#নয়নতারা
পর্ব ৩১
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
সকাল বেলা
—-এ তো উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কাকে খুঁজছেন তারা?
হুট করে নাফিজের কন্ঠ পেয়ে কেঁপে উঠলো তারা।পেছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখে নাফিজ পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
এতে তারা আরো অবাক হলো।অন্য দিন তো নাফিজ সামনের রাস্তা দিয়ে আসে।আজকে নাফিজের খোঁজ তো এতক্ষণ ছিলো না।এখন সে কোথ থেকে পেছনের রাস্তা দিয়ে উদয় হলো।
—-তারা কি ভাবছেন?
—-আপনি এখানে কেন?আপনার না ঐ সামনে দিয়ে আসার কথা!
—-আজকে আরো অন্ধকার থাকতে এসেছি।ভেবেছিলাম আজ আপনাকে একটু চমকে দেব।কিন্তু আজ তো আমি নিজেই চমকে গেলাম।
—-আপনি নিজে কিভাবে চমকালেন?
—-এই যে।আপনি উঁকি দিয়ে রাস্তার দিকে বার বার দেখছিলেন আমি এসেছি কি না!
নাফিজ ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বললো।আর তারার তো যায় যায় অবস্থা।নাফিজ এভাবে তাকে লজ্জায় ফেলবে এটা তার জানা ছিল না।
—-কি বুঝে গেলাম তো?
—-কচু বুঝেছেন আপনি।
—-কচু!
—-হ্যাঁ পানি কচু।নারকেল দুধ দিয়ে রাধলে সেই লাগে খেতে।
—-কি করে বুঝব সেই লাগে?
—-মানে টাকি!আপনি খাবেন তাঁরপর তো বুঝবেন।
—-খাব কি করে?আমার মা এটা রাঁধতে পারে না।
—-ওহ!তাহলে তো আর বুঝবেন না।
—-বুঝব। যদি আপনি একটু বোঝান।
নাফিজের মুখের দুষ্টু হাসি,চোখের বাকা দৃষ্টি। তারা তো আরো ঘাবড়ে যাচ্ছে ।
—-আমি বোঝাব মানে?
—-একদিন তো রান্না করে খাওয়ালেন না।রান্না পারেন তো?
—-আমি সব রান্নাই প্রায় পারি।শুধু মায়ের জন্য কিছু হয় না।জোর করে যা দু এক সময় কিচেনে যাই।
—-তাহলে আরেকবার একটু জোর করে যাবেন।
—-কেন?
—-আপনার হাতের নারকেল দুধের পানি কচু রান্না খাব।
—-আমার হাতের!
—-হ্যাঁ।
—-সম্ভব না।
—-সম্ভব করতে হবে।
—-সেটাও সম্ভব না।
—-আমি যদি বলি সব সম্ভব হবে।
—-কি করে?আপনি কি এখানে একটা কিচেন দেবেন দোকানের মতো।যে আমি এসে রান্না করব ।
—-আপনার হাতের রান্না খাওয়ার জন্য সেটাও দিতে রাজী।
নাফিজের কথা শুনে তারা আরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
—-আপনি বড্ড অদ্ভুত আচরণ করেন।
—-কেন করি বলেছি তো আগের দিন।
—-কি বলেছিলেন?ভুলে গেছি।
—-করলে কি।আপনি তো বোঝেন না।
—-কি বুঝব?
—-তারা আপনি বড্ড ছোট্ট।এসব বোঝার বয়স হয়নি।যদি কখনো আপনাকে বোঝানোর সুযোগ পাই ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বায়োলজি সব একদম প্রাক্টিক্যালি বুঝিয়ে দেব।
—-আপনি কি সাইন্সের টিচার নাকি?
—-আমি কেন সাইন্সের টিচার হতে যাব!
—-তাহলে এগুলো কি করে বোঝাবেন!
তারা ঠোট উল্টে জবাব দিল।নাফিজ শুধু হা হয়ে তারাকে দেখছে।এটুকু সে বুঝেই গেছে তারা তার কথাটা ঠিকমতো ধরতে পারেনি।
—-ঐ এমনি বললাম।ইচ্ছে ছিল সাইন্স এর টিচার হওয়ার।
—-ওহ।
—-তবে কি জানেন এসব বোঝানোর জন্য টিচার হওয়া লাগে না।
—-তাহলে!
—-ঐ যে বললাম যদি কখনো সুযোগ হয় সেদিন সব একসাথে বুঝিয়ে দেব।অবশ্য সুযোগ কেন আমি তো আমার করেই ছাড়ব।
তারা নাফিজের কোনো কথা বুঝল না।শুধু নাফিজের দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।
—-বোঝেননি?
—-উহুম।
—-আচ্ছা আর বুঝতে হবে না।চলুন হাঁটা শুরু করি।
—-হুম।
—-আচ্ছা গাসুয়া কোথায়?
—-ও আজকে বাগানে কাজ করছে।ইচ্ছে করে আসেনি।
—-কেন?উনি তো আপনাকে একা ছাড়ে না।কিছু বললেই তো ওনার বিশ্ববিখ্যাত ডায়লগ আর মুড়ো ঝাটা নিয়ে চলে আসে।
নাফিজের কথা শুনে তারা হো হো করে হেসে দিল।
—-আসলেই।মুড়ো ঝাটা ওর খুব প্রিয়।
—-হুম।তবে উনি আপনাকে খুব ভালোবাসে।
—-হ্যাঁ তা ঠিক।আমিও ওকে খুব ভালোবাসি।মা বাপি র পরে গাসুকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
—-আর কাউকে বাসেন না?
—-আর কাকে বাসব?এটাই তো আমার পরিবার।আর তো কেউ নেই।
—-না বলছি সারাজীবন কি এভাবে থাকবেন?আর কাউকে ভবিষ্যতে ভালোবাসবেন না?
নাফিজের কথা শুনে তারা দাড়িয়ে গেল।নাফিজের দিকে ঘুরলো।
—-আর কেউ বলতে ?
—-কেন আপনার বুঝি বিয়ে টিয়ে হবে না!আপনার হাসবেন্ড কে ভালোবাসবেন না?
—-হাহ!বিয়ে!ক্যাপ্টেন আপনি কি পাগল হয়েছেন?
—-কেন?
—-আমি নিজে চলতে পারি না ঠিকমতো।আমাকে কেউ কেন নিজের জীবনের অংশ বানাতে চাইবে?আর সৌন্দর্য সবকিছু নয় ক্যাপ্টেন।দুদিন তিনদিন ।একসময় মোহ কেটে যাবে।তখন মনে হবে একজন এরকম মেয়ে জীবনের বোঝা ছাড়া কিছুই নয়।
তারা কথা গুলো বলে সামনের দিকে যেতে লাগল।নাফিজের খুব খারাপ লাগছে তারার কথা শুনে।
;;;;;
—-মাহমুদা,মাহমুদা।
আব্রাহাম সাহেবের গলা শুনে মাহমুদা বেগম রান্না ঘর থেকে উপরে আসলেন।
—-কি হয়েছে?
—-ইব্রাহীম ভাই ফোন করেছিল।
—-হুম।তো?
—-যশোরে নাকি সৈকতের কি একটা কাজ আছে।ও আমাদের বাড়িতে আসবে।
—-ও।তাহলে তো ভালো।কবে আসবে?তারা শুনে খুব খুশি হবে।
—-এই তো দু তিন দিন পর হয়তো।
—-আচ্ছা আসুক।
মাহমুদা বেগম কথা শেষ করে নিচের দিকে চলে গেলেন।
;;;;;
নাফিজের চোখ আপাতত সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাশাপাশি দুটো খেজুর গাছের দিকে।নাফিজ এটাই বোঝার চেষ্টা করছে তারা এক দৃষ্টিতে কি দেখছে সেখানে।
—-আপনি কি দেখছেন তারা?
—-ক্যাপ্টেন আপনি কখনো খেজুর গাছের সামনে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে খেজুরের রস খেয়েছেন?
চলবে—————-