#নয়নতারা
পর্ব ৫০
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
;;;;;
দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেল নাফিজ।বাইরে তারা হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।পাশে আব্রাহাম সাহেব দাঁড়ানো।
—-স্যার আপনি?
—-হ্যাঁ।মেয়ের শ্বশুর বাড়ি চলে আসলাম।
—-দাড়িয়ে আছেন কেন স্যার?ভেতরে আসুন।
নাফিজ আব্রাহাম সাহেব কে পাশ কেটে ভেতরে যাওয়ার জায়গা দিলেন।তারা যে পাশে দাড়িয়ে আছে।সেটা যেন পাত্তাই দিল না নাফিজ।তারার ভেতরটা যেন বড্ড জ্বলছে।নাফিজের এমন আচরণ সইতে কষ্ট হচ্ছে তার।
আব্রাহাম সাহেব ভেতরে যেতেই তারা এই সুযোগে নাফিজের হাত টেনে ধরলো,
—-ক্যাপ্টেন।
তারার ডাক শুনে নাফিজ একবার ঘুরে হাতের দিকে তাকালো।আরেকবার তারার দিকে।তারার থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে নিল।আলতো করে নিজের হাতটা তারার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ভেতরে চলে গেল।তারার যেন কান্না পাচ্ছে।চোখে পানি টলমল করছে।তবুও নিজেকে সামলে নিল তারা।নিজে দরজা লাগিয়ে ভেতরে গেল।
সোফায় গিয়ে বসলেন আব্রাহাম সাহেব।নাফিজ ওনার পাশে বসলেন।তারা গিয়ে অন্য সোফাতে বসলো।
—-নাফিজ।তোমার বাবা মা কোথায় ?
—-স্যার আসলে বাবা মা তো পরশু গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।আমি দিয়ে এসেছি।
—-ও আচ্ছা।আজ তো শুক্রবার।বাড়ি তে একা না থেকে আমাদের ওখানে তো যেতে পারতে।
—-স্যার।তারার সামনে পরীক্ষা।অসুবিধা হবে এজন্য।
নাফিজের কথা শুনে তারা যেন আসমান থেকে পড়লো।মনে মনে বললো,
—-মিথ্যুক লোক একটা।পরীক্ষা র সময় বিয়ে করতে পেরেছেন।এখন ঢঙ করে।খালি রাগ দেখাচ্ছে আমাকে।বোঝে না আমার কষ্ট হচ্ছে।
নাফিজ উঠে দাঁড়াতে গেল।
—-কোথায় যাচ্ছো?
—-স্যার বসুন।খালি মুখে যাবেন নাকি।
—-বসোতো।মেয়ের বাড়ি এসেছি।এসব কিছু না।আর তুমি আমাকে এখনো স্যার বলছো কেন?
—-অভ্যাস হয়ে গেছে স্যার।সম্পর্ক এখন হয়েছে তাতে কি।সম্মান টা আগের থেকে আরো বেড়েছে।স্যার বলাতে কি আসে যায়।
—-তাও ঠিক।আচ্ছা শোনো।তারা বললো কদিন এখানে ঘুরে তার পর যাবে। আর আমিও তোমার শ্বাশুড়ি কে নিয়ে ঢাকা যাব।ও তোমার কাছেই থাক।
—-কেন স্যার?ওকে ও নিয়ে যান।
নাফিজের কথা শুনে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তারার।নাফিজ এখন তাকে তাড়াতে ও চাইছে।
—-না না।নতুন বিয়ে হয়েছে তোমাদের।তুমিও বাড়িতে একা।আর এখন জার্নি করলে পরীক্ষা র আগে তারা অসুস্থ হলে সমস্যা।আর তোমার স্ত্রী ও।তোমার কাছেই তো থাকবে।
—-আচ্ছা স্যার।
—-তোমরা দুজনে থাক।আমাদের আজ রাতে ফ্লাইট।
—-স্যার।আরেকটু বসবেন না?
—-অন্য একদিন।আসি ঠিকাছে।
আব্রাহাম সাহেব তারার কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তারার কপালে চুমু দিলেন।
—-আসি মা।নিজের খেয়াল রেখো।নাফিজের খেয়াল ও রেখো।
তারা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল আব্রাহাম সাহেবকে।নাফিজ আব্রাহাম সাহেবকে দরজার দিকে এগিয়ে দিতে গেল।আব্রাহাম সাহেব থেমে গিয়ে নাফিজের হাত দুটো ধরলেন।
—-কি হলো স্যার?
—-তোমাকে কিছু কথা বলব।
—-বলুন স্যার।
—-জানো।তারা কে আমার কাছে আনার পর থেকে আজ অবধি কখনো নিজের থেকে দূরে রাখিনি।আজ দেখ তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি।কারণ তোমার কাছে আমি আমার কলিজাটা তুলে দিয়েছি।
—-আমি জানি তো স্যার।
—-নাফিজ।মানুষের জীবন সমান নয়।সমান্তরাল।জীবনে অনেক কষ্ট দুঃখ থেকেই থাকে।কিন্তু অতীত আঁকড়ে ধরে দুঃখকে বরণ করে নিও না।বর্তমানে যেটা পেয়েছো সেটাকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো।এক বছর দু বছর না হোক।অন্তত দু মিনিট।তবুও এই সময় টাই যথেষ্ট অনেক বেশি বরং।প্রিয়জনের সাথে কাটানো একটা সেকেন্ড ও মূল্যবান।
আব্রাহাম সাহেবের কথা শুনে অবাক হচ্ছে নাফিজ।কেন আজ তিনি এসব কথা বলছেন?তবে কি তিনি ও সব জেনে গেছেন?মনে মনে প্রশ্ন আওড়াতে থাকে নাফিজ।
—-স্যার।আজ কেন এসব বলছেন?
—-আমার মেয়েটা কম কষ্ট পায়নি জীবনে।ছোট বেলাটা ওর কেটেছে কষ্ট এ।আমার কাছে এসে তারপর ও কষ্টের শেষ নেই ওর।তুমিই বলো একটা ফুটফুটে মেয়ে নিজে চলতে পারে না,হুইল চেয়ারে আবদ্ধ থাকে।এমন তো নয় সে জন্ম থেকে এমন।তবুও মেনে নেওয়া যায়।কিন্ত তারা তো দুর্ঘটনার শিকার!ছোট বেলায় আর পাঁচটা বাচ্চার মতো ও খেলাধুলা করে মজা করে বেরাতে পারেনি।কোন বন্ধু পায়নি।সবার থেকে তাচ্ছিল্য বেশি পেয়েছে।যখন বড় হলো।আত্মীয় স্বজন শুরু করলো এই মেয়ে কে কোথায় খাটাবে।আমার তারা মুখে কিছুই বলতো না।আমি জানি গভীর রাতে ও মুখ লুকিয়ে কাদতো।নাফিজ সব সময় নিজের টা দেখতে নেই।সেটা এক তরফা।সব সমীকরণ গুলোকেও মেলাতে হয়।এমন ও হতে পারে দিক বেদিক সব দিক দিয়ে তোমার চেয়ে তারার কষ্টের পাল্লা ভারী।অনেক কিছু বলে ফেললাম।আমি এই হাতে তোমার হাতে ওকে তুলে দিয়েছি।তুমি একদিন চেয়েছিল ওকে আমার কাছে।শেষ বার তোমাকে ফেরাই নি আমি।আমার কলিজাকে কোন কষ্ট দেবে না।মনে রেখো ওর একটা ফোটা চোখের পানিও আমার বুকে রক্তক্ষরণ করবে।আমি ওর বাবা।এই হাতে ওকে বড় করেছি।ও কখন কোন পরিস্থিতিতে ছিল।আমার থেকে ভালো তুমি জানবে না।হতে পারি জন্মদাতা না।পালক পিতা।তবুও আমি পিতা।ভালো থেকো।আল্লাহ তোমাদের সুখে রাখুক।আল্লাহ হাফেজ।
কথা বলতে বলতে আব্রাহাম সাহেবের চোখে কখন পানি চলে এসেছে তিনি টের ও পাননি।চোখটা মুছে নিয়ে নাফিজের কাঁধে হাত রেখে চলে গেলেন।নাফিজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম সাহেবের যাওয়ার দিকে।
;;;;;
আব্রাহাম সাহেব চলে যেতেই ফোন বেজে উঠলো নাফিজের।ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোনটা বের করলো নাফিজ।স্ক্রিনের ওপর সৈকত এর নাম ভেসে উঠেছে।নাফিজ তো আবার অবাক হচ্ছে।এরা কি শুরু করেছে?ফোনটা রিসিভ করলো নাফিজ।
—-হ্যালো।
—-জামাই বাবু ভুলে গেছেন কি আমাকে?
—-আরে না।আমার শালা বাবু আরো বিয়ের ঘটক।তোমাকে কি ভোলা যায়?
—-ওসব বাদ।আসল কথায় আসি।
—-কি কথা?
—-কি কথা দিয়েছিলে আমাকে?
—-মানে?
—-বিয়ের আগে।তুমিই তো বলেছিলে আমার বোনকে কখনো কষ্ট দেবে না।তোমার সব কিছু শুনে তবেই আমি আমার বোনকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
—-হ্যা।বলেছিলাম তো।
—-তো? তো আমার বোন এর চোখে কেন পানি?তুমি জানো এই সপ্তাহ ধরে ও শুধূ কেদেছে।সব তোমার জন্য।তুমি কিভাবে পারলে ওকে কষ্ট দিতে?ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।মিটিয়ে কেন নেও নি?
—-শুধু বোনের টাই দেখলেন।আর আমার টা!
—-দেখো নাফিজ।তোমার বয়সে ছোট হতে পারি।সম্পর্কে বড় আমি।সব ই শুনেছো তুমি।আজ ও জ্বরের ঘোরে তারা কিছু নাম আওড়াতে থাকে।তার মধ্যে একটা নাম থাকেই।কি জানো?নাফিজ ভাইয়া। ওর খাতার পেছনে ছোট্ট করে লেখা থাকে নাফিজ ভাইয়া।ও হয়তো বুঝত না।ভালোবাসা কি জানতো না।কিন্তু আজো ও মনে করে ওর একটা বন্ধু ছিল।ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।সেটাও সেই নাফিজ ভাইয়া।জানো তোমার নাম শুনে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি যদি সেই নাফিজ হতে?বুঝি নি ভাবনাটা আজ সত্যি হবে।ও তোমাকে ভালোবাসে।ক্যাপ্টেন নাফিজকে।কিন্তু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্ত সেই নাফিজ ভাইয়াই ছিল।আজ ও আছে।
—-সব জানেন আপনারা!
—-হুম।তোমার কষ্ট টা কম না।তুমি তো ছোট বেলায় পরিবার পেয়েছো।ভালোবাসা পেয়েছো তাদের।একজন সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করতে পেরেছো।আমার বোন কিন্তু এসব পারেনি।ওর জীবনে পূর্ণতার থেকে শূন্যতার আধিক্য বেশি।না বুঝে অনেক কথাই হয়তো তোমাকে বলেছে।এটা বোঝার চেষ্টা করবে কি বলছে।অভিমান দূরত্ব আনে নাফিজ।ভালোবাসা না।ভালো থেকো।
সৈকত ও ফোন কেটে দিল।নাফিজ এবার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।নাফিজের মন যে মানছে না।সে কষ্ট পেয়েছে।খুব কষ্ট।সোফার দিকে তাকালো নাফিজ।তারা কে দেখতে পেলো না।
—-গেলো কোথায়?ঘরে নেই তো?
;;;;;
নাফিজ ঘরের দিকে গেল।ঘরে গিয়েও তারাকে পেলো না নাফিজ। হঠাৎ ই পানির শব্দ ভেসে আসলো নাফিজের কাঁনে।ওয়াশরুমের দরজা লাগানো।তারা হয়তো ফ্রেশ হচ্ছে।নাফিজ আর দাঁড়ালো না।বসার ঘরে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল।তারার আসাটা মেনে নিতে পারছে না নাফিজ।যদিও এ কদিন নিজেও ভালো নেই সে।ছটফট করেছে।ছটফটানি আরো বেড়ে গেছে তার।যখন তারা বাগানের দুই রাণী যে একই ব্যক্তি এটা জেনেছে সে।সামনে র টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো নাফিজ।অনেক গুলো নয়নতারা ফুল।কিন্তু এগুলো এখানে কে আনলো?নাফিজ তো আনেনি।নাফিজ উওর খুঁজে পাচ্ছে না।
—-ক্যাপ্টেন।
তারার গলা পেয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো নাফিজ।
সাদা রঙের কুর্তি,প্লাজু সাদা ওড়না পরে ক্রাচ হাতে দাড়িয়ে আছে তারা।চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে।তারা যে গোসল করে এসেছে সেটা বুঝতে পেরেছে নাফিজ।তারাকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিল নাফিজ।সাদা রঙে আরো বেশি সুন্দর লাগছে তারাকে।বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নাফিজ।ঘরে যেতে নিলেই তারা পথ আটকে দাড়ালো।
—-ক্যাপ্টেন কথা বলুন না আমার সাথে।এমন কেন করছেন?
—-হাত ছাড়ো।
—-ছাড়ব না।ক্যাপ্টেন শুনুন না আমার কথা।
—-কি শুনব?কেন এসেছো এখানে?তোমাকে বলেছি না তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।তুমি শোনো নি আমার কথা।বাবা ভাইকে দিয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করাচ্ছো।
—-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ক্যাপ্টেন।আপনি এসব বলবেন না।
—-এখানে তোমার বাবা রেখে গেছে ভালো কথা।যে কদিন ইচ্ছে থাকো।আমার সামনে আসবে না।তোমার মুখ ও দেখতে চাইনা আমি তারা।
নাফিজ তারার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিল।উল্টো দিকে ঘুরে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
—-আমি না হয় নাই বা গেলাম।তুমি থাকতে পারবে তো নাফিজ ভাইয়া?ফোনের ওয়ালপেপারে কিন্তু একদম তাকাবে না।আমার ছবি ডিলিট করে দিও।আপনি থাকতে পারবেন তো ক্যাপ্টেন?নাকি সৈকত ভাইয়াকে ফোন করে আবার খোঁজ নেবেন।বিনোদিয়া পার্কে ঝাউ গাছের পাশে দাড়িয়ে থাকা আমার ছবিটা আবার দেখবেন।তুমি কি থাকতে পারবেন,ক্যাপ্টেন নাফিজ ভাইয়া?
তারার প্রশ্ন শুনে থমকে গেল নাফিজ।চোখের পানি ও বাধ মানলো না।বেহায়া র মতো গড়িয়ে পড়লো।বুকের বা পাশটা ঠিকই চিন চিন করে উঠলো।
তারা আবার বলতে শুরু করলো,
—-আমি না হয় ভুল করেছি।কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।একবার ও তো শুনলে না আমার কথা।সাধে কি জিজ্ঞাসা করেছি?আজ যদি আমি মিষ্টি না হতাম।সত্যি সত্যি কখনো মিষ্টি চলে আসতো!আমি মরে গেলেও কখনো তোমাকে অন্য কারোর সাথে দেখতে পারতাম না।বেচে থাকার কথা বাদ ই দিলাম।আমার তো এটাও মনে হয় তুমি মিষ্টিকে বেশি ভালো বাসো।আবার বলো আমাকেও ভালোবাসো।কি ভুল বলেছি আমি?
নাফিজ উল্টো দিকে ফিরেই বললো,
—-চোখের আড়াল হলেই সবাই মনের আড়াল হয়ে যায় না।কোন এক কোনে ঠিকই থেকে যায়।ভালোবাসা যদি সত্যি হয় অনেক সময় দ্বিতীয় বার আসলেও প্রথম টাকে ভোলা যায় না।প্রথম জন মনের এক কোনে ঠিক থেকে যায়।রাতের গভীরতা ও কখনো মনে করিয়ে দেয় তার কথা।দুজনকে এক সাথে ভালোবাসা যায় না,কিন্তু সময়ের ব্যবধান অনেক সময় বাধ্য করে,কিন্ত একি ভাবে ভালোবাসা যায় না।মিষ্টিকে তারার থেকে বেশি ভালোবাসি আমি।নাহলে এতো অপেক্ষা করতাম না।কিন্ত পরবর্তীতে কি হতো জানো?তারা র সাথে থাকতে থাকতে ঐ ভালোবাসা টা একটু একটু করে কমে যেত।বর্তমানের পাল্লা ভারী হতো একটু।কিন্ত অতীত তবুও মুছতো না।সময় ই ভারী করে।সবাই গড়তে কষ্ট করে।ভাঙতে সময় নেয়না।ভাঙা জিনিস গড়তে ভাঙার পূর্বে গড়ার থেকেও বেশি কষ্ট করতে হয়।প্রকৃতিই বাধ্য করে প্রাপ্যটা দিতে।ভাঙা জিনিস সবাই গড়তে পারে না তারা।তারা সেই ভাঙা জিনিস টাকে গড়িয়েছিল আমার জন্য।আর মিষ্টি সে তো গড়ে ভেঙে দিয়ে গেছিল।আমার কাছে মিষ্টি তারা দুজনের ভালোবাসার ব্যখা এটাই।কার কাছে কি জানিনা।আমি কাউকে ঠকাইনি।শুধু ভালোবেসেছি।
নাফিজ ঘরে চলে গেল কথাগুলো বলে।তারা এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলগুলো এক হাতে নিল।নিজে ও ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।বিছানায় বসে আছে নাফিজ।খাটের বাইরে পা ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে সে।তারা ধীর পায়ে গিয়ে নাফিজের মাথার ওপর দিয়ে সব ফুল ছড়িয়ে দিল।হঠাৎ করে ফুল দেখে অবাক হয়ে গেল নাফিজ।মাথা তুললো।
—-আমাকে ক্ষমা করে দেও নাফিজ ভাইয়া।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।শুধু হারানোর ভয় করেছি।তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।তুমি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমি।দ্বিতীয় বার হারাতে চাই না তোমাকে।ছাড়তেই যদি চাও তো নিজ হাতে মেরে ফেল।কষ্ট হবে না।
তারার শেষ কথা শুনে ধম করে দাঁড়িয়ে পড়লো নাফিজ।একটানে তারাকে বুকে জড়িয়ে নিল।চোখের পানি ছেড়ে দিল।তারার মুখে চোখে চুমু খেয়ে আবার বুকে জড়িয়ে নিল।
—-ওরে।তোকে কিভাবে ছাড়ব রে?বলবি আমাকে!এতোগুলো বছরেও ছাড়তে পারিনি।চোখের আড়ালে ছিলি তবুও।আজ দেখ তোর চাওয়াটার জোর এতো বেশি ছিল পেয়েই গেলাম তোকে।তোকে আর ছাড়তে পারব না।হারাতে পারব না।এ জীবনে তোকে ছাড়ব না আমি।তুই আমার নয়নতারা।
;;;;;
রাতের বেলা।
তারাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে নাফিজ।না নিজে নড়ছে না তারাকে নড়তে দিচ্ছে।অনেক বছর পর আজ মন ভরে শ্বাস নিচ্ছে নাফিজ।
—-ছাড়ো না।
—-চুপ করে শুয়ে থাক।
—-এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি ভর্তা হয়ে যাব গো ।
—-হোস গে।আমার কি।তোকে তখন ভাত দিয়ে মেখে খেয়ে ফেলব।
—-তুমি আচ্ছা খারাপ।
—-মিষ্টি শোন।
—-কি?
—-তারা পাখি।
—-আরে!কি শুরু করেছো?
—-তোকে কি নামে ডাকব রে?
—-যা ইচ্ছা ডাকো।
—-তারা বলা অভ্যাস হয়ে গেছে।
—-হুম।
—-মিষ্টি ডাকটা বেশি ভালো লাগে।
—-আজব!
—-I ❤ U.
—-I ❤ U too.
—-তোমার পরীক্ষা কবে শেষ হবে গো?
—-শুরুই তো হয়ে পারলো না।কেন?
—-অনেক কাজ আছে তারা।কিছু মানুষ কে জবাব দিতে চাই।
—-কাকে?
—-মিষ্টির সেই অপদার্থ মা বাবাকে।
—-না নাফিজ ভাইয়া।আমি ওদের দেখতে চাইনা।
—-কোনো কথা না।সন্তানহীন কেমন আছে দেখাব না ওদের।অবশ্য ই।তোর পরীক্ষা শেষ হতে দে।
—-কিন্তু?
—-কোনো কিন্তু না।আর এই আমাকে ভাইয়া বলছিস কেন?আমি তোর বর।
—-ক্যাপ্টেন।
—-বউ সোনা চাঁদের কনা।
—-এতো কথা কোথ থেকে পাও ?
—-একটা জায়গায় যাবে তারা?
—-কোথায়?
—-আমি নিয়ে যাব যেখানে।
—-আরে কোথায়?
—-এই জায়গার নাম নেই।তবে বর্ণনা আছে।
—-মানে?
—-এক মুঠো সুখ।ছোট্ট চাওয়ার ফল।যখন পুরো পৃথিবী মনে হবে থমকে গেছে,শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়েছে,বৃষ্টির ফোঁটার ছিটেফোটা গায়ে লাগতে শুরু করেছে,অবশেষে বৃষ্টি।অঝোর বৃষ্টি।সে এক অদ্ভুত ভূকম্পন।মাঝখানে আমি তুমি।
চলবে————
অনেকে বলছেন কেন পর্ব বাড়াচ্ছি?
আমি সুন্দর করে এনডিং টা টানতে চাই।তাড়াহুড়ো করলে সেটা ভালো হবে না।কিছু ঘটনার বর্ণনা এখনো বাকি।
Pc: Adrisa Adnan