নয়নতারা পর্ব ৩০

0
471

#নয়নতারা
পর্ব ৩০
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys

তারা কলিংবেল বাজাতেই গাসু এসে দরজা খুললো।তারাকে দেখেই তো গাসু সেই চিৎকার দিল।

—-ম্যাডাম,কোনে আপনে?শিগগিরই আইয়া পড়ুন।তারা আফা তো আইছে।

গাসুর কথা শুনে ভেতর থেকে দৌড়ে ছুটে এলেন মাহমুদা বেগম।তারাকে দেখেই জোরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

—-কোথায় ছিলি তুই?আমার চিন্তা হয়না।তুই সব সময় আমাকে এতো চিন্তায় ফেলিয়ে দিস কেন!

মাহমুদা বেগম আব্রাহাম সাহেব কে ফোন দিলে একটু পর তিনিও বাড়িতে চলে আসেন।দুজনের মাঝখানে বসে আছে তারা।মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব তারাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই চলে যাবে।

—-তুমি জানো মামোনি আমি তোমার জন্য কতো চিন্তায় ছিলাম?
—-বাপি এখন তো তোমরা কান্নাকাটি বন্ধ করো।আমি গাসুকে খুঁজতে গেলাম আর গাসু ভেবেছে আমি চলে গেছি।ব্যস ওখানেই তো প্যাচ লাগলো।
—-নাফিজ ই তোকে দিয়ে গেছে?
—-হ্যাঁ বাপি।আমি তো জানি যে পিকনিক শেষে কেউ না কেউ চেকিং এর জন্য থাকবে।তাই তো আমি ঐ এরিয়ার দিকে আবার গেছিলাম।আর ক্যাপ্টেন নাফিজ আমাকে বাড়ি অবধি দিয়ে গেছে।
—-কিন্তু উনি ভেতরে এলো না কেন?
—-মা ওনার মা ও ওনার অপেক্ষা তে আছেন।আমি বলেছিলাম ভেতরে আসতে কিন্তু উনি আসেননি।
—-যাই বলো মাহমুদা ছেলেটা অনেক দায়িত্ব বান।আমাকে ফোন নিয়ে আবার বিভ্রান্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি।নিজ দায়িত্বে ওকে দিয়ে গেছে।
—-হ্যাঁ।ছেলেটা অনেক ভালো।

মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব নিজেদের মতো কথা বলেই যাচ্ছেন।তারার মনে অন্য কিছু ঘুরছে।মা বাবার মুখে নাফিজের প্রশংসা শুনে ভেতরে ভেতরে সে বেশ খুশি।

;;;;;

রাত ১১:০০ টা বাজে।

নাফিজ বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়লো।

ফোনের স্ক্রিনে মিষ্টির ছবিটার ওপর হাত বুলালো কিছুক্ষণ।

—-মিষ্টি পাখি, কোথায় তুই?তুই তো এলি না।কিন্তু আমার বাগানে যে আরেকটা রানী এসে ঢুকে পড়েছে।সে তো বের হওয়ার নাম ও করছে না।আমি কি করব বলতো?

মিষ্টির ছবিটা বুকের ওপর রেখে চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো নাফিজ।তারার কথা মনে পড়তেই নাফিজ ফোনটা আবার হাতে নিল।তারার নাম্বার টা দেখে মুখে হাসি ফুটলো নাফিজের। “আমার নয়নতারা ” এই নামেই তারার নাম্বার টা সেভ করেছিল তখন সে।

—-আচ্ছা এখন ফোন দেওয়া কি ঠিক হবে?উনি ঘুমিয়ে পড়েনি তো!কি করব?একবার দিয়েই দেখি।
ভেবে চিন্তে নাফিজ তারার নাম্বারে কল দিল।

;;;;;

রাতের খাওয়া শেষে নিজের ঘরে আসলো তারা।চার্জ থেকে ফোন খুলতে গেলেই দেখে ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।

—-এখন ?এতো রাতে আমাকে কে কল করলো!

তারা ফোনটা হাতে নিয়ে খাটের ওপর গিয়ে বসলো।তাঁরপর রিসিভ করে কানে ধরলো।

—-হ্যালো।

ফোনের ওপাশের কন্ঠ টা শুনে তারা একদম কেঁপে উঠলো।কন্ঠ টা চিনতে কষ্ট হচ্ছে না তার।

—-হ্যালো তারা!

তারা কোনো উওর দিচ্ছে না।চুপ করে ফোন কানে ধরে চোখ বুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নাফিজ যে সত্যি সত্যি তাকে কল করবে এটাতো তারা ভাবতেই পারে নি।
ফোনের এপাশে নাফিজ ফোন কানে নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে।তারার নিঃশ্বাসের শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পারছে।তার ফোন পেয়ে তারার কি অবস্থা হবে এটাই কল্পনা করে নাফিজের মুখে হাসি ফুটলো।

—-আফা,,,,।
—-কে?

হঠাৎ করে গাসুর গলা শুনে কেঁপে উঠলো তারা।ফোনটা হাত থেকে পড়ে গিয়ে বিছানার ওপর পড়লো।

—-আফা আমি।আই গাসুয়া সিমসাং।
—-ও গাসু।
—-হ।আপনে ভয় পাইছেন নাকি?
—-হঠাৎ করে ডেকে উঠলে তো তাই একটু চমকে গেছিলাম।
—-ও।আফা এতো রাত্তিরে কার সাথে কথা বলতে ছেন?
তারা কি উওর দেবে সেটাই ভেবে পারছে না।
—-কি হলো কন?
—-ঐ মোবাইল কোম্পানি আছে না।এদের তো ঠিক নেই ।হুট হাট করে কল দেবে এ অফার সে অফার বলা শুরু করবে।
—-তা ঠিক কইছেন আফা।আমার তো মাঝে মাঝে মন চায় ফোনের কাচ খান ভাইঙা ভেতরে ঢুইকা ওগো কান টাইনা ধইরা মুড়ো ঝাটা দিয়া বাইরোই আসি।
—-আহ গাসু।এতো কথা যে বলো না তুমি।কি বলতে এসেছো?
—-আফা আপনের বিছানা করতে আইছিলাম।
—-না থাক।তুমি যাও।আমি করে নেব।
—-না আফা।আপনের কই পায়ে ব্যথা লাগব।
—-কিছু হবে না গাসু।তুমি যাও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
—-না আফা আমি বিছানা ঠিক করে তয় যামু।
—-আহ গাসু।আমার কিন্তু এবার রাগ হচ্ছে।
—-আইচ্ছা ঠিকাছে গেলুম।সমস্যা হলে ডাক দেবেন।
—-আচ্ছা।

গাসু চলে যেতেই তারা ক্রাচ নিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা লক করে লাইট অফ করে দিল।
মাহমুদা বেগমের আবার বেশি রাত জাগা অভ্যাস।ঘুম না আসা অবধি তিনি বাড়িতে হাঁটা চলা করতে থাকেন।তাই তারা গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো।বালিশটা মাথার ওপরে দিয়ে নিল।যাতে আওয়াজ না বাইরে যায়।

—-আচ্ছা উনি কেন ফোন করছিলেন?কেটে দিয়েছেন বোধ হয়।

ভাবনা চিন্তা করতে করতে তারা ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাফিজ এখনো লাইনে আছে।সে ফোন কাটে নি।তারা কাপা কাপা হাতে ফোনটা কানে ধরলো।

—-হ্যালো।
—-যাক অবশেষে তাহলে আপনার ফোনটা ধরার সময় হলো!
—-আপনি এখনো লাইনে আছেন!
—-হুম ছিলাম।শুনছিলাম আপনাদের কথা।
—-ওহ।
—-বাসায় পৌঁছানোর পর স্যার কিছু জিজ্ঞাসা করেনি।এতো দেরী করলেন কেন?
—-করেছিল।সব বলেছি।আপনি কখন বাসায় পৌছেছিলেন?
—-ঐ আপনাকে দিয়ে আসার আধা ঘন্টা পর।
—-ওহ।
—-তারা।
—-বলুন।
—-এখনো ঘুমাননি কেন?
—-ঐ আজকে ডিনার করতে দেরী হয়ে গেছিল।
—-প্রতিদিন কি এই সময়ে ঘুমান?
—-না।মাঝে মাঝে আরো রাত জাগি।পড়া থাকলে দেরী হয়।কেন?
—-না এমনি।ফোন দিয়ে আপনাকে বিরক্ত করলাম না তো?
—-উহুম।
—-তারা।
—-হুম।
—-আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
—-বলুন।
—-আমার বাগানের রানী হবেন?
নাফিজের কথা শুনে তারার শরীরের কম্পন আরো বেড়ে গেল।এসির মধ্যে ও পুরো ঘেমে যাচ্ছে তারা।
—-তারা চুপ করে আছেন কেন?
—-আমার ঘুম পাচ্ছে ক্যাপ্টেন।শুভ রাত্রি।

তারা সাথে সাথেই ফোন কেটে দিল।কি একটা ভয়ঙ্কর অনুভূতির শিকার হয়েছে সে আজ।এই প্রথম ফোনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলা তাও বালিশের নিচে লুকিয়ে।আর নাফিজের ঐ রকম ভয়ঙ্কর কথা।তারার চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নিয়েছে আজ।

ফোনের এপাশে নাফিজের মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠলো।

—-লজ্জাবতী লতিকা,তুমি যতোই লজ্জায় নুয়ে পড়ো,আমার কাছে তোমাকে হার মানতেই হবে।

(বাই দ্য রাস্তা, ওরা প্রেম করছে করুক।কিন্তু পাঠক আপনারা এটা কি করলেন।

আমি লেখিকা বলে কি আমার সাধারণ জীবন বলে কিছু নাই।দুদিন গল্প দেইনি একজন এসে কমেন্টস করে যাচ্ছেন “আপনার ভাব বাড়ছে নাকি!মানুষকে অপেক্ষা করাতে ভালো লাগে”।এগুলো কি কথা হ্যাঁ?
আপনারা নয়নতারা যারা পড়ছেন অনেকেই নতুন পাঠক।আপনারা দুদিন দেরী দেখলেন।জানেন আমার কতো সমস্যা র জন্য আমি এমন ও হয়েছে দশ দিন পর এক পার্ট করে দিয়েছি।কৈ আমার সে সব পাঠক তো কিছু বলেন।তারা তো ঠিক ই সমস্যা বোঝে।

আর তিনটা গল্প কনটিনিউ কেন করছি আগেও বলছি।সামনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে আমাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।এজন্য এখন ফ্রি আছি গল্প দিচ্ছি।আর এরকম তিন চারটা গল্প একসাথে কনটিনিউ করার হ্যৃভিট আমার আগেও আছে।
বলছি শুধু নিজের টা দেখবেন না।আপনারা পড়েন।কিন্তু আমি লিকি।দেড় ঘন্টা এক ঘন্টা ফেলে এক পর্ব একটু লিখে দেখেন বুঝবেন কষ্ট কতো।)

চলবে—————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here