হৃদয়ের_ওপারে_তুমি #গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু) #লেখিকা_রিয়া_খান #পর্ব_৩৩

0
320

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩৩
মন না চাইলেও পড়াশুনা করতে হচ্ছে ফুলের ঠিকমতন।

মার্চের শুরুর দিকে ইয়ারচেঞ্জ পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

এবার পরীক্ষা মনে খুব ফুর্তি নিয়ে দিলো ফুল, কারণ পরীক্ষা শেষ হলেই সে শ্বশুরবাড়ি যাবে।

লাস্ট পরীক্ষার দিন পরীক্ষার সময় পরীক্ষার খাতার দিকে মন যাচ্ছিল না কারণ পরীক্ষা শেষ মানে শেষ শ্বশুর বাড়ি যাবে,হল বসে সে শুধু কল্পনা করছিলো তার রাজপুত্রের রাজ্য ঠিক কি রকম হবে দেখতে। বারবার শুধু কল্পনা করছিলো সেই রূপকথার গল্পের রাজ্যের মত রাজ্য হবে রাজপুত্রের রাজ্য।

অবশেষে সফল ভাবে শেষ হলো তার পরীক্ষা, আর শ্বশুরবাড়ির যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো,ফুলের সাত ভাই কাজে থেকে ছুটি নিয়েছে।সাত ভাই এবং তার ভাবীরা মিলে যাবে তার শ্বশুর বাড়ি ।

ফুলরা বেড়াতে যাবে বলে অভ্রর বাড়ির সবাই কাজে থেকে ছুটি নিয়েছে , ওর মা বউ মনি ।শুধু জিয়াদ আর জায়েদ খান বাদ দিয়ে, কারণ তাদের নিজেস্ব বিজনেস, চাইলে যেকোনো সময় যোগ দিতে পারবে অতিথীদের সাথে।

এদিকে ফুলের মা -ফুপি- মামি- চাচী সবাই মিলে নানান রকম পিঠা বানায় অভ্রদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, আর টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মিষ্টি গুলো তো আছেই চমচম, কালোজাম, রসগোল্লা।

সকাল বেলা সবাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অভ্রদের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
দুপুরের দিকে সবাই ভালভাবে পৌঁছে গেলো ওদের বাড়িতে।

অভ্রদের বাড়ির সামনে যেতে না যেতেই ফুল তো পুরা অবাক! ওদের বাড়িটা ফুল দের বাড়ির থেকে কয়েক গুণ বড়।

ফুল যতটা কল্পনা করেছিল তার থেকেও বেশি সুন্দর তার রাজপুত্রের রাজপ্রাসাদ।

ভিতরে প্রবেশের সাথে সাথেই সবাই সাদরে বরণ করে নেয় ওদের প্রত্যেককে।
ফুলের বিয়েটা অভ্রর সাথে দেয়া হয়েছিল অভ্রদেরর বাড়িঘর না দেখে শুধুমাত্র কাব্যর বাবা মার কথা শুনে।ফুলের ভাইয়েরা খুব খুশি, না দেখেশুনে হলেও বোনের অনেক ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছে। ফুলদের পাঁচটা বাড়ি মিলিয়ে যত বড় তার থেকেও বড়, আর এরিয়া তো কথায় নেই।

বাড়িতে আসার পর অনুর ঠোঁটে ঈদের মতো খুশি ফুটেছে,কিন্তু ফুলের মুখে না।কারণ অভ্র বাড়িতে নেই, হসপিটালে পড়ে আছে বেচারা।

অভ্রদের বাড়িতে মানুষের বড্ড অভাব।ফুলদের বাড়ি যেমন বড় তেমন মানুষও আছে।কিন্তু অভ্রদের বাড়ি ঠিক যতটা বড়, মানুষের সংখ্যা তার উল্টো হারে ততোটাই ছোটো।
ফুলরা আসার কারণে বাড়িটা ভরা ভরা লাগছে, ফুলদের সাথে কাব্যও এসেছে, আর কাব্যর মা,অয়ন অয়নীর মা এসেছে অনেক্ষণ আগেই।বাড়িটা পুরো উৎসবমুখর মনে হচ্ছে।

এখানে আসার আগে ফুল একটু বেশিই এক্সাইটেড ছিলো, কিন্তু বাড়িতে অভ্রকে দেখতে না পেয়ে একটু অস্থির অস্থির অনুভব লাগছে, যার জন্য আসা সেই নেই।

ফুলকে দেখে এ বাড়িতে সব থেকে বেশি যে খুশি হয়েছে সেটা হলো নিয়ানা। ওর তো পুরো ঈদ লেগেছে। ফুলকে খুব বেশি পছন্দ। বাড়িতে আসার পর পরই নিয়ানা ফুলকে নিজের খেলার রুমে নিয়ে যায় আর নিয়াজ, আমান তো আছেই, সাথে নিজামের এগারো মাসের ছোট্ট মেয়ে সুপ্তি।

নিয়ানার সাথে খেলা আর দুষ্টুমি করে ভীষণ মজা পাচ্ছে ওরা।আর অনু সে তো কৌশলে আকাশের সাথে খুনশুটি রোম্যান্স করছে, আর কাব্য ওদের পাহারা দিচ্ছে।

লাঞ্চের পরও নিয়ানা ফুলকে টানতে লাগলো ওর সাথে খেলার জন্য। দুপুরে নিয়ানার ঘুমানোর টাইম,কিন্তু আজ তার ছোটো মা আর নতুন খেলার সাথীরা থাকতে ঘুমানো অসম্ভব।
-আচ্ছা ছোটো মা তোমাকে তো আমি এক বছর আগে আসতে বলেছিলাম আমাদের সাথে তুমি তখন আসো নি কেনো?আর এখন এলে কেনো?
-তখন আসিনি কারণ তোমার ছোটো বাবা আসতে বারণ করেছিলো । আর এখন এসেছি কারণ তোমাকে খুব মিস করছিলাম,আমার এই ছোটো শ্বাশুরী মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়তো।
-আমাকে ছোটো বাবার মতো ভালোবাসো তাই না?
-হ্যাঁ মা, ছোটো বাবার মতোই ভালোবাসি।
-তাহলে তুমি যে একদিন ঢাকা এসেছিলে কাব্য চাচুদের বাসায় সেদিন আমার সাথে দেখা করতে আসো নি কেনো?
-আসতে চেয়েছিলাম তো, তোমার ছোটো বাবাই তো না করেছিলো।
-ছোটো বাবা তো খুব পঁচা!আমার সামনে ভালোর অভিনয় করে আর আমার আড়ালে কত্ত দুষ্টু!
-না মা তেমন কিছু না, ছোটো বাবা তোমাকে কষ্ট দিতে চায় না বলেই এমন করেছে,আমি যদি তোমার কাছে আসতাম আমার তো আবার চলে যেতে হতো, আর চলে যাওয়ার সময় তোমার মন খারাপ হতো, কষ্ট পেতে, সেটা তোমার ছোটো বাবা সহ্য করতে পারবে না বলেই এমন করেছে।
-ওওও তাই বলো! তাহলে তো তুমি পঁচা।
-কেনো?
-তুমি চলে যাও কেনো?তুমি কেনো আমাদের বাড়িতে থাকো না?
-থাকবো তো, আল্লাহ যেদিন ভাগ্যে লিখে রেখেছে সেদিন থেকেই থাকবো।
– আল্লাহ কবে লিখবে? ছোটো বাবাও একটা কথায় বলে।আমি আল্লাহর কাছে কত্ত দোয়া করি যেনো তাড়াতাড়ি লিখে ফেলে তুমি আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের সাথে থাকবে আর আমার সাথে সারাক্ষণ খেলবে।আচ্ছা তুমিও কি আমার মাম্মাম আর দাদুর মতো সারাদিন বাইরে থাকবে?
-একদম ই না, আমি সারাক্ষণ বাড়িতে থাকবো, খেলবো, দুষ্টুমি করবো, খাবো আর ঘুমাবো।

নিয়ানা উঠে গিয়ে ফুলের গালে চুমু খেয়ে বললো,
-তুমি আমার সুইট ছোটো মা,আমার মাম্মামের থেকেও ভালো।মাম্মাম পাপা সারাদিন বাইরে থাকে, ওদের সাথে শুধু সকাল বেলা দেখা হয় আমার।আমার খুব কষ্ট হয়। ছোটো বাবাও এখন আগের মতো বাড়িতে থাকে না, মাম্মাম পাপার মতো বাইরে থাকে শুধু আর ফুপি তো শুধু মোবাইল টেপে।
-ঠিক আছে মা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি যখন এখানে থাকবো তখন সারাদিন তোমার সাথে থাকবো। কোত্থাও যাবো না যেখানে যাবো সেখানেই তোমাকে নিয়ে যাবো।ওরা বাইরে থাকবে আর তুমি আমি মিলে একা একা ঘুরতে যাবো।

নিয়ানা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-প্রমিস করো।
ফুল হাতে হাত রেখে বললো।
-ওকে মা প্রমিস!

নিয়ানার সাথে ফুল কথা বলছিলো এমন সময় অভ্র নিয়ানার রুমে প্রবেশ করে, নিয়ানা অভ্রকে দেখে কোনো রিয়্যাকশন দেয়ার আগেই অভ্র ইশারায় চুপ করতে বললো, পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে ফুলের পেছনে গিয়ে বসে, ফুল বুঝে উঠার আগেই ওর গালের মধ্যে অভ্র চুমু খেয়ে পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে,
-ছিহঃ বাচ্চাদের সামনে কি করছেন।
-তো কি হয়েছে? ওরা মাইন্ড করবে নাকি?আমি তো তোমাকে বউ হিসেবে চুমু খাই নি ডল হিসেবে চুমু খেয়েছি ।
-ছাড়ুন আপনি আমাকে, আমি রাগ করেছি,
-কেনো?
-আমি আপনাকে কি বলেছিলাম?শ্বশুর বাড়িতে আজকে আমার প্রথম আসা,হিসেব অনুযায়ী আমার পাশে আপনার থাকার কথা,পাশে তো ছিলেন ই না, এমনকি বাড়িতেও ছিলেন না দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে এখন এসেছে আলগা পিরিত দেখাতে!
-ওরে বউরে বিশ্বাস করো আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আসার,আমি যদি ডক্টর হোতাম তাহলে আসতে পারতাম, কিন্তু আমি একজন ইন্টার্নশীপের স্টুডেন্ট!পারলে তারা দড়ি দিয়ে হসপিটালের সাথে বেঁধে রাখতে চায়।
ফুল মন খারাপ করে বললো,
-এখনি এই অবস্থা!যখন ডক্টর হয়ে বের হবেন তখন কি হবে?
অভ্র উত্তর দেয়ার আগেই নিয়ানা ওর হয়ে উত্তর দিয়ে দিলো,
-ছোটো মা তখন কিছু হবে না,শুধু আমার মতো একা হয়ে যাবে। কিন্তু চিন্তা করো না আমি আছি তোমার সাথে খেলা করার জন্য।
-কেনো অনুও তো আছে।
-ফুপি থাকলে কি হবে, ফুপি সারাদিন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমি ফুপির সাথে কাট্টি দিয়েছি।
-কেনো?
-ফুপি আমার সাথে খেলা করে না, শুধু ফোন নিয়ে পড়ে থাকে।
-হুম বুঝেছি তোমার ফুপিকে বিয়ে দিয়ে দিয়ে হবে ।
নিয়ানা মুখ ছাপিয়ে হেসে দিলো।
-হি হি হি হি!
অভ্র ফুলের পেটের মধ্যে টিপ দিয়ে বললো
-এবার বলতো কেমন আছো তুমি।
-বলবো না।
-কেন?
-বললাম ই তো রাগ করেছি।
-ঠিক আছে এখন তাহলে রাগ ভাঙাতে পারবো না, আমি অনেক বেশি টায়ার্ড ফ্রেশ হবো,খিদেও পেয়েছে খুব।

ফুলকে ছেড়ে দিয়ে অভ্র উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো, নিয়ানার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শুঁড় শুঁড় করে।
-মা তুমি নিয়াজ আমানের সাথে খেলা করো আমি আসছি কেমন?
-ঠিক আছে ছোটো মা যাও।

ফুল তাড়াহুড়ো করে সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লো, আর অভ্রকে ফলো করতে নিলো, অভ্র বুঝেও না বুঝার ভান করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

অভ্র যেই ওর রুমে ঢুকলো ফুল করিডোরে লুকিয়ে রইলো , অভ্র ইচ্ছে করে রুমের দরজা লক না করে হাল্কা চাপিয়ে দিলো।
ফুল আলতো ভাবে দরজা টা একটু খোলে এক চোখ দিয়ে দেখতে লাগলো ভেতরে অভ্র কি করছে না করছে।

গায়ে থেকে শার্ট খুলতে খুলতে বলে উঠলো,
-যা দেখার ভেতরে এসে দেখো, ওভাবে লুকিয়ে থাকতে হবে না।

ধরা খেয়ে ফুল আর কিছু বললো না, রুমের ভেতর ঢুকে গেলো। ফুল ভেতরে ঢুকে রুমের চারপাশে দেখতে দেখতে বললো,
-এটা কি বেড রুম নাকি লাইব্রেরী?
-এটা আমার বেড রুম।তবে বাড়িতে বড় লাইব্রেরীও আছে একটা, ওটা মা বাবার রুমের পাশে, নিয়ানাকে বলো দেখিয়ে দেবে।
-হুমহ! বড়লোকের বিরাট কারবার।
-বুঝলাম না কথা।
-আপনারা সবাই শুধু পড়ালেখাই করেন। সবাই হাইয়ার এডুকেটেড সেই জন্য বই আপনাদের সাথে থাকেই।আচ্ছা আমি যখন আসবো তখন কি এই ঘরে থাকবো?
-তোমার ইচ্ছা।
-এই রুমে থাকলে আমার ঘন ঘন মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার রোগ হয়ে যাবে। যতবার এই সব বই খাতা দেখবো আমি ঠাস ঠাস পড়ে হাত পা ভেঙে মরে যাবো।
-বইয়ের সাথে শত্রুতা কিসের বলোতো?
-বই দেখলেই পড়ার কথা মনে পড়ে,দম বন্ধ হয়ে আসে,শ্বাস প্রশ্বাস আটকে আসে মাথা ভন ভন করে,দুই চোখে কিছু দেখি না ।
-কিন্তু এগুলো তো তোমার পড়ার বই না।
-তা না হলে কি হবে বই তো।
-আচ্ছা তাহলে বাড়ির পাশে আরেকটা বাড়ি করে তোমায় রাখবো,যেখানে বই খাতার কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
-হ্যাঁ সেটাও করা যায় ভালোই হবে।
-বসো আমি গোসল দিয়ে আসি।
-এতো অবেলায়?গোসল করে যান না?
-বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে গোসল দিয়ে বের হই, হসপিটাল থেকে যখন ফিরে আসি গা দিয়ে মেডিসিন মেডিসিন গন্ধ আসে, নিজেকে রোগী রোগী লাগে তখন।
কথাগুলো বলতে বলতেই অভ্র বাথরুমে চলে গেলো।

-আমার কাছে তো নরমাল ই লাগছিলো!(মনে মনে)

ফুল কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো,কিন্তু ওর হাত পা শুঁড়শুঁড় করছে, নিরব হয়ে চুপচাপ বসে থাকা ফুলের কুষ্টিতে লেখা নেই,উঠে দাঁড়িয়ে অভ্রর ঘর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কিছু দেখছে আর এলোমেলো করছে,এক জায়গার জিনিস আরেক জায়গায় রাখছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে সেখানকার সব কিছুর বারোটা বাজাতে লাগলো। পারফিউম হাতে নিয়ে ঘরের ভেতর স্প্রে করতে লাগলো। ড্রেসিং টেবিলের উপর কয়েকটা সানগ্লাস ছিলো সেখান থেকে একটা নিয়ে চোখে দিলো।

গোসল শেষে অভ্র বাথরুম থেকে বের হতেই স্তব্ধ হয়ে যায়, ফুল চোখে সানগ্লাস পড়ে অভ্রর এপ্রোন গায়ে দিয়ে স্টেথোস্কোপ কানে নিয়ে দেয়ালের হার্টবিট চেক করছে।

এ দৃশ্য থেকে অভ্র ফিক করে হেসে দিলো, হাসির আওয়াজ শুনে ফুল পেছনে ঘুরে তাকায়, অভ্রর হাসি আরো থামছে না। এই লুকে ফুলকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু ওর কাজ কর্মগুলো এই লুকের সাথে মানায় নি।
-আপনি হাসছেন কেনো?
-হাসবো না তো কি করবো? তুমি কি করছো সেটা একটা বার খেয়াল করেছো?
-কি করছি?
স্টেথোস্কোপ দিয়ে কি করে জানো?
-কমার্সের স্টুডেন্ট বলে কি কিছু জানি না? এটা দিয়ে মানুষের ভেতরে হার্ট আছে কিনা মাপে।হার্ট কতোটুকু সেটা বুঝার চেষ্টা করে।তাই আমি দেখছিলাম দেয়ালেরও হার্ট আছে কিনা।

অভ্র হাসতে হাসতে বললো
-আমার কাছে আসো।একটা জিনিস দেখাচ্ছি।ওখান থেকে ঘড়িটাও নিয়ে আসো।

ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা নিয়ে অভ্রর সামনে এসে দাঁড়ালো।
অভ্র ফুলের থেকে ঘড়ি নিয়ে ওর হাতে পড়িয়ে দিলো , আর স্টেথোস্কোপ টা নিয়ে ভালো ভাবে কানে লাগিয়ে ডায়াফ্রাম অভ্রর বুকের উপর বাঁ পাশে হৃদপিন্ড বরাবর রাখলো,
-এবার মন দিয়ে শুনো আর ঘড়ির দিকে দেখো কখন এক মিনিট পূর্ণ হয়। লক্ষ্য রাখবে মিনিটে আমার হার্ট কয়বার বিট হয়।

ফুল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে হার্টবিট হিসেব করতে লাগলো।এক মিনিট পূরণ হতেই ফুল বলে উঠলো,
-৬০ বা তার উপরে হবে, লাস্টের দিকে একটু গড়মিল হয়ে গেছে হিসেবে।
-ইট’স ওকে নো প্রবলেম, এটাই স্বাভাবিক রেট ।
-তার মানে মানুষের ৬০ বার বা তার উপরে হার্টবিট হলে স্বাভাবিক।
-নাহ?
-তাহলে বললেন যে।
-মানে এটা আমার জন্য স্বাভাবিক। মানুষের হার্টবিট তার শরীরের স্বাস্থ্য ও বয়স ভেদে একটা রেট হয়, যেমন তোমার স্বাস্থ্য স্বাভাবিকের থেকে একটু কম আর বয়স ১৭+ তাহলে তোমার জন্য স্বাভাবিক বিট হলো ৭৪-৮১,আনুমানিক তোমার জন্য ৭৫ পারফেক্ট ।
-বুঝেছি বুঝেছি আমার এসব হার্ট ফার্ট মাপতে হবে না, আমি কমার্সের স্টুডেন্ট আমি শুধু টাকা গুনবো।
-ব্যাংক জব করবে তুমি?

ফুল দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
-হুম জামাইয়ের ব্যাংকে জব করবো।
-বসে বসে আমার টাকা গুনবেন শুধু তাই না? এখনি এই প্ল্যান করে ফেলেছো তুমি।তোমার জ্বালায় তো আমার মানিব্যাগ টিকবে না দেখছি।
-সেই জন্যই তো টাকা মানিব্যাগে না রেখে আমার কাছে রাখবেন,
-ব্যাংক জবই তাহলে ফাইনাল?
-হুম!
-ওকে,কিন্তু আমি তো যেমন তেমন মানুষের কাছে আমার টাকা জমা রাখবো না।
-প্লিজ এটা বলবেন না যে ব্যাংক সার্টিফিকেট লাগবে । আমি বলে দিলাম ইন্টার পরিক্ষার পর আমি আর লেখাপড়া করবো না।
-আগে ইন্টার পরিক্ষা দাও তারপর দেখা যাবে কি করবে না করবে।
-আমি মজা করছি না সিরিয়াস।
-ধেত পাগল আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম, হাসো হাসো।

ফুল রেগে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো।

অভ্র হেসে দিয়ে ফুলকে টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দিলো।

রাতের দিকে ফুলের শ্বশুর ভাসুর বাড়ি ফিরতেই ফুল তাদের সাথে দেখা করে আসে।
জিয়াদ একজন সচারাচর হাসে না,কিন্তু ফুলের সাথে কথা বলতে গিয়ে হেসে গড়িয়ে পরে।ফুল মাঝে মধ্যেই জিয়াদকে কল দেয় আর প্রচুর হাসায়,যার কারণে জিয়াদ ফুলকে কমেডিয়ান উপাধি দিয়েছে, জিয়াদের মন মেজাজ ভালো না থাকলে ফুলকে কল দিয়ে মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য।জায়েদ খান ও একই রকম করে, নিশাতের থেকে ফুলও কম লক্ষ্মী না। দূরে থেকেও ফুল সবার মনটা কেড়ে নিয়েছে ,এ বাড়িতে এসে ফুল এমন ভাবে সবার সাথে মিশে যাচ্ছে যেনো অনেক বছর ধরে এবাড়িতে থাকে ফুল।আর শাশুড়ি,ননদ, জা এদের তো ফুল বান্ধুবীই বানিয়ে নিয়েছে।

অভ্রও ফুলের এই ব্যাপারটা খুব পছন্দ করে,

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here