নয়নতারা পর্ব ৩৪

0
439

#নয়নতারা
পর্ব ৩৪
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys

হুট করেই সৈকত খপ করে তারার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল।

—-সৈকত ভাইয়া তুমি!
—-এই গাসু তুমি যাও তো এখন।
—-কেন যাইমু!আই নো গো।

সৈকত তারাকে ইশারা দিয়ে বললো গাসুকে যেতে বলতে।

—-গাসু তুমি এখন যাও।
—-কেন আফা?
—-আমার না খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে।তুমি একটু কফি করে নিয়ে আসবে।তোমার হাতের কফি আমার খুব ভালো লাগে।
—-সত্যি!
—-হ্যাঁ সত্যি।

গাসু তো খুশিতে যেন পারলে দুই লাফ দিয়ে একবার আকাশ একবার পাতাল ঘুরে আসে।

—-এক্ষুণি যাইতেছি।

গাসুকে আর পায় কে।সে তো লাফাতে লাফাতে চলে গেল।তারা এবার সৈকতের দিকে তাকালো।

—-এসব কি সৈকত ভাইয়া?
—-ইয়ে মানে,,,,,।

সৈকত এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।সে যে এভাবে হুট করে কারোর সামনে ধরা পড়বে জানা ছিল না তার।

—-একটা ছেলের ফোনের ওয়ালপেপারে কখন একটা মেয়ের ছবি থাকে বলোতো?
—-দেখ তুই তো সব বুঝেই গেছিস।
—-এটা হাফসা আপু না?ঐ যে তোমাদের এলাকাতে থাকে।তোমাদের বাড়িতে ও তো বেশ আসতে দেখেছিলাম ।
‌—-হ্যাঁ হাফসার ছবি।
—-কেন শুনি?
—-দেখ তুই কিন্তু কাউকে বলবিনা।
—-ঠিকাছে বলব না।
—-আমি হাফসাকে অনেক আগে থেকেই ভালো বাসি রে।এখন ও ও আমাকে ভালোবাসে।
—-তাহলে বিয়ে করছ না কেন?
—-চাকরি টা এখনো ভালো করে সেটেল হয়নি।এজন্য অপেক্ষা করছি।আর দু মাস পরেই প্রস্তাব দেব।দেখ তুই কিন্তু চাচুকে কিছু বলবিনা।
—-ঠিকাছে।কিন্তু আমার ট্রিট চাই।
—-কিহ!
—-হ্যাঁ।
—-এই তোদের বোনগুলোর কি সমস্যা বলতো।খালি ভাই গুলোর পকেটের পেছনে লাগিস।
—-কোনো কথায় কাজ হবে না।তুমি না দিলে সবাই কে বলে দেব।
—-আচ্ছা চল।কি খাবি?
—-আমি তো বাইরের খাবার খেতে পারি না।তুমি বরং বাজার করে নিয়ে আসবে।তারপর রেঁধে খাওয়াবে।
—-কিহ!
—-হ্যাঁ।না করলে বুঝব তুমি অকর্মণ্য।
—-ঠিকাছে দেখিয়ে দেব।হুহ।

এর মধ্যে গাসু কফি নিয়ে হাজির।

—-আফা দেখেই আই নিয়ালাইচি।
—-চলো এবার তিনজনে কফি খেতে বসি।
—-চল।

;;;;;

আজকের সকালটাও আরেকবার যেন নাফিজকে ব্যর্থতার সুর শুনিয়ে দিল।আজ ও তো সে অপেক্ষা করেছিল।কিন্তু কালকের মতো আজ ও তারা আসেনি।

—-কি রে মন খারাপ কেন তোর?

লতিফা দরজা লাগিয়ে দিল।নাফিজ ভেতরে গিয়েই সোফাতে গা এলিয়ে দিল।

—-নাফিজ।
—-বলো।
—-কি হয়েছে বাবা?
—-কিছু না।মা আমার ব্যাগ পত্র একটু গুছিয়ে ছো?
—-হ্যাঁ।তোর গাড়ি কখন?
—-সন্ধ্যা তে ছিল।কিন্তু ক্যানসেল করে কাল ভোরে দিয়েছি।
—-কেন?
—-ভোর বেলাতেই যাব।একটু চা দেবে।
—-আচ্ছা বস।চুলায় পানি বসাচ্ছি।

ছেলের বিষন্ন চেহারা দেখে লতিফার বড্ড খারাপ লাগল।

নাফিজ চোখ বুজে আছে।মনে তার ক্ষোভ বাসা বেঁধেছে।

—-কেন তারা?আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন?এতো কষ্ট কেন দিচ্ছেন আপনি?ঠিকাছে অনেক অপেক্ষা করেছি।কাল আর কেউ আপনার পথ চেয়ে বসে থাকবে না।সকালেই চলে যাব আমি।

নাফিজ অভিমানের সুরে মনে মনে কথা গুলো বললো।

—-তোর চা।নে ধর।

লতিফার গলা শুনে নাফিজ একটু উঠে বসলো।লতিফার হাত থেকে কাপটা নিয়ে ধোয়া ওঠা কাপে চুমুক দিল।

—-শোন।
—-বলো মা।
—-আমাদের দেশের বাড়িটা তো পুরো শূন্য হয়ে পড়ে আছে।তোর বাবা ও এখন আর এই চার দেয়ালের মাঝে থাকতে চান না।দেশের বাড়িতেই প্রান খুলে নিঃশ্বাস নিতে চান।
—- কি হয়েছে মা?
—-তোর তো চাকরি।তুই তো আর এখন আমাদের সাথে থাকতে পারবি না।তোকে ও বা একা রেখে কি করে যাই।এবার একটা বিয়ের সম্বন্ধ দেখি তোর।তোর জীবনটা একটু গুছিয়ে দিতে পারলে আমরাও দেশে চলে যেতে পারব।
—-মা আমাকে একটু সময় দেও।
—-সময় নে।কিন্তু যা করবি ভেবে চিন্তে তাড়াতাড়ি করিস।
—-আচ্ছা।
—-শোন তোর জন্য রুটি আর আলুভাজা করে দেব ভাবছি।পথ চলতে চলতে খেয়ে নিবি।আর কিছু কি করব?
—-মা এই সামান্য রাস্তা।আমি বাইরে কিছু খেয়ে নেব।
—-একদম না।বাইরের খাবারে ইদানীং যা সমস্যা হচ্ছে মানুষের।
—-আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা দিও।
—-আজ কখন ফিরবি?
—- আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।গোছগাছ করতে হবে।স্যার বলেই দিয়েছেন তাড়াতাড়ি এখানকার কাজ শেষ করে যেতে।
—-তোর ফিরতে কদিন লাগবে রে?
—-দু দিন।তাড়াতাড়ি হয়ে গেলে তার আগেও আসতে পারি।আর দেরী হলে তো আরো দেরী।
—-ওহ।
—-চিন্তা করো না।
—-হুম।তুই বস।আমি খাবার দিচ্ছি ।আর তাড়াতাড়ি চা টা শেষ কর।তোর অফিসের সময় হয়ে গেল।
—-আচ্ছা।

লতিফা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে উঠে চলে গেল।

;;;;;

—-এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস তারা?

সৈকতের কথায় ধ্যান ভাঙলো তারার।

—-কৈ কাউকে না তো?
—-সেই তখন থেকে দেখছি।আমরা হাঁটা হাটি করছি।কিন্তু তোর মন অন্য দিকে।
—-আই জানি আফা কারে খুজতেছে।

গাসু এতক্ষণ মেহগনি ফল নিয়ে খেলছিল।সৈকতের কথা শুনে ফল কুড়ানো বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

—-কাকে খুঁজছে?
—-ঐ যে ঐ ফুলচোর গাছবান্দর,,,,,,।
—-গাসু উ!

গাসু কথা শেষ করার আগেই তারার চোখ গরমে চুপ হয়ে গেল।

—-আই কিছু জানতাম না।আই ভালা মানুষ।মোর নো ভেজাল।আই ফলমালিন মুক্ত।মাঝে মধ্যে পেয়াজ খাই একটু।তাও দেশী পিয়াজ।আই কান মুলছি।ফুলচোর গাছবান্দর হেইডা তো আমি।

গাসুর কথা শুনে তারা হা হয়ে গাসুর দিকে তাকিয়ে আছে।আর সৈকত তো হেসে কুটিকুটি।

—-গাসু এসব কথা কোথ থেকে পাও তুমি।
—-ভেরি পিম্পিল ।
—-পিম্পিল!মানে।

গাসুর কথা শুনে সৈকতের মাথা চক্কর দেওয়ার উপক্রম।তারা গাসুর দিকে মনোযোগ না দিয়ে এদিক ওদিক শুধু নাফিজকে খুঁজছে।

—-আরে সাকি ভাই বুঝেন না ঐ তো সাধারন কয়।মানে হলো গিয়া ফরমাল।
—-গাসু ওটা সিম্পল।আর তুমি কোথ থেকে পিম্পল এনে বসিয়েছো।আর ফরমাল না নরমাল।
—-ঐ হলো।
—-আচ্ছা গাসু এই পড়াশোনা নিয়ে তুমি জেএসসি কিভাবে পাশ করলে বলোতো?
—-ঐ ডা তো মোর বা হাতের খেল।
—-কেমনে?
—-জানেন সাকি ভাই স্কুলে আমি হেব্বি ফেইমাশ।
—-ও।কিভাবে?
—-সব চিটার রা আমারে চেনে।
—-চিটার!
—- ঐ যে স্যার ম্যাডাম রা।
—-ও টিচার।তা তোমাকে এতো চেনে কেন?
—-পরীক্ষার হলে একটু নাচ করি তো তাই।
—-মানে?
—-ঐ আমার সামনে পিছনে ডানে বামে উপরে নিচে কেডা কি লিখতেছে তাই একটু তদারকি করি তো এজন্য।সবার থেকে বেশি নড়ি তাই চিটার রা আমাকে খুব ভালো চেনে।
—-বুঝেছি।এই করে তুমি পাশ করছো?
—-ঠিক কইয়া লাইচেন। দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি লাজ নাহি।ওরা তো আর কাজ করবে না।তাই আমি একটু সবার খাতা তদারকি কইরা দশে মিলে সবার পরীক্ষা একাই দেই।
—-আল্লাহ।গাসু তোমার থিওরি শুনলে স্বয়ং আইনস্টাইন ও নিজের মাথা খুলে বোধ হয় দুই বার ধুয়ে নিতেন।ভাগ্যিস তিনি বেচে নেই।
—-হ।

সৈকত এর এবার খেয়াল হলো তারার দিকে।তারা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

—-তারা কি হয়েছে তোর?
—-ভাইয়া তোমার কাছে ফোন আছে?
—-হ্যাঁ কেন?
—-কয়টা বাজে?
—-দাড়া।ও সাড়ে দশটা।

তারার মনটা খারাপ হয়ে গেল।কাল রাতে ও সৈকত গাসু আর তারা মিলে অনেক রাত ধরে গল্প গুজব করেছে।আজ ও দেরী করে উঠতে হয়েছে তাকে।আর আজ ও সে এসে নাফিজের দেখা পেল না।

তারার খুব কষ্ট হচ্ছে।কেন হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না।

—-আপনি কি রাগ করেছেন ক্যাপ্টেন?আমি নিশ্চিত আপনি ঠিক এসেছিলেন।রাস্তার এইখানে এখনো সাইকেলের চাকার দাগ আছে।আমার সত্যি সকালে ঘুম ভাঙেনি ক্যাপ্টেন।

বুক ভরা চাপা কথা গুলো মনেই রয়ে গেল তারার।

সবাই #রৌদ্র_কুয়াশা চাও অবশ্য ই পড়বেন।যথেষ্ট বাস্তবতা রহস্য নিয়ে লিখছি।আর কেমন লাগল অবশ্য ই জানাবেন।

অনলাইন ক্লাসের চাপে আছি।এজন্য গল্প দিতে অনিয়ম হচ্ছে।দুঃখিত।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here