নয়নতারা পর্ব ৪

0
549

#নয়নতারা
পর্ব ৪
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

সকাল সকাল নাফিজের ঘরে খাটের ওপর পা উঠিয়ে বসে বসে চকলেট খাচ্ছে মিষ্টি।ফজলে শেখের কড়া নির্দেশে গতকাল রাত থেকে মিষ্টির ঘর বন্দীর অবসান করতে হয়েছে তানিয়াকে।তাই তো আর দেরী না করে সকাল সকালই মিষ্টি নাফিজের কাছে হাজির।

—-কাকিমা কাকিমা নাফিজ ভাইয়া কখন আসবে?
—-এই তো।প্রাইভেট পড়েই চলে আসবে।তোকে আর চকলেট দেব?
—-না না।আর না।পেট ফুলে টুমটুম হয়ে গেছে।
—-সকালে কি খেয়েছিস রে?
—-ও কাকিমা জানো আজ কি হয়েছে?
—-কি হয়েছে রে?

লতিফা কাপড় গোছানো বন্ধ করে মিষ্টির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিষ্টি খাটের ওপর দাঁড়িয়ে ফ্লোরের ওপর লাফ দিল।

—-এই এই দেখোতো পড়ে যাবি তো।

লতিফার কথা আর শোনে কে।মিষ্টি ফ্লোর থেকে উঠেই লতিফার কামিজের কোনা ধরে ঘুরছে।

—-কি হয়েছে বলবি তো?
—-ও কাকিমা আজ না বাবাই আমাকে সকালে খাইয়ে দিয়েছে।
—-সত্যি?
—-হ্যাঁ।তাও জানো আস্ত ডিম ভুনা দিয়ে।
—-আস্ত ডিম ভুনা মানে?
—-হ্যাঁ আস্ত ডিম ই তো।নতুন মা তো আমাকে কখনো আস্ত ডিম খেতে দেয় না।রান্না করলে কেটে দেয়।বলে এখন এটা খাবি রাতে বাকি অর্ধেক।

মিষ্টির কথা শুনে লতিফার চোখের কোণে পানি যেন টলমল করছে।

—-তোকে তানিয়া ঠিকমতো খেতে দেয়না তাই না রে মিষ্টি।

এর মধ্যে বাইরে সাইকেলের বেলের শব্দ।

—-ঐ তো নাফিজ ভাইয়া চলে এসেছে।

লতিফার কথার উওর না দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সদর দরজার দিকে গেল মিষ্টি।

—-নিয়তি বড়ই অদ্ভুত।যে রুবি তার মিষ্টি ডিম খাবে বলে হাঁস মুরগি পর্যন্ত পুষতো আজ সেই মিষ্টির কপালে কি এই লেখা ছিল।

ভাবনার মধ্যে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার কাপড় গোছাতে শুরু করলেন লতিফা।

;;;;;

—-তুই তো একখান গাধা তানিয়া।বিয়ের ছয় মাস হতি চললো এহনো একখান বাচ্চা নিতি পারলি না?
—-মা বললেই কি সব নেওয়া যায় না কি।সবে বিয়ে হয়েছে।কিছুদিন সময় তো কাটাতে দেও।
—-তাইলে আমারে ফোন কইরা এতো নালিশ দিতি আসিস ক্যান?তুই বইসা সময়ই কাটা।একখান বাচ্চা লইলা জামাই হের আগের ঘরের মাইয়াডারে কবেই নানা বাড়ি থুইয়া আসতো।
—-নালিশ করি কি সাধে।এতো করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি তারপরেও দুদিন পর আবার ওনার ঐ মেয়ের জন্য দরদ উতলে পড়ে মোটে।
—-যাই কও আর তাই কও।পুরুষ মাইনসে নতুন জিনিস পাইলা পুরানডারে ভুইলা যায়।এহন তুই আছোস তাঁরপর যদি তোর একখান বাচ্চা আহে তহন দেহিস নিজি হাতে ঐ মাইয়াডারে নানা বাড়ি পাঠাই দিব।নিজির ভালো যদি চাস তো এহনো কইতাছি আমার কথা হুন।ঘাড়ের ওপর ঐ সতিনের ধড় রাইখা জেবনে শান্তি করতি পারবি না।

নিজের মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিল তানিয়া।

—-মা ঠিকই বলছে।এবার একটা বাচ্চা নিতে হবে।প্রতিদিন ঐ মিষ্টিরে নিয়ে একটার পর একটা ঝামেলা আর ভালো লাগে না।

;;;;;

—-কি হলো ফজলে ভাই আজকাল কি ধ্যান করার প্র্যাকটিস শুরু করেছেন না কি?

অফিসের কলিগের কথায় ধ্যান ভাঙলো ফজলে শেখের।

—-আরে ইশতিয়াক ভাই। আপনি যে?
—-হ্যাঁ।লান্চ টাইম শুরু হয়েছে।সবাই লান্চ করছে।দেখলাম আপনি উদাস হয়ে বসে আছেন তাই ভাবলাম একটু কথা বলে যাই।
—-ওহ।
—-কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন নাকি?
—-মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল।
—-কেন?মিষ্টির কি হয়েছে আবার?
—-তানিয়ার সাথে রোজ একটা না একটা নিয়ে ওর বাধতেই থাকে।এইটুকু মেয়ে।এখন এরকম করছে।বড় হয়ে কি করবে কে জানে?
—-একটা কথা বলবো ফজলে ভাই।কিছু মনে করবেন না।
—-কি বলুন।
—-বউয়ের প্রতি অন্ধ না হয়ে মেয়ের প্রতি একটু খেয়াল করুন।ঐটুক বাচ্চা কখনো ঝামেলা করতে পারে না।ঝামেলা যদি ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় তো ও কি করবে?
—-মানে?
—-সৎ মা কেমন হয় সেটা ভালো করেই জানা আছে আমার।
—-তানিয়া ওমন না।ও যদি ওমন ই হবে তাহলে মিষ্টিকে কবে ওর নানা বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলতো।
—-যা আপনি বোঝেন।একটা কথা কি জানেন।কেউ যদি সবকিছু দেখেও অন্ধ হয়ে থাকতে চায় তো কোনো মানুষের সাধ্যি নেই তাকে কিছু দেখাবে।গত ঈদে আপনার বাড়ি ও গেছি।দেখেই বুঝেছি আপনার ঐ বউ কেমন।

ইশতিয়াক সাহেব কথা না বাড়িয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলেন।

;;;;;

—-তুমি খুব পচা হয়ে গেছো নাফিজ ভাই।তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না এখন।তোমার তো এখন এতো এতো বন্ধু।আমার সাথে খেলার তোমার সময় কোথায়?

কোমড়ে দুহাত দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি।রেগে মুখটাকে ফুলিয়ে রেখেছে।ফর্সা কান দুটো লাল হয়ে গেছে।

দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে মিষ্টিকে দেখে নাফিজ মিটমিট করে হাসছে।

—-ও এখন তো আমি পচা।তাই না।অথচ তুই যে একদিন আমার খোঁজ ও নিস নি তুই তাহলে কি।
—-আমাকে তো নতুন মা আটকে রেখেছিল।তাই আসি নি।তোমাকে তো আর কাকিমা আটকে রাখেনি।তুমি কেন আসোনি?
—-কি করব বল।তোর যে নতুন মা হয়েছে।ঐ মহিলার জন্য তোদের বাড়ি আর যেতে ইচ্ছে করে না।নে এবার কি ঘরে ঢুকতে দিবি আমাকে ?

নাফিজের উওরে মিষ্টি দুদিকে মাথা নাড়লো।অর্থ সে দেবে না।

—-যাক বাবা এখনো রাগ কমেনি।তাহলে কি করলে রাগ কমবে শুনি?

মিষ্টি খিলখিলয়ে হেসে নাফিজের দিকে দুই হাত উঁচু করে দিল।

—-ওরে দুষ্টু।এখন কোলে ওঠার শখ হয়েছে।
—-হি হি।

নাফিজ কাধ থেকে স্কুল ব্যাগ খুলে রেখে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিল।

—-এমনিতেও তোকে কোলে নিতাম।আজ তো তুই না এলে তোদের বাড়িতেই যেতাম।কতোদিন দেখিনা আমার ডিজনি প্রিন্সেস কে।আমার বেবি সিনড্রেইলা।

নাফিজ মিষ্টির গালে চুমু খেল।মিষ্টি ও দুহাতে নাফিজের গলা জড়িয়ে আছে।

—-তোকে হামি দিয়েছি।আমাকে দিবি না।
—-এই নেও।

মিষ্টি নাফিজের গালে চুমু দিল।

চলবে———

গল্প টাকে বাস্তবতা দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করছি।জানিনা পারছি কি না।সবাই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।নাহলে নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here