নয়নতারা পর্ব ৪৬

0
446

#নয়নতারা

পর্ব ৪৬

Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।

;;;;;

নাফিজের কথা শুনে তারা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।এক হাত কোলের ওপর আরেক হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে রেখেছে তারা।নাফিজ দুষ্টু হাসি দিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।তারার পাশে বসে তারা কোলের ওপর রাখা হাত টির ওপর নিজের হাত রাখলো।নাফিজের স্পর্শে তারার হৃদস্পন্দন যেন আরো বেড়ে গেল।তারা ঈষৎ কেঁপে উঠলো।তারার কাঁপুনি দেখে নাফিজের মুখের হাসিটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল।তারা নাফিজের হাতের নিচ থেকে নিজের হাত সরাতে যাবে তার আগে নাফিজ আরো শক্ত করে তারার হাত ধরে বসলো।

—-তারা পাখি,তুমি কার থেকে হাট ছুটাচ্ছো?একবার ভেবে তো দেখবে।কতো তো চেষ্টা করেছো পেরেছো কি আমার হাত থেকে ছাড়া পেতে।

নাফিজের কথায় তারা মাথা তুলে নাফিজের দিকে তাকালো।কিন্তু ঐ যে নাফিজের নেশাক্ত দৃষ্টি মুখের বাকা হাসি।তারাকে আর তাকিয়ে থাকতে দিল না।উল্টে আরো লজ্জায় ফেলে দিল।তারা আবার নিজের চোখ নামিয়ে নিল।

—-বলেছিলাম তোমার জন্য অদ্ভুত কিছু অপেক্ষা করছে।কি হলো কথা তো বলো?মাই ওয়াইফ তুমি এতো লজ্জা পেলে তো আমি আরো মরিয়া হয়ে যাব।বউ সোনা কিছু তো বলো।

নাফিজের কথা শুনে তারার আরো লজ্জা লাগছে।মনে মনে সে ছক কষে নিচ্ছে।আগের নাফিজ কি ছিল আর এখন সে কাকে দেখছে।কি বেশরম কথা বার্তা।

—-তারা পাখি,বউ সোনা,আমার চাঁদের কনা কিছু তো বলো।

—-আপনি এরকম কেন?

—-কি রকম?

—-খুব খারাপ একটা লোক।আপনাকে যা দেখেছিলাম আপনি মোটেও তেমন নন।

তারার কথা শুনে নাফিজ হো হো করে হেসে উঠলো।তারা এবার মুখের ওপর থেকে আধ লম্বা ঘোমটা নিজেই খুলে ফেললো।রাগী দৃষ্টিতে নাফিজের দিকে তাকালো।

—-আপনি হাসছেন?ফাজিল লোক কোথাকার।

—-যাক বাবা আমি কি করলাম!

—-একদম ঠিক করেননি।এমন হুট করে কেন বিয়ে করেছেন?আমি জানি আমার বাপি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিত না।সব আপনার কার সাজি।

—-তা যা বলেছো।

—-তার মানে আপনি সত্যি সত্যি এই কাজ করেছেন!

—-হুম।ইমোশনাল ড্রামা।যাতে আর তুমি পালাতে না পারো।

—-আস্ত খারাপ একটা।

নাফিজ আবার তারার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো।হঠাৎ করেই নাফিজ হাসি থামিয়ে দিল।অবাক চোখে সে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।এতক্ষণে তার খেয়াল হলো তারা পুরো ঘোমটা খুলে ফেলেছে রাগের মাথায়।বিয়ের সময় মাথায় হিজাব থাকাতে তারার ঘন কালো চুল গুলো নাফিজ দেখ তে পায়নি।এখন যেন তারাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।নাফিজ হা হয়ে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।

—-ক্যাপ্টেন কি হলো?আপনি কোন দিকে তাকিয়ে আছেন বলুন তো?

—-উহ।চুপ করো।দেখতে দেও।নেকি পাচ্ছি।

—-মানে?

—-নিজের স্ত্রীর দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকালেও নাকি নেকি পাওয়া যায়।

নাফিজের কথায় তারা আবার লজ্জা পেয়ে গেল।নাফিজ তারার দিকে আরেকটু সরে গেল।একদম তারার গা ঘেঁষে বসলো।তারা পাশে সরতে যাবে তার আগে নাফিজ তার বাহু দিয়ে তারাকে ঘিরে ধরলো।তারা তো আরো কেঁপে উঠছে।একবার নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার তার হাতের দিকে।এদিকে লজ্জা ও পাচ্ছে।নাফিজের সেদিকে কোন হেলদেল নেই।সে একদৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।এর মধ্যে নাফিজ অদ্ভুত একটা কান্ড ঘটিয়ে বসলো।তারার থুতনি ধরে তারার মুখটা উঁচু করে তারার কপালে চুমু দিল নাফিজ।সাথে সাথে তারা চোখ বুজে ফেললো।

নাফিজের মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,

—-মাশাল্লাহ।

নাফিজ আবার তারার দিকে তাকিয়ে আছে।

—-তারা পাখি খুব বড় কাজ আছে।চলো সেটা সেরে নেই।

তারা এবার চোখ খুললো।

—-কিককি কাজ?

—-তোতলাচ্ছো কেন!আরে নামাজ পড়বো দুজনে একসাথে।চলো।

—-আমি এই ভারী গাউন গহনা পড়ে কিভাবে পড়বো?

—-আচ্ছা দাঁড়াও আমি খুলে দিচ্ছি।

নাফিজের কথা শুনে তারার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।তারা নাফিজকে হালকা ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে সরে আসলো।

ঢোক গিলে বললো,

—-আপনি খুলে দেবেন মানে?

নাফিজ তারার কথার উওর না দিয়ে তারার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো।তারপর তারার হাত থেকে চুড়ি গুলো খুলতে লাগলো।এদিকে তো তারার কাঁপতে কাঁপতে অবস্থা খারাপ।নাফিজ একে একে তারার সব গহনা খুলে দিল।

—-চলো।এবার ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবে।

নাফিজ খাট থেকে নেমে গেল।তারার নামার অপেক্ষা করছে সে।তারা খাটের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

—-কি খুজছো?

—-আমার ক্রাচ কোথায়?

—-তোমার সামনে ই দাড়িয়ে আছে।

—-কই নেই তো।

নাফিজ এবার তারার সামনে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলো।তারার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিল।

—-কেন?আমাকে চোখে পড়ে না।

—-আপনি!মানে?

—-হ্যাঁ আমি।যতক্ষণ আমি থাকব তোমার অবলম্বন হয়ে থাকব।আর কাউকে তোমার কাছে ঘেঁষতে দেব না।

নাফিজের কথাতে তারা চোখে যেন পানি ছলছল করছে।এতোটা সে পাবে কখনো সেটা যে সে কখনো আশা করেনি।নাফিজের তারার হাতের তালু দুটো দেখে দু হাতের তালুতে চুমু দিল।তারা আবার কেপে উঠলো।

—-তোমার সবকিছু জুড়ে শুধু আমি থাকব।আমার বিচরণ ই চলবে।আর কারোর বিচরণ তোমার জগতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

নাফিজের কথা শুনে তারা মুচকি হাসি দিয়ে নাফিজের দিকে তাকালো।

—-বসো।তোমার ড্রেস নিয়ে আসি আগে।

নাফিজ উঠে দাঁড়ালো।নিজের আলমারি খুলে একটা সাদা রঙের জামদানি শাড়ি বের করলো।সাথে অনুষঙ্গিক কাপড় গুলো।

—-চলো এগুলো পড়বে।

—-কিহ!শাড়ি!আমি জীবনে কখনো শাড়ি পড়িনি।শাড়ি পড়তে পারি না।হাঁটতে পারব না আমি।আঁচল ধরবো নাকি নিজেকে।

—-তোমার হাত ধরার লোক এখন যেমন আছে,পথ চলার লোক যেমন আছে,তো আঁচল ধরার লোক ও আছে।তুমি বাকি গুলো,পড়ে এসো।আমি শাড়ি পড়িয়ে দেব।

নাফিজের কথা শুনে তারার চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম।

—-কিহ!নাআ।

—-কিসের না।আমার বউকে আমি শাড়ি পড়াবো। তোমার তাতে কি?

—-আমি পারব না।

নাফিজ তারার সাথে আর কথা বাড়ালো না।ওয়াশরুমের দিকে গেল।তারা চুপচাপ বসে নাফিজের কান্ড দেখছে।একটু পর নাফিজ বেরিয়ে এসে চট করে তারাকে কোলে তুলে নিল।এতোটাই দ্রুত করলো তারাও আচমকা ভয় পেয়ে গেছিল।

—-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি?

—-ওয়াশরুমে কাপড় রেখে এসেছি।ওগুলো পড়ে এসো।

নাফিজ তারাকে এনে ওয়াশরুমে ভেতর নামিয়ে দিল।

—-দাঁড়াতে পারবে তো?

—-দাঁড়াতে পারব।বেশিক্ষণ না।পায়ে ব্যথা করবে।

—-ঠিকাছে।আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।তাড়াতাড়ি এগুলো পড়ে নেও।আমাকে ডাক দিও।আমি আসলে হাত মুখ ধুয়ে নেবে।আমি শাড়ি পরিয়ে দেব।

—-আমি পারব না।

তারা লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে যাচ্ছে।কিভাবে সে নাফিজের সামনে দাড়াবে।আর নাফিজ তাকে শাড়ি পড়াবে।

—-তারা কি হলো?কোনো কথা শুনব না আমি।বেশি বকবক করলে না নিজের হাতে চেন্জ করিয়ে দেব।

—-নাহহহ!

নাফিজ মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বললো,

—-তাহলে তাড়াতাড়ি করো।আমি বাইরে আসি।ঠিকাছে বউ সোনা।

নাফিজ ওয়াশরুমের বাইরে বেরিয়ে এসে দরজা টা টেনে দিল।তারা আর উপায় না পেয়ে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে নিল।টাওয়েল টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিল।

—-কি পরিমাণ বজ্জাত লোক একটা।ছি ছি।লজ্জা বলতে কিছু নেই।

তারা নিজেই আবার নিজের ভাবনাতে ডুব দিল।আসলেই সে কিসের লজ্জার কথা ভাবছে।নাফিজ এখন তার স্বামী।লজ্জা পেলেও তার আটকানোর কোনো উপায় নেই।লজ্জা তো লজ্জা।লজ্জার বাপ ও ধুয়ে মুছে পালাবে।শত হলেও এখন সে বিবাহিত।

নিজেকে মনে মনে সান্ত্বনা দিয়ে তারা নাফিজকে ডাক দিল,

—-ক্যাপ্টেন শুনছেন।আমার হয়ে গেছে।

তারার ডাক শোনা মাত্র ই নাফিজ ওয়াশরুমের দরজা আলগা করে ভেতরে ঢুকলো।তারাকে দেখে কিছুক্ষণ থ মেরে দাড়িয়ে ছিল নাফিজ।আরো তারা চুলটা ছেড়ে রেখেছে।গোল্ডেন রঙের ম্যাচিং ব্লাউজ পেটিকোট গায়ে সাদা তোয়ালে জড়ানো।নাফিজের কাছে তারাকে যেন স্নো বল মনে হচ্ছে।

—-টাওয়েল জড়ানোর কি ছিল তারা পাখি?আমিই তো।

নাফিজ হো হো করে হেসে উঠলো।তারা বেচারী তো লজ্জায় শেষ।নাফিজ আর লজ্জা পাওয়ার সুযোগ না দিয়ে তারাকে কোলে তুলে ভেতরে আনলো।দাঁড় করিয়ে শাড়িটা হাতে নিল।

—-আসলে এতো দ্রুত হয়েছে।পুরো মার্কেট ঘুরে মনের মতো নীল শাড়ি পাই নি।তাই এটা এনেছি।পরে আবার আমার স্বপ্ন পূরণ করব।

তারাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিল নাফিজ।তারা শুধু অবাক চোখে নাফিজের পদক্ষেপ গুলো পর্যবেক্ষণ করছে।

নাফিজ তারাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে ঠিক ই।কিন্তু একটা মেয়েকে এভাবে দেখে তার চোখে বিন্দুমাত্র অন্য কিছুর ছাপ নেই।

—-নেও হয়ে গেছে।চলো ওজু করে নেবে।

তারাকে কোলে নিয়ে আবার ওয়াশরুমের দিকে গেল নাফিজ।

;;;;;

নামাজ শেষ করে বেলকনিতে বসে আছে নবদম্পতি।নাফিজের দোলনা খুব পছন্দ ।একলা সময় টা সে দোলনায় বসে কাটাতে ভালোবাসে।তারাকে দোলনায় বসিয়ে একটু করে দোল দিচ্ছে নাফিজ।হালকা বাতাসে তারার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে।দোলনার দোলের সাথে অবাধ্যচুলগুলো নাফিজের মুখে ও এসে পড়ছে।নাফিজ যেন অন্য রকম ভাবে উপভোগ করছে এটা।দোলনা থামিয়ে নাফিজ এবার তারার পাশে গিয়ে বসলো।তারাকে হালকা করে জড়িয়ে তারার মাথাটা নিজের বুকের পাশে রাখলো।এক হাত দিয়ে নাফিজ তারার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।আরেক হাত দিয়ে তারার আঙুল ধরে রেখেছে।তারা কিছু বলছে না।তার ভেতর ও একটা ভালো লাগা কাজ করছে।তারার বারবার এটা মনে হচ্ছে এটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত।

—-তারা।

—-হুম।

—-একটা কথা বলব।

—-কি?

—-তারা আমার জীবনের একটা অতীত আছে।

—-কিসের অতীত?

তারা মাথা উঁচু করে নাফিজের দিকে তাকালো।নাফিজ একবার তারার দিকে তাকিয়ে তারার কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।বেলকনির গ্রিল ধরে দাড়ালো।

—-তারা আমি তোমার আগে একজন কে ভালোবাসতাম।বলতে গেলে আজ ও বাসি।

—-কিহ!

নাফিজের কথাটা যেন তারার ঠিক হজম হলো না।তারার বুকে যেন কেউ তীর ছুড়ে দিল।তারার চোখে সাথে সাথেই পানি চলে এসেছে।নাফিজের সেদিকে খেয়াল নেই।এক মনে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

—-হ্যা তারা।আমার মিষ্টি।মিষ্টি পাখি।

—-মিষ্টি!

—-হ্যাঁ আমার ছোট্ট মিষ্টি।আমার বাগানের ছোট্ট রাণী টা।

;;;;;

উদাস হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন মাহমুদা বেগম।আব্রাহাম সাহেব পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

—-আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।আমার সোনাটা কি করছে?ও রাতে খেয়েছে তো?ওষুধ খেয়েছে তো?

—-মাহমুদা চিন্তা করোনা।আজ আমার মামোনি আজ নতুন জীবনে পা দিয়েছে।ওর জন্য দোয়া করো।

—-দোয়া তো করি ।মায়ের কি দোয়া করতে হয়!আমার কলিজাটা কে ছিড়ে দিয়েছি যেন আজ।

—-মাহমুদা কেঁদো না।ও চলে আসবে তো।

—-আচ্ছা আমরা যে নাফিজের থেকে এতো বড় সত্যি টা লুকালাম।ও যদি কখনো জানতে পারে আমার তারার বায়োলজিকাল মা বাবা না।তাহলে?

—-তাহলে মানে।আমরা ই ওর বাবা মা।ওকে জানতে দেব না।আর জানলে বা কি।আমার তারা কি আর পাঁচটা মেয়ের মতোন নাকি?নাফিজ কি পারবে ওর মতো আরেকটা মেয়ে এতো সহজে খুজতে।

—-সেটা ঠিক।তবুও।

—-তবুও কিছু না।ঘুমা ও তুমি।বড্ড চিন্তা করছো বেশি।

আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগম কে টেনে বালিশে শুইয়ে দিলেন।

;;;;;

—-হ্যাঁ তারা।মিষ্টি পাখি আমার জীবনের অংশ।

নাফিজ মিষ্টিকে নিয়ে তার সমস্ত অতীত তারাকে বলে দিল।নাফিজের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।নাফিজ তবুও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে যে তারার চোখেও পানি সেটা আর সে দেখলো না।

—-মিষ্টি কে কখনো পাননি আপনি?তাহলে কেন আর খুঁজলেন না ওকে?

—-খুঁজে কি করতাম।মিথ্যার জাল আর কতো।

—-মানে?

—-আমার এই ইমোশন নিয়েও মানুষ খেলেছে।জানো ইউনিটে শুরুর দিকে ক্যাপ্টেন তানিয়া নিজেকে মিষ্টি বলে দাবি করেছিল।

—-তারপর?

—-ঐ দিন বাড়ি এসে সারারাত ঘুম হয়নি আমার।ভেবেছিলাম তবে কি উনিই আমার মিষ্টি।কিন্তু পরে যখন নিজের খেয়াল হলো বিশেষ করে বয়স তখন বুঝলাম আমার মিষ্টির এখনো এতোটাও বড় হওয়ার কথা নয় যে সে একজন অফিসার হবে।আর সত্যি বলতে শুধু ভেবেছিলাম।চোখ বুজলে মিষ্টির সাথে তাকে মেলাতে পারিনি।তাই আর কাউকে বিশ্বাস করি না।ঐদিনের পর আমার জীবনে নতুন মোড় শুরু।মায়ের চোখের পানি বাবার হতাশা দেখে প্রচুর কাদতাম।পরে মসজিদের ইমাম ও বোঝালেন এভাবে জীবন চলে না।আর হুট করে তুমিও কোথ থেকে আমার জীবনে এসে পড়লে।আমার সব কিছু যেন আরেকবার এলোমেলো হয়ে গেল।আর সেই এলোমেলো থেকেই আরেকবার বাঁচার আশা পেয়েছি।

—-এখন যদি কেউ এসে বলে সে মিষ্টি তাহলে?

—-বলবে না।বলা এতো সহজ নয়।আমি তার থেকে প্রমাণ নেব।সব প্রমাণ।আরেকবার চিনতে ভুল করব না।

নাফিজ চোখ মুছে পেছনে তাকালো।

—-তারা তুমি কাদছো কেন?

—-আসলে এতোটা ভালো কেউ কাউকে বাসতে পারে জানা ছিল না।চোখে পানি চলে এলো।

—-আমি আজ ও ওকে খুঁজি।যদি খুঁজে পাই।

—-কেন?ও যদি ফিরে আসে তখন কি করবেন আপনি?আমাকে বেছে নেবেন নাকি ওকে?

তারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।তারার দৃষ্টি দেখে নাফিজের মনে দুষ্টু বুদ্ধি জাগলো।

দুষ্টুমি করে নাফিজ বললো,

—-দুজনকেই মেনে নেব।

—-মানে?মানে মিষ্টিকে ও বিয়ে করে নেব।আর তোমার ও একটা সাথী থাকবে।

তারা যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো নাফিজের কথা শুনে।

—-কখনো না।আমি অসুস্থ বলে ভাববেন না যে আপনাকে ভাগ করব।আপনার যদি তাকে নিয়ে এতোই আশা থাকে কেন বিয়ে করেছেন আমাকে?কেন এতো কিছু ঘটিয়েছেন?তার চেয়ে বলে দিন আমি এখনি চলে যাব।

তারা রেগে ওঠার চেষ্টা করছে তার আগে নাফিজ তারাকে টেনে এনে বুকে সাথে জড়িয়ে নিল।

—-এই।একদম না।সাহস দেখি কম না তোমার?ঠ্যাঙ কেটে হাতে ধরিয়ে দেব।

—-ছাড়ুন আমাকে।

—-ছাড়ব না।

বেশ কিছুক্ষণ অতিক্রান্ত হলো।নাফিজ এখনো তারাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।তারা চুপটি করে নাফিজের হার্টবিট গুলো শুনছে।

—-তারা আমার জীবন টা এখন আর আগের মতো নেই।তারা মিষ্টি ছিল আমার অপেক্ষা আমার ভালোবাসা।কিন্তু তারা সে তো শুধু আমার না।আমার পরিবারের মুখের হাসি,আমার নতুন করে বাঁচার কারণ,আমি রাত জাগা রাত গুলোর ঘুমন্ত হওয়ার কারণ,আমার মুখে হাসি ফোটানোর কারণ।আমি মিষ্টিকে ভুল তে পারব না।কিন্তু তারাকে ভুলতে পারব না আর ছাড়তে তো পারবোই না।মিষ্টি যদি কখনো আসে ওর জন্য আমি ওর জীবন নতুন করে সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারি।কিন্তু তারার জন্য দেওয়া না দায়িত্ব নিতে পারি।আর ছোট্ট মিষ্টির জন্য আমার ভালোবাসা টা যে এক তরফা।পুচকু যে তখন বোঝে নি আমার অনুভূতি টা।ও শুধূ তার নাফিজ ভাইয়াকে বন্ধু ভাবতো কাছের বন্ধু,খেলার সাথী।আর তারার প্রতি ভালোবাসা টা দুই তরফা।আমি যে তারার শুধূ বন্ধু না তার ক্যাপ্টেন,তার ভালোবাসা আজ তার স্বামী।দুটো এখন আলাদা হয়ে গেছে তারা।তোমাকে ছাড়া সম্ভব না আমার।

নাফিজ বুকের সাথে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তারাকে।নাফিজের চোখের ফোটা ফোটা পানি তারার পিঠে পড়ছে।এদিকে তারার চোখেও পানি।এই পানির অর্থ শুধু তারাই জানে।

নাফিজের মনে মনে একটা কথাই বলছে,

—-পারব না পাখি।তোমাকে হারাতে পারব না।

আর তারা তো মনে মনে আজ আরেক কথা বলছে,

—-আল্লাহ তুমি আজ এরকম একটা রাত দেবে আমাকে কল্পনা করতে পারিনি আমি।ভেবেছিলাম এটা শ্রেষ্ট রাত।না এটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত।এতোদিন ভেবেছি আমার জীবন মানেই রাতের অন্ধকার,আজ আমার জীবন এর আলো মানেই সেই রাতের আধার।আমার অতীত বর্তমান আজ সব মিশে গেছে।একাকার হয়ে গেছে।আমি পারি নি এটা ভাবতে।আজ ভালোবাসার শব্দ টা আরেকবার পরিচয় করালো আমাকে।এই মানুষটাকে আরো ভালো বাসব আমি।ওর ভালোবাসার পাল্লা যে বড্ড বেশি ভারী হয়ে গেছে।সে নিজেও জানে না।আমি তোমাকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি ক্যাপ্টেন নাফিজ ভাইয়া।

তারা নীরবে চোখের পানি ফেলে গেল।নাফিজ এবার তারাকে বুক থেকে তুললো।তারার চোখের পানি মুছে দিল।

—-দেখো না কতোটা স্বার্থপর আমি।আমার জন্য তোমাকে ও আজ কাদিয়ে দিলাম।

তারাও হাত দিয়ে নাফিজের চোখের পানি মুছে দিল।

—-উহুম।আপনিই না বলেছিলেন এখন যে যা হবে সব দুজনের।

নাফিজ মুচকি হেসে তারার কপালে চুমু দিল।তারার গালে চুমুতে ভরিয়ে দিল।তারা কেঁপে উঠছে।তার লজ্জা লাগছে।কিন্ত আজ যাই হয়ে যাক সে হার মানবে।নাফিজের ভালোবাসার কাছে।

নাফিজ তারার ঠোঁটে চুমু দিল।

—-May I?

তারা লজ্জা পেয়ে নাফিজের বুকে মুখ লুকালো।নাফিজ দুষ্টু হেসে তারাকে কোলে নিয়ে বেলকনি থেকে ঘরের দিকে গেল।

চলবে———–

আই বড় পার্ট দিছি😎😎😎

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here