#নয়নতারা
পর্ব ৩৩
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
—-সৈকত এখন এসব বাদ দেও।রাত অনেক হয়েছে।
—-আচ্ছা কাকিমা।তারা যা ঘুমোতে যা।
—-আচ্ছা।গাসু চলো।
গাসু আর তারা নিজেদের ঘরে যেতে নিলে আরেক বিপত্তি ঘটে গেল।
তারা কোলের ওপর ফোন রেখে বসেছিল।তারা উঠে দাঁড়াতেই ফোনটা কয়েক ড্রপ দিয়ে একটু দূরে গিয়ে পড়লো।
—-আমার ফোন!
—-আরে আফা আপনে দেখে লইবেন না।দাঁড়ান আমি তুলে আনতেছি।
গাসু সামনে গিয়ে তারার ফোনটা তুললো।
—-আরে আফা।আপনার ফোনের ওপর তো খরা হয়ে গেছে একদম।
—-মানে?এদিকে নিয়ে এসো।
গাসু তারার কাছে ফোন দিতেই তারা দেখে সামনের স্ক্রিনটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে একদম।
—-তারা মা দেখ অন হচ্ছে কি না?
—-বাপি অন তো হচ্ছে কিন্তু স্ক্রিন দেখা যাচ্ছে না।বাপি আমার ফোন।
তারা তো এবার কেঁদেই দিল।
—-তারা কাঁদছিস কেন?তোকে নতুন কিনে দেব আবার।এটা তো এমনিতেও তিন বছর ধরে ব্যবহার করছিস।
—-মা আমার ফোনের স্ক্রিন ঠিক করে দিও শুধু।
—-ধুর বোকা মেয়ে তুই।তোর জায়গায় আমি হলে নাচতাম ফোন ভাঙার আনন্দে।আরে নতুন পাবি সেটাই নে।পুরানো টা ঠিক করার কোনো দরকার নেই।
—-তুমি বুঝতে পারছোনা সৈকত ভাইয়া ফোনটা আমার কতো প্রিয়।
—-তারা মা রাখো এসব।এই শুক্রবার আমি তোমাকে নিয়ে যাব।নিজের পছন্দ মতো আবার আরেকটা নিও।এ কটাদিন একটু ফোন ছাড়া থাকো।
—-আচ্ছা মা।
—-যাও ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।
—-ঠিকাছে বাপি।
তারা ব্যথিয় মন নিয়ে হাতে ফোন নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
তারা বার বার ফোনটাকে দেখছে।সে তো এটাই বুঝতে পারছে না কেন সামান্যতে এতো কষ্ট হচ্ছে তার?আদৌ কি ফোন বলে নাকি ফোনের ভেতরে থাকা মানুষ টির ছোট্ট ছোট্ট বার্তা, কল ,ফোনে তার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলোর জন্যে।
;;;;;
বাইরে আজ বড্ড কুয়াশা পড়েছে।ঠান্ডা হাওয়া যেন শীত টাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।নাফিজ শীতের সোয়েটার, তার ওপর জ্যাকেট পড়ে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবৎ।
বার বার হাত ঘড়ি দেখছে।
—-ওহ নো।সাতটা বেজে গেছে।কেন আসছে না এখনো?তারা কি অসুস্থ?না কাল তো কথা হলো।তাহলে?
তারার পথের দিকে এক নজরে চেয়ে আছে নাফিজ।তবুও তারার দেখা নেই।
নাফিজের বুকটা যেন এবার কষ্টে ভারী হয়ে আসলো।ঘড়িটাও থামছে না।দেখতে দেখতে সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।তাকে আবার ইউনিটে যেতে হবে।
—-আপনি কাজটা ঠিক করলেন না তারা।আমি আপনার পথ চেয়ে চেয়ে দিন কাটাই,আর আপনি শুধু ফাকি দেন আমাকে।সত্যি বলছি একবার যদি আপনাকে আমার খাচাতে পুরতে পারি না দেখবেন কি করি আপনাকে?সব কষ্ট দেওয়ার ওষুধ নিয়ে নেব,না থাকলে উৎপন্ন করব।
নাফিজ আর দাঁড়ালো না।সাইকেল টা উঠালো।রওনা দিল নিজের রাস্তায়।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।
আশা করি আমার এই ছোট্ট ভালোবাসা টা আপনারা সবাই গ্রহণ করবেন।
;;;;;
আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো তারা।চোখ মুখ হাত দিয়ে ডলছে।আজকে বেশ শীত পড়েছে।আর ঘুমটাও বেশ হয়েছে তার।
তারা আস্তে করে খাট থেকে নামলো।পাশে খাটের পাশে থাকা ক্রাচ টা নিল।ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই তারা চমকে গেল।
—-নয়টা বাজে!এতো সকাল অবধি ঘুমিয়েছি আমি!হায় আল্লাহ,ফজরের নামাজ যে কাজা হয়ে গেল আমার!
নামাজের জন্য আফসোস করতে গিয়ে আরেকটা বিষয় মনে পড়তেই তারা আরো চমকে গেল।
—-ক্যাপ্টেন,ক্যাপ্টেন আজ আসেনি তো।দেখি তো।
তারা একটু তাড়াহুড়ো করে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালো।বাড়ির সামনে টা পাশের মেহগনি বাগান ভালো করে উঁকি দিচ্ছে সে।কিন্তু কোথাও নাফিজকে দেখতে পাচ্ছে না।না ঘাসের ওপর কাত হয়ে থাকা তার লাল রঙের সাইকেল।
—-নিশ্চয়ই অফিসে চলে গেছেন উনি।এখন তো ওনার অফিস টাইম।আচ্ছা উনি কি এসেছিল?নিশ্চয়ই এসেছিল।কিন্তু আমাকে তো একবার কল দিতে,,,,,,,।
নিজে নিজেই আবার থেমে গেল তারা।তার তো এতক্ষণ খেয়ালই ছিল না তার ফোনের কি হাল হয়েছে গতকাল।
—-ধ্যাত ভালো লাগে না।ঘটের মড়া ফোনটাও স্ট্রোক করার আর সময় পেল না।
মন খারাপ করে তারা জানালা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
;;;;;
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ,কাজ রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনলে হবে!
মেজর ইমরানের কথা শুনে হালকা কেঁপে উঠলো নাফিজ।তার কেবিনে মেজর ইমরান এসে দাড়িয়ে আছে আর সে খেয়াল ই করেনি।
নাফিজ তো আরো এটা ভেবে যাচ্ছে,সে যে তারাকে খুঁজছে এটা ইমরান সাহেব কিভাবে জানলো!
—-নাফিজ আরো কতো আকাশের তারা গুনবে ? নাকি আকাশ ফেলে এবার মঙ্গল গ্রহ ঘুরতে যাচ্ছো ?
ইমরান সাহেবের কথা শুনে এতক্ষণে নাফিজের ধ্যান ভাঙলো।তড়িঘড়ি করে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে।সাথে সাথে স্যালুট করলো ইমরান সাহেব কে।
—-সরি স্যার।আমার অন্যমনস্কতার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।
—-ইটস ওকে।শোনো পরশু তোমাকে দুদিনের জন্য ঢাকা যেতে হবে।
—-স্যার কারণ জানতে পারি?
—-হ্যাঁ কিছু কাজে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে তোমাকে।তোমার সাথে দুজন সার্জেন্ট ও যাচ্ছে।
—-ওকে স্যার।
—-আমি ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওরা এসে তোমার সাথে কথা বলবে।
—-ওকে স্যার।
—-বি এটেনটিভ ইন ইউর ওয়ার্ক।ওকে।
—-ইয়েস স্যার।
ইমরান সাহেব চলে গেলেন।নাফিজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে কলম কামড়াচ্ছে।আজ কতোটা লজ্জায় পড়লো সে।
—-সবকিছু আপনার জন্য তারা।আপনি মৌমাছির মতো সব সময় শুধু আমার মাথার ভেতর ভন ভন করেন।কিন্তু কেন আসলেন না আজ!যাক রাতে দেখব কথা বলে।
নাফিজ এবার নিজের চেয়ারে বসে পড়লো।কাজে মন দিল।
;;;;;
—-কি রে তারা বুড়ি মন খারাপ কেন তোর?
—-কিছু না ভাইয়া।
—-দুদিনের জন্য এসেছি আর তুই এখন মুখটা এমন হনুমানের মতো করে রেখেছিস কেন?
—-সৈকত ভাইয়া, একদম হনুমান বলবে না বলে দিলাম।
“তোর মন খারাপের দেশে,
ফাটাবো এটম বোমা হেসে,
তোর মুখে ঝামা ঘসে,
মুখ টা দেব হাড়ি কালি করে”।
গাসু গান গাইতে গাইতে তারার ঘরে হাজির।
—-আফা আই গাসুয়া সিমসাং আইয়া পড়ছি।
—-নে তারা তোর ইন্টারন্যাশনাল অস্কার প্রাপ্ত এসিসট্যান্ট এসে পড়েছে।
—-অস্কার!হেইডা আবার কি?ও বুঝছি ঐ তো ব্রাজিলে ফুটবল প্লানার। হেব্বি লাগে আমার ট্রাশ।ওরে আমারে আইনা দিবেন বুঝি?
গাসুর কথা শুনে সৈকত হো হো করে হেসে উঠলো।
—-গাসু ওটা ট্রাশ না ক্রাশ।আর অস্কার হলো একটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার।মূলত অভিনয়ের জন্য প্রদান করা হয় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে।বুঝেছো?
—-আই নো বুঝতাম ।
—-তারা তুই কাকে কি বলছিস?ওর মাথায় কি এ সব ঢুকবে?দুনিয়ার অকাজ ওর মাথায়।দেখলি না গান একটা গাইলো গানের গায়ক ও ভয় পেয়ে লজ্জায় গান গাওয়া ছেড়ে দেব যদি ওর গান শুনে।
—-এই সাকি ভাই আপনি মোরে কি কইলেন?
—-এই তুমি আবার আমাকে সাকি বলছো?
—-বেশ করছি।সাকি সকিনা আরো কমু।
সৈকত এবার রেগে দাড়িয়ে গাসুর সাথে ঝগড়া শুরু করলো।
তারা ওদের কান্ড দেখে হাসছে।হুট করেই সৈকতের ফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে।ফোনটা বিছানার ওপর ই ছিল।
তারা সৈকতের ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের ছবি দেখে পুরো অবাক।এটা কি দেখছে সে?
চলবে————-
#নয়নতারা এবং #রৌদ্র_কুয়াশা সবাই ভালো করে পড়বেন।আপনারা জানেন ইনশাহআল্লাহ আমার বই আসতে চলেছে।তো এই দুটো র একটা উপন্যাস এর ওপর রিভিউ নিয়ে কনটেস্ট থাকতে পারে।