#নয়নতারা
পর্ব ৪৭
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
;;;;;
লেখার পর কখনো পড়ে দেখি না আমি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
;;;;;
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।
আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।
;;;;;
—-তারা পাখি।তোমাকে পাওয়ার জন্য অনেক অনেক সময় পাব আমি বেঁচে থাকলে।আর এখন তো তুমি আমারই।হারানোর ভয় নেই।সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার।তুমি শুধু বিশ্রাম নেবে আজ।
তারা অবাক হয়ে গেল নাফিজের কথাতে।আসলেই তো এরকম কোন স্বামী বাসর রাতে ভাবে।নাফিজ তারাকে খাটের ওপর বসিয়ে দিল।
—-তোমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।তুমি বসো।আমি আনছি।
নাফিজ যেতে নিলেই তারা নাফিজের হাত ধরে বসে।নাফিজ সাথে সাথে পেছনে ঘুরে তাকায়।একবার তারার দিকে একবার তারার হাতের দিকে।
—-কি হয়েছে ?
—-এখানে আমার ওষুধ কোথ থেকে আসবে?
—-সৈকত কে বলে রেখেছিলাম।ও সব কিছু রেডি করে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল।
—-ওও।
—-হুম।হাত কি এখনো ধরে থাকবে নাকি ছাড়বে!
নাফিজ দুষ্টু হাসি নিয়ে কথা টা বললো।তারা সাথে সাথে নাফিজের হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।নাফিজ ওষুধ এনে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে তারার পাশে এসে বসলো।
—-নেও খেয়ে নেও।
—-আমি এই দুটো এখন খাই।আপনি কিভাবে জানলেন?
—-সব সৈকত বলেছে।তোমার দায়িত্ব যখন নিয়েছি এগুলো ও তো আমার দায়িত্ব।
তারা ওষুধ খেয়ে নেওয়ার পর নাফিজ গ্লাস টা পাশের ছোটো টেবিলে রেখে উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিল।তাঁরপর বিছানার দিকে এগিয়ে আসলো।
—-কি হলো?ঘুমাবে না?
—-হুম।
—-তুমি ঐ দিকে শুয়ে পড়ো।
তারা পা তুলে গিয়ে বিছানার দেওয়ার ঘেষা দিকটাই শুয়ে পড়লো।নাফিজ ধীরে ধীরে উঠে তারার কাছে চলে গেল।অন্ধকারে যেন ডিম লাইটের আলোতে তারার মুখ জ্বলজ্বল করছে।নাফিজ নিজের চোখ সরাতে পারছে না।নাফিজ একদম তারার কাছে চলে।এদিকে তারার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত ওঠা নামা করছে।সব সময় একাই শোয়ার অভ্যাস তার।আর আজ তারপর আবার নাফিজ এতো কাছে।নাফিজ নিজের একটা হাত তারার মাথায় রাখলো।আরেকটা হাত তারার পেটের ওপর।তারপর তারার কপালে চুমু দিল।
—-নেও।ঘুমিয়ে পড়ো।
—-হুম।
তারা চোখ বুজতেই নাফিজ তারার পাশে শুয়ে তারাকে বুকে জড়িয়ে নিল।অবাক হওয়ার আরেক ধাপ উপরে উঠলো তারা।তারা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।তারার ভেতর যে আজ কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা শুধু তারাই জানে।
“নিয়তি
আগে কেন বলোনি?
তার প্রান্তের সাথে মিশে যাব আমি।
আমরা দুজন সমান্তরাল নই।
আমরা মিলব,
আমাদের যে মিলতে হবে,
দুটো সরল রেখা
ধীরে ধীরে নিজ নিজ রাস্তায় চলছিল,
কেন বলোনি যে তারা বাক নেবে,
দুজনে মিলিত হবে
একদম শীরষবিন্দুতে।
আমার তোমার প্রান্ত টাও এক হবে।”
;;;;;
চারিদিকে এখনো অন্ধকার।রাতের আধার কাটেনি যেন।প্রভাতের শুরু হতে চলেছে।ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে দূর থেকে।
আজান শুনতেই আড়মোড়া দিয়ে উঠলো নাফিজ।দেরী করা যাবে না।তাকে আগে মসজিদে যেতে হবে।তারপর আবার তারার কাছে।না হলে যে তার দিন ই কাটবে।ইশ কি কঠিন কাজ তার।ভাবতে ভাবতে নাফিজ চোখ খুললো।নাফিজ চোখ খুলেই যেন শক খেল।সে আর তারা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।নাফিজের হাতের ওপর তারার মাথা।
গতকালকের কথা মনে পড়তেই নাফিজ নিজের জিভ কামড়ে ধরলো।সে তো ভুলেই গিয়েছিল যে তারা এখন স্ত্রী।এখন আর সাইকেল চালিয়ে তারাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যেতে হবে না।তারার মুখের দিকে তাকাতেই নাফিজের মুখে হাসি ফুটলো।গভীর ঘুমে মগ্ন তারা।ঘুমানোর কারণে চোখ মুখ ফোলা ফোলা লাগছে।মুখটা অনেকটা রসগোল্লার মতো লাগছে নাফিজের কাছে।নাফিজ তারার দু চোখের পাতায় ঠোট ছোয়ালো।সাথে সাথেই তারা নড়ে উঠে নাফিজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
নাফিজ আবার একই কাজ করলো।তারা আবার একটু নড়েচড়ে আবার শুয়ে রইলো।নাফিজের বেশ মজা লাগছে তারাকে জালাতে।নাফিজ এবার আরো ভয়ঙ্কর কাজ করলো।একদম তারার ঠোট যুগলের ওপর হামলা।গভীর হামলা।
ঘুমের মধ্যে ই তারা কেঁপে উঠলো।দম বন্ধ হয়ে আসছে তারার।তারা চোখ খুলতেই অবাক পুরো।তার ঠোঁটের ওপর এমন হামলা চলছে তারা তো একে লজ্জায় শেষ,তারপর পুরো কেপে যাচ্ছে তারা।তারা লজ্জা য় চোখ বুজে নিল।
একটু পরে নাফিজ তারাকে ছাড়লো।উপুর হয়ে তারার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।নাফিজের আর কোনো রেসপন্স না পেয়ে তারা ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো।নাফিজ উপুর হয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
—-বউ সোনা,চাঁদের কনা।উঠবে না?নাকি আরো কিছু থেরাপি দেব?
নাফিজের কথায় এদিকে তারা লজ্জায় শেষ।নাফিজ আর কিছু না বলে তারাকে কোলে নিয়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
;;;;;
নামাজ শেষ করে বসার ঘরে সোফায় বসে তারার ছবিতে মুখ গুঁজে বসে আছেন মাহমুদা বেগম।মনটা তার একদম ভালো নেই।আব্রাহাম সাহেব ও চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে আছেন।তারাকে যেদিন থেকে নিজের কাছে পেয়েছিলেন কখনো তারাকে দূরে রাখেননি নিজের থেকে।আর আজ পুরো একটা রাত গেল।
এর মধ্যে গাসু নিচে নেমে এলো।দুজনকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে গাসুর ও ভালো লাগছে না।গাসু নিজেও তারাকে খুব মিস করছে।
—-মেজর সাব।
গাসুর কথায় মাথা উঁচু করলেন আব্রাহাম সাহেব।
—-কিছু বলবে গাসু?
—-আপনে চা খাইতেন না?ঠান্ডা হয়ে যাইবোগা।
—-খেতে ইচ্ছে করছে না গাসু।
—-আপনেরা যদি এইরাম কইরা পইড়া থাকেন আমার তো ভালো লাগতো না।
—-তুমি বুঝবে না গাসু।কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমাদের।
;;;;;
নামাজ পড়ে এসে নাফিজ তারাকে বোরখা পরিয়ে দিল।
—-বোরখা কেন পরাচ্ছেন ক্যাপ্টেন?
—-ঘুরতে যাব তাই।
—-এখন!
—-হুম এখন।সব ভুলে গেছো নাকি?সকালে হাঁটতে বের হব না?
—-দেরী হয়ে গেছে তো।আপনার অফিস?
—-আজ শনিবার।আর এমনিতেই তো আমি তিনদিনের ছুটিতে আছি।
—-ওও।
—-চলো চলো।
—-কিন্তু বাইরে সবাই তো দেখে ফেলবে।
—-সবাই ঘুমিয়ে।কেউ দেখবে না।আর দেখলে বা কি?আমি আমার বউকে নিয়ে ঘুরতে যাব।তাতে কার কি?ক্রাচ নিয়ে হাটো এখন।চলো।
নাফিজ তারাকে নিয়ে বাইরে আসলো।গ্যারেজ থেকে সাইকেল বের করলো।তারার চোখ দু টো ছাড়া আপাদমস্তক ঢেকে দিয়েছে নাফিজ।নাফিজ এসে তারার হাত থেকে ক্রাচ নিয়ে সাইকেলের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল।
—-আমি হাঁটব কি করে এখন?
—-চুপ।শুধু দেখে যাও।
নাফিজ নিজে সাইকেলে উঠে একদম তারার সামনে সাইকেল এনে থামালো।তারাকে উঠতে ইশারা করলো।তারাও উঠে বসলো নাফিজের পেছনে।
—-নেও এবার পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসো।
—-কাকে জড়িয়ে ধরব?
—-রাস্তার ঐ তেরো নম্বর পাগলটাকে।
—-কিহ!
—-আমি ছাড়া এখানে কে আছে?আর আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে জড়ানোর কথা ভাবলে না তোমার ঠ্যাঙ ভাঙব আমি।
—-পারব না।
—-কেন?
—-কৈ কে দেখে ফেলবে।
—-তো?
—-আমার লজ্জা করে।
—-ওরে আমার লজ্জা রে।সকাল বেলা ছাড়াতে গেছি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন উনি।সারারাত আমার বুকের ওপর ঘুমিয়েছো।আর এখন বলছো লজ্জা করে!
নাফিজ মাথা টা পেছনে ঘুরে তারার দিকে তাকালো।তারা চোখ নামিয়ে বসে আছে।
—-ধরবে।নাকি ফেলে দেব?
—-ধরছি তো।
তারা ধীরে ধীরে দুটো হাত দিয়ে নাফিজ এর পেট অবধি পৌঁছাতেই নাফিজ তারার হাত দুটো আরো টেনে নিজের সাথে মেশালো।তারা এবার একদম নাফিজের গায়ের সাথে লেগে গেছে।
—-এই বার ঠিকাছে।চলো যাওয়া যাক।
;;;;;
কলিংবেলের শব্দ হতেই মাহমুদা বেগম সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
—-এতো সকালে আবার কে?
—-দেখো তো গিয়ে।
—-দাঁড়াও দেখছি।
দরজা খুলতেই মাহমুদা বেগম চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
—-তারা,,,,!
ক্রাচ নিয়ে তারা দাড়িয়ে আছে।পেছনে নাফিজ দাঁড়ানো।মাহমুদা বেগম আর দেরী না করে তারাকে জাপটে ধরলেন।তারার চোখে মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন।যেন কত যুগ পর দেখছেন তারাকে।
—-আমার সোনা।আমার পাখি।
—-মা আস্তে আস্তে ।ভেতরে যেতে দিবে না?
—-আয় আয়।নাফিজ ভিতরে এসো বাবা।
মাহমুদা বেগম মেয়ে জামাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।আব্রাহাম সাহেব ও তারাকে দেখে কেঁদেই ফেললেন।বুকে জড়িয়ে নিলেন তারাকে।
—-তারার ও মন ভালো ছিল না।তাই ভাবলাম এখান থেকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যাই।
—-তোমরা আজ থাকবে না?
—-আসলে মা বাড়িতে তো এখনো আত্মীয় স্বজন আছে।আজকেই চলে যাবেন।কাল তারাকে দিয়ে যাব আমি।
—-কেন?তোমাকে ও তো আসতে হবে।আমার মেয়ে একা কেন আসবে?
—-না না।আমিও আসব।
;;;;;
বিকেল বেলা।
চায়ের কাপ নিয়ে ছেলে ছেলে বউকে পাশে নিয়ে বসেছে লতিফা।
—-এই দেখ।এটা তোমার ছোটো খালা শ্বাশুড়ি ছবি।
—-বাহ।আপনার সাথে তো ওনার অনেক মিল আছে!
—-হ্যাঁ।আমাদের দুজনকে তো জমজ বলতো সবাই ছোটো বেলায়।
লতিফা ছবির অ্যালবাম নিয়ে তারাকে একে ওকে দেখাচ্ছেন।পাশে নাফিজ ও বসা।মাঝে মাঝে টি টেবিলের আড়াল থেকে তারার পায়ে পা ঘষে দুষ্টুমি করছে।তারা কিছু বলতেও পারছে না।কথা বলতে বলতে একটা ছোট্ট বাচ্চার ছবি বের করলো লতিফা।
—-এটা কে মা?
—-কে আবার !তোমার বর।ওর পাঁচ মাস বয়সের ছবি এটা।
—-এতো গুলুমুলু ছিলেন উনি!
—-হুম।আরো আছে।দেখো।
তারা এবার অ্যালবাম টা নিজে হাতে নিয়ে নাফিজের ছোটো বেলার ছবি গুলো উল্টে পাল্টে দেখছে।
—-তারা।
—-হুম।
—-তোমার ছোটো বেলার ছবি আছে?
—-আছে তো।কেন?
নাফিজ এর কথার উওর টা তারা বেশ ভয়ার্ত কন্ঠে দিল।
—-কেন আবার।দেখতাম।ছোটো বেলায় কেমন ছিলে?
—-এখন যেমন একটা পুতুল।আমার বৌমা ছোটো বেলায় নিশ্চয়ই ওরকম ই একটা পুতুল ছিল।
—-তারা আমাকে দেখালে না তো তোমার ছবি।
—-কিভাবে দেখাব?ফোনে তো নেই।বাড়ি তে অ্যালবামে আছে।
—-তাহলে কাল গিয়ে দেখব।
—-কাল!
—-হ্যাঁ।অবাক হচ্ছো কেন!আর তুমি,,,,,।
নাফিজের কথার মাঝেই নাফিজের ফোন বেজে উঠলো।
—-অফিসের কল।তোমরা দেখ।আমি কথা বলে আসি।
নাফিজ ফোন হাতে নিয়ে চলে গেল।তারা যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
চলবে————–
আগামী পর্বে ঠুশঠাশ কিছু ঘটবে🤨🤨🤨