালেন।

—-স্যার আপনি এখানে?আপনি কি অসুস্থ?
—-না আমি না।আমার মেয়ে তারা।
—-তারা!কি হয়েছে ওনার?

তারার কথা শুনে যেন বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো নাফিজের।জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে নাফিজ আব্রাহাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।

—-কাল রাতে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিল।আর তারপর পায়ে ব্যথা।তাই সকালেই এখানে এনেছি।
—-ওহ।এখন কি অবস্থা ওনার?
—-এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।ইনজেকশন দিয়েছে ডাক্তার।সে দিব্যি টুকটুক করে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
—-ওহ।
—-তোমার কাজ শেষ?
—-হ্যাঁ স্যার।মাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য তৈরী হব।তারপর যাব।
—-চলো আমাদের সাথে চলো।
—-না স্যার থাক আপনি,,,,
—-আরে চলোতো।

নাফিজ আর কথা না বাড়িয়ে লতিফা কে নিয়ে আব্রাহামের সাথে বের হলো।মুখে না বললেও তার ভেতর টা যে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত ই দিচ্ছিল এতো ক্ষন।

—-তারা কোথায় মাহমুদা?

আব্রাহাম সাহেবের গলা শুনে পাশে তাকালো মাহমুদা বেগম।নাফিজ আর লতিফাকে কুশল বিনিময় করে আবার আব্রাহাম সাহেবের দিকে তাকালেন।

—-আর বলো না।তোমার মেয়ে কি কম দুষ্টু।যেই পা ভালো হয়েছে ব্যথা কমেছে সেই শুরু হয়ে গেছে।
—-কেন?কোথায় গেছে ও?

মাহমুদা বেগম আব্রাহাম সাহেব কে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করলেন।নাফিজ ও মাহমুদা বেগমের ইশারা অনুযায়ী সামনের দিকে তাকালো।

সামনের ছোটো রাস্তা দিয়ে ক্রাচ নিয়ে ধীরে ধীরে হেটে আসছে তারা।পাশে গাসু।

—-নাফিজ ঐ মেয়েটা কে রে?
—-কোন মেয়ে টা?
—-ঐ যে হাতে ক্রাচ।
—-স্যারের মেয়ে তারা।

লতিফা এক নজরে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।তারার দিকে সে মহিলা হয়েও এক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

—-এতো সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ে।হায় আল্লাহ!এর পা যদি ঠিক থাকতো আজ!এ ঠিক যেন আমাদের মিষ্টির মতো।একদম পরী।

লতিফা মনে মনে এসব ভেবে চলেছে।এদিকে তারা কে দেখে নাফিজের মনে আরেক ঝড় বইছে।

—-এতো সংযোগ কেন আমাদের তারা?আপনাকে যেখানে খুঁজি সেখানে না হলেও অন্য খানে আপনি ঠিক আমার মনের আঙিনায় এসে উপস্থিত হন।কেন এতো সংযোগ আপনার সাথে আমার?কৈ দু একদিন তো কথা হয়েছে।আর দূর থেকে দেখা!সেটি তো আমার এক তরফা।তবু কেন আপনার থেকে দূরে যেতে মন ছোটে না আমার।

এক দৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে নাফিজ মনে মনে ভাবনার মালা গেঁথে চলেছে।

—-আফা ঐ দ্যাহেন।এই সেই ফুলচোর অফিসার ডা না।

গাসুর কথা শুনে সামনের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো তারা।

—-ক্যাপ্টেন!
—-আফা এই ফুলচোর ডারে আইজকে তো সেই হিরো লাগতেছে।সাদা শার্ট কালা প্যান্টালুন।
—-আহ!গাসু আবার সেই পেন্টালুন বলছো।
—-যাই কন আফা ফুলচোর ডারে এক্কেরে হ্যান্ডলুম লাগতেছে।
—-হ্যান্ডলুম!সেটা আবার কি?
—-ঐ তো ঐ যে বলে না।

তারা একটু ভেবে উওর দিল,

—-ও হ্যান্ডসাম।
—-হ ঐখান।
—-তুমি জীবনে শোধরাবে না।

দেখতে দেখতে তারা নিজের মা বাবার সামনেই চলে এলো।

—-বাপি।
—-মা তুমি একটু সুস্থ হয়েছে।এর মধ্যে এতো হাঁটাহাটি কেন করছো?
—-ঐ একটু তে কিছু হবে না।গাসু তো ছিল সাথে।
—-তারপরেও।এই দেখো নাফিজের সাথে দেখা।

নাফিজ কে দেখে তারা সালাম দিল,

—-আসসালামু আলাইকুম ক্যাপ্টেন।
—-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছেন?
—-আলহামদুলিল্লাহ।
—-আপনি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?
—-ঐ একটু ছিলাম।এখন ঠিকাছি।

লতিফা দাড়িয়ে দাড়িয়ে তারার প্রতি নাফিজের দৃষ্টি দেখছে।একটা কথা আছে,”সব ফাকি দেওয়া যায়,কিন্তু মায়ের চোখ না”।

—-ইদানীং শুধু আরেক পরী আরেক পরী করে নাফিজ।আচ্ছা এই কি সে?

নিজের প্রশ্নের উওর ভেবে চলেছে লতিফা।

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের ভালো লাগবে।

আর বইটার প্রি অর্ডার এখনো শুরু হয়নি।শুরু হলে ইনশাহআল্লাহ আপনাদের জানাব।

;;;;;

—-কেমন আছেন ক্যাপ্টেন নাফিজ?
—-জি ভালো।

তানহার প্রশ্ন শুনে একটু সৌজন্য মুলক উওর দিল নাফিজ।অফিসে এসেই তানাহাকে নিজের কেবিনে দেখে যথেষ্ট বিরক্ত সে।কিন্তু ঐ যে সৌজন্য বোধ।তাই চুপ করে আছে নাফিজ।

—-আপনাকে কিছু বলতে চাই আমি।
—-বলুন।
—-জানি আপনার হয়তো বিশ্বাস হবে না।এমনকি আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি।কিন্তু পরে দেখি সব মিলে গেছে আমার সাথে।
—-কি বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা বলছেন আপনি?
—-আমিই সেই মিষ্টি ক্যাপ্টেন নাফিজ।যাকে এতো বছর ধরে আপনি খুঁজে চলেছেন।
—-কিহ!
—-হ্যাঁ এটাই সত্যি।আমি সেই দিন থেকে আপনাকে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু আপনাকে বলার সুযোগ পাইনি।আমি আপনার সেই মিষ্টি নাফিজ।যাকে নয়নতারা ফুল দিয়ে আপনি সাজাতে চেয়েছিলেন।

চলবে————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here