নয়নতারা পর্ব ৫১

0
531

#নয়নতারা

পর্ব ৫১

Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

;;;;;

আপনাদের মতামত জানতে চাই।

আমি দু তিনদিন #রৌদ্র_কুয়াশা অফ রেখে যদি #নয়নতারা শেষ করি।সমস্যা হবে কি?

অনেক চাপে আছি।হুট করে আমাদের প্রথম সেমিস্টার শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হবে।সবাই জানাবেন।

;;;;;

পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়েছে তারা।আজ বড্ড খুশি সে।এতোদিনে তার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো।তার চেয়ে মূল কথা আজ নাফিজ তাকে নিতে আসবে ।পরীক্ষার সময় তারার সাথে থাকতে পারেনি নাফিজ।এক্সারসাইজ এ গেছিল সে।এই নিয়ে তারার মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই।আব্রাহাম সাহেব কেও সে এমন যেতে দেখেছে।এখন নাফিজ ও।একজন সৈনিকের পরিবারকে অনেক ত্যাগ যে স্বীকার করতে হয়।

সবকিছু ভাবতে ভাবতে গেটের কাছে চলে এসেছে তারা।গেটের থেকে একটু দূরে নাফিজের গাড়ি দেখে মুখে হাসি ফুটলো তারা।ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় নাফিজ হাতে দুটো ডাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে।তারাকে দেখেই নিজেও এক টু হাসি উপহার দিল।তারা দ্রুত গতিতে নাফিজের দিকে এগিয়ে গেল।

তারাকে দেখেই নাফিজ হাত থেকে ডাব দুটো সরিয়ে গাড়ির ওপর রাখলো।তারার দিকে দু হাত আর নিজের প্রশস্ত বুক বাড়িয়ে দিল।তারা এসেই ফাইল গাড়ির ওপর রেখে নাফিজের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।নাফিজ ও পরম আদরে জড়িয়ে নিল তারাকে।আজ কতোদিন পর দুজন দুজনকে দেখছে।এতোদিন ভিডিও কলে কথা হলেও নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য বেশির ভাগ সময় তেমন কথাই হয়নি দুজনের মধ্যে।

—-আমার বউ সোনা চাঁদের কনা।

—-তুমি কখন এসেছো?

—-এসেছি সকালে।ইউনিটে কিছু গোছগাছ করে তারপর এখানে এলাম।

—-হুম।

—-নে।ওঠ এবার।সবাই দেখছে।

তারা তাড়াতাড়ি মাথা তুলে নাফিজকে ছেড়ে দিল।আসলেই তার খেয়ালই ছিল না আশেপাশে ও মানুষ আছে।নাফিজ একটা ডাব নিয়ে তারার দিকে এগিয়ে দিল।

—-খেয়ে নাও।

—-হুম।

—-পরীক্ষা কেমন হলো?

—-আলহামদুলিল্লাহ।

—-খারাপ রেজাল্ট হলে কিন্তু খবর আছে।কি বলেছিলাম মনে আছে তো?

নাফিজের প্রশ্ন শুনে তারা মুখ গোমড়া করে জবাব দিল,

—-আছে।তুমি বলেছিলে তোমার কথা ভেবে ভেবে যদি পরীক্ষা তে খারাপ করি তুমি আবার আমাকে কলেজে ভর্তি করবে।

—-এইতো গুড।

—-তুমি এমন কেন?

—-কেন?আমি আবার কি করলাম!

—-তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।খালি বকা দেও।তুমি আগে এমন ছিলে না।এখন খুব পচা হয়ে গেছো।

তারার বাচ্চা বাচ্চা ফেস থেকে আর এমন ছেলেমানুষি কথা শুনে হেসেই দিল নাফিজ।

—-আরে পাগলি!তুই যদি খারাপ রেজাল্ট করিস আমার কি ভালো লাগবে বল।আমি চাইনা আমার জন্য তুই নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হোস।আমি চাই তুই আমার পরিচয় না নিজের পরিচয়ে পরিচিত হোস।বুঝলি?

—-হুম।

—-আর কে বলেছে ভালোবাসি না?

নাফিজ ভ্রু কুচকে তাকালো তারার দিকে।তারা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে পাইপ দিয়ে চুকচুক করে ডাবের পানি খাচ্ছে।

—-ভালোবাসি না।আজ চল।তোর খবর আছে।এমন ভালোবাসবো নিজেই পাগল হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাবি।

—-মানে!কি করবে তুমি?তুমি কি আমাকে মারবে নাকি লাঠি দিয়ে?

—-বউ সোনা চাঁদের কনা।রাতের প্রাইভেট আলাপগুলো কি সব রাস্তায় সেরে ফেলবে নাকি?

নাফিজ ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বললো।এদিকে তারা তো লজ্জায় শেষ।নাফিজের মুখে কিছু আটকায় না।আস্ত বেহায়া লোক নাফিজ।তারার কাছে নাফিজকে বেহায়াই মনে হচ্ছে।

হুট করে কেউ দৌড়ে এসে তারাকে জড়িয়ে ধরলো।তারা টাল সামলে তাকিয়ে দেখে গাসু।

—-আফা।

—-তুমি কোথ থেকে এলে গাসু?

—-ঐ ফুলচোর দুলাভাই স্কুল থেকে আনছে আমারে আপনার কাছে।

—-ও আচ্ছা।এতক্ষণ কোথায় ছিলে?

—-সাকি ভাই আর আমি ঐখানে দাড়াইয়া ফুচকা খাইতেছিলাম।আহা কি ট্যাঁশশ।

—-ইই ফুচকা!ওর যে কি খাও তোমরা?হুর।একটুও ভালো লাগে না।

—-আফা গো আফা।আপনে মাইয়া মানুষ হইয়া ফুচকা দু চোক্ষে দেখতে পারেন না।আই শিহরিত।

—-সৈকত ভাইয়া কবে এলো?

—-এই একটু আগে আইছে।বেড়াতে যামু না সব।ট্রেন কইরা।

—-বেড়াতে!কোথায়?

তারা নাফিজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

—-ক্যাপ্টেন।আপনি তো কিছু বললেন না আমাকে?

—-ওটা সারপ্রাইজ ছিল।আজ আমরা সবাই রংপুর যাব।রাতে ট্রেন।

—-আজ!

—-হ্যা আজ।সেই রংপুর।সেই অলিগলি।যেখানে মিষ্টি আর নাফিজের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

;;;;;

রাতের বেলায়।ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ আগে।পাশা পাশি সিটে বসে আছেন মাহমুদা বেগম আর গাসু।ট্রেনে উঠতেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে।মাহমুদা বেগম আলতো করে গাসুর মাথাটা নিজের কাঁধে রাখলেন।ট্রেনের ছোট্ট জানালা টা বন্ধ করে দিলেন।পাশের সিটে সৈকত আর আব্রাহাম সাহেব বসা।নাফিজ আর তারার সিট দু সিট পরে।নাফিজ ইচ্ছে করে এভাবে টিকিট নিয়েছে।যাতে তারার সাথে সময়টা ভালো করে উপভোগ করতে পারে সে।

ট্রেনের ছোট্ট জানালা দিয়ে ফুরফুর করে বাতাস ঢুকছে।তারা অন্ধকারে ও সেটা দিয়ে প্রকৃতি দেখার বৃথা চেষ্টা করছে।হুট করে নাফিজ জানালাটা অর্ধেক বন্ধ করে দিল।তারা পাশ ফিরে তাকালো।

—-বন্ধ করলেন কেন?

—-ঐ অন্ধকারে কি তোমার বর আছে?ভূত সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

—-আজব!আপনি তো এখানে।

—-তাহলে এদিকে একটু নজর দেও।বউ নিয়ে ট্রেনে উঠেছি না অপরিচিতর পাশে বসে জার্নি করছি বুঝতেই পারছি না।

নাফিজ কথা শুনে নিচু স্বরে হেসে উঠলো তারা।নিজের এক হাত নাফিজের হাতের ভাজে ঢুকিয়ে নাফিজের কাঁধে মাথা রাখলো।

—-হয়েছে?

—-এক টু।

—-তাও একটু!

—-আহা রে!কিভাবে আজকের রাতটা কাটাতে চেয়েছিলাম।আর কি হলো?ধুর।কতোদিন পর আমার বউটাকে একটু কাছে পেয়েছি।কই একটু নিজেও ইয়ে করব তার থেকে ও একটু ইয়ে নেব।তা না।

তারা নাফিজের মুখ চেপে ধরলো।পাশের সিটের দিকে তাকালো।দুজন বয়স্ক মহিলা বসা।দুজনেই ট্রেনে উঠে সিটে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন।নাফিজ মুখ থেকে তারার হাত সরিয়ে দিল।

—-কি হলো?তুমি আমাকে চুপ করালে কেন?

—-বিন্দুমাত্র লজ্জাশরম একটু রাখুন।পাবলিক প্লেস এটা।নিজের টা না হলেও আমার টা একটু রাখুন।

—-আমি আবার কি করলাম?

—-কি করলেন!কি সব ইয়ে টিয়ে বলা শুরু করেছেন হ্যাঁ?আশেপাশে তো লোকজন আছে নাকি।

—-সোনাবউ।

—-আপনি শোধরাবে ন না?

তারা আফসোস নিয়ে আবার জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।এর মধ্যে নাফিজ বাদাম বেছে তারার মুখের সামনে ধরলো।

—-বাদাম কোথ থেকে এলো?

—-তুমি জানালার দিকে সে সময় তাকিয়ে ছিলে।একটা লোক বিক্রি করছিল।নেও হা করো।

তারা হা করছে।নাফিজ বাদাম বেছে বেছে তারার মুখে তুলে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে নিজের মুখে দিচ্ছে।

রাত ৩টা বাজে।তারা নাফিজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।নাফিজ তারার মাথাটা টেনে আরো কাছে নিয়ে আসলো।নিজের বুকের কাছে রাখলো।তারার কপালে চুমু দিয়ে তারাকে জড়িয়ে ধরে নিজে ও পাড়ি দিল ঘুমের দেশে।

;;;;;

রিকশায় নাফিজ আর তারা বসা।বাকিরা অটোতে করে যাচ্ছে।

—-কিছু কি মনে পড়ে?

—-আমার কিছুই মনে পড়ছে না নাফিজ ভাইয়া।কি করে পড়বে বলো।অনেক ছোট ছিলাম আমি।

—-জানি তো।আর পড়বে ও না।এই শহর যে আগের শহর নেই।আজ উন্নত হয়েছে।গাছ গাছালি সব কাটা পড়েছে।সেখানে মস্ত বড় বড় কল কারখানা। Urbanization হয়েছে।সব ই হয়েছে।শুধু আমার আর তোর মতো কিছু মানুষের স্মৃতি গুলো আটকা পড়েছে ইট পাথরের নিচে।

—-সেটাই।গ্রাম তো এখন খুঁজেই পাওয়া যায় না।

—-ঐ বাড়িটা চিনতে পারছিস?

নাফিজ তারাকে আঙুল দিয়ে একটা বাড়ির দিকে দেখাল।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বাড়িটা।বেশ পুরাতন হয়ে গেছে।মেরামত করা হয়নি হয় তো।একতলা র ওপর ছাদ দেওয়া।বাড়িটার দিকে এগিয়ে চলছে রিকশাটা।

—-ঐ টা তোর বাড়ি।আজ দেখ আল্লাহ শাস্তি ঠিকই দিয়েছেন।যে ফজলে শেখ ঠাটবাট ছাড়া চলতো না আজ তার কি অবস্থা।

বাড়ির কথা শুনে তারার চোখে পানি চলে এলো।শুধু সেই শব্দ টা ই ভেসে আসছে কানে।যেই শব্দ টা কতো গুলো বছর আগে সে উচ্চারণ করেছিল,”নতুন মা আমাকে ছেড়ে দেও”।

—-তোকে ওখানে কাল যেতে হবে।যেতে হবেই।প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েছে মিষ্টি।তুই দেখবি না সেটা হবে না।

;;;;;

বিকেল হয়েছে।লতিফা তো অনেক ব্যস্ত আজ।এটা ওটা রান্না বান্না করা।এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো।

—-নাফিজের বাবা।কোথায় তুমি?সবাই এসে গেছে হয়তো।শিগগিরই এসো।

নাফিজের মা শাড়ির আঁচল ঠিক করে মাথায় কাপড় দিয়ে তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।

দরজার সামনে গাসু,সৈকত,তারা সবাই দাড়িয়ে আছে।

—-তারা।তোমাকে এখন যেতে দেব না।

—-কেন মা?

—-তুই চুপ কর নাফিজ।সবাই এখানে দাঁড়ান।এক্ষুণি আসছি আমি।

সবাই অবাক হয়ে গেলেন লতিফার ব্যবহারে।আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমের কপালেও চিন্তার ভাজ।এর মধ্যে মাহমুদা বেগম ট্রে নিয়ে হাজির হলেন।ট্রে তে মিষ্টি দুধের গ্লাস,আরেক গ্লাসে শরবত রাখা।

—-আমার মেয়ে কে মিষ্টি মুখ না করিয়ে তো আমি ঘরে ঢুকাব না।

লতিফার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।লতিফা নাফিজের বাবা দুজনেই তারাকে মিষ্টি মুখ করিয়ে শরবত মুখে দিয়ে ঘরে আনলেন।তারাকে ভেতরে এনেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন লতিফা।

—-আমার মিষ্টি।এজন্য তুই বলেছিলি না আমাকে তোর চেনা চেনা লাগছে।তোর জন্য কতো কেদেছি আমি।আমার কতো কষ্ট হতো।কেউ এসে আঁচল ধরে ডেকে বলতো না কাকিমা শোনো।

—-আমি তো এখন আছি।আর কেঁদো না কাকিমা।এখন তো আরো তুমি আমার মা।

চলবে————-

Pc: Jannatul Safa😘😘😘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here