নয়নতারা পর্ব ২৮

0
461

#নয়নতারা
পর্ব ২৮
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys

আজ শুক্রবার

এক সপ্তাহ কেটে গেছে।এই এক সপ্তাহে তারা আর নাফিজের ভেতরে ও একটা অন্যরকম সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।প্রতিদিন সকালে একসাথে হাঁটতে যাওয়া যেন দুজনের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করার মতো।

—-আফা আপনের হয়েছে?
—-এই তো শেষ।

গাসু আর তারা ঘরে বসে তৈরী হচ্ছে।একটু পরে তারা সবাই পিকনিকের উদ্দেশ্য বিনোদিয়া পার্ক রওনা হবে।

—-তারা মা হয়েছে তোমাদের?

নিচের থেকে চেঁচিয়ে কথাগুলো বললেন আব্রাহাম সাহেব।

—-এই তো বাপি আসছি।গাসু চল।
—-আফা খাড়ান খাড়ান।
—-আবার কি হলো?
—-আফা আপনারে তো হেই বুটিফুল দেখাচ্ছে।
—-সেটা আবার কি?এবার তুমি কোন ইংরেজি শব্দের পোস্ট মোরটেম করতে বসেছো বলোতো।
—-ঐ যে সুন্দরের লাক্ষান।
—-ওটা বিউটিফুল গাসু।
—-ঐ তো হইলো।জানেন আফা আইজ যে আপনারে দেইখা কতো মানুষ ট্রাশ খাইব।
—-এই কি বলছো কি তুমি?আমাকে দেখে মানুষ আবর্জনা খেতে যাবে না।
—-আবর্জনা!কহন কইলাম আমি।
—-তা নয়তো কি।ট্রাশ মানে তো ঐ আবর্জনাই বোঝায়।
—-না আফা আপনে বুঝলেন না এইডা হইলো একজন সুন্দরী মাইয়ারে দেইখা বখাটে পোলাদের অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম।ঐ যে সিনেমাতে দেখায় না নায়িকা কোমড় খান ঢুলাইয়া ঢালাইয়া যাইতে থাকে।এমন ভাবে যাইতে দেইখা আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় টিভির গ্লাস খুইলে ওই মাইয়ার কোমড়ে যাইয়া বাঁশ দিয়ে মাজাভাঙ্গা বাড়ি দেই।যাই হোক তাই দেইখা ঐ বখাটে পোলা গুলো কাইত চিইত চিতপটাঙ হয়ে যায়।
—-ওহ।ক্রাশ।বুঝেছি।এবার আর আমার মাথা খারাপ করো না।চলো।

তারা গাসুর হাত ধরে নিচে চলে গেল।
;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা “।আশা করি নয়নতারা উপন্যাসের মতো সেটাও আপনাদের আরো ভালো লাগবে।”আবেদিতা” উপন্যাসে ও আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আরেক বাস্তবতা।

;;;;;

—-ক্যাপ্টেন নাফিজ,আপনি এখানে কি করছেন দাঁড়িয়ে?

মেজর ইমরানের কথায় একটু চমকে উঠলো নাফিজ।

—-স্যার আপনি!
—-কেন ভয় পেয়ে গেলে নাকি?
—-হঠাৎ করে কথা শুনলাম তো তাই একটু।
—-তোমার মা বাবা আসেনি।
—-না স্যার।মা একটু অসুস্থ ছিল।তাই আর আসেনি।
—-ওহ।এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?ওখানে সবাই মজা করছে।
—-এমনি স্যার দাঁড়িয়ে আছি।স্যার আব্রাহাম স্যার আসবেন না?
—-আসবে তো।হয়তো দেরী হচ্ছে।আমাকে ফোন করেছিল।বললো সব শুরু হোক।এসেই পড়বে।
—-ওহ।
—-আসো চলো।
—-জি স্যার আপনি যান।আমি আসছি।
—-আচ্ছা ঠিকাছে।

ইমরান সাহেব চলে গেলে নাফিজ এখনো পার্কের গেটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজ পিকনিক বলে সেই সুবাদে তারা ও সকালে হাঁটতে আসেনি।না সে গিয়েছে।নাফিজের মন আনচান করছে তারাকে দেখার জন্য।

;;;;;

(আমার আইডি আবার ডিজেবল করে দেওয়া হয়েছে।
আজ মন একটু ও ভালো নেই।আর হ্যাঁ Suvhan Arag এই নামে একজন ফেক আইডি খুলেছে।আমার আইডি অফ আছে।আপনারা কেউ এই নাম দেখলে রিকোয়েস্ট দেবেন না।কিছু হলে তার জন্য আমি দায়বদ্ধ নই।আমি আইডি আবার খুললে বা আইডি ঠিক হলে আপনাদের জানিয়ে দেব।
আমি আল্লাহর রহমতে কষ্ট করে এ অবধি এসেছি।ইনশাহআল্লাহ আল্লাহ চাইলে কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।সবাই দোয়া করবেন)

;;;;;

গাড়ি গেটের কাছে আসতেই তারা ধীরে ধীরে নেমে পড়লো।গাসু ও সেই সাথে।

—-মা তোমরা আসতে লাগো।আমি আগে যাচ্ছি।
—-সমস্যা নেই বাপি।তুমি আর মা যাও আমি আর গাসু আসতে আসতে আসছি।
—-আচ্ছা ঠিকাছে।
—-গাসু তুমি কিন্তু একদম লাফালাফি করবে না।আর তারা তুই ও ওকে দেখে রাখিস।
—-আচ্ছা মা।তুমি যাও।আমরা আসছি।
—-ঠিকাছে।

আব্রাহাম সাহেব আর মাহমুদা বেগম আগে আগে ভেতরে চলে গেলেন।এদিকে গাসু তারার বাম হাত একদম শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।যেন ছেড়ে দিলে এখনি পালিয়ে যাবে।

—-এই গাসু কি করছো তুমি?আমি কি জেলের আসামী নাকি এভাবে ধরছো কেন?
—-আফা আপনে বুঝেতেছেন না আইজ আপনারে যা পরীর লাক্ষান লাগতেছে কই কোন বদ ছ্যামড়া আপনার দিকে নজর দেবে তাই আমি এইভাবে ধইরা রাখছি।যে আপনার দিকে নজর দেবে তারে আমি মুড়ো ঝাটা দিয়ে পিটামু একদম যতক্ষণ সাপের মতো মুচড়াতে থাকবে।
—-তুমি একটা পাগল।
—-আফা আপনে চিন্তা করেন না আমি ব্যাগে শুকনা মরিচের ডিব্বা ম্যাচের বক্স সব নিয়ে আইছি।একটু পর পর আপনেরে ছুয়াই দিমু।
—-তুমি এসব ও নিয়ে এসেছো!
—-হ।আফা আরেকটা কথা শুনেন।
—-কি?
—-আপনি কিন্তু একদম ভিড়ের মধ্যে যাবেন না।কই দেখা গেল কোন পেতন আইসা আপনেরে ধইরা নিয়ে যায়।
—-পেতন এটা কি গাসু?
—-পেতনির বিটা লিঙ্গ।
—-আমি তো জানতাম পেতনির পুংলিঙ্গ ভুত।
—-আফা ঐটি তো ভুতনীর বিটা লিঙ্গ।
—-ভুতনী!
—-আরে বুঝেন না।ভুত-ভুতনী,পেতন-পেত্নী,ডাইন-ডাইনি,শাকচুন্ন-শাকচুন্নী,পিশাচ-পিশাচীনী আর,,,,,,,
—-থামো থামো আর বলতে হবে না।আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে।

তারা আর গাসু বকতে বকতে গেট পেরিয়ে অনেকটাই ভেতরে চলে এলো।কিন্তু হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল।তাদের সামনে নাফিজ দাঁড়িয়ে আছে।

নাফিজ তো হা হয়ে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।গোল্ডেন আর কালো রঙ মিশ্রিত একটা ফুলহাতা লং গাউন পড়েছে তারা।সাথে ম্যাচিং হিজাব।বিশেষ কথা অন্যদিনের মতোই একি রকম কোনো সাজছাড়া তারা আছে।ব্যতিক্রম শুধু কাজলে।তারা আজ চোখে হালকা করে কাজল দিয়েছে।ব্যস এইটুকু তে যেন নাফিজ আরেকবার ঘায়েল হতে বাধ্য হয়ে গেছে।

তারা তো বেশ অস্বস্তি বোধ করছে নাফিজের এমন দৃষ্টিতে।আর নাফিজের তো সেদিকে খেয়াল ই নেই সে তারা কে দেখতে ব্যস্ত।

—-আমি কি মুড়ো ঝাটা আনবো?

গাসু এতোটাই চেঁচিয়ে কথাটা বলে উঠলো যে নাফিজ কেঁপে উঠলো।তারা ও একি অবস্থা।এমনকি পাশের কিছু মানুষ ও সেদিকে নজর দিচ্ছে।

—-গাসোওওও তুমি কি আমার কানের বারোটা বাজাবে নাকি!
—-আফা এই ফুলচোর ডারে তো আইজ আমি,,,,,,,।
—-আমি আবার কি করলাম মিস গাসুয়া?

নাফিজের কথায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে গাসু।

—-কেমন আছেন তারা?
—- জি ভালো।
—-আপনারা এতো দেরী করলেন যে?
—-ঐ একটু,,,,,,,,।
—-বেশ করেছি দেরী করছি।আরেকটু দেরী করলে ভালো হতো।আমি মুড়ো ঝাটাখান আনতে ভুলতাম না।এই আফা চলেন চলেন কইতাছি।

গাসু তারা কে ওখান থেকে জোরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

—-আরে গাসু আসতে ।
—-এইহানে ঐ গাছবান্দর ডা আছে আফা।চলেন চলেন।

নাফিজ পুরো বোকা বনে দাঁড়িয়ে আছে।

;;;;

সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সবাই একেক করে গাড়িতে করে বিদায় নিচ্ছে।

—-তারা চলো গাড়ি তে উঠি।ইমরান সাহেব ও আমাদের সাথে যাবেন।
—-মা গাসু তো এখনো আসেনি।
—-ও কোথায়?
—-ওকে আমি আইসক্রিম কিনতে পাঠিয়েছিলাম।তোমরা চলে যাও।
—-তুমি কিভাবে যাবে?
—-মারিয়া আপুর সাথে চলে যাব।আপু তো বলেছে আমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
—-না তুমি আমার সাথে চলো।
—-মা গাসু একা থাকবে।
—-আচ্ছা এসো।সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবে।
—-তুমি চিন্তা করো না।

মাহমুদা বেগম গাড়ির উদ্দেশ্যে গেলেন।তারা গাসুকে খুঁজছে এদিক ওদিক।

—-নাফিজ আমি দুজন সৈনিক কে রেখে দিয়েছি।তুমি ওদের দেখো।কেউ কিছু ফেলে গেল কিনা।সব কিছু কনফরম হয়ে তারপর তোমরা চলে এসো।
—-ওকে স্যার।

মেজর ইমরান নাফিজকে কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেলেন।

ক্যাপ্টেন মারিয়া গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।গাসু দৌড়ে গাড়ির সামনে আসলো।

—-মারিয়া ম্যাডাম তারা আফা আইছে?
—-তারাকে তো আমি স্যার আর ম্যামের সাথে দেখলাম।ও হয়তো চলে গেছে ওনাদের সাথে।আমি তোমার জন্য দাড়িয়ে আছি।তোমাকে ঐ দোকানে দাঁড়াতে দেখেই দাঁড়িয়ে আছি।
—-আফা আমাকে ফেইলা চলে গেল!
—-ও হয় তো খেয়াল করেনি ওতো।চলো তুমি উঠে পড়ো।আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসব।
—-আচ্ছা চলেন।

গাসু মারিয়ার সাথে গাড়িতে উঠে গেল।

চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে।মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে।

—-স্যার সব চেকিং শেষ।
—-ঠিক ভাবে দেখেছে তো।
—-জি স্যার।
—-আচ্ছা তোমরা পিকাপে ওঠো।আমি আসছি।
—-ওকে স্যার।

সৈনিক দুজন চলে গেলে নাফিজ ও পিছনে পিছনে যাবে হঠাৎ করেই নাফিজ থেমে গিয়ে পেছনে ঘুরলো।

—-কেউ তো কিছু ফেলে যায়নি।কিন্তু আমি ই বোধ হয় আমার মূল্যবান জিনিস ফেলে চলে যাচ্ছিলাম।

চলবে—————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here